অটবী সুখ
১৪.
আজকাল রেডিও-র অতশত চল নেই। কাশেম আলী সৌখিন মানুষ। টং দোকানে বহু আমলের পুরাতন সামলে রাখা রেডিও ধুঁয়ে-মুছে সাজিয়ে রেখেছেন। আশ্চর্যের বিষয়, ভুচুংভাচুং শব্দে গানও বাজে ওটা থেকে। এই যেমন এখন কাশেম আলী কাপে চা ঢালতে ঢালতে রেডিও-র গানের সাথে তাল মেলাচ্ছেন,
“তুমি বন্ধু কালা পাখি,
আমি যেন কি?
বসন্ত কালে তোমায় বলতে পারিনি।
সাদা সাদা কালা কালা
রঙ জমেছে সাদা কালা।”
শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে গানটা গাইছেন তিনি। কণ্ঠস্বর নেহায়েত খারাপ না। শুনতে ভালো লাগছে। আগের দিনের একটা চঞ্চল সুবাসে টগবগ করছে শরীর। ত্রিস্তান চায়ের কাপে চুমুক দিলো। সরোজের দিকে নজর ফেলতেই দেখলো, ছেলেটা কেমন চোখ-নাক কুঁচকে চেয়ে আছে ওর দিকে। কৌতূহলে নিশপিশ করছে সারা মুখ।
ত্রিস্তান ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
সরোজের অভিব্যক্তি পাল্টালো না। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বললো, “ভাই, একটা প্রশ্ন ছিল।”
“কি?”
“তোমার হাতে, গালে এরকম আঁচড় ক্যান? ব্যাথা পাইছো কেমনে?”
প্রশ্ন করতে না করতেই কচকচ শব্দে একটা বেলা বিস্কুট অনায়াসে চিবিয়ে ফেললো সরোজ। ভেতরের আগ্রহ কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে না। এক্সট্রা এক্সাইটমেন্ট ধরে বেঁধে রেখেছে। কাল রাতে যখন ত্রিস্তানের বাসায় আশ্রয় নিতে গেল, তখন রাত বাজে দু’টা। নিস্তব্ধ পরিবেশে দরজায় খটখট শব্দ তৈরি করার কিছুক্ষণের মাঝেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল ত্রিস্তান। টকটকে তাজা ক্ষতগুলো তখন স্পষ্ট, রক্তে ভেঁজা। সরোজ তক্ষুণি আঘাতের কারণ জানতে চেয়েছিল। কিন্তু ত্রিস্তানের ক্লান্ত, রুক্ষ, রুঢ় চাহনিটা তাকে থামিয়ে দেয়।
রয়েসয়ে একটা তিক্ত নিশ্বাস ছাড়লো সরোজ। ত্রিস্তান প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। দিবেও না। কচকচ শব্দে আরেকটা বিস্কুট চিবুতে চিবুতে এক্সাইটমেন্ট নামক বিশ্রী অনুভূতিটা দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালালো সে। চারপাশে নজর বুলালো। টং দোকানের সাত-আঁট হাত দূরে অটবীকে দেখা যাচ্ছে। নলী আর পৃথাকে সম্ভবত স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা একা নয়। জোয়ান, মোটামোটি দেখতে একটা যুবক আর নলীর বয়সী একটা ছেলেও আছে সাথে। অটবী খুব হেসে হেসে কথা বলছে যুবকটির সাথে। সরোজ একবার বাঁকা চোখে ত্রিস্তানকে দেখলো। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসিটা এঁটে কিটকিটিয়ে বললো, “আল্লাহ্! ত্রিস্তান ভাই! তুমি এহন কি করবা? ভাবীরে তো অন্য পোলায় নিয়া যাইতেছে গা রে! আহহারে! পুওর সুখনীল ত্রিস্তান! উহু! দেবদাস সুখনীল ত্রিস্তান।”
ত্রিস্তান সাথে সাথে উত্তর দিলো না। একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ভাবী কে?”
“আর কেডা? অটবী আপু। তোমার প্রেমিকা লাগে না? আমি বুঝি ভাই। সামনে তাকাও, দেখবার পারবা। তোমার পাখিরে তো অন্য ব্যাডায় নিয়া যাইতেছে গা।”
সরোজের ইশারাকৃত স্থানে একবার তাকালো ত্রিস্তান। কিছুই দেখেনি– এমন ভাব করে খালি চায়ের কাপটা বেঞ্চের একপাশে রাখলো। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে জোরেসোরে নিশ্বাস ফেলে বললো, “তোর পাখির দিকে তাকা ব্যাটা। লাল বাতি জ্বলজ্বল করছে।”
“মানে?”
চট করে আবারো অটবীদের পানে দৃষ্টি মেললো সরোজ। এটা কি? তার প্রাণপ্রিয় প্রেমিকা দেখি পুচকে ছেলেপেলের সাথে হাসির ঠেলায় কথাই বলতে পারছে না। আহ্লাদে মাখোমাখো হয়ে একে অন্যের গায়ের ওপর ঢলে পরছে একদম! কি ভাই? প্রতিবন্ধী নাকি? মা-বাবা হাঁটা শেখায়নি? পরকীয়ার সূক্ষ্ণ গন্ধটা নাকে বারি খেতেই তেঁতে উঠলো সরোজ। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো, “এইডা আমি কি দেখতাছি? এইডা দেখবার আগে আমি অন্ধ হইয়া গেলাম না ক্যান? আমার লগে অন্যায় হইতাছে। আমি ঠইকা গেছি। আমারে এহন বাঁচাইবো কেডা?”
পাশ থেকে ত্রিস্তান সবিনয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বিশ লাগবে, ছোটভাই?”
চোখে পানি নেই। তবুও চোখের পানি মোছার ভান করলো সরোজ। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, “আমার বুক জ্বলতাছে, ভাই।”
“মরে যা। জ্বলা বন্ধ হয়ে যাবে।”
“আমি সত্যি কইতাছি।”
“ঢং করবি না সরোজ। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর। তনয়া বাসায় একা।”
সরোজ ঠোঁটের পাতা দুটো চেপে অসহায় চোখে তাকালো নলীর দিকে। নলীও তাকিয়েছে। টং দোকান পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ইশারায় হেসে হেসে কি যেন বলেছেও। হু! ঢং! অন্য ব্যাটাছেলের সাথে হাইসা-টাইসা তাকে দাঁত দেখানো হচ্ছে! ক্ষিপ্ত মেজাজটা হুরহুর করে বেড়ে গেল সরোজের। কিন্তু পরমুহুর্তে কিছু একটা মনে পরতেই শান্ত হয়ে গেল সে। ত্রিস্তানের দিকে চোরা দৃষ্টে তাকালো। আমতা আমতা স্বরে বললো, “ভাই… তুমি কেমনে জানো নীলিমা… মানে নলীর লগে আমার কিছু চলে?”
চা-বিস্কুটের দাম এসেছে ত্রিশ টাকা। ত্রিস্তানের কাছে ভাংটি নেই। এক’শ টাকার একটা নোট দিয়ে তনয়ার জন্য দু’টা চিপস আর কয়েকটা কেক কিনছিল সে। সরোজের কথা শুনে ঠাট্টার সুরে বললো, “যারা সারা বছর পরীক্ষায় ফেল করে চোরের মতো রাস্তায় ঘুর ঘুর করে, তাদের চোখ দেখলেই ভালো-মন্দ জানা যায়।”
সরোজ যেন এবার সত্যি সত্যি কেঁদে দিবে। আজকের দিনটাই খারাপ! ঘুম থেকে উঠে কার মুখ যে দেখেছিল! নিজের মুখটাই তো! প্রতিদিন তো আয়নায় নিজের মুখটাই সবার আগে দেখে।
–
সারা এলাকা জুড়ে কারেন্টের অভাব। রাস্তায় দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোও নিস্তেজ। কোথাও এক রশ্মি আলো নেই। চাঁদের দ্যুতিও দূর্বল চিত্তে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে, সে অসুস্থ। পথচারীদের রাস্তা দেখাবার শক্তি তার নেই। সূর্য আড়ি কেটেছে। পর্যাপ্ত আলো তাকে ধার দেয়নি। ঘুটঘুটে অন্ধকারে অটবী অনেকটা মুখস্ত পরীক্ষার্থীর মতো ফার্মেসীর দিকে হেঁটে চললো। এখন রাত বাজে বারোটা। টিউশন শেষ করে আট’টার দিকে ইলিয়ানা আন্টির বাড়িতে গিয়েছিল সে। কাদিন এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে। ছাত্র ভালো হলেও একটু তদারকির প্রয়োজন। তাই কাদিনকে পড়ানোর দায়িত্ব পরেছে অটবীর ওপর। সে বিষয়ে কথা বলতেই গিয়েছিল অটবী। এই বিষয়, সেই বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত ইলিয়ানা আন্টি তাকে কিছুতেই বাড়ি যেতে দিচ্ছিলেন না। ভাগ্যিস কারেন্ট-টা গিয়েছিল! নয়তো এখনো তাকে ওইসব হাবিজাবি কথা শুনতে হতো। ওদিকে আবার রেবা বেগমের শরীরটাও মন্দ যাচ্ছে। ঔষধও ফুরিয়ে যাবে যাবে ভান ধরেছে। ব্যাগে পাঁচশত টাকার পুরাতন নোট। ঔষধগুলো এক্ষুণি কিনতে হবে। নয়তো কালকে আবার সকালের ঔষধ বাদ পরে যাবে।
ঔষধ কিনতে কিনতে বার্তি দশ মিনিট গেলে যায় অটবীর। অন্ধকার এবার অনেকটা সয়ে গেছে। অল্পসল্প স্পষ্ট আশপাশ। সে এখন জসিমুল্লাহ সাহেবের বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা। রাস্তার দুপাশে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে আছে কালো কালো ঝোপঝাড়। হঠাৎ তাকালে মনে হয় পাড়ার কিশোরগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অটবী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মনে মনে পণ করলো, বেতনের টাকাটা পেলেই এবার নতুন একটা ফোনের ব্যাটারী কিনবে। তার বর্তমানে যেটা আছে সেটা নষ্ট। ফুলচার্জ করলে এক ঘণ্টাও টিকে না।
আচমকা, কিসের যেন শব্দ শুনলো অটবী। পাতার কচরমচর শব্দ, নড়েচড়ে ওঠার শব্দ, তেজি নিশ্বাসের শব্দ, ক্ষীণ হিসহিস শব্দ! ভয়ে ভেতরটা খিঁচে উঠলেও অটবী ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। দমবন্ধকর গলায় আস্তে করে বললো, “কে ওখানে?”
সারাশব্দ নেই। অটবী ঠিক করলো, সে ওদিকে যাবে। উঁকি দিয়ে দেখবে। মারাত্বক বেয়াদব কৌতূহলটাকে শান্ত করবে। আর যদি খারাপ কিছু হয়, ডানে-বামে দেখার কোনো দরকার নেই। এক ছুটে সোজা বাসা! যদিও জায়গাটা অতটা নির্জন না। চিৎকার দিলে নিশ্চই আশেপাশের সবাই ছুটে আসবে? মনে মনে মিথ্যা সান্ত্বনা নিয়ে আলতো পায়ে এগিয়ে গেল অটবী। পাতার কচরমচর শব্দ আবারো হচ্ছে। কেউ নড়ে উঠছে। ঐতো! লম্বা মতো কে যেন বসে আছে গাছের সাথে হেলান দিয়ে। কে এ লোক? আরেকটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো সে।
“অটবী?”
কণ্ঠস্বর ভীষণ পরিচিত। এটা ত্রিস্তান। অটবী শতভাগ নিশ্চিৎ!
ভর-ডর নিমিষেই কোথায় যেন উঁড়ে গেল। অটবী এগোলো দূরন্ত পায়ে। কাছাকাছি হতেই ত্রিস্তান আবার বললো, “তুমি, অটবী?”
অন্ধকারে ত্রিস্তানকে ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না। অটবী শুধু এটুকুই বুঝলো, লোকটা হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। দূরত্ব রেখে সেও বসলো পাশে। ঝটপট জিজ্ঞেস করলো, “ভূতের মতো একা একা আপনি এখানে বসে আছেন কেন? আবারও অসুস্থ হয়ে পরেছেন? আপনার ফোনে লাইট নেই? দেখি, জ্বালান তো একটু।”
ত্রিস্তান শীতল নয়নে অটবীর দিকে চেয়ে আছে। আবছা চোখেও অটবীকে অপরূপ লাগছে। মেয়েটা সুন্দর– এ কথা সে অস্বীকার করতে পারবে না। এক দেখায় যে কারো পছন্দ হয়ে যাবে।
ত্রিস্তান ক্ষীণ স্বরে বললো, “আস্তে কথা বলো, অটবী। তুমি পুরো এলাকাকে আমার এখানে থাকার কথা জানিয়ে দিচ্ছো।”
অটবী গুটিকয়েক ছোট ছোট নিশ্বাস ফেললো। কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে বললো, “আপনি এখানে কি করছেন? তনয়া কোথায়?”
—“সরোজ আছে তনয়ার সাথে।”
অটবী ভ্রু কুঁচকালো, “মানে? ও তনয়ার সাথে কি করছে?”
“চাচা ওকে বের করে দেওয়ার পর আমার বাসায় থাকছে এখন।”
অটবী হতাশ হলো। এক রহিম কি কম ছিল? এখন ত্রিস্তানও জুটেছে ছেলেটার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে। কাঁধের ব্যাগটা মাটি থেকে উঠিয়ে সে চলে যেতে চাইলো। তাকে থামিয়ে দিলো ত্রিস্তান, “আরেকটু বসবে, অটবী?”
নিঃসঙ্কোচ আবদার। অটবীর কেন যেন মানা করতে ইচ্ছে করলো না। ব্যাগটা আবারও মাটিতে রেখে বসে পরলো। স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এখনো উত্তর দেননি, ত্রিস্তান। এত জায়গা থাকতে এই ঝোপঝাড়ের ভেতর কি করছেন?”
“এটা আমার প্রিয় জায়গা।”
“এই ঝোপঝাড়?”
ত্রিস্তান মৃদু হাসলো। হাতের সিগারেট-টা সেই অনেক আগে ফেলে দিয়েছে। চোখ বুজে, ঢিমানো কণ্ঠে বললো, “ঝোপঝাড় দেখেই পছন্দ। একেবারে নির্জন! কেউ দেখার নেই, শোনার নেই। কাউকে মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু জানবে না।”
ত্রিস্তানের ঠোঁটের কোণের ওই সুন্দর হাসিটা অস্বাভাবিক। অটবী বিমূঢ় নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। হালকা স্বরে বললো, “আপনাকে অসুস্থ লাগছে। আপনার এখন বাসায় চলে যাওয়া উচিত।”
“ওই বাসাটায় ভয় লাগে অটবী৷ ওখানে যেতে ইচ্ছে করে না।”
আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে ক্লান্ত ত্রিস্তানকে দেখা যাচ্ছে। আবার আলো নিভে যেতেই বাজে রকমের আঁধার। একটু আগের চাঁদের দ্যুতিটুকুও নেই। অটবী সেই অল্প আলোতেই অবাক হয়ে দেখলো, ত্রিস্তান ভয়ংকর মানুষের মতো হাসছে। চোখের গভীরে অদ্ভুত উদাসীনতা, দুঃখ, যন্ত্রণা একই সাথে ক্ষুধার্ত বাঘের হিংস্রতা। অটবী ভয় পেল। কিন্তু অতটা না, যতটা পেলে মানুষ দৌঁড়ে পালায়। সে খুব শান্ত হয়ে বসে আছে। এই ত্রিস্তানকে সে চেনে না। কিন্তু চিনতে চাইছে। আস্তে করে ডাকলো, “ত্রিস্তান?”
সাথে সাথে একটু ঝুঁকে আসলো ত্রিস্তান। চোখে চোখ রাখলো। অটবী নড়লো না। স্থির চেয়ে রইলো।
“তোমার চোখে আমি নিজেকে এত ওপরে দেখতে পাই কেন, অটবী? আমার নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়।”
ঝড় বইছে। বৃষ্টি পরবে। ত্রিস্তান উঠে দাঁড়ালো। বড় বড় পায়ে চলে যাচ্ছে সে। একবারও অটবীর দিকে তাকায়নি।
_______________
চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
অটবী সুখ
১৫.
বাতাসে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা চুলায় হালুয়া রাঁধছেন। ঘি-য়ের মনোরম ঘ্রাণে জিভের পানি আটকানো যাচ্ছে না। রান্নাঘরের আশপাশটায় চাতক পাখির মতো ঘুর ঘুর করছে পৃথা আর নলী। কখন হালুয়া হবে, ওমনি তারা ঝাপিয়ে পরবে খেতে! অটবী জানালার বাহিরে উঁকি দিয়ে ওদের একবার দেখে নিলো। এদু’জনকে সে সকালে বলেছিল ঘরটা গুছিয়ে রাখতে। গোছায়নি। বরং পড়ার ছুতোয় উঠোনে পাটি গেড়ে হালুয়া খাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ভেতর থেকে একটা সূক্ষ্ম দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। কোমড়ে ওড়না বেঁধে প্রথমে বিছানা ঝাড়লো অটবী। বিছানার নিচে নলীর ব্যাগ অনাদরে পরে আছে। ব্যাগের চেন খোলা। বইপত্র মেঝে ছুঁচ্ছে! মেয়েটা এতো অগোছালো! বেশ খানিকটা বিরক্তই হলো অটবী। ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে রাখতে হঠাৎ খেয়াল হলো, নলীর ব্যাকরণ বইয়ের ভেতর থেকে একটা লাল রঙের কাগজ বেরিয়ে এসেছে। বইটা পৃথার হলে অটবী হয়তো বিষয়টা অত আমলে নিতো না। কিন্তু একবার যখন বিশ্বাস ভেঙ্গেছে, নলীর কোনো কিছুই সে সহজে নিতে পারে না।
অনেকটা সন্দেহের বশেই লাল রঙা কাগজটা খুললো সে। যা ভেবেছিল তা-ই! এটা প্রেমপত্র। মধুর, রসালো প্রেমপত্র! নয়-দশ লাইনের। পড়তে পড়তে অটবীর ভ্রুদ্বয় কঠিন ভাবে বেঁকে গেছে। রাগটা প্রকাশ করতে না চাইলেও দমাতে পারলো না অটবী। উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো, “নলী? এক্ষুণি রুমে আয়! এক মিনিটও দেড়ি করবি না।”
নিজ খেয়ালে মশগুল নলী জোরেসোরে চমকে উঠলো। পৃথার দিকে একবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টে তাকিয়ে ছুট লাগালো রুমের দিকে। অটবী তখন হাতের কাগজটা টেবিলের ওপর মেলে রেখেছে। নলী আসতেই ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। থমথমে গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো, “এটা কি? কে দিয়েছে?”
কাগজটা কাল স্কুলে যাওয়ার পথে সরোজ দিয়েছিল। নলী খুলে দেখেনি। তার তো মনেই ছিল না। কাগজ হাতে এক ঝলক লেখাগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিলো সে। নাহ্! সূচনা-উপসংহার কোথাও সরোজের নাম নেই। মনে মনে বড্ড খুশিই হলো নলী। চেহারায় দারুণ আতঙ্ক ঝুলিয়ে নির্দোষ কণ্ঠে বললো, “এইটা আমি নিতে চাই নাই বুবু। আমার কোনো দোষ নাই। ইস্কুলে একটা ছেলে আমাকে খুব বিরক্ত করে। ও-ই জোড় করে কাগজটা আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিছে।”
“কাগজটা এখনো তোর ব্যাগে কি করে? ফেলে দিস নি কেন এটা?”
এপর্যায়ে নলী একটু তোতলালো, “মনে…মনে ছিল না বুবু।”
অটবীর তীক্ষ্ণ চোখজোড়া নলীকে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও তার মস্তিষ্ক বলছে, নলী যা বলছে সব মিথ্যা। কিন্তু তবুও সে মস্তিষ্কের কথা শুনলো না। বিশ্বাস করে নিলো। ডাস্টবিনে কাগজটা ফেলে দিয়ে বললো, “আর এসব কাগজ-টাগজ নিবি না। বেশি বিরক্ত করলে বলবি, বিষয়টা আমি দেখবো।”
নলী কথা বাড়ালো না। মাথা কাত করে সায় দিলো শুধু। এবার থেকে আরও সাবধান হতে হবে। এইসব চিঠি-কাগজ বাদ! এগুলোতে রিক্স অনেক।
–
রোদ্দুরের উত্তাপ দৃঢ়, রুক্ষ। ফ্যাকাশে একটা রঙ ধারণ করেছে সবুজ সতেজতা। ভ্যাপসা, মৃদুমন্দ বাতাস। অটবী তিনটার দিকে টিউশনে বেড়িয়েছিল। একটা পড়িয়েছে। বাকিগুলো পড়াতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে খুব। বাসায় গিয়ে একটা মারাত্বক ঘুম দেওয়া দরকার। খুব দরকার। মোড়ের রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা দোকান বসে। ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুচকা— এসবের। সেদিক দিয়ে যাওয়ার সময় অটবীর কেন যেন প্রচন্ড ইচ্ছে করলো একটু ঝালমুড়ির স্বাদ নেওয়ার। ব্যাগে পর্যাপ্ত টাকা আছে। একদিন একটু পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি খেলে মাসিক খরচে টানাপোড়ন লাগবে না নিশ্চই?
অনেকটা উৎফুল্ল মনেই ঝালমুড়ি নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালো অটবী। ঝালমুড়ি মুঠোয় পুরে খেতেই নিচ্ছিল, হঠাৎ কোত্থেকে আগমন ঘটলো তনয়ার। মেয়েটার ফর্সা মুখটা রক্তিম। স্পষ্ট কাঁদছে। কাজল রাঙা আঁখিদ্বয় লেপ্টানো। ভীতু সাব্যস্ত হৃদযন্ত্র অটবীকে দেখে যেন কিঞ্চিৎ শান্ত হয়েছে। আশেপাশে ত্রিস্তান, সরোজ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা কি আবারও বাসায় না জানিয়ে এতটুকু পথ এসেছে? আবার হারিয়ে গেছে? তপ্ত নিশ্বাস ফেলে তনয়ার চোখের অশ্রুগুলো হাত দিয়ে মুছে দিলো অটবী। আদুরে গলায় জিজ্ঞেদ করলো, “তোমার ভাইয়া কোথায়, তনয়া? আবারও কাউকে না বলে বাসা থেকে বেড়িয়েছ?”
তনয়া অপরাধীর ন্যায় মাথা নুয়ালো। মিনমিনিয়ে বললো, “আমি হারিয়ে গেছি।”
“তোমার ভাইয়া এমন কেয়ারলেস কেন? তুমি যখন বেড়িয়েছিলে, কেউ দেখেনি?”
“সরোজ ভাইয়া ঘুমায়।”
“আর ত্রিস্তান?”
তনয়া চোখ পিটপিট করে তাকালো, “ভাইয়া বাহিরে। কাজ করে।”
ভেতরকার দীর্ঘনিশ্বাসটা রয়েসয়ে ফেললো অটবী। খেয়াল করলো, তনয়া অনেক্ষণ ধরে তার হাতের ঝালমুড়ির দিকে চেয়ে আছে। চাপা হতাশা আটকে ঝালমুড়িটা তনয়া দিকে বাড়িয়ে দিলো সে। বললো, “নাও, এটা খাও।”
ত্রিস্তানের বাসা ঠিক কোথায়, তা জানা নেই অটবীর। শুধু জানে, জঙ্গলের ভেতরের ছোট্ট আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে একটা মাঝারি আধভাঙা রাজপ্রাসাদ আছে। ওটাই ত্রিস্তানের বাড়ি। কিন্তু সে শতভাগ নিশ্চিত না। নলী বলতে শুনেছিল। এই শোনা ওপর নির্ভর করে সম্পূর্ণ অচেনা জায়গায় পা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। কপালে চিন্তার বলিরেখা এঁটে তনয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা ওর দিকে চেয়ে ছিল। ছটপটে কণ্ঠে বললো, “আমি এখান থেকে বাসায় যেতে পারবো, আপু।”
—“তোমাদের বাসা এই জঙ্গলের ভেতরেই? তুমি রাস্তা চেনো?”
তনয়া বেশ কয়েকবার মাথা দুলালো। হ্যাঁ, সে চেনে। কিন্তু তবুও তাকে একা ছাড়লো না অটবী। ছোট্ট রাস্তাটার ভেতর দু’জনেই পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। তনয়ার ঝালমুড়ি খাওয়া শেষ। সে আপাতত শক্ত করে অটবীর হাত ধরে আছে। মেয়েটা অটবী থেকে এক-দু’ বছরের ছোট হবে। তবে উচ্চতায় সমান সমান। এত বড় একটা মেয়েকে শাসন করতে একটু অস্বস্তি লাগছে তার। এই মেয়েটা যদি সুস্থ থাকতো, তবে নিশ্চই তাকে অন্যের ওপর নির্ভর থাকতে হতো না। হয়তো মেয়েটা এতদিনে নিজের মতো করে একটা সুন্দর জীবন গড়ে তুলতো।
জঙ্গল থেকে ত্রিস্তানের বাড়ি অত দূরে না। দশ মিনিটের পথ। কোনো ধরণের গেট নেই। হয়তো ছিল, কিন্তু এখন এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলীন। দু’পাশে শুধু দু’টা পিলার গেঁথে আছে। বাড়ির সুরক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়াগুলোও ভেঙ্গে একাকার। অটবী পিলার দুটো পাশ কাটিয়ে সামনে এগোলো। সদর দরজা সম্পূর্ণ খোলা। বসার ঘরে হাত পা ছড়িয়ে হা করে ঘুমাচ্ছে সরোজ। দুটো ঠোঁটের পাতার মাঝখানে বিস্তর ফাঁকা। কি আরামের ঘুম তার!
তয়না দৌড়ে সরোজের কাছে গেল। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে, টেবিলে থাকা জগের পানিগুলো চট করে ঢেলে দিলো সরোজের মুখে। সরোজের ঘুম ভাঙ্গলো। ভয়ানক চিৎকার দিয়ে ভূত, ভূত বলে লাফিয়ে উঠলো সে। পরক্ষণেই তনয়াকে চোখের সামনে পেয়ে চড়া গলায় বললো, “তোমার সমস্যা কি, তনয়া আপু? আমার ঘুমের সাথেই তোমার এত শত্রুতা কেন?”
সরোজের উত্তপ্ত রাগটা কেউই আমলে নিলো না। তনয়া লুকালো নিজেকে অটবীর পেছনে আড়াল করে। অটবী এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “রাতে কি ঘুমাও না, সরোজ? পড়ালেখাও তো করো না। সারাদিন এদিক-ওদিক ছুটতে থাকো। আসলে করোটা কি তুমি? এত ঘুম কেন আসে? মেয়েটা যে একা একা মোড়ের রাস্তায় চলে গিয়েছিল, সেই খেয়াল আছে?”
সরোজ চমকালো খুব। একবার অটবীকে দেখে আরেকবার লুকিয়ে থাকা তনয়াকে দেখার চেষ্টা করলো। বাম হাত দিয়ে ঘাড় চুলকালো কয়েক সেকেন্ড। ভ্রু বাঁকিয়ে, ভীষণ আশ্চর্য কণ্ঠে সুধালো, “সত্যি বলতাছো? আমি এত বিশ্রী ঘুমাই?”
শুনে তনয়া খিলখিলিয়ে হাসলো। থম মেরে থাকা সরোজকে দেখে তার খুব হাসি পাচ্ছে। মজাও লাগছে ভীষণ। ঠোঁটের হাসিটা দৃঢ় করে অটবীর একটা হাত জড়িয়ে ধরলো সে। আবদারের সুরে বললো, “আজকে আমার সাথে এখানে থাকবা, আপু?”
নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় চোখের সচ্ছ মায়া অটবীকে গলাতে পারলো না। আস্তে আস্তে ধরণীতে সন্ধ্যা নামছে। এক্ষুণি বাসায় না ফিরলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।
পাশ হতে সরোজ গলা মেলালো, “তনয়া আপু ঠিক বলতাছে। এখন যাওয়া ঠিক হবে না। এই রাস্তা ভালো না। শিয়ালে দল বাঁইধা বইসা থাকে। তুমি ত্রিস্তান ভাই আসার পরে যাইও আপু। ত্রিস্তান ভাই এইতো, আইসা পরবে। অনেক্ষণ হইছে বাইরে গেছে।”
অটবী একদমই চাইছিল না থাকতে। কিন্তু দুইজন মানুষের পিড়াপিড়িতে সে একা টিকতে পারেনি। ডাইনিংটেবিলের চেয়ারে গম্ভীর মুখে বসে আছে। পাশে তনয়া তার প্রিয় টেডিবিয়ার নিয়ে খেলছে। মাঝে মাঝে অটবীকে কি কি যেন জিজ্ঞেস করছে, বলছে। অটবীর উত্তর হু, হা-তেই সীমাবদ্ধ। তার আসলে বিরক্ত লাগছে সবকিছু। মনে হচ্ছে, উপকার করাটাই উচিত হয়নি।
ত্রিস্তান আসলো মিনিট খানেক বাদে। সরোজ তখন রান্নাঘর থেকে হাঁক ছাড়ছে। সে নতুন নতুন চা বানানো শিখেছে। লাল চা, দুধ চা– দুটোই। অটবী কোনটা খাবে, সেটা জানার জন্যই তার এত হাঁক-ডাক। অটবী বাঁকা চোখে একবার ত্রিস্তানকে দেখলো। লোকটার হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ। অটবীর দিকে একবার স্বাভাবিক দৃষ্টে তাকিয়ে সে নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিলো, “সবার জন্য দুধ চা বানা, সরোজ।”
“অটবী আপু কি দুধ চা খাইবো?”
“হ্যাঁ।”
তনয়ার জন্য আনা চকলেটগুলো তনয়াকে দিয়ে ত্রিস্তান নিজেও চলে গেল রান্নাঘরে। অটবী চোখ-মুখ খিঁচে শক্ত হয়ে বসে রইলো। দারুণ অস্বস্তিতে হাত পা কাঁপছে তার। যাওয়ার আগে লোকটা তার হাতেও চকলেট গুঁজে দিয়ে গেছে। কাজটা এত দ্রুত করেছে যে, সে মানা করার সুযোগও পায়নি।
–
অটবী ভেবেছিল, ত্রিস্তান এসেই তাকে এখানে দেখে চমকে যাবে। নানান প্রশ্ন করবে। কিন্তু সেসব নিছক কল্পনা। ত্রিস্তান এতটাই স্বাভাবিক আচরণ করছে যে অটবী নিজেই ক্ষণে ক্ষণে হতবাক হচ্ছে, চমকাচ্ছে। লোকটার সফটওয়্যার গুলো কি ভালোমতো কাজ করে না? একটু তো অবাক হওয়া উচিত ছিল।
ডাইনিংটেবিলের একদম সামনের দেওয়ালটাতে বাঁধাই করা একটা ছবি আছে। সুখী পরিবারের। লম্বা, সুদর্শন মতো একজন লোক। স্যুটপ্যান্ট পরে আছেন। তার কোলে আট-নয় বছরের একটা ভীষণ সুন্দর ছেলে। দাঁত বের করে চোখ বুজে হাসছে। সুদর্শন লোকটার পাশে শাড়ি পরা একজন অত্যাধিক সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে আছেন। দেখতে মোটেও এদেশের মতো না। বিদেশিনী। একটু খেয়াল করলে বোঝা যায়, চুলগুলো ভীষণ লাল। আমেরিকান মুখাবয়ব। ফর্সা টকটকে ত্বকে ঘিয়া রঙা শাড়ি ফুঁটে আছে। তার কোলে তোয়ালে পেঁচানো নবজাতক শিশু। ছবির এই চারজনই এত স্নিগ্ধ হাসছে! অটবী চোখ সরাতে পারলো না। মুগ্ধ হয়ে চেয়েই রইলো। সরোজ তার মুগ্ধতা দেখে চায়ের ট্রে-টা টেবিলে রাখতে রাখতে উচ্ছাস নিয়ে বললো, “এইটা ত্রিস্তান ভাইয়ের বাপ-মা। পোলাটা ত্রিস্তান ভাই, আর বাচ্চাটা তনয়া আপু। সুন্দর না ছবিটা?”
অটবী মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাথা নাড়ালো। ত্রিস্তান এসে পাশে বসেছে। ট্রে থেকে একটা চায়ের কাপ, এক প্লেট বিস্কুট অটবীর সামনে রেখে বললো, “খাও।”
অটবী খাবারের দিকে তাকালো না। সরাসরি বললো, “আমি বাসায় যাবো। আপনি শুধু জঙ্গলটা পার করে দিন। বাকিটা আমি পারব।”
—“দিবো। আগে খেয়ে নাও।”
বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকালো অটবী। লোকটা এত অসহ্য কেন? চিবিয়ে চিবিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে হাতের মুঠোয় থাকা চকলেটটা ত্রিস্তানের কোলে ছুঁড়ে মারলো সে। অথচ ত্রিস্তান কিছুই বললো না। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করলো, “তুমি এখানে কেন এসেছো?”
এতক্ষণ! এতক্ষণ পর জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলেন জনাব! অটবী বলতেই নিচ্ছিল, সরোজ তাড়াহুড়ো করে বাঁধা দিলো, “ওইতো, তনয়া… মানে তনয়াকে ইয়ে করেছিল…”
মাঝপথে থামিয়ে তনয়া নিজেই বললো, “সরোজ ভাইয়া অনেক কাজ চোর হয়ে গেছে ভাইয়া। আমাকে পাহারা না দিয়ে নাকে তেল লাগিয়ে ঘুমাচ্ছিল। এই সুযোগে আমি বাসা থেকে পালিয়ে গেছি। দরজা খোলার সময় এত শব্দ করেছি, তবুও ঘুম থেকে উঠেনি। তোমার কিছু করা উচিত। সরোজ ভাইয়া খুব বাজে ভাবে নাক ডেকে ডেকে ঘুমায়।”
আধখাওয়া বিস্কুট-টা হাত থেকে পরে গেছে। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। অগ্রিম ভয়ে হার্ডফেল করে যেন মারা যাবে সরোজ। সে এখনই তার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। এই ঘন আঁধারে, বটগাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় চিৎকার করে ‘মাগো মা’ চিলাচ্ছে সে।
______________
চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা