অতঃপর প্রেম পর্ব-১৫

0
2043

#অতঃপর_প্রেম🍃
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

দেখতে দেখতে বাকি ২৩ টা দিন কেটে গেলো। আজ রোদ আর আমার গায়ে হলুদ। সারা বাসা তোড়জোড় চলছে। রোথিরাও এসেছে। রোশান ভাইয়াকে সোফায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আমার কিছুটা খটকা লাগে। তার জন্য তার সাথে কথা বলার জন্য একটা স্পেস খুজি।
___________
রোশান ভাইয়া আর আমি মুখমুখি বসে আছি। আমি তাকে বলি,’আপনি মনমরা হয়ে বসে আছেন কেনো?’

রোশান ভাইয়া মলিন হেসে বললেন,’ভালোবাসার মানুষ কাল অন্য কারো হয়ে যাবে তাই।’

আমি একটা ঝটকা খাই।

‘মানে?’

‘একটা কাহিনি শুনবা মেহেক?’

‘বলুন।’

‘একটা ছেলের বয়স যখন বারো কি চৌদ্দ তখন থেকে ছেলেটা তার কাজিনকে বউ বউ বলে সারা বাড়ি ঘুরতো। কাজিনের বয়সও বেশি ছিলো না। এইভাবেই দিন যেতে থাকে ছেলেটার তার কাজিনের উপর এক্সট্রা কেয়ার,ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তারপর ছেলেটার পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এটার জন্যই যে তার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবতেও পারে নি ছেলেটা। কিন্তু সে চায় তার ভালোবাসার মানুষটা সুখে থাকুক তার ভালোবাসার মানুষের সাথে।’

উনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি স্নান হেসে উঠে চলে যান। আমি উনার যাওয়ার পানে হা করে এখনো তাকিয়ে আছি৷ ভাবছি কাহিনিটা যদি সত্যি হয় তাহলে সেই ছেলেটার মনে এখন কি চলছে। এর মাঝেই আম্মু আমাকে ডেকে নিয়ে চলে যায়।
____________
পার্লারের মহিলারে এসে আমাকে সাজিয়ে চলে গিয়েছে। সবাই ঠিক করেছে রোদ স্যার আর আমার হলুদ একসাথেই হবে।সবাই রেডি হতেই হলুদ স্টেজ যেইখানে করা হয়েছে ওইখানে নিয়ে যায় আমাকে। আমাকে স্টেজে বসানো হয়। কিছুক্ষন পর রোদের পরিবারে সবাই এসে পরে। রোদকে আমার পাশে বসানো হয়। সবাই একে একে আমাদের দুইজনকে হলুদ লাগাচ্ছে। তার মাঝেই আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে। আমি মেসেজ ওপেন করে দেখি নিশার মেসেজ। সে লিখেছে

অভিনন্দন মেহেক,
অনেক খুশিই তো আছো দেখছি রোদকে নিয়ে। আমিও কিন্তু এসেছি। আমি তোমার জন্য সেন্টারে যেই ছাদ আছে সেইখানে আসো তোমার জন্য গিফট এনেছি। ওয়েটিং ফর ইউ…

নিশার মেসেজ দেখে আমার মনে কিছুটা খটকা লাগে। যদি আসতেই হতো তাহলে সবার সামনে আসতো। কিন্তু আমার যেতে হবে। তাই আমি আসতে করে সবার আড়ালে সেন্টারের ছাদে চলে আসলাম। ছাদে এসে দেখি নিশা খুশি মনে দাঁড়িয়ে আছে তাও আবার ছাদের শেষ প্রান্তে। আমি ওর কাছে যেয়ে বলি,’কি করছো তুমি নিশা। পরে যাবে তো!’

নিশা একটা রহস্যময় হাসি দেয়। যে হাসির মানে আমি বুঝতে পারি না। আমি কিছুক্ষনের জন্য ভুলে যাই ও লোভি। আমি ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই। এটাই যে আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে ভাবতেও পারিনি। নিশা আমার টান দিয়ে ছাদের শেষ প্রান্তে নিয়ে আসে। ছাদে কোনো রেলিং না থাকার কারণে আমার অর্ধেক পা বাহিরে আর অর্ধেক পা ভিতরে। ও ছেড়ে দিলেই আমি পরে যাবো ছাদ থেকে। নিশা বলে,’হাহ কি ভেবেছিলে আমি রোদকে আর তোমাকে সুখে থাকতে দিবো। তুমি মরলেই আমার পথের কাটা সরে যাবে।’

আমি করুণ কন্ঠে বললাম,’এমন করো না নিশা। তুমি না আমার ফ্রেন্ড?’

নিশা গর্জে বলে উঠে,’কিসের ফ্রেন্ড?এই ফ্রেন্ড মানি না আমি।’

হঠাৎই আমার চোখ নিশার পিছনে থাকা লোকটার দিকে যায়। লোকটাকে দেখে আমি জমে যাই। এই লোকটা এইখানে কেনো?কারণ এই লোকটা আর কেউ না আমার প্রাক্তন!ও এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’নিশা বেইবি ছেড়ে দেও ওর হাত।’

আমি বলি,’কুশ তুমি? তুমি এইখানে কেনো?তারমানে তুমি যার জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে সেই নিশা।’

কুশ বাকা হাসি দিয়ে বলে,’ইয়েস।’

আমি আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই কুশ চোখের ইশারায় নিশাকে আমার হাত ছেড়ে দিতে বলে। নিশাও আমার হাত ছেড়ে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠি।

আমার চিৎকার শুনে সবাই ছাদে এসে পরে। রোদ ছাদে এসে দেখে নিশা দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাসছে। রোদ দৌড়ে যেয়ে দেখে মেহেকের রক্তে মাখা দেহ পরে আছে মাটিতে। মেহেদীও দৌড়ে এসে দেখে তার আদরের বোনের রক্তে মাখা দেহ। সে যেয়ে নিশাকে সাজোরে থাপ্পড় মারে।তারপর কুশের কলার চেপে চিৎকার করে বলে,’সাহস কি করে হয় তোদের। তোদের দুইজনকে জেলের ভাত না খাওয়ালে আমার নামও মেহেদী না।’

নিশার মা বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বা বলবে তাদের মেয়ের যে এটা থেকেও বড় কিছু প্রাপ্য। রোদ দৌড়ে নিচে চলে যায়। নিচে যেয়ে মেহেকের রক্তাক্ত দেহ তুলে নেয়।
____________
সবাই একসাথে ওটির সামনে বসে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। রোদ চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষন আগেই নিশা আর কুশ পালিয়ে গেছে। এখন বাড়ির মেয়ের চিন্তা করবে নাকি অপরাধীকে খুজে বের করবে ভেবে পাচ্ছে না মেহের সাহেব তাই সে পুলিশ লাগিয়েছে ওদের পিছনে। কিছুক্ষন পর ডক্টর চিন্তা মাখা মুখ করে বেরিয়ে বলে,’বাঁচার চান্স খুবই কম কিন্তু…

উনার কথাটা বলতে দেরী কিন্তু রোদের গর্জে উঠতে দেরী নেই।

‘হাউ ডেয়ার ইউ। সাহস কি করে হয় আপনার এটা বলার ওর বাঁচার সম্ভবনা খুব কম।’

‘ আমার পুরা কথা শুনুন আগে।’

মেহেদী উঠে তাড়াতাড়ি রোদকে ধরে। ওকে শান্ত করে। ডক্টর বলেন,’দেখুন আমাদের সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। আল্লাহ কে ডাকুন এইসব চিন্তায় ভুলে যাবেন না জন্ম মৃত্যু সব কিছুই সৃষ্টি কর্তার হাতে।’

মেহেদী বলে,’আপনি কি জানি বলতে চাচ্ছিলেন ডক্টর?’

‘হুম বলছি,পেশেন্টের যদি আগামী বারো ঘন্টায় জ্ঞান না ফিরে তাহলে সে কোমায় চলে যেতে পারে।’

আশার আলো জেগেছিলো তাদের মনে তাও নিভে গেলো। চারদিকেই অন্ধকার। রোদ কিছু না বলে চুপচাপ উঠে মসজিদে চলে যায় এশার নামাজ পড়তে। এশার জামাত শেষ কিন্তু তাও রোদের উঠার নাম নেই। কিছু কিছু মানুষ তো বলাবলি করছে লোকটা পাগল কিনা তবুও রোদের ভিতর কোনো হেলদোল নেই। এটাই হয়তো ভালোবাসা…..

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে