অতিথি_পাখি পর্বঃ ০৪
লেখকঃ আবির খান
রিয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে। কিন্তু এদিকে সিথির ঘুম আসছে না। ওর খুব ইচ্ছা হচ্ছে রিয়াজের সাথে একটু গল্প করতে। তাই সিথি রিয়াজকে ডাক দেয়। কিন্তু ও না উঠলে যখন সিথি রিয়াজের গায়ে হাত দিয়ে ডাক দেয় সিথি পুরো থমকে যায়। কারণ রিয়াজের গা পুরো আগুনের মতো পুড়ে যাচ্ছে। সিথি একলাফে উঠে বসে রিয়াজে কপালে গায়ে হাত দিয়ে দেখে হ্যাঁ রিয়াজের প্রচন্ড জ্বর উঠেছে। সিথি দ্রুত বিছানা ছেড়ে জলপট্টি নিয়ে আসে। সারারাত জলপট্টি দেয়। রিয়াজ জ্বরের মুখে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছিল যা শুনে সিথি বেশ লজ্জা পাচ্ছিল। অনেক কষ্টে সারারাত জলপট্টি দিয়ে দিয়ে সিথি রিয়াজের জ্বর নামায়।
সকালে,
রিয়াজের ঘুম ভেঙে যায়। ওর এখন খুব ভালো লাগছে। রিয়াজ এখনও চোখ খুলে তাকায় নি। রিয়াজ ফিল করছে ওর কপালে কারো হাত আর কারো গরম নিঃশ্বাস ওর মুখের উপর পড়ছে। আর সাথে একটা পরিচিত সুগন্ধি সুবাস নাকে এসে লাগছে। রিয়াজ চোখ মিলে তাকিয়ে দেখে সিথি ওর মাথার কাছে ওর কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। রিয়াজ কিছুই বুঝতে পারছে না। রিয়াজ একটু নড়াচড়া করতেই সিথির ঘুম ভেঙে যায়। সিথি রিয়াজের কাছ থেকে একটু সরে বসে। রিয়াজ উঠে বসে দেখে পাশের টেবিলে জলপট্টি রাখা। রিয়াজ সিথির দিকে তাকিয়ে বলে,
রিয়াজঃ আমার জ্বর উঠেছিল রাতে??
সিথি কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রিয়াজ বুঝতে পারছে না সিথি এমন লজ্জা পাচ্ছে কেন। সিথি আস্তে করে বলে উঠে,
সিথিঃ আচ্ছা জ্বরের ঘোরে মানুষ কি সত্য বলে?? মানে মনের কথা বলে??
রিয়াজঃ হ্যাঁ। কেন??
সিথি যেন আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কেমন নক খোটাচ্ছে হাসছে। সিথি লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
সিথিঃ না এমনি।
সিথির উত্তরটা রিয়াজের পছন্দ হলো না। হঠাৎ রিয়াজের মনে হলো, এইরে ওর তো গতকাল জ্বর উঠেছিল। তাহলে কি ও জ্বরের ঘোরে কিছু উল্টো পাল্টো বলেছে?? রিয়াজের কপালটা আবার ঘাম দিয়ে আসছে। রিয়াজ ইতস্তত হয়ে সিথিকে প্রশ্ন করে,
রিয়াজঃ আমি কি কিছু বলেছি জ্বরের মধ্যে??
সিথির লজ্জা যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল এই প্রশ্ন শুনে। রিয়াজ মনে মনে বলছে,”হ্যাঁ নিশ্চিত কিছু আমি বলেছি। তাই সে এতো লজ্জা পাচ্ছে। আমাকে জানতেই হবে আমি কি বলেছি।” রিয়াজ সিথিকে দ্রুত প্রশ্ন করে,
রিয়াজঃ আচ্ছা প্লিজ বলবেন কি বলেছি?? খারাপ কিছু বলেছি কি??
সিথিঃ আমার লজ্জা করে তো।
রিয়াজঃ উফফ। একটু বলেন না প্লিজ।
সিথিঃ আচ্ছা আচ্ছা বলছি। আপনি রাতে জ্বরের মধ্যে শুধু বলছিলেন..
রিয়াজঃ কি??(অনেক চিন্তিত হয়ে)
সিথিঃ সিথি আপনি কি আমার বউ হবেন??
বলেই সিথি ওয়াশরুমে চলে যায় হয়তো লজ্জায়। আর এদিকে রিয়াজ জিহবায় কামড় দিয়ে বসে আছে। রিয়াজে মনে ইচ্ছা ছিল সিথির মতো কেউ যদি ওর একটা বউ হতো। কারণ সিথির জোরপূর্বক আচরণ গুলো রিয়াজের ভালো লাগে। সিথির মিষ্টি হাসি, মজা করা মোট কথা সিথির সব কিছুই রিয়াজের ভালো লাগে। কিন্তু এসব ভেবেই রিয়াজের মনটা পরক্ষণেই খারাপ হয়ে যায়। কারণ সিথির প্রতি এই মায়া জমানোর কোনো মানে নেই। কারণ সিথি একজন অতিথি পাখি মাত্র। রিয়াজ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে উঠে কফি বানাতে চলে যায়।
সিথি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রিয়াজ কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সিথি অনেক খুশী হয়। সিথি রিয়াজের কাছ থেকে কফি নিয়ে ওরা বারান্দায় গিয়ে বসে। রিয়াজের বারান্দাটা বেশ বড়। আর ৪ তলায় আর চারপাশটা ফাঁকা হওয়ায় সকালের স্নিগ্ধ রোদ এসে ওর বারান্দায় পড়ে। সেই রোদে স্নান করেই রিয়াজের সকাল হয়। আজ রিয়াজের সাথে একটা অপ্সরাও আছে। একজন ভালো লাগার মানুষ আছে। রিয়াজ কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর সিথিকে আড় চোখে দেখছে। এই চাহনিতে কোনো খারাপের ছিটেফোঁটাও নেই। আছে শুধু একরাশ ভালো লাগা নাহলে ভালোবাসা। সিথিও কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
সিথিঃ আমার কফি পছন্দ আপনি জানলেন কি করে??
রিয়াজ একটু হেসে বলে,
রিয়াজঃ আমি প্রতিদিন এখানে বসে এক কাপ কফি খেয়ে অফিসে যাই। আমারো কফি অনেক পছন্দ।
সিথির হাসিখুশি মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে যায়। আর মনটা খারাপ করে বলে,
সিথিঃ আপনি তো এখন অফিসে যাবেন তাইনা। আমাকে বাসায় একা থাকতে হবে। আমি সারাদিন একা কি করবো??
রিয়াজঃ এক কাজ করতে পারেন।
সিথিঃ কি কি??
রিয়াজঃ বাসায় চলে যেতে পারেন। (মজা করে)
সিথির কাছে রিয়াজের কথাটা বোধহয় পছন্দ হয়নি। তাই ভ্রুকুচকে মুখ ফুলিয়ে কফি নিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে সিথি। রিয়াজের খুব ভালো লাগে যখন সিথি রাগ করে। কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে ওকে। রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ রাগ করলেন নাকি??
সিথি ঘুরে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে রাগী ভাবে বলে,
সিথিঃ রাগ করবো না?? আপনি বলেন আমাকে আপনি বউ হিসেবে চান আর এখন বলছেন চলে যেতে।
রিয়াজঃ ওরে বাবা। আচ্ছা রাগ কইরেন না। আপনার জন্য একটা খারাপ খবর আছে। (মজা করে)
সিথিঃ মানে কিহহ???(অবাক হয়ে)
রিয়াজঃ আজ তো শুক্রবার। সব বন্ধ। হাহাহা।
সিথি রিয়াজের কথা শুনে বোকা হয়ে যায়। খুশী হবে নাকি লজ্জা পাবে বুঝতে পারছে না। রিয়াজ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মজা করে বলে,
রিয়াজঃ আগে লজ্জা পান তারপর খুশী হন। হাহা।
সিথিঃ আচ্ছা সমস্যা নেই। এখন আপনি মজা নিচ্ছেন না আমিও পড়ে সেই মজা নিব। দেইখেন। হুহ।
রিয়াজঃ বাব্বাহ। আচ্ছা দেখা যাবে। এখন বলেন কি খাবেন আজ??
সিথিঃ আপনি যা খাওয়াবেন তাই।
রিয়াজঃ আচ্ছা। তাহলে আমি বাজার করে নিয়ে আসি আপনি বসুন।
সিথিঃ আচ্ছা।
এরপর রিয়াজ বাজারের জন্য বের হতে যাবে সিথি তখন বলে,
সিথিঃ এই যে শুনুন..
রিয়াজঃ জি??
সিথিঃ তাড়াতাড়ি আসবেন।
বলেই দরজা লাগিয়ে দেয়। রিয়াজ বাইরে দাঁড়িয়ে হাসছে। তারপর ও বাজারে চলে যায়। রিয়াজ আজ চিন্তা করেছে সিথিকে ওর পছন্দের ওর হাতের খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করে খাওয়াবে। সাথে বেগুন ভাজা আর ভেজিটেবলস। রিয়াজ সব বাজার করে নিয়ে বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে বেল দিতেই সিথি দরজা খুলে দেয়। রিয়াজ ভিতরে ঢুকে তো পুরো অবাক। পুরো বাসা একদম গুছিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলেছে সিথি। রান্নাঘরে বাজার রেখে রিয়াজ সিথিকে বলে,
রিয়াজঃ আপনি এতো কষ্ট করতে গেলেন কেন?? আমি এসে গুছিয়ে ফেলতাম।
সিথিঃ বউ হয়ে যদি শুধু বসে বসে খাই মানুষ কি বলবে বলুন। তাই আমি যা পেরেছি তাই করেছি। আর আপনি আমার জন্য যা করছেন তার সামনে এসব কিছুই না।
রিয়াজঃ আরে তেমন কিছুনা।
সিথিঃ আচ্ছা আপনার ফোনটা একটু নিতে পারি আম্মুর সাথে কথা বলবো??
রিয়াজঃ অবশ্যই নিন। নিন।
সিথি রিয়াজের কাছ থেকে ফোন নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে বারান্দায় চলে গেল। রিয়াজ ভদ্রতার খাতিরে সিথির কথা শুনার প্রয়োজনবোধ করেনি। প্রায় ২০ মিনিট পর সিথি ফিরে এলো। রিয়াজ ততক্ষণে রান্নার সব কিছু গুছিয়ে ফেলেছে। সিথিকে দেখে রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ কি এখন ভালো লাগছে মায়ের সাথে কথা বলে??
সিথি রিয়াজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আর বলে,
সিথিঃ হুম ভালো লাগছে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি??
রিয়াজঃ অবশ্যই করেন।
সিথিঃ আপনি আমাকে এতো বিশ্বাস করেন কেন?? আপনার কোনো ক্ষতি যদি আমি করি। তখন কি করবেন??
রিয়াজ কাজ করতে করতে হাসি দিয়ে বলে,
রিয়াজঃ আপনার কিছু করার থাকলে কাল রাতেই করতেন। তা না করে আমার সেবা করেছেন। এখন আপনাকে যদি বিশ্বাস না করি তাহলে কাকে করবো বলেন??
সিথিঃ আর যাই বলেন। আপনার ক্ষতি কিন্তু আমি করতে পারি। দেইখেন আপনি।
রিয়াজঃ জীবনে প্রথম মানুষ দেখলাম যে কিছু করার আগেই বলে দিচ্ছে সে কিছু করবে। বাহ।
সিথিঃ জি। এখন বউটাকে রান্না শিখান। নাহলে পড়ে স্বামীকে খাওয়াবো কি??
রিয়াজঃ ক্যান আপনার মার। হাহা। (মজা করে)
সিথিঃ আসেন দি কয়টা। (মজা করে)
রিয়াজঃ আচ্ছা আচ্ছা শিখেন কীভাবে রান্না করছি।
রিয়াজ অনেক ভালোবাসা দিয়ে সিথিকে নিয়ে রান্না শেষ করে। নামাজ পড়ে এসে দুজনে খেতে বসে। রিয়াজ সিথিকে খাবার বেরে দিলে সিথিও রিয়াজকে বেরে দেয়।
রিয়াজঃ থ্যাংকস। নিন এবার খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে??
সিথি রিয়াজের হাতের রান্না খেয়েতো আবারো অবাক। এত্তো মজা হয়েছে যে বলাই বাইরে। সিথি বলে,
সিথিঃ আপনি এত্তো ভালো রান্না শিখলেন কি করে??
রিয়াজ খেতে খেতে বলে,
রিয়াজঃ মায়ের কাছ থেকে। আমার মা খুব ভালো রান্না করে। তাকে সাহায্য করার সময়ই রান্নাটা শিখা হয়ে যায়।
সিথিঃ সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। আর আপনি অনেক ভালো।
রিয়াজঃ অতো না। হাহা।
এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিয়াজ আর সিথি শুয়ে শুয়ে কথা বলছে,
রিয়াজঃ জানেন আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি অবাস্তব লাগছে। এভাবে কোনো এক অপরিচিত মেয়ে এসে আমার সাথে এভাবে থাকবে আমাকে এতো আপন ভাববে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
সিথিঃ হয়তো মেয়েটার কোনো উদ্দেশ্য আছে।
রিয়াজঃ তাই?? তা কি উদ্দেশ্য জানতে পারি??
সিথিঃ সময় হলেই জানবেন।
রিয়াজঃ সেই সময়টা কবে আসবে??
সিথিঃ আসবে আসবে। তবে আপনি জীবনে খুব খুশী হবেন। আপনার বউটা খুব লাকি হবে আপনাকে পেয়ে।
রিয়াজ মনে মনে বলে,
রিয়াজঃ শুধু তুমি হলেই হয়। কিন্তু কে জানে হয়তো আবার চলে যাবে আমাকে মায়া লাগিয়ে।
রিয়াজ সিথিকে বলে,
রিয়াজঃ আপনি আমার সাথে সবসময় থাকবেন??
সিথি যেন স্তব্ধ হয়ে যায় কথাটা শুনে। তারপরও নিজেকে সামলে বলে,
সিথিঃ আপনি রাখবেন এরকম অপরিচিত কোনো মেয়েকে আপনার সাথে??
রিয়াজঃ আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি যতদিন খুশী ততদিন থাকতে পারেন। তবে,
সিথিঃ তবে কি??
রিয়াজঃ না কিছুনা।
সিথিঃ আরে বলুন।
রিয়াজঃ বিয়ে করে থাকতে হবে।
সিথিঃ এহহ আসছে শখ কতো আমাকে বিয়ে করবে। আমি বিয়ে না করেই এখানে থাকবো দেখি কে কি বলে।
রিয়াজঃ এইতো আসল রূপে এসেছেন। এতোক্ষন মনে হচ্ছিলো অন্য কেউ।
সিথিঃ হিহি। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
রিয়াজঃ জি বলুন।
সিথিঃ আপনি কাউকে ভালোবাসেন??
রিয়াজঃ যদি হ্যাঁ বলি।
সিথি একলাফে উঠে বসে। উঠেই রিয়াজের কলার টেনে ধরে আর রাগী ভাবে বলে,
সিথিঃ কে?? কে সেই মেয়ে?? আমি নিজে তাকে মেরে ফেলবো।
রিয়াজ অবাক মানে ঘোর অবাক হয়ে যায়। সিথিকে এভাবে দেখে রিয়াজ অবাক হয়ে যায়। সিথি বলে,
সিথিঃ জিএফ টিএফ থাকলে ভুলে যান বুঝলেন। নাহলে খবর আছে।
রিয়াজঃ কেন?? আমার জিএফ থাকলে আপনার সমস্যা কি??
সিথিঃ আছে সমস্যা আমার। আপনাকে কেন বলবো??
রিয়াজঃ আচ্ছা তাই নাকি। আমার জিএফ কিন্তু অনেক সুন্দর বুঝলেন। একটা অপ্সরা সে। তাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে। এত্তো মায়া তার ভিতরে।
সিথি রিয়াজের কলার ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে অন্য দিকে ফিরে বসে। রিয়াজ বুঝতে পারছে সিথির খারাপ লাগছে। তাই রিয়াজ আস্তে করে ওকে মানানোর জন্য সিথির সামনে আসতেই দেখে সিথি কান্না করছে। রিয়াজ সিথির কান্না দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। সিথি যে এতো কষ্ট পাবে রিয়াজ কল্পনাও করেনি। রিয়াজ দ্রুত সিথির সামনে পুরো এসে কান ধরে বলছে,
রিয়াজঃ সরি সরি…আমিতো মজা করছিলাম। আপনি ছাড়া আমার কোনো মেয়ের সাথে কথাই হয়না জিএফ তো দূরের কথা। সরি প্লিজ কান্না করবেন না।
সিথিঃ সত্যি??
রিয়াজঃ তিন সত্যি।
সিথিঃ কোনো মেয়ে নাইতো??
রিয়াজঃ আছেতো একজন।
সিথি আবার কান্না শুরু করে। রিয়াজ হাসতে হাসতে বলে,
রিয়াজঃ আরে আপনিই তো। বোকা।
সিথিঃ আপনি অনেক পঁচা। এখন আমি কান্না করছি না পড়ে আপনাকেও কান্না করাবো দেইখেন।
রিয়াজঃ আচ্ছা করাইয়েন। কিন্তু এখন আপনি কান্না কইরেন না। কান্না করলে আপনাকে মানায় না। হাসিতে খুব ভালো লাগে।
সিথিঃ তাই??
রিয়াজঃ হুম। আচ্ছা আমার জিএফ আছে শুনে আপনি কান্না করে দিলেন কেন??
সিথি অনেক লজ্জা পাচ্ছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
রিয়াজঃ আমাকে পছন্দ হয়েছে বুঝি??
সিথিঃ মোটেও না। পঁচা লোকদের আমার একটুও পছন্দ না। (অভিমানী কণ্ঠে)
রিয়াজঃ তাই??
সিথিঃ জিইইই। আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে??
রিয়াজঃ একটুও নাহ। আপনি যে প্যারা দেন আপনাকে কে পছন্দ করবে।(মজা করে)
রিয়াজের মনে হলো ও কথাটা বলে মারাত্মক ভুল করেছে। কারণ এরপর সিথি যা ক্ষেপেছে তা বলার বাইরে। রিয়াজের পিঠ আর পিঠ নেই। সিথি রিয়াজের পিঠের উঠে বলে,
সিথিঃ বল শয়তান বেটা আমি প্যারা দি??
রিয়াজঃ না না একটুও দেন না। আমি মজা করেছি। সরিইইই।
সিথিঃ আর করবি এমন মজা??
রিয়াজঃ হ্যাঁ করবো সারাজীবন।
সিথিঃ কিইইইই????
রিয়াজঃ না না করবো না।
সিথিঃ হুম মনে থাকে যেন।
সিথি রিয়াজের কানের কাছে গিয়ে বলে,
সিথিঃ নাহলে সারাজীবন এভাবে পিঠের উপর উঠে পিঠাবো।
রিয়াজঃ আচ্ছা।
এভাবে মিষ্টি মধুর হাসি মজা মারামারি করে সেদিনটা শেষ হয়।
পরদিন সকালে,
রিয়াজ আজ অফিসে যাবে। অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। কিন্তু ও অবাক হচ্ছে সিথিকে দেখে। রিয়াজ ভেবে ছিল সিথি মন খারাপ করবে ও অফিসে যাবে বলে। কিন্তু না সিথিকে বেশ খুশীই মনে হচ্ছে। মিটিমিটি হাসছে। রিয়াজের কেমন জানি ফিল হচ্ছে। রিয়াজ অফিসের জন্য বের হবে ঠিক তখনই সিথি বলে,
সিথিঃ এই যে শুনুন..
রিয়াজঃ জি বলুন।
সিথিঃ আমাকে ২ হাজার টাকা দিন।
রিয়াজ বেশ অবাক হয় আর বলে,
রিয়াজঃ কি করবেন এতো টাকা দিয়ে??
সিথিঃ আপনাকে বলবো ক্যান?? চাইছি দিন। না দিলে কিন্তু…
রিয়াজঃ আচ্ছা বাবা নিন। আর সাবধানে থাইকেন। আমি ছাড়া কেউ আসলে দরজা খুলেবেন না। আর এই ফোনটা রাখুন। অফিস থেকে দিয়েছিল। দরকার হলে কল দিয়েন। প্রথম নাম্বারটা আমার।
সিথিঃ আচ্ছা। এখন যান নাহলে দেরী হবে।
রিয়াজের মনটা কেমন জানি করছে। সিথির অদ্ভুত আচরণ রিয়াজকে ভাবাচ্ছে। এতোদিন কি ভালোবাসায় আগলে রেখেছে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর রিয়াজ একরাশ চিন্তা নিয়ে অফিসে চলে যায়। কেন জানি অন্ধের মতো বিশ্বাস করে রিয়াজ সিথিকে।
রাত ৮.৪৩ মিনিট,
রিয়াজ অফিস শেষ করে ঢাকার কঠিন জ্যাম পার করে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। লিফট ৪ তলায় থামতেই রিয়াজ বেরিয়ে আসে। সোজা নিজের ফ্ল্যাটের সামনে চলে যায়। রিয়াজ ওর ফ্ল্যাটের সামনে এসে যেন থমকে যায়। রিয়াজে হাতে একটা ব্যাগ ছিল। ব্যাগের ভিতর সিথির জন্য একটা জিনিস এনেছে। কিন্তু আজ কি সে জিনিসটা সিথিকে দিতে পারবে?? রিয়াজ দেখছে ওর ফ্ল্যাটের দরজা খুলা। রিয়াজের মাথায় হাজারটা খারাপ চিন্তা ঘুরছে। ও নিজেকে শুধু বুঝানোর চেষ্টা করছে। রিয়াজ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে সব অন্ধকার। কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। যেমনটা রিয়াজ সিথি আসার আগে পেতো। রিয়াজ সব ভুলে শুধু সিথিকে ডাকছে। ভীতু কণ্ঠে সিথিকে ডাকছে। কিন্তু কারো কোনো শব্দ আসছে না। রিয়াজের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর সব শেষ। তাহলে কি সিথির উদ্দেশ্য পূরণ করে চলে গেল??
চলবে….
কি হতে পারে সামনে বলে আপনার মনে হয় জানাবেন কিন্তু। আর সবার বেশি বেশি সাড়া চাই। সাথে থাকবেন।