অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৯

0
3055

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ঘড়ীর কাটায় টিকটিক করে রাত দুইটা বেজে গেছে।প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তির ফোনের রিং বেজেই যাচ্ছে।ফারহান ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোন বেজে যাচ্ছে।
ফোনের আলো প্রাপ্তির মুখে পড়তেই ঘুম ঘুম চোখে, ওহ্! ফারহান কি করছো তুমি?

ফারহান -(আস্তে করে) অনেকক্ষণ থেকে তোমার ফোন বাজতেছে।

প্রাপ্তি – ধ্যাত! ফোন অফ করে রাখো তো।

ফারহান -দেখো না হয়তো জরুরী হবে।

তুমি ছাড়া এই মুহূর্তে জরুরী কিছু নেই, কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে বসলো। ফারহানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্কিনের উপর নাম্বারটা দেখে প্রাপ্তির হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

ফারহান নিজেও উঠে বসতে বসতে হ্যাঁ আয়ানই ফোন করেছে তাই তোমাকে উঠাতে হলো।অন্য কেউ হলে তো আমি নিজেই কথা বলতাম।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের মুখের দিকে ছেয়ে আছে।একটা মানুষের কিভাবে এতোটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে?

ফারহান -আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ফোন রিসিভ করো। বেচারা একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথায় ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই, আমি জানতাম তুমি আমার ফোন রিসিভ না করে পারবেনা। কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো।

প্রাপ্তি -আপনার ভুল ধারণা। আপনার ফোনই আমি রিসিভ করতাম না।কিন্তু আমার হ্যাজবেন্ডের কারণেই রিসিভ করলাম।যাইহোক এতো রাতে ফোন দিলেন কেন?

আয়ান- প্লিজ এইরকম করোনা। আমি মানছি আমি সেইদিন ভুল করেছি।তোমার কোনো কথা বিশ্বাস না করে।চলোনা আমরা সবকিছু মিটিয়েনি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান বসে বসে ফোন টিপতেছে।মনে হচ্ছে এইদিকে তার কোনো মনই নেই।

প্রাপ্তি -আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছেন এইসব? কি মিটাতে চান? কোনো কিছুই আমি মিটাতে চাই না।প্রাপ্তি কথার স্বর জরে হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারহান নিজের ফোন রেখে, প্রাপ্তি আস্তে কথা বলো,সবাই শুনতে পাবে।

আয়ান -তার মানে সত্যি তুমি বিয়ে করেছো। সকাল থেকে ভাবলাম রাগ করেই এসব বলতেছ। কিন্তু এতো রাতে যখন তোমার পাশে ছেলের কন্ঠ শুনছি তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করেছ।কিন্তু আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে করেছো তাতে কি হয়েছে? তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি ঠিক থাকলে আমার সব ঠিক।কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজে গেলো আয়ানকে এইভাবে সারারাত বুজালেও বুজবেনা।এর ছেয়ে ভালো সকালে ফারহান যখন থাকবেনা তখন সব কিছু বুজিয়ে বলে ঠিক করে নিবো।ফারহান হয়তো মুখে কিছু বলছেনা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পাচ্ছে।ও তো রক্তেমাংস গড়া একটা মানুষ। হয়তো আমায় বেশী ভালোবাসে দেখেই সবকিছু চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আয়ানকে আর কিছু না বলে ফোন রেখে অফ করে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়েছে দেখে ফারহান বললো,কি ব্যাপার কিছু না বলেই রেখে দিলে।
প্রাপ্তি একটা হাঁসি দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে আমার এখন ইচ্ছে করছে না কথা বলতে।এতো রাতে কেউ ফোনে কথা বলে? আমার ইচ্ছে করছে বরে আদর খেতে।
ফারহান প্রাপ্তিকে নিজে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তাই বুজি?

প্রাপ্তি -হুম।।

ফারহান – তাহলে ফোনটা এসে ভালোই হলো।না হলে তো ঘুমিয়েই থাকতে।

প্রাপ্তি -হুম,,,

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরে অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে,একটা কথা বলি?

প্রাপ্তি -আমি মানা করেছি তোমাকে? যা বলার বলতে পারো কিন্তু এইভাবে নয়।
তুমি শুয়ে পড়ো আমি তোমার বুকে মাথা রেখে যা বলবে শুনবো।
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তিকে বুকে শুয়ে বললো, এই ফোনটা আর না ব্যাবহার করলে হয়না? আমি তোমাকে এর ছেয়ে ভালো ফোন এনে দিবো।ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজেছে কেন বলছে এই কথা।তাই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,

প্রাপ্তি -তুমি যা বলবে তাই হবে।

(কথাটা শুনে ফারহান বুজে নিলো আয়ানের উপর প্রাপ্তির এখন আর সেই দুর্বলতা কাজ করেনা)
আচ্ছা সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবে তো?

ফারহান -যেইদিন তোমাকে ভালোবাসবো না তোমার মনে হচ্ছে, মনে করবে সেইদিনি ফারহান আর পৃথিবীতে নেই।

প্রাপ্তি -ওহ্ কি বলছো এইসব?যেইখানে যাবা আমাকে নিয়ে যাবে না হলে তোমার খবর আছে।

ফারহান -মুখে একটু হাঁসির ঝলক ফুটিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে বলেই প্রাপ্তির কপালে আস্তে করে একটা চুমু খেলো।
সারারাত ফারহানের ভালবাসা পেয়েই প্রাপ্তির রাত কেটে গেলো।সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারহানের জন্য চা আনতে গেলো।ফারহান চায়ের জন্য রুমে অপেক্ষা না করে ড্রইংরুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মেজো মা প্রাপ্তিকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে, কিরে তুই রান্নাঘরে?

প্রাপ্তি -ফারহানের জন্য চা নিতে আসলাম।

মেজো মা -তুই আসতে গেলি কেন? বললেই তো পাঠিয়ে দিতাম।

প্রাপ্তি- কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেই পারবো।
কথাটা শুনে মেজো মা বললো,তাহলেতো ভালোই।আচ্ছা এই নে,চা টা দিয়ে আয়।
প্রাপ্তি এসে ফারহানের হাতে চা দিতেই ইমরান বললো এইটা কি দেখলাম,

মেজো কাকা নিজের চায়ে চুমুক দিয়ে,কেন কি হয়েছে তোর?

আরে ভাইয়া কি হয়নি সেটা বলেন।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)এই প্রাপ্তি, কখনো তো আমাকে এক কাপ চা এনে খাওয়ালিনা।আর যার সাথে তোর সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো তাকে এনে ঠিকি খাওয়ালি।
ইমরানে কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো। ফারহান ইমরানের কানের কাছে গিয়ে, শুন তুই ওর কাকাই আর আমি ওর হ্যাজবেন্ড তাহলে আমাকে এনেতো দিবেই তাই না?তোর হিংসে কেন লাগছে আমি বুজলাম না।তুইও বিয়ে করে ফেল দেখবি বউয়ের হাতের চা কখনোই মিস করতে চাইবিনা।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে