অতিথি_পাখি পর্বঃ ০৩
লেখকঃ আবির খান
তাই তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে এসে রুমে ঢুকতেই রিয়াজ পুরো বোকা। কারণ মেয়েটি গভীর ঘুমে মগ্ন। রিয়াজ নিষ্পলক চোখে মেয়েটির পানে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর মায়াবী মুখখানা তার। রিয়াজ মেয়েটির গায়ে মোটা লেপটা টেনে দিয়ে পাশে বসে। ও মেয়েটিকে দেখছে আর ভাবছে,
রিয়াজঃ বাসে প্রথম দেখাই ওর প্রতি কেমন এক মায়া জমে যায়। সেই মায়ার খাতিরে সে এখন আমার বিছানায় দিব্বি আরাম করে ঘুমাচ্ছে। এখন আমি ঘুমাবো কোথায়?? (অসহায় ভাবে)
রিয়াজ নিজেকে এই প্রশ্ন করে আবার নিজেই হাসছে। মেয়েটার দিকে তাকালেই রিয়াজের কেমন জানি একটা ভালো লাগা কাজ করে। রিয়াজ আবার ভাবে,
রিয়াজঃ আচ্ছা আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি?? এও কি বাস্তব?? বাসে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অপরিচিত মেয়েটা এখন আমার বাসায়। আর আমি চুপচাপ তার সামনে বসে আছি!! আমাকে কি এই কনকনে শীতের তীব্রতা পেয়ে বসেছে?? নাকি এটা একটা কল্পনা?? বাসের সেই রূপসী মেয়েটা সত্যিই কি আমার সামনে?? কেন জানি সবকিছু রহস্য আর অবাস্তব লাগছে। এই শীতের রাতে কে এই রমনী যার ঠিকানা আমার কাছেই হলো?? কে ও?? কেনই বা এভাবে অজ্ঞান হলো?? কেনই বা ও না খেয়ে ছিল?? গরীব বলে মনে হয় না। ধনীই হবে। তাহলে কেন আমার বাসায় আসলো??
এরকম হাজারো প্রশ্ন রিয়াজ নিজেকে করে পুরো রাত। এসব প্রশ্নের উত্তর রিয়াজ না পেয়ে কোন একসময় ও ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে,
মেয়েটার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। চোখে খুলে সামনে তাকিয়ে যেন মেয়েটা হতবাক। কারণ ও দেখছে, রিয়াজ কাঠের চেয়ারটাই বসে বসে কোন রকম ঘুমাচ্ছে। মেয়েটার এই দৃশ্য দেখে প্রচন্ড খারাপ লাগার পাশাপাশি মায়াও হয়। নিজের প্রতি অনেক রাগ হয় মেয়েটার। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ওর খেয়ালই নেই। ব্যাচেলার ছেলেটা নিজের বিছানা লেপ ছাড়াই এই কনকনে শীতের রাতটা পার করেছে। মেয়েটা দ্রুত উঠে বসে। উঠে রিয়াজের কাছে এগিয়ে যায়। গিয়ে রিয়াজকে ডাক দেয়।
মেয়েঃ এই যে মিস্টার…উঠুন.. ও হ্যালো.. আছেন?? নাকি…
রিয়াজের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ওর কাছে। রিয়াজ বলে উঠে,
রিয়াজঃ জি বলুন কোন সমস্যা??
মেয়েঃ অবশ্যই সমস্যা। আপনি এখানে ঘুমিয়ে আছেন কেন?? রাতে আমাকে ডাক দিতেন।
রিয়াজঃ আরে সমস্যা হয়নি। আপনি ক্লান্ত ছিলেন তার উপর অসুস্থ। আর এতো গভীর ঘুমে ছিলেন যে ডাকার ইচ্ছাটাই কাজ করেনি।
মেয়েঃ আপনি আসলেই একটা পাগল। শুনেন, এতো ভালো মানুষ হতে যাবেন না বুঝলেন?? নাহলে প্রেমে পড়ে যাবে।
রিয়াজঃ কে??(অবাক হয়ে)
মেয়েঃ তা আপনাকে বলব কেন??
বলেই মেয়েটা ফ্রেশ হতে যেতে নিলে রিয়াজ বলে উঠে,
রিয়াজঃ এই যে শুনুন, আপনার নামটাই তো জানা হলো না। বলবেন??
মেয়েঃ সিথি। শ্রাবন্তী আক্তার সিথি। আপনার??
রিয়াজঃ বাহ খুব সুন্দর নাম। আমি রিয়াজ আহমেদ।
সিথিঃ নাইস নেইম।
বলেই সিথি ফ্রেশ হতে চলে যায়। রিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে জমে থাকা শরীরটাকে ব্যায়াম করে গরম করে। কিছুক্ষণ পরই সিথি বাইরে বেড়িয়ে আসে৷ আসলেই রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ আপনি রেডি হন আমিও রেডি হয়ে আসছি। তারপর আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আমি অফিসে চলে যাবো।
সিথি ভ্রুকুচকে আস্তে আস্তে রিয়াজের একদম কাছে এসে কোমড়ে দুহাত দিয়ে প্রশ্ন করে,
সিথিঃ আমি বাসায় যাবো আপনাকে কে বলেছে??
রিয়াজঃ কি বলেন আপনি আপনার বাসায় যাবেন না??(আশ্চর্য হয়ে)
সিথিঃ না আমি এখানেই থাকবো। আর যতদিন খুশী ততদিন থাকবো।
বলেই সিথি বিছানায় গিয়ে বসে। রিয়াজ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাও জোর দিয়ে বলে,
রিয়াজঃ আপনি পাগল হয়েছেন?? আমি একজন ব্যাচেলর ছেলে। বাড়িওয়ালা বা অন্যকেউ দেখলে আমাকে এখান থেকে লাথি মেরে বের করে দিবে৷ আপনি উঠুন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবো। চলুন বলছি।
সিথিঃ হ্যাঁ চলুন চলুন। তার আগে সবার সাথে একটু দেখা করে যাই। কারণ এরপর না আমাকে আপনি দেখবেন না তারা। সোজা উপরে।
রিয়াজ ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে উপরে তাকায় অসহায় ভাবে৷ আর মনে মনে বলে,
রিয়াজঃ আল্লাহ এ আমি কোন বিপদে পড়লাম!! আমাকে রক্ষা করো।
সিথিঃ যান আগে নাস্তা নিয়া আসেন। আমার ক্ষুধা লেগেছে।
রিয়াজঃ আচ্ছা আপনার আসল উদ্দেশ্যটা কি বলেন তো?? কেন আমার ঘাড়ের ওপর এসে উঠেছেন??
সিথিঃ এতো কিছু জানতে নেই। সময় হলে সব বুঝবেন আর জানতে পারবেন। তবে আমি এখানে বেশ কদিন আছি।
রিয়াজঃ কিহহ!! কেন?? এ অসম্ভব।
সিথিঃ সবই সম্ভব। দেখি আপনার ফোনটা দিনতো আমাকে।
রিয়াজঃ কেন??
সিথিঃ কল করবো।
রিয়াজঃ আচ্ছা আচ্ছা বিএফ এর সাথে যাবেন আগে বলবেন না। নিন নিন কল দিন।
সিথি রাগ দেখিয়ে এই বলতে বলতে ফোনটা নেয়,
সিথিঃ আমার কোন বিএফ টিএফ নাই।
রিয়াজ বোকার মতো বসে আছে। সিথি কাকে যেন কল দিলো। তারপর,
সিথিঃ হ্যালো দোস্ত, আরে আছি আছি ভালোই আছি। তোরা চিন্তা করিস না। আর কাউকে কিছু বলিস না। তুই লেকচার গুলা তুলে রাখিস। আমি আসলে যেন সব পাই…আচ্ছা রাখি এখন। বাই।
সিথিঃ নিন আপনার ফোন। থ্যাংকস।
রিয়াজ ফোন নিয়ে সিথিকে বলে,
রিয়াজঃ এটা স্পষ্ট আপনি বাসা থেকে পালিয়েছেন। নিশ্চয়ই বিয়ের জন্য তাই না??
সিথিঃ বলেছিনা সময় হলে সব বলবো। যান নাস্তা নিয়ে আসুন। সেই কখন নাস্তা আনতে বলেছি। (ধমকের সুরে)
রিয়াজ ঠোঁটে কামড় দিয়ে সোয়েটারটা পরে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে নাস্তা আনতে চলে যায়। রিয়াজ সবসময় অফিসেই নাস্তা খায়। আজ বাইরে থেকে কিনে আনতে হলো। নাস্তা নিয়ে এসে সিথিকে দিয়ে রিয়াজ ফ্রেশ হতে চলে গেল। বাইরে আসতেই দেখে ওর নাস্তা সুন্দর করে বেরে রেখেছে সিথি।
সিথিঃ নিন আপনিও খেয়ে নিন।
রিয়াজঃ বাহ!! খুব উপকার করছেন আমার।
সিথি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। রিয়াজের খাওয়া শেষ হলে সিথি ওর নাস্তার প্লেট রান্নাঘরে রেখে আসে। রিয়াজ বেশ অবাক হলো এই আচরণে। রিয়াজ হাত ধুয়ে আসতেই সিথি আস্তে আস্তে রিয়াজের কাছে আসে। রিয়াজের শ্বাস আটকে আসছে। এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এত্তো কাছে কেমন নার্ভাস লাগছে। সিথি রিয়াজকে বলে,
সিথিঃ আজ আপনি অফিসে না গেলে কি খুব সমস্যা হবে??
রিয়াজ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
রিয়াজঃ কেন??
সিথিঃ কেন আবার কি…আমার কাছে পরনের এই জামা ছাড়া আরতো কিছু নেই। আর কতক্ষন একই জামা পড়ে থাকবো বলুন?? তাই আপনাকে নিয়ে একটু শপিং এ যাবো।
রিয়াজঃ সবই বুঝলাম। বাট টাকা কে দিবে??
সিথি খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে,
সিথিঃ আমি আছি কার বাসায়??
রিয়াজঃ আমার।
সিথিঃ আমাকে শপিং এ নিয়ে যাবে কে??
রিয়াজঃ আমি।
সিথিঃ তো শপিং এর টাকা দিবে কে??
রিয়াজঃ আমি??
সিথিঃ জি হ্যাঁ আপনি। হাহা।
রিয়াজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটাকে বাসা থেকে যে বের করে দিবে সে উপায়ও নেই। আবার কিনা কি করে বসে। তাই মেয়েটার কথা শুনা ছাড়া কোন রাস্তা নেই। রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ যদি অফিস থেকে ছুটি দেয় তাহলে। নাহলে আমাকে এখনই অফিসে যেতে হবে।
সিথিঃ আচ্ছা।
রিয়াজ বারান্দায় গিয়ে কথা বলে মন খারাপ করে আসে। সিথি বুঝতে পারে ছুটি দেয় নি। তাই বলে,
সিথিঃ আচ্ছা সমস্যা নেই আমি ম্যানেজ করে নিব। আপনি অফিসে যান।
বলেই মন খারাপ করে বিছানায় গিয়ে বসে। রিয়াজ এবার অট্টো হাসি হাসা শুরু করে। সেকি হাসি। সিথি অবাক হয়ে রিয়াজের হাসি দেখছে। তারপর ভ্রুকুচকে বলে,
সিথিঃ একি আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি?? এভাবে হাসছেন কেন??
রিয়াজঃ আপনাকে দেখে। হাহা। যান রেডি হন। ছুটি পেয়েছি। মজা নিচ্ছিলাম। হাহা।
সিথি উঠেই রাগী ভাবে রিয়াজের পিঠে মারা শুরু করে। রিয়াজ পুরো বোকা চৌধুরী হয়ে যায়। রিয়াজ বলে উঠে,
রিয়াজঃ ওমাগো লাগছে তো।
সিথিঃ লাগুক। আমি কত কষ্ট পেয়েছি জানেন?? এক জামা পরে সেই কাল থেকে আছি। আর আপনি?? আবার এমন করলে একদম খবর আছে।
সিথি রেডি হতে গিয়েছে ওয়াশরুমে আর রিয়াজ বাইরে রেডি হতে হতে ভাবছে,
রিয়াজঃ মেয়েটা এতো সহজে আমাকে এতো আপন করে নিচ্ছে। আমার সাথে দিব্বি থাকছে। ব্যাপারটা কি?? আদও কি এ সম্ভব?? মেয়েটা এমন ক্যান??
সিথিঃ চলুন।
সিথি সুন্দর করে চুলটা আঁচড়ে মুখটা ধুয়ে মুছে বেরিয়ে এসেছে। সিথির এই সাধারণ লুকটাই রিয়াজের খুব নজর কাড়ছে। সিথি কাছে এসে বলে,
সিথিঃ আমাকে দেখা হলে যেতে পারি এখন??
রিয়াজ অনেকটা লজ্জা পায়। আর বলে,
রিয়াজঃ হ্যাঁ চলুন চলুন।
রিয়াজ দরজা খুলেই যেই না বাইরে বের হয় ওমনি বাড়িওয়ালা ওদের সামনে এসে পরে। রিয়াজ বাড়িওয়ালাকে দেখে পাথর হয়ে যায়। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। বাড়িওয়ালা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে,
বাড়িওয়ালাঃ রিয়াজ এই মেয়েটা কে?? আর তোমার সাথে কেন??
রিয়াজ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাশ থেকে সিথি রিয়াজের হাত জড়িয়ে ধরে সালাম করে বলে,
সিথিঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি উনার স্ত্রী সিথি। কিছুদিন আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজই আমরা এসেছি। আপনাকে বলতে পারেনি বলে লজ্জা পাচ্ছে।
বাড়িওয়ালাঃ ওও তাই বলো। খুব মিষ্টি তো তুমি মা। রিয়াজ বাবা দাওয়াত দিয়ে কিন্তু মা’টার হাতের রান্না খাওয়াতে হবে।
রিয়াজ সিথির কান্ড দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সিথি কনুই দিয়ে গুতো দিলে রিয়াজ বলে উঠে,
রিয়াজঃ জি জি আঙ্কেল অবশ্যই। ও খুব ভালো রান্না করে। ওর রান্না খেয়ে আপনি আর জীবনেও ভুলবেন না। (রসিকতার স্বরে)
সিথি রাগীভাবে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বাড়িওয়ালাকে বলে,
সিথিঃ জি আঙ্কেল আসবেন কিন্তু।
বাড়িওয়ালাঃ আসবো আসবো। সময় হলেই চলে আসবো। তা তোমরা বোধহয় কোথায় যেন যাচ্ছিলে যাও।
বলেই বাড়িওয়ালা উপরে চলে গেল। রিয়াজ স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। আর এদিকে সিথি হাসতে হাসতে শেষ। রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ গতকালকে গার্লফ্রেন্ড আর আজকে বউ। এরপর কি হবেন ভেবে রেখেছেন??
সিথিঃ হ্যাঁ।
রিয়াজঃ কি?? (অবাক হয়ে)
সিথিঃ আপনার বাচ্চার মা। হাহা। (মজা করে)
রিয়াজ হাসবে না কাঁদবে কিঋুই বুঝতে পারছে না। রিয়াজ ধরেই নিয়েছে এই মেয়ের মাথার বড় সমস্যা আছে। রিয়াজ আর সিথি হাসাহাসি করতে করতে একটা রিকশা নিয়ে মার্কেটের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
আজ জীবনে প্রথম রিয়াজ ওর মা আর বোন বাদে কোনো অপরিচিত মেয়ের সাথে রিকশায় উঠেছে। রিয়াজের কেমন জানি লাগছে। গলা শুকিয়ে আসছে৷ সিথি আর রিয়াজের মাঝে কোনো দূরত্বই নেই। রিকশা তার আপন গতিতে চলছে। রিয়াজের কানে যেন বাইরের কোনো শব্দই আসছে না। রিয়াজ আড় চোখে বার বার সিথিকে দেখছে। সিথি তাকালেই রিয়াজ অন্যদিকে তাকাচ্ছে। সিথি বিষয়টা খুব মজা পাচ্ছে। সিথি এবার যা করলো তার জন্য রিয়াজ কেন রাসেল ভাই নিজেও প্রস্তুত ছিলেন না। সিথি হঠাৎই রিয়াজের হাতটা শক্ত করে ধরে। রিয়াজ আশ্চর্য হয়ে একবার হাতের দিকে একবার সিথির দিকে তাকাচ্ছে। সিথি অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে। রিয়াজের পুরো শরীর হীম দিয়ে আসছে। কেমন ভৌতিক হাসি দিচ্ছে একটু পর পর খুশীতে৷ রিয়াজের এই অনুভূতি লিখে কখনোই বুঝানো যাবে না। হঠাৎ সিথি বলে উঠলো,
সিথিঃ হাত কেন ধরেছি জানেন??
রিয়াজ লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
রিয়াজঃ কেন??
সিথি অন্যদিকে ফিরে একটু হেসে বলে,
সিথিঃ যদি রিকশা থেকে পড়ে যাই তাই।
রিয়াজ এই কথা শুনা মাত্রই ওর মুখে যেন রাতের সব আঁধার নেমে আসে। রিয়াজ আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
রিয়াজঃ তাহলে রিকশা ধরে বসুন আমাকে ধরতে হবে না।
সিথির যে তখন যা হাসি পাচ্ছিলো না তা বলার বাইরে। সিথি আবারও রিয়াজের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
সিথিঃ এহহ আসছে, আমি যদি রিকশা ধরেও পড়ে যাই তখন তো একা পড়বো। কিন্তু আপনাকে ধরে থাকলে একসাথে পড়বো। সেটাই ভালো।
রিয়াজ স্তব্ধ হয়ে যায় তার যুক্তি শুনে৷
রিয়াজঃ আপনি একটা পাগল। সাথে আমাকেও বানাচ্ছেন।
সিথিঃ তা আর বলতে হয়। হাহা।
এরপর রিয়াজ সিথিকে অনেক শপিং করিয়ে দেয়। সাথে অনেক কিছু কিনেও দেয়৷ সিথি নিতে চাচ্ছিলো না। তাও রিয়াজ জোর করে অনেক কিছু কিনে দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলো, নীল শাড়ী আর চুড়ি। সিথিও বেশ অবাক হয়েছে। এরপর দুপুর আর রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাত ৮ টার দিকে ওরা বাসায় আসে।
বাসায় আসতেই রিয়াজের কেন জানি প্রচন্ড শীত করছে। সিথি নতুন জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে। রিয়াজও জামা কাপড় চেঞ্জ করে বসে আছে। সিথি বের হলেই ফ্রেশ হতে যাবে। কিন্তু রিয়াজের আজ অনেক শীত করছে। হাত-পা ও কেমন কাঁপছে। অথচ বাইরে অতটা শীত নেই৷ রিয়াজ বুঝতে পারছে না ওর কি হয়েছে। সিথি নতুন জামা পড়ে ইচ্ছা করেই ঘুরে রিয়াজকে দেখাচ্ছে। রিয়াজ আবির খানের গল্প পড়তো। সেখান থেকেই জানা মেয়েদের সঠিক সময়ে সঠিক প্রশংসা করলে তারা অনেক খুশী হয়। তাই রিয়াজ বলল,
রিয়াজঃ জামাটায় আপনাকে অনেক মানিয়েছে। অনেক সুন্দর লাগছে।
সিথি অনেক খুশী হয়ে রিয়াজের কাছে এসে বসে বলে,
সিথিঃ তাই না?? আমারও এটা অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনিই তো এটা পছন্দ করে দিলেন। আমার খুব পছন্দ হয়েছে এই জামাটা। থ্যাঙ্কিউ। (অনেক খুশী হয়ে)
রিয়াজঃ ওয়েলকাম। এখন আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি বসুন।
সিথিঃ আচ্ছা।
রিয়াজ ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে ভাবছে আজ কোথায় ঘুমাবে। লেপ ও একটা। বিছানাও একটা। আর ওর কেন জানি অনেক শীত করছে আজ। সিথি বলে উঠে,
সিথিঃ দেখুন, গতরাতে আপনি অনেক কষ্ট করেছেন।আজ কিন্তু তা আর হবে না।
রিয়াজঃ তাহলে কীভাবে ঘুমাবেন??
সিথিঃ কোলবালিশটা মাঝে দিয়ে আপনি ওইপাশে আমি এই পাশে ব্যাস।
রিয়াজঃ এতোটা বিশ্বাস করছেন আমাকে?? যদি খারাপ কিছু করে ফেলি।
সিথিঃ যেই ছেলে একটা মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েও তার কোনো ক্ষতি না করে বরং তাকে ডাক্তার দেখিয়ে তাকে আবার নিজ বাসাই কোনো কিছুর পরোয়া না করে জায়গা দিতে পারে সে কখনো আমার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করবে না।
রিয়াজঃ অনেক বেশি বলছেন। তবে হ্যাঁ আপনার কোনো ক্ষতি আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু আপনিই…
সিথিঃ কিইই…কি আমি কি??
রিয়াজঃ হাহা কিছুনা।
বলেই রিয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে। কিন্তু এদিকে সিথির ঘুম আসছে না। ওর খুব ইচ্ছা হচ্ছে রিয়াজের সাথে একটু গল্প করতে। তাই সিথি রিয়াজকে ডাক দেয়। কিন্তু ও না উঠলে যখন সিথি রিয়াজের গায়ে হাত দিয়ে ডাক দেয়….
চলবে…
কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আর সাথে থাকবেন সবসময়।