#অতঃপর_প্রেম🍃
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
কেউ একজন হেঁচকা টান দিয়ে ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। আমি চিৎকার করতে যাবো তার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে যার কারণে খালি উম,উম আর চোখের ইশারা ছাড়া কিছুই করতে পারছিলাম না। অন্ধকার থাকার কারণে লোকটার চেহারাও দেখতে পারছিলাম না ভালো করে। লোকটা আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,’ছেলেটা কে ছিলো?’
লোকটা কথা শুনে আমি যতটা না অবাক হই কন্ঠটা শুনে তারচেয়েও বেশি অবাক হই কারণ এই কন্ঠ আমার পূর্বপরিচিত কিন্তু এই মূহুর্তে এই কন্ঠটা কার মনে পড়ছে না। তাই এইসব চেষ্টা বাদ দিয়ে আমি ছটফট করতে থাকি। লোকটা পুনরায় বলে,’ছেলেটা কে ছিলো?’
আমার শুধু উম উম ছাড়া কিছুই বের হচ্ছিলো না। লোকটা বুঝতে পেরে ছেড়ে দেয় মুখ। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো লোকটার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা যার কারণে তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। আমি লোকটাকে বলি,’কোন ছেলে হ্যা?আর আপনি কে?’
‘আমি কে সেটা নাহয় অজানাই থাকুক আর যে ছেলেটার সাথে এসেছো সেই ছেলেটা কে?’
লোকটা আমার এক হাত ধরে রাখার জন্য আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরে দিয়ে এক দৌড় দেই। ক্লাস রুমে এসে হাঁপাতে থাকি নিশা এসে বলে,’আর ইউ ওকে?’
আমি দুইবার বড় বড় শ্বাস ফেলে বলি,’হুম।’
নিশা বলে,’আচ্ছা তাহলে চলো স্যার এসে পড়বে একটু পর
পরে আমি আর নিশা সিটে বসে পরি। কিছুক্ষন পর রোদ স্যার এসে ক্লাস করানো শুরু করে সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো সে আমার দিকে বারবার আড় চোখে দেখছিলো যেটা মোটেও আমার ভালো ঠেকলো না। ক্লাস শেষে স্যার আমার কাছে এসে বলে গেলেন তার ডেস্কে যেতে। আমিও ভদ্র স্টুডেন্টদের মতো মাথা নাড়ালাম।
স্যার যেতেই আমিও বেরিয়ে পড়লাম উনার ডেস্কে যাওয়ার জন্য।
_____________
স্যারের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। স্যারের পাশে ডেস্কে রাখা কিছু বই। যা উনি শাস্তি সরূপ আমাকে করতে বলেছেন। কিসের শাস্তি উনি আমাকে দিচ্ছেন সেটা বলছেন না। হঠাৎই আমি উনার গালে আমি থাপ্পড়ের দাগ খেয়াল করি। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করি,’স্যার আপনার গালে থাপ্পড়ের দাগ কেনো। নিশা দিয়েছে নাকি🤨’
স্যার আমাকে ধমক দিয়ে বলে,’এই মেয়ে স্যারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?আর কিসের থাপ্পড়ের দাগ। আমি তো দেখিনা’
আমি উনার ধমক খেয়ে চুপ করে একটু ঝুঁকে ইশারা করে থাপ্পড়ের দাগটা দেখালাম। কিছু সেকেন্ডের জন্য আমার হাত উনার গালে ছুয়ে গেলো। আমি তড়িৎ গতিতে উঠে স্যারের কাছে পারমিশন নিয়ে চলে যাই। ক্লাস রুমে যেয়ে সিটে বসতে যাবো ওমনেই নিশার প্রশ্ন শুরু। আমি নিশাকে কিছু বুঝিয়ে চুপ করে রাখি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিশার অনেক বিরক্তি লাগছে আমার রোদের সাথে দেখা করা। আমি খেয়াল করেও চুপ থাকি।
______
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে যায়। আজকে মেহেদী ভাইয়া আর রোজ [মেহেকের ভাবীর নাম চেঞ্জ করে রোজ দিয়েছি।] ভাবীর গায়ে হলুদ। সেই উপলক্ষে বাসায় অনেক তোড়জোড় চলছে। রোজ ভাবীর জন্য অনেক শাড়ি কিনে এনেছে। বিকালে ভাইয়ার গায়ে হলুদ। তারপর রাতে আমরা আবার রোজ ভাবীকে হলুদ দিতে তাদের বাসায় যাবো। সকাল থেকে রোথি অনেক মনমরা হয়ে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে ত্যাড়া ভাবে উত্তর দিচ্ছে। তাই আমি ওকে নিয়ে আলাদা রুমে যাই। রোথিকে কিছু কর্কশ গলায় বলি,’কি শুরু করেছিস দিনদিন?এইভাবে ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছিস কেনো?’
রোথি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে। আমি ওকে সোজা করে বসিয়ে বলি,’রোথি!!তুই আমাকে বল কি হয়েছে তোর?মেহেদী ভাইয়ার বিয়েতে তুই খুশি না আমার মনে হয়।’
রোথি তাও কিছু বলে না ঠোঁট চেপে বসে আছে। যে কেউ দেখেই বলতে পারবে অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে রেখেছে। একটু পরেই কেঁদে দিবে। আমি রোথিকে বলি,’দেখ রোথি তুই যে কান্না আটকিয়ে রেখেছুস বহুত কষ্টে সেটা তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সো প্লিজ কান্না আটকিয়ে রাখিস না তাও আমার সামনে।’
রোথি এইবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আমি কিছুই বুঝতেছি না হঠাৎ ওর কি হলো। ও আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আপু ভালোবাসা কি খারাপ?’
আমি ওকে বলি,’মানে কি বলছিস?ভালোবাসা খারাপ কেনো হবে?’
‘আমি জানো একজনকে ভালোবেসেছিলাম। তারপর জানতে পারি সে আগে থেকেই কাউকে পছন্দ করে।’
আমি রোথিকে শান্তনা দিয়ে বলি,’দেখ রোথি তোর এই বয়সটাই আবেগ,মোহে ভরা! আর তুই অনেক আবেগী সহজেই যে কারো মোহে পরে যাস।’
( রোথি আমার দুইবছরের ছোট মানে ও ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে মাত্র উঠেছে।)
রোথি আমাকে বলে,’এই মোহ,আবেগ থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায় আপু??’
আমি বলি,’শুন আল্লাহ হয়তো তুই যার মোহে আটকে পরেছিলি তাকে তোর কপালে রাখেনি। আল্লাহ যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্যই করেন। তুই বিশ্বাস রাখ এর থেকেও উত্তম জীবণসঙ্গিনী তুই পাবি।’
‘তোমাকে কিভাবে বলবো আপু আমি কাউকে না তোমার ভাইকেই ভালোবাসি'[মনে মনে]
আমি রোথিকে ছাড়িয়ে বলি,’দেখো তো চোখের পানি নাকের পানি সব এক করে ফেলেছে মেয়েটা যা জলদি ফ্রেশ হয়ে আয় নিচে যাবো অনেক কাজ আছে পরে তো আবার রেডিও হতে হবে আমাদের।’
‘আমি মেহেদী ভাইকে ভুলে যাবো। ভুলে যাবো মেহেদী নামের কেউ আমার জীবনে ছিলো। আপু হয়তো ঠিকই বলেছে আমি মেহেদী ভাইয়ের মোহে আটকে পরেছিলাম।’
আমি রোথিকে ভাবনার মধ্যে দেখে একটা ধাক্কা দিয়ে বলি,’কিরে কি ভাবনার মধ্যে আবার ডুবে গেলি। এখন এইসব ভাবনা দয়া করে অম্য সাইডে রেখে চল নাহলে পরে আম্মুকে এসে এক রামধমক দিবে।’
রোথি শুধু ‘হুম’ বলে। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ওকে নিয়ে নিচে চলে আসলাম। ভাইয়া নিজের রুমে আরামসে ঘুমাচ্ছে। রোশান ভাইয়া আব্বুর সাথে আলাপ পারছে। ফুপিমা আর আম্মু কাজ করছে। আমি আর রোথিও উনাদের সাহায্য করলাম…
#চলবে।