অতঃপর প্রেম পর্ব-১০

0
1991

#অতঃপর_প্রেম🍃
#পর্ব_১০
#লেখিকা_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

বিকালে আমি আর রোথি সুন্দর করে রেডি হলাম। অবশ্য রোথি সাজতে চায়নি আমি ওকে জোর করে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছি আর নিজেও সেজেছি। আমাদের আরো কাজিনর’ চলে এসেছে। ওরা যার যার মতো রেডি হচ্ছে। আমার নানুর বোনের বড় ছেলের বউ এসে আম্মুকে খোঁচা দিয়ে বলে,’কি গো মেহেদীর আম্মু ছেলেকে তো বিয়া দিয়া দিতেছো মাইয়ারে দিবা না?’

আম্মু জোরপূর্বক হেসে বলে,’আরে ভাবী মেহেক তো এখনো অনেক ছোট মাত্র মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে।’

অবাক হওয়ার ভান করে বলে,’আল্লাহ কি বলো মাইয়া মানুষ এতো পড়ালেখা করতে নাই। পরে তোমার মতো কোথাও সম্পর্ক করে ভাইগা যাবে।’

কথাটা নানুর বোন শুনে ফেলে সে এসে উনাকে ধমক দেয়। উনি খালি চলে যাওয়ার সময় বলে যায়,’ভালো কথা কইলে সবারই বিঁধে।’

আম্মু চুপচাপ শুনছিলো কথা গুলো। নানুর বোন মানে ছোট নানু এসে আম্মুর পাশে বসে বলে,’ওর কথা মনে নিস না। আসলে কি এমন পাপ করছিলাম যে এমন পোলার বউ পাইছি’

আম্মু বলে,’আরে না খালা আমি কিছু মনে করিনি।’

আম্মুকে ডাক দেওয়ার জন্য সে চলে যায়। আমিও সবই শুনেছিলাম। ছোট নানুর ছেলের বউ এসে আমাকে বলে,’আরে মেহেক বাহ দেখতে তো খুব সুন্দর তুমি। তা কোনো জায়গায় সম্পর্ক আছে নাকি? না মানে তোমরা শহরের মাইয়া তো এই সম্পর্ক করেই বিয়া সাদি করো।’

আমার উনার কথা শুনে খুব রাগ লাগে। আমি নিজেকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করছি। আমি দাঁতে দাঁত চেপে তাকে বলি,’না আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

সে এমন ভান করে বলে,’ওরে বাবা আগে তো আমরা কারো মুখের উপরই কথা বলতে পারতাম না আর এখন কার মাইয়া গুলা তো মুখের উপরই কথা কয়। এই শুনো মেয়ে….

উনি কিছু বলার আগেই আম্মু এসে আমাকে নিয়ে যায়। ছাদে স্টেজ করানো হয়েছে তাই আমি আর রোথি ছাদে যাই। রোশান ভাইয়া মেহেদী ভাইয়াকে নিয়ে ছাদে আসে। মেহেদী ভাইয়াকে বসানো হয় স্টেজে। এক এক করে সবাই মেহেদী লাগাতে বসে। সবাই দেওয়া শেষে আমি রোথিকে বলি,’চল আমরা দিয়ে আসি হলুদ।’

রোথি আমার কথায় সাথে সাথে নাকোচ করে দেয়। আমি ওকে জোর করে নিয়ে যাই। আমি ভাইয়াকে মিষ্টি খাওয়াতে যেয়ে ইচ্ছা করে নিজেই খেয়ে ফেলি আর ভাইয়া হা করে তাকিয়ে থাকে। এই মিষ্টিটা ভাইয়ার খুব পছন্দের তাই তো আমি ইচ্ছা করেই খেয়েছি। রোথি মনমরা হয়ে ভাইয়াকে হলুদ ছোয়ালো। তা আমার চোখে এড়িয়ে যাইনি। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় রোথি মেহেদী ভাইয়াকে ভালোবাসে কিন্তু আমি তো আর আন্দাজে ঢিল মারতে পারবো না তাই আর জিজ্ঞেস করিনা। ভাইয়ার হলুদ শেষে আমরা বেরিয়ে পরি রোজ ভাবীকে হলুদ দিতে।
_________
রোজ ভাবীর বাসায় এসেছি প্রায় অনেকক্ষনই হতে চলল কিন্তু আমার চোখ খুজছে অন্য একজনকে। কেনো তাকে খুজছে জানি না। হঠাৎই আমার চোখের সামনে নিশা রোদের হাত ধরে হাসি মুখে আসতে লাগলো। আমার চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে গেলো। রোদের পাশে নিশাকে সহ্য হচ্ছে না আমার। নিশা আমার সামনে হাসি মুখে এসে দাড়ালো। রোদ মুখ গম্ভির করে দাঁড়িয়ে আছে দেখেই মনে হচ্ছে নিশাকে এখন এই মূহুর্তে একটুও সহ্য হচ্ছে না ভদ্রতার খাতিরে চুপ আছে খালি। নিশা আমাকে বলল,’আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি এসেছো তাই।’

আমি মনে মনে ওকে একটা ভেংচি কেটে মনে মনে বলি,’আমার ভাইয়ের বিয়ে আমি আসবো না তো কি তুমি আসবা?অসহ্য!!’

নিশা আমার পাশে বসে বলে,’চল হলুদ লাগাতে যাই রোজ আপুকে।’

আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলি,’হুম চলো।’

নিশা তারপর রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,’চলো রোদ আগে আমরা যাই পরে মেহেক যাক।’

আমি ফট করে বলে দেই,’রোদ স্যার তোমার সাথে কেনো যাবে?’

রোদ স্যার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকান। নিশা বলে,’আমরা কাপল তাই একসাথে যাবো।’

আমার এখন নিশার চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছা করছে। নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য উঠে চলে আসলাম। ওইখানে একটু থাকলে আজকে নিশার খুন হয়ে যেতো। নিশা আর রোদ স্যার আমার যাওয়ার দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। নিশা রোদ স্যারের উদ্দেশ্যে বলে,’ও চলে গেলো কেনো?’

রোদ স্যার পুনরায় গম্ভির মুখ করে বলে,’জানি না’

‘আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে এখন চলো।’

এই বলে রোদ স্যারের হাত ধরে রোদ স্যার নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,’তুমি যাও নিশা আমি এখন যাবো না।’

‘কেনো?’

‘কাউকে আমি কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না জানো না তুমি?’

নিশা গোমড়া মুখ করে চলে যায়। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছি ওদের দুইজনের সব কথোপথনই আমি শুনেছি। রোদ স্যারের কথাগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। রোদ স্যারকে আসতে দেখে আমি চলে গেলাম ওইখান থেকে। আমি রোজ ভাবীর কাছে যেয়ে বললাম,’বাহ আমার ভাবীকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।’

রোজ ভাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আমি হেসে বলি,’থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।’

রোজ ভাবীকে হলুদ দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন পর রোশান আসে। রোশান এসে আমাকে বলে,’চলো বাসায় যাই সবার যেতে দেরী হবে।’

আমি তাকে বলি,’না আমি যাবো না।’

কোত্থেকে আম্মু এসে বলে,’রোশানের সাথে তুই যা আমাদের আসতে দেরী হবে আর তোর এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকা উচিত না ডক্টর কি বলেছে ভুলে গিয়েছিস?’

আমি মুখ ফুলিয়ে থাকি। হঠাৎই আমার চোখ রোদ স্যারের দিকে যায়। সে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক রাগ লাগছে তার তাই সেটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বহু কষ্টে। আমি তা দেখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলি,’ঠিকাছে আম্মু আমি চলে যাচ্ছি রোশান ভাইয়ার সাথে।’
______
তারপর আমি আর রোশান ভাইয়া বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় পৌছে আমি ফ্রেশ হয়ে বিরিয়ানি খেয়ে ঘুমাতে গেলাম….

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে