অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ৩১
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে আজ প্রাপ্তি আর ফারহানের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। এইএক বছরে দুজনের ভালোবাসাটা এতোটাই বেড়েছে যে ফারহান ব্যবসার কাজের জন্য বাহিরে গেলেও ৭/৮ দিনের বেশী থাকতে পারেনা।অফিসে গেলেও মন বসে না।প্রাপ্তির সাথে মাঝে মাঝে আয়ানের সাথে কথা হয় এই নিয়ে ফারহান কখনো কিছু বলেনা।সেই প্রাপ্তিকে অনেক ভাবেই যাচাই করে দেখেছে সেই ফারহানকে সত্যি ভালোবাসে কিনা।যতোবারি যাচাই করেছে তোতোবারি প্রাপ্তির প্রতি তার ভালোবাসা বেড়েছে বরং একটুও কমেনি।
প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো।মেজো কাকা সেজো কাকীকে ডেকে কফি দিতে বললো দুজনকে।নীরা আর নাজিফা এসে,
নীরা -আব্বু, বড় আব্বু আমাদের কিছু কথা ছিলো।
প্রাপ্তির বাবা -কি হয়েছে বল।
নাজিফা -তোমাদের কারো মনে নেই আজ কি?
মেজো কাকা -আজকে কি বল?
নীরা -আব্বু আজ প্রাপ্তির প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আমরা অনেক কিছু প্লান করছি। প্রাপ্তিকে সারপ্রাইজ দিবো।এখন তোমরা কি বলো?
প্রাপ্তির মা কফি হাতে নিয়ে আসতে আসতে বললো আমার মনে আছে, কিন্তু প্রাপ্তি এইবার ফারহানদের বাড়ী গেছে ৩ মাস হয়ে গেছে, আসতে বললেও আজ কাল বলে বলে কাটিয়ে দেয়।ফারহানকে বললে ও বলে আম্মু আপনার মেয়ে গেলে আমিও যেতে পারি।
মেজো কাকা -ভাবী জানেন বিয়ের সময় আমার খুব ভয় ছিলো প্রাপ্তিকে নিয়ে।ভেবেছিলাম ফারহানকে ও মেনেই নিবেনা।প্রাপ্তি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বুজিয়েছে ফারহানই সব কিছু।
নীরা -আব্বু এখন এইসব বাদ দাও।আমরা এখন প্রাপ্তি আর ফারহান ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবো কিভাবে সেটা ভাবতে চাই।
প্রাপ্তির বাবা -মৃদুল, ইমরান, সেজো বউ সবাই কে ডেকেই ভাবা যাক।
নীরা -বড় আব্বু! কাকাই আর মৃদুল বাহিরে গেছে কিছু কিনা কাটা করবে।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো দেখে সেজো কাকী বললো আপনারা বসুন আমি দেখছি। সেজো কাকী গিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে ফারহান! তুমি?
ফারহান -কেন কাকী? আমি আসতে পারিনা?
সেজো কাকী -না না সেই কথা বলিনি, আচ্ছা ভিতরে আসো।
ফারহান ভিতরে এসে সবাইকে এক সাথে দেখে বললো,কি ব্যাপার আব্বু সবাই একসাথে।
প্রাপ্তির আব্বু -নীরা আর নাজিফা কি প্লান করছে সেই নিয়ে আলোচনা করছি।আচ্ছা তুমি তো এই সময় না বলে আসার কথা না।
ফারহান -আসলে আব্বু আমি নীরার কাছে আসছি।(তারপর নীরার দিকে তাকিয়ে) নীরা আমার তোমার সাথে আলাদাভাবে কিছু কথা আছে।
মেজো কাকা -ঠিক আছে, নীরা! ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।ভাবী ফারহান কে নাস্তা দাও।
নীরার রুমে এসে ফারহান নীরাকে বসিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে বসলো।
নীরা -কি সমস্যা সেটা তো বলবা?
ফারহান -আমি জানি তুমি সবকিছু জানো। আজ রাত ১২.০০ টার পরথেকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষকী। আমি চাই প্রাপ্তিকে কিছু একটা সারপ্রাইজ দিই।এখন তুমি আমার সাথে যাবে আমরা শপিং করবো।আমি প্রাপ্তিকে আবার নতুন করে বউয়ের সাজে দেখতে চাই।বিয়ের দিন প্রাপ্তি বউ সেজেছিল ঠিকি কিন্তু আমার জন্য নয়।সবার কথায় বাধ্য হয়ে সেজেছিলো।এখন আমি চাই ও শুধু আমার জন্যই সাজবে। সেইদিন আমি ওর কাছ থেকে ভালোবাসা পাইনি।পেয়েছি শুধু ওর দুচোখে আমার প্রতি ওর ঘৃণা। কিন্তু এখন তো আর সেই সুযোগ নেই ও এখন আমাকে অনেক ভালোবাসে।ওহ্ আরেকটা সমস্যা হয়ে গেছে।ব্যবসায়ীক কাজে আমাকে কাল রাতে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। আমি প্রাপ্তিকে এই কথা ভয়ে বলতে পারিনি। ভাবছিলাম সারপ্রাইজের সাথে সাথে এই কথাটাও বলবো।
নীরা -আচ্ছা ঠিক আছে ছোটো শালী হয়ে এইটুকু করতেই পারি।তুমি ড্রইংরুমে বসো আমি রেডি হয়ে আসছি।ওওওও! ছোটো কাকাই আর মৃদুলও তোমাদের সারপ্রাইজ দিবে বলে কিনাকাটা করতে গেছে। আমরা গিয়ে শপিং শেষ করে ওদেরকে ফোন দিয়ে একসাথে বাসায় চলে আসবো।
এখন শপিং করে আসি বাকী প্লান পরে করবো।
এইদিকে প্রাপ্তি ফারহানে অপেক্ষায় বসে আছে।সন্ধ্যা হয়ে গেলো আজ এখনো আসছে না কেন।আজকের কথা কি ফারহানের একবারো মনে পড়েনি? ঠিক আছে আজ বাসায় আসুক একটুও কথা বলবো না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বড় ভাবীর রুমে গিয়ে দেখে সে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
প্রাপ্তি -ভাবী তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?
প্রাপ্তির দিকে ফিরেই বড় ভাবী বললো কিরে তুই এখনো রেডি হলি না?
প্রাপ্তি -কেন ভাবী? কোথায় যাবো?
বড় ভাবী -তুই কিছু জানিস না? বাবা এসেই তো আমাকে বললো সবাইকে বলে দিতে তোদের বাসায় যাওয়ার জন্য। তোর মা নাকি অসুস্থ সবাই এক সাথে দেখতে যাবে।আমি রুমে আসার সময় সুমিকে বলেছি তোকে বলে দেওয়ার জন্য। কেন সে তোমাকে বলেনি?
প্রাপ্তি -আমার আম্মু অসুস্থ? আমিই জানিনা। কথাটা বলেই প্রাপ্তি রুমে দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে ফোনে নীরা, মেজো মার অনেক গুলো মিসড কল।তাড়াতাড়ি করে নীরাকে ফোন দিলো প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি -হ্যালো, হ্যালো,,নীরা আম্মুর কি হয়েছে? তোরা আমাকে একবারো জানালিনা?
নীরা -বিকেল থেকে অনেক বার ফোন দিয়েছি তুই রিসিভ করিসনি।পরে তোর শশুরের ফোনে ফোন দিয়ে বলেছি তোকে বলতে।এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়।
কথাটা বলেই ফোন রেখে দিয়ে ফারহান মৃদুল ইমরান সবাই হাঁসতে থাকলো।
প্রাপ্তির মা তাদেরকে বললো মেয়েটাকে এইভাবে আনাটা কি ঠিক হবে।
ফারহান -আম্মু আপনি টেনশন করবেন না। আমি বড় ভাবীকে সব বলে রেখেছি।
প্রাপ্তির মা -হুম, তোমরা যা ভালো মনে করো।আমি এইদিকে রান্নাটা দেখে আসি।আজ সব প্রাপ্তি আর ফারহানের পছন্দমতো রান্না করা হবে।
ফারহান- আম্মু, আপনি একদম আমাকে নিয়ে টেনশন করবেননা।আর মৃদুল, ইমরান চলো আমরা এইদিকে সব গুলো রেডি করে ফেলি।
মৃদুল আর ইমরান যাওয়ার পরে ফারহান নীরার কানের কাছে এসে বললো তোমার কাজ গুলো কিন্তু মনে রেখো। কথাটা বলেই ফারহান তাদের সাথে চলে গেলো।
বড় ভাবী, মেজো ভাবী সুমি সবাই এসে দেখে কিরে প্রাপ্তি তুই এখনো রেডি না হয়ে বসে আছিস।
প্রাপ্তি-দেখোনা ভাবী ফারহানকে কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি ফোন সুইচ অফ বলছে।এখন কি করি বলোতো।
বড় ভাবী -তুই আগে রেডি হয়ে চল ওই বাড়ীতে গেলে ফোন দিয়ে বলে দিবো ওইখানেই আসতে।
প্রাপ্তি -তাহলে চলো, আমার রেডি হওয়া লাগবেনা।আমার টেনশনে কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।
বড় ভাবী -তোর যেইটা ভালো লাগে কর,তাহলে এইবার চল
চলবে,,,,,