অতিথি পাখি পর্বঃ ০৫

0
1929

অতিথি পাখি পর্বঃ ০৫
লেখকঃ আবির খান

রিয়াজের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর সব শেষ। তাহলে কি সিথির উদ্দেশ্য পূরণ করে চলে গেল?? এই প্রশ্ন মাথায় নিয়েই রিয়াজ যখন লাইটের সুইচটা অন করলো, রিয়াজ যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। রিয়াজের বিশ্বাস হচ্ছে না এটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব। লাইট অন করতেই সিথি চিৎকার করে বলে উঠে,

সিথিঃ সারপ্রাইজ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ..হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিস্টার রিয়াজ.. হ্যাপি বার্থডে টু…

বলার আগেই রিয়াজ সিথিকে জড়িয়ে ধরে। ওর চোখ অশ্রুতে ভরা। রিয়াজের জানে জান এসেছে শুধুমাত্র সিথিকে দেখে। একটু আগে সিথিকে না দেখে রিয়াজের দুনিয়া যেন থমকে গিয়েছিল। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু এখন সিথিকে পেয়ে রিয়াজের নিজেকে সবচেয়ে বেশি খুশী মনে হচ্ছে। এই অল্প সময়ে সিথির প্রতি রিয়াজের যে মায়া জমেছে তা হিসাব করা খুব কঠিন।

অন্যদিকে সিথিও অবাক হয়ে গিয়েছে রিয়াজের কান্ড দেখে। ও রিয়াজকে শক্ত করে বাহুডোরে আঁকড়ে আছে। সিথি রিয়াজকে ছেড়ে প্রশ্ন করে,

সিথিঃ আপনি কাঁদছেন কেন?? কি হয়েছে??

রিয়াজ অশ্রুসিক্ত চোখে সিথির নেশা লাগানো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

রিয়াজঃ ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছি আপনি চলে গিয়েছেন আমাকে আবার একা করে।

সিথিঃ যাই নি। আপনাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে এই বন্দবস্ত করেছি।

এবার রিয়াজ সিথিকে জড়িয়ে ধরে রেখেই আসেপাশে তাকিয়ে দেখে, অনেক সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছে। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রিয়াজ লিখা। অনেক বেলুন আরো অনেক কিছু। রিয়াজ অবাক হয়ে সিথিকে বলে,

রিয়াজঃ আজ আমার জন্মদিন আপনি কি করে জানলেন??

সিথিঃ কিছু জিনিস বলতে নাই। এমনি এমনিই জেনেছি হিহি।

রিয়াজ সিথিকে জড়িয়ে ধরে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথে সিথিও। চারদিকটা একদম চুপচাপ। জানালা দিয়ে মিষ্টি ঘ্রাণের ঠান্ডা বাতাস এসে ওদেরকে স্পর্শ করে পালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে গাড়ির হর্নের আওয়াজ হালকা ভেসে আসছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, এ এক অন্যরকম মূহুর্ত। দুজনের চোখ দুজনকে বলে দিচ্ছে তারা একে অপরকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে।

একে অপরের প্রতি যখন মায়া জমে যায় ঠিক তখনই না ভালোবাসাটার আসল অনুভূতিটা উপলব্ধি করা যায়। মুখে হাজার কেন কোটি বার “ভালোবাসি” বললেও সে ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। কিন্তু ঠিক যখন “ভালোবাসি” না বলেও একে অপরের প্রতি এক গভীর মায়া জমে যায় সেটাই হলো আসল “ভালোবাসা”। এই ভালোবাসায় মিশে আছে অনেক কিছু; রাগ, দুঃখ, অভিমান, প্রেম, সম্মান, শ্রদ্ধা, তাকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা, তাকে নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন। সত্যি
কারের ভালোবাসায় নিস্তব্ধতাও অনেক কিছু বলে দেয়।

সিথিঃ কেকটা কাটতে পারি?? আমাকে এতো দেখলে তো নজর লাগবে নাহলে কালো হয়ে যাবো।

রিয়াজ আর পারলোই না। হাসতে হাসতে বেচারা আবার সিথিকে জড়িয়ে ধরে চোখটা মুছে হাসি মুখে বলল,

রিয়াজঃ জি আসেন একসাথে কাটি।

সিথিও খুশী হয়ে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে বলল,

সিথিঃ উয়িশ করে ফু দেন।

রিয়াজ মনে মনে বলল, ” আল্লাহ আমার পরিবারকে সবসময় ভালো রেখো আর আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সবসময়ের জন্য আমার করে দিও।”

বলেই এক ফুতে মোমবাতি নিভিয়ে দিল। সিথির হাতে ছুড়ি দিয়ে উপর থেকে রিয়াজ ধরে। সিথি খুব খুশী হয়। এরপর ওরা একসাথে কেকটা কাটে। রিয়াজ সবার আগে সিথিকে এক বাইট খাইয়ে দেয়। সিথিও রিয়াজকে খাইয়ে দেয়। দিয়েই রিয়াজের গালে আর নাকে কেক লাগিয়ে দেয় মজা করে।

রিয়াজও অল্প একটু ক্রিম নিয়ে সিথিকে লাগানোর জন্য ওর পিছনে দৌঁড় শুরু করে। সিথি তো লাগাতে দিবেই না। রিয়াজও কম না। দৌঁড়ের একপর্যায় সিথি বিছানার উপর পড়ে যায় আর রিয়াজ ওর উপর। ওদের মাঝে চার আঙুলের দূরত্ব। সিথি অনেক লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় মায়াবী মুখখানা গোলাপি আভা পেয়েছে। রিয়াজ বাকা হাসি দিয়ে সিথিরও গালে আর নাকে ক্রিম লাগিয়ে দেয় ওর গাল আর নাক লাগিয়ে। সিথি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেমন ছটফট ছটফট করছে সিথি। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। রিয়াজের খুব ইচ্ছে হচ্ছে সিথির ঠোঁটটায় একটু ছুয়ে দিতে। কিন্তু নাহ!! বিয়ের আগে রিয়াজ কখনোই এসব করতে চায় না। সবকিছুর একটা লিমিট আছে। রিয়াজ উঠে বসে সাথে সিথিকেও টেনে বসিয়ে দেয়। রিয়াজ উঠে সিথির জন্য পানি নিয়ে আসে। সিথি ডগডগ করে পানি খেয়ে ফেলে। পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়। এবার রিয়াজ সিথির সামনে ফ্লোরে বসে ওর হাতটা ধরে বলে,

রিয়াজঃ আজ কেন অন্ততকাল ধন্যবাদ দিলেও তা কম হবে। তাই ধন্যবাদ দিয়ে আপনার এই কষ্টকে আমি ছোট করবো না। তবে আপনাকে খুশী করার জন্য আমি আজ আগে থেকেই আপনার জন্য কিছু নিয়ে এসেছি।

সিথি এতো সুন্দর মনের মানুষটাকে কাছে পেয়েতো এমনিই খুশী। তার উপর এটা শুনে ডাবল খুশী। সিথি বলে,

সিথিঃ কি কি??

রিয়াজ ওর পকেট থেকে একটা ছোট লম্বা গিফট র‍্যাপ করা বক্স বের করে সিথির হাতে দেয়। সিথি দ্রুত খুলে দেখে একটা দামী ব্রেসলেট। খুব সুন্দর। সিথির অনেক পছন্দ হয়েছে। সিথি লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

সিথিঃ পরিয়ে দিন।

রিয়াজ খুশী হয়ে ব্রেসলেটটা পরিয়ে দেয়। সিথির হাতে খুব মানিয়েছে। সিথি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে আর হাসছে। এ অমূল্য হাসিটুকু আর খুশী দেখার জন্যই রিয়াজ ব্রেসলেটটা কিনেছে। রিয়াজ মুগ্ধ হয়ে শুধু সিথিকে দেখছে। সিথি এবার রিয়াজের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিয়াজের গাল দুটো টেনে ধরে সিথি বলে,

সিথিঃ আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।

রিয়াজঃ কি??(অবাক হয়ে)

সিথি রিয়াজকে রান্নাঘরে নিয়ে যায়।

সিথিঃ দেখেন।

রিয়াজ দেখে সিথি ভাত,ডাল, ডিম ভুনা রান্না করেছে। রিয়াজ অবাক হয়ে বলে,

রিয়াজঃ কীভাবে রান্না করলেন?? হাত পুড়েনি তো আবার দেখি দেখি?? (অস্থির হয়ে)

সিথিঃ উফফ এত্তো কেয়ার। ইউটিউব বাবার হেল্প নিয়ে রান্না করেছি। জানেন ইউটিউবে ভাত রান্নারও রেসিপি আছে।

রিয়াজঃ কি বলেন!! হাহা। আজতো আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। সত্যি আমি আজ অনেক খুশী। আমার বেস্ট জন্মদিন ছিল আজ।

সিথিঃ হুম হয়েছে। যান ফ্রেশ হয়ে আসেন। খেয়ে আপনার সাথে কথা আছে।

রিয়াজঃ আচ্ছা।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিয়াজ আর সিথি কফি হাতে জানালার পাশটাতে বসে। বাহিরের তীব্র ঠান্ডায় থাইগ্লাসটা জমে আছে। বাহিরের কিছুই দেখা যায়না। গরম ধোঁয়া উঠা কফি হাতে দুজন একসাথে চুমুক দেয়। প্রথমে সিথি বলে,

সিথিঃ আপনি তখ…

রিয়াজঃ আচ্ছা আর কত আমরা আপনি আপনি করবো?? এবার তুমিতে আসা যায়না??

সিথি হাসি দিয়ে বলে,

সিথিঃ আচ্ছা তুমি। এখন বলো তো তখন বললে কেন, তোমাকে আবার একা করে দিয়েছি। তারমানে আগে কেউ তোমাকে একা করেছে??

রিয়াজ কিছুক্ষন চুপ করে কফির উড়ে যাওয়া ধোঁয়া গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। তারপর বলে,

রিয়াজঃ হুম ছিল একজন।

সিথিঃ বলবে কি হয়েছিল??

রিয়াজঃ কোনো এক হেমন্তের দিনে তাকে আমি প্রথম পেয়েছিলাম। সে ছিল খুব কষ্টে। তার সব কষ্ট, দুঃখকে নিজের করে তাকে বানিয়ে ছিলাম আমার পৃথিবী। সে ছিল আমার একাকিত্বের সঙ্গী। তখন চারদিকে হাজার জন থাকলেও তাদের মাঝে সে ছিল অন্যতম। খুব ঝগড়া রাগারাগি আর অভিমান চলতো আমাদের মাঝে। জানো, ও আমাকে খুব সন্দেহ করতো। ওর কাছে অন্য মেয়ের কথা বললেই ও রাগ করতো অভিমান করতো। আমার রাগটা একটু বেশী থাকায় ওর সাথে লেগে যেতাম। ৪/৫ বার ব্রেক আপ করেছি। কিন্তু বেশীক্ষন দূরে থাকতে পারিনি। জানো রোজ রাতে নিয়ম করে ও আমাকে কল দিত। অনেক কথা হতো। কি যে এতো কথা হতো আমরা জানতামই না। ওর কণ্ঠ শুনলে মনে এক আলাদা শান্তি পেতাম। ওকে কখনো বুঝতে দিতাম না যে আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি। ও আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসাটাই বাসত। আসলে বেসে ফেলেছিল। আমি ওকে বলেছিলাম, আমরা সেইম ক্লাসে। হয়তো কোনোদিন এক হওয়া হবে না। তাই আমাকে ওভাবে নিও না। কিন্তু ও যেন আমাকে ভালো না বেসে শান্তি পাচ্ছিলো না। আমি বাবু বলে ডাক দিলেই ও “ভালোবাসি” বলে উঠতো। আমার বলতেও হতো না। ও সব বুঝে যেত। খুব কান্না করতো আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমার বরিশালের জোকগুলো ওকে খুব হাসাতো। ওর সেই হাসি আজও আমার কানে ভেসে আসে। আমি জানতাম না আমি ওকে সত্যিকারের ভালোবাসে ফেলেছিলাম কিনা। কিন্তু ওকে ছাড়া ভালো লাগতো না। ওকে ছাড়া ভালো লাগতো না। ভালো লাগতো না…

রিয়াজের চোখগুলো অশ্রুতে ভরে আছে। বিশাল বড় এক ঢেউ অপেক্ষা করছে আঁছড়ে পড়ার। সিথি বলে উঠলো,

সিথিঃ সে এখন কোথায়??

রিয়াজঃ এরকম কোনো এক শীতে সে হঠাৎ সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর যখন ফিরে আসে তখন বলে,”আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আমায় মাফ করে দিও।” আমার দুনিয়া তখন যেন মূহুর্তেই থমকে যায়। আমি জানতাম এমন একটা সময় হয়তো কখনো আসবে। কিন্তু এত্তো জলদি অাসবে কখনো ভাবিনি। আমার তখন কোনো চাকরি বা কাউকে বিয়ে করার যোগ্যতা আমার ছিল না। কিন্তু ওর বিয়েটারও খুব প্রয়োজন ছিল। ওর পরিবার খুব দরিদ্র ছিল। তাই ওকে বলেছিলাম সেদিন,”বিয়েটা করে ফেলো।” সেদিন থেকে আজও আমি একা। জানো আমি খুব শক্ত একটা মানুষ। কিন্তু ওর স্মৃতি মনে পড়লে অশ্রুগুলোকে আটকাতে পারিনা। আজ অনেকটা বছর কেটে গিয়েছে। ওর মতো আমি অনেকের মাঝে খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একমাত্র তুমিই কিছুটা ওর মতো। তাই কোনো কিছুর পরোয়া না করে তোমায় যায়গা দিয়েছি আমার এই ছোট্ট দুনিয়ায়।

সিথির চোখগুলো যে কবে অশ্রুতে ভরে গিয়েছে তা ও খেয়ালই করেনি। রিয়াজের অশ্রুর ঢেউ সেই কবেই আঁছড়ে পড়েছে। সিথি রিয়াজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনেকটা সময়। এরপর ছেড়ে দিয়ে সিথি বলে,

সিথিঃ জানো আমাদের জীবনটা খুব অদ্ভুত। আমাদের একাকিত্ব দূর করনের জন্য মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এমন একজন মানুষ আসে। কিন্তু সে তোমার লাইফ পার্টনার নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য যাকে লিখে রেখেছেন সে হঠাৎ করে আসবে হঠাৎ করে তোমার দুনিয়ার অংশ হয়ে বাকিটা জীবন শুধু তোমার হয়ে থাকবে। আর আগে যে এসেছিল সে ছিল শুধুই সময়ের বন্ধু। তার জন্য কষ্ট পেলে বর্তমানকে হারাবে। তাই এগিয়ে চলতে হবে। দেখবে এই দুই পায়ের কদম চার পায়ের কদমে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুপা যদি না এগোয় তাহলে কোনো দিন চার পা হবে না।

রিয়াজঃ একাকিত্বে ডুবে থাকা মানুষগুলো যেন হঠাৎ করে তোমার মতো একজনকে পায়। কারণ সবার কপাল তো আর ভালো হয়না। কাল্পনিক অনেক কিছুই হয়। বাস্তব বড় কঠিন।

সিথিঃ হয়েছে। আর বলতে হবে না। সব বুঝে গিয়েছি। এখন ঘুমাবে চলো।

রিয়াজঃ যেও না কখনো।

সিথিঃ হুম আছিতো।

এরপর রিয়াজ আর সিথি গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

পরদিন সকালে,

রিয়াজের ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায়। চোখ মিলে তাকিয়ে দেখে ওর পাশে সিথি নেই। রিয়াজ ভাবে হয়তো ওয়াশরুমে। অনেকক্ষণ পরও যখন সিথি আসে না রিয়াজ উঠে বসে সিথিকে ডাকে। কিন্তু সিথির কোনো খোঁজ নেই। রিয়াজের বুকে একটা মোচড় দিয়ে উঠে। রিয়াজ দ্রুত বিছানা ছেড়ে পুরো বাসা খুঁজেও কোথাও সিথিকে না পেয়ে বিছানায় ঠাস করে বসে পড়ে। হঠাৎ ওর চোখ যায় টেবিলে রাখা কাগজটির দিকে। রিয়াজ দ্রুত কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে,

– “নিজের স্বার্থেই এসেছিলাম। আজ সময় হয়েছে চলে যাওয়ার তাই চলে যাচ্ছি। আর আমার প্রতি তোমার মায়া বাড়াতে চাই না। জানি খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু তাও আমাকে যেতে হবে। ভালো থেকো।
– সিথি।”

রিয়াজের হাত থেকে কাগজটা পড়ে যায়। ওর অতিথি পাখি চলে গেল। গতরাতে যে বলল, আছি। আজ সেও রিয়াজকে আবার একা করে চলে গিয়েছে। আজতো রিয়াজের সব আছে। তাও ওকে ছেড়ে এভাবে না বলে চলে গেল। অন্তত একবার বলে যেতো। শেষবারের মতো একটু মন ভরে দেখে নিতো। সেই সুযোগটুকুও সিথি রিয়াজকে দেয় নি। প্রথমে মায়া আর আজ সিথিও রিয়াজকে একা করে চলে গেল। রিয়াজ সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। বিছানায় ঠাস করে পড়ে যায়। সারাদিনে আর উঠতে পারেনি। ওর কাছে দিন রাত এক মনে হচ্ছে। চোখগুলো ফুলে একাকার। কীসের অফিস কীসের খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রিয়াজ নিথর হয়ে বিছানা পড়ে আছে। একটা জিন্দা লাশ হয়ে গিয়েছে ও। রিয়াজের কান্না আর আর্তনাদ কেউ শুনে না। কারণ এই যান্ত্রিক শহরে কারো কাছে কারো অনুভূতির কোনো মূল্য নাই। সবটাই নিজের কাছে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে