অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ৩৩
__সকালের সূর্যের মৃদু আলো জানালা বিধ করে প্রাপ্তির মুখে এসে পড়তেই আস্তে আস্তে ঘুমটা ভেঙে গেল প্রাপ্তির।উঠে শরীরের আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে দেখে ফারহানের সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে, প্রাপ্তির উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে আরেকটু ঘুমালে ভালো হতো।আচ্ছা ফারহানকেও তো রুমে দেখছিনা কোথায় গেলো? অবশ্য ও মাঝেমাঝে আমার আগেই উঠে। প্রাপ্তি খাট থেকে নামতে যাবে তখনি ফারহান ২ কাপ কফি নিয়ে এসে,প্রাপ্তি তুমি এখনো উঠে ফ্রেশ হওনি।আর আমি ভাবলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে বসে আছো তাই আমি কফি নিয়ে আসলাম।
প্রাপ্তি ওয়াসরুমে যেতে যেতে বললো, আমি গিয়েই তো নিয়ে আসতে পারতাম।তুমি কষ্ট করতে গেলে কেন?আচ্ছা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
প্রাপ্তি ওয়াস রুমে যাওয়ার পরেই নীরা এসে বললো।শুভ সকাল ভাইয়া!
ফারহান পিছনে ফিরে দেখে নীরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -(মুচকি হাঁসি দিয়ে)শুভ সকাল! ভিতরে এসে বসো।প্রাপ্তি ওয়াস রুমে ফ্রেশ হতে গেছে।ওহ্ হ্যাঁ নীরা, তোমার জন্য একটা গিফট আছে।আমি দুপুরেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো। এখন দিয়েদি পরে মনে থাকবেনা।
নীরা-কিসের গিফট ভাইয়া?
ফারহান- কাল রাতের জন্য।তুমি না থাকলে আমি একা এতো কিছু করতে পারতাম না।আর তোমাকে স্পেশাল ভাবে থেনক্স আমার বউটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।
নীরা -ভাইয়া কিযে বলো না তুমি? সব ক্রেডিট তো তোমারি।
ফারহান গিফটের প্যাকেট টা নীরার হাতে দিয়ে, তুমি এইটা না নিলে ভাইয়া সত্যি অনেক কষ্ট পাবো।আমি অনেক শখ করেই এইটা কিনেছি।
নীরা -ওকে তোমাকেও থেনক্স।আচ্ছা আমি একটু পর এসে কথা বলছি।মৃদুলের অফিসের টাইম হয়ে গেছে।
নীরা যাওয়ার পরে ফারহান প্রাপ্তিকে ডেকে বললো, প্রাপ্তি! তোমার এখনো হয়নি?
প্রাপ্তি -এইতো আসছি।
কথাটা বলেই ওয়াস রুমের দরজা খুলে বাহিরে পা দিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো প্রাপ্তি। প্রাপ্তির পড়ার শব্দ শুনে ফারহান দৌঁড়ে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি!এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার? ফারহানের চিৎকার শুনে বাড়ীর সবাই দৌঁড়ে এসে দেখে ফারহানের কোলে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে আছে ফারহান তাকে ডাকছে আর পাগলের মতো করছে।
মেজো কাকা- হঠাৎ করে কি হয়েছে ওর? ফারহান তুমি পাগলামো না করে ওকে উঠিয়ে খাটে নিয়ে শুয়ে দাও।আর তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন দাও।
সাবার কথা শুনে খাটে নিয়ে শুয়ে ফারহানের মনে হলো তার ফ্রেন্ড নাদিয়াকে ফোন দিবে, সে অনেক বড় ডাক্তার।
ফারহান ফোন দিতেই নাদিয়া ফোন রিসিভ করে ফেললো।মনে হলো সেই এই ফোনের অপেক্ষায় বসে ছিলো।
ফারহান-হ্যালো, হ্যালো নাদিয়া।তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?
নাদিয়া -হ্যালো হ্যাঁ ফারহান কি হয়েছে তোর? এইভাবে কথা বলছিস কেন? কোনো প্রব্লেম?
ফারহান -তুই কোথায় আছিস সেটা বল?
নাদিয়া -আমি এইমাত্র হাসপাতালে আসলাম।কিছু বলবি?
ফারহান -তুই ওইখানেই থাক আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে আসছি।কথা টা বলেই ফারহান ফোন কেটে দিয়ে, কাকাই, আব্বু, আমি গাড়ী বের করছি,আপনারা প্রাপ্তিকে নিয়ে আসুন।
হাসপাতালে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।
প্রাপ্তিকে ইমাজেন্সি রুমে নাদিয়া নিয়ে গিয়ে দেখছে।
ফারহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।মনে হচ্ছে সেই পৃথিবী সব কিছুই এক নিমিষেই হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের অবস্থা দেখে কেউ কিছু জিজ্ঞাস ও করতে পারছে না।হঠাৎ কেন প্রাপ্তির এমন হলো।ইমরান আর মৃদুল এসে ফারহানকে বুজাচ্ছে কিন্তু ফারহানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তেছে।নিজের আপন মানুষের কিছু হলে অপেক্ষা করাটা যে কতোটা কষ্টের প্রাপ্তি এই অবস্থা না হলে ফারহান হয়তো কখনোই বুজতোনা।অবশ্য ফারহান প্রাপ্তির সাথে ইমাজেন্সি রুমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নাদিয়া যেতে দেয়নি।
একটু পর নাদিয়াকে আসতে দেখেই ফারহান দৌঁড়ে তার কাছে গিয়ে,নাদিয়া! প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে?ওর কি হয়েছে? প্লিজ চুপ করে থাকিস না।ওর কিছু হলে আমি মরেই যাবো।
ফারহানের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে, বউয়ের প্রতি দেখছি তোর অনেক ভালোবাসা,কিন্তু তুই এইটা কি ভাবে করতে পারলি।নাদিয়ার মুখে কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো একটা প্রশ্ন সবার মনে জেগে বসেছে।ফারহান হাত দিয়ে চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো কি বলছিস আমি তোর কথার কিছুই বুজতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে বুজিয়ে বল।
নাদিয়া-আমি এতো দিন যেনে এসেছি তুই একটা কেয়ারফুল ছেলে,কিন্তু না তুই পুরোই কেয়ারলেস একটা ছেলে।আচ্ছা তুই কি জেনে বুজে করেছিস নাকি না জেনেই বুজতেছিনা।তবে এইটা বলতে পারি। মেয়েটার অনেক অল্পবয়সী তাই হয়তো তার শরীরের এই অবস্থা।
ফারহান-(চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে)প্লিজ নাদিয়া এতো হেয়ালি করিসনা।কি হয়েছে প্রাপ্তির সেটা বল?
নাদিয়া- কেন তুই জানিস না? তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।ওর শরীর পুরোই দুর্বল।আমি অনেক গুলো টেস্ট করতে দিয়েছি সেই গুলোর রির্পোট না আসা পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছিনা।তোর ওয়াইফের এখনো জ্ঞান ফিরেনি আর ফিরতে অনেক সময়ও লাগবে।
নাদিয়ার কথা গুলো শুনে ফারহান চিৎকার দিয়ে বললো তুই একটু চুপ করবি? ও প্রেগন্যান্ট মানেটা কি?তুই কি এইখানে আমার সাথে ইয়ার্কি মারছিস।নাদিয়া শুন আমি এখন কোনো ইয়ার্কির মুডে নাই।
নাদিয়া- সত্যি ফারহান তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।তুই এইটা মানতে পারছিস না কেন?কেন তুই এইটা জানিসনা?
ফারহান -এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।কারন ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ওকে আমি ডাক্তার দেখিয়েছি।ওর সব রির্পোট নিয়ে ওকে না জানিয়ে আমি অনেক ডাক্তারকে দেখিয়েছি। সবাই একি কথা বলছে ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ফারহানের কথা শুনে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।প্রাপ্তির মা পাশে থাকা সোপার উপর হেলান দিয়ে বসেছে।
ফারহান প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকিয়ে,আম্মু আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি চাইনি প্রাপ্তি কখনো এইকথা গুলো জানুক তাই আমি কাউওকেই বলিনি ওর সমস্যার কথা।ও শুনলে অনেক কষ্ট পাবে তাই।
নাদিয়া -এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এককাজ কর কাউকে দিয়ে আগের রির্পোট গুলো নিয়ে আয় আমিও একবার দেখি।
প্রাপ্তির মেজো কাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস পেলে, এতোবড় একটা খুশীর খবর এইভাবে পেতে হবে ভাবতেই পারিনি।
প্রাপ্তির মা -আমি এইটুকুই জানতাম প্রাপ্তি মা হতে পারবেনা।তোমাদেরকে বলিনি ফারহান নিষেধ করছে।কিন্তু ফারহান এতো কিছু করেছে এইটা জানতাম না।
নীরা- বড় মা, ভাইয়া প্রাপ্তিকে অনেক ভালোবাসে।মা হওয়া না হওয়ায় কিছুই যায় আসতোনা।
ফারহান এইখান থেকে নাদিয়ার কেবিনে গেলো।একটা চেয়ার টেনে বসে নাদিয়া, ও সত্যিই কি প্রেগন্যান্ট?
নাদিয়া -আমি মিথ্যা কেন বলবো বল? রির্পোট গুলা আনিয়েছিস?
ফারহান -না ইমরান গেছে আনতে।
নাদিয়া -তোর বউ অনেক ভাগ্যেবতী। তোর মতো একজন হ্যাজবেন্ড সে পেয়েছে।কথাটা বলেই নাদিয়া বললো তুই চিন্তা করিস না।প্রাপ্তি ঠিক হয়ে যাবে। জ্ঞান ফিরলেই আর কোনো চিন্তা নেই।
ফারহান কিছু বলছে না।চুপ হয়ে অনবরত চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিচে পড়ছে।
ফারহানের বাবা মা সবাই আসছে। ফারহানের বাবা ছেলেকে এখন শুধু শান্তনা দেওয়া ছাড়া কিছু নেই।
ফারহান সবার কাছ থেকে উঠে প্রাপ্তির কেবিনে গিয়ে ওর মাথার পাশেই বসে একনাগাড়ে প্রাপ্তির দিকেই তাকিয়ে আছে।
নাদিয়া আড় চোখে বার বার ফারহানকে দেখছে।ফারহানকে যতো দেখছে তার কষ্ট তোতোই বাড়ছে।
ফারহান! ফারহান! নাদিয়ার ডাক শুনে অনেকক্ষণ পর ফারহান নাদিয়ার দিকে তাকালো।
ফারহান- (গম্ভীরভাব নিয়ে) কিছু বলবি?
নাদিয়া -তেমন কিছু না।কাছের মানুষ হারানো যে কতো কষ্টের এইবার বুজতে পারছিস?
ফারহান কিছু বলছেনা।ফারহান ভালো করেই জানে নাদিয়া কথাটা কেন তাকে বলছে। নাদিয়ার কোনো আনসারই ফারহানের কাছে নেই।
মেজো কাকা রুমে ঢুকেই দেখে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত তার বুকে নিয়ে বসে আছে।
মেজো কাকা-(ফারহানের কানের কাছে গিয়ে বললো)তোমার তো মালয়েশিয়া যাওয়ার প্লাইট রাত ১০.০০ টায়।এখন কি করবে?
ফারহান অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,কাকাই আমি যাবো না।আমি এইভাবে ওকে রেখে যেতে পারবোনা।
মেজো কাকা -তুমি যাও আমরাতো সবাই আছি।তুমি না গেলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।
ফারহান- কাকাই প্রাপ্তির থেকে কোনো কিছুই আমার কাছে বড় নয়।টাকা গেলে আবার আসবে কিন্তু আমি প্রাপ্তিকে হারিয়ে ফেললে কখনওই ফিরে পাবোনা।
মেজো কাকা নিজের চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো ঠিক আছে ফারহান।
মেজো কাকা বাহিরে এসে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।প্রাপ্তির বাবা এসে পাশে বসে বললো কিরে এইভাবে আছিস কেন ফারহান কি বললো।
মেজো কাকা প্রাপ্তির বাবাকে বললো ভাইয়া প্রাপ্তির কপাল টা অনেক ভালো। জীবনে এইরকম একজন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
প্রাপ্তির বাবা -সত্যি ছেলেটা অন্য রকম।দেখনা এতো কিছু হয়ে গেলো আমরা কেউই জানতেই পারলাম না।এবং তার ফ্যামিলির লোকও না
চলবে,,,,,