অজানা_অনুভূতি পার্ট ২৮

0
2919

অজানা_অনুভূতি

পার্ট ২৮

#Rabeya Sultana Nipa 

 

__প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

প্রাপ্তি উঠে তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখে ওইখানে সবাই আছে।

প্রাপ্তিকে দেখে তার মা বললো,কিরে তুই ওই খানে একা একা কি করছিস।আমরা সবাই এইখানে তুই আমাদের সাথে কথা বলবি তা না।আচ্ছা শুন ফারহান আর তুই আজ আমাদের বাসায় চলে আয়।নীরার শাশুড়িকে বলেছি নীরাকে নিয়ে যাওয়ার কথা।তিনিও রাজী হলেন।

প্রাপ্তি -আম্মু ফারহান কি বলবে বলো? ওর বাসায় ফোন দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞাস করতে হবে থাকবো কিনা?

মেজো মা -নাজিফা যাতো ফারহান কে ডেকে নিয়ে আয়। ফারহানকেই বলবো তার বাবাকে বলতে।

ফারহান এসে, মেজো মা! আমাকে ডেকেছেন?

মেজো মা- হ্যাঁ, আসলে মেয়েটা তো অনেক দিন হলো তোমাদের বাড়ীতেই আছে।আমরা চাই প্রাপ্তি এইখান থেকে আমাদের বাসায় যাবে।অবশ্য নীরাও যাবে।প্রাপ্তিকে বলছি সে বলতেছে তোমার বাবাকে বলা ছাড়া কিছু বলতে পারবেনা। এখন তুমি কি বলো?
কথাটা শুনেই ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ঠিক আছে মেজো মা।আমি বাবাকে ফোন করে দেখি কি বলে।
কথাটা শেষ করে প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাহিরে আসতে।
প্রাপ্তি ফারহানের পিছন পিছন পাশের রুমে আসলো।ফারহান কে দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনে ওর ভালো লাগেনি। আচ্ছা ও না গেলে নাই তাই বলে রাগটা আমার উপর মিটাবে নাকি।মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান প্যান্টের পকেটে দুই হাতে ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ফারহান আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি কাছে আসতে আসতে, ফারহান বিশ্বাস করো আমি আম্মুদের যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলিনি।ওনারাই ব,,,,,,,,প্রাপ্তিকে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডান হাত দিয়ে টেনে এনে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো।

ফারহান -ওনারাই বলছে,,,, তোমার একটুও ইচ্ছে করেনি?

প্রাপ্তি -তুমি রাজী হলেই যাবো।যদি তুমি যাও তাহলে।

ফারহান – যেতে পারি এক শর্তে।

প্রাপ্তি -আবার কি শর্ত বলো তো?

ফারহান- তুমি তো ওই বাড়ীতে গেলে সবাইকে পেয়ে আমাকেই ভুলে যাবে।কিন্তু আমি এইটা চাইনা।আমি চাই তুমি শুধু আমাকেই সময় দিবে।এইকথায় যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আমিও যেতে রাজী। আর বাবাকেও বুজিয়ে বলবো।

প্রাপ্তি ভালো করেই জানে ফারহানকে যখনি ওই বাড়ীতে যেতে বলবে তখনি এই শর্তই দিবে।এরচেয়ে ভালো এখনি হ্যাঁ বলেদি।
প্রাপ্তির মুখে হ্যাঁ শুনে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার বাবাকে ফোন দিলো।

ফারহান- আসসালামু আলাইকুম,

ফারহানের বাবা- ওয়ালাইকুম সালাম।কি ব্যাপার ফারহান,কোনো সমস্যা?

ফারহান -বাবা, আসলে প্রাপ্তির মায়েরা সবাই বলছে নীরাদের বাসা থেকে ওদের বাসায় যেতে।আর প্রাপ্তিও তো আমাদের বাড়ীতে এসেছে অনেক দিন হলো। এখন না হয় কয়েকদিন গিয়ে ওই বাড়ীতে থেকে আসুক।প্রাপ্তি বলছে তুমি না বললে ও যাবেনা।

ফারহানের বাবা -ফারহান, এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।প্রাপ্তিকে বলো কয়দিন গিয়ে থেকে আসতে।আর প্রাপ্তিকে বলে দিও ওর হাতের চা টা আমি খুব মিস করবো এই কয়দিন।

ফারহান একটা হাঁসি দিয়ে ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বাবা তোমাকে একটা কথা বলতে বলেছে।

প্রাপ্তি -কি কথা?

ফারহান- তোমার হাতের চা নাকি অনেক মিস করবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হবে নাকি মন খারাপ করবে বুজতে পারছে না।
কারণ সে তার শুশুরের জন্য চা বানিয়ে আনে ঠিকি কিন্তু তিনি কখনো খারাপ ভালো কিছু বলেননি।কিন্তু আজ কেন বললেন এইটা প্রাপ্তির অজানা।

এই প্রাপ্তি কি ভাবছো বলোতো? ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
কিছুনা ফারহান আমি আম্মুকে বলে আসি আমরা যাচ্ছি।
সব ঝামেলা শেষ করে সবাই সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে এলো।প্রাপ্তি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান বসে বসে প্রাপ্তির ফোন টিপতেছে।
প্রাপ্তি -ফোন দিয়ে কি করছো?

ফারহান -তোমার আর আয়ানের আগের এসএমএস গুলো দেখছি।চিন্তা করোনা দুই একটাই পড়ছি বেশী পড়িনি।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে সব গুলোই দেখো তবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো এই ফাঁকে আমি নীরার রুম থেকে আসছি।

ফারহান -ঠিক আছে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোমাকে এইরুমেই দেখি।

প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নীরার রুমের দিকে গেলো।
মৃদুল শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে।নীরা ফ্রেশ হয়ে মাত্র দাড়িয়েছে।

প্রাপ্তি দরজায় দাঁড়িয়ে আমি কি আসবো?
নীরা হেঁসে উঠে তুই এই কথা বলছিস।তোর আর আমার মাঝে তো কোনো ফর্মালিটি নেই। তাহলে আজ কেন দেখাচ্ছিস।ওওও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি বড়লোক বাড়ীর বউ।এখন তো ফর্মালিটি দেখাবেনই।

প্রাপ্তি -(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)দেখেছো ভাইয়া নীরা আমায় এই কথা বলছে।তো নীরা! তোরাই তো সবাই মিলে আমাকে বড়লোক বাড়ীতে বিয়ে দিলি।এখন আবার এই কথা কেন বলছিস?

নীরা প্রাপ্তির কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে প্রাপ্তি আমি মজা করছি।তুই কি রাগ করছিস? ঠিক আছে আর কখনো বলবো না।

মৃদুল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের মাঝে আমি নেই। আমি বাহিরে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ মনে মনে এইটাই চেয়েছিলো কখন মৃদুল যাবে আর ও নীরার সাথে কথা বলবে।মৃদুল চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।

নীরা -তুই ওই দিকে তাকিয়ে না থেকে কিছু বলবি? মনে হচ্ছে কিছু বলতেই এসেছিস।

প্রাপ্তি কথাটা ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই বললো আজ তোদের বাসায় যাবার আগে আয়ান ফোন করেছিলো।

প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে নীরার নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এই আবার নতুন কোনো ঝামেলা শুরু করবে নাতো?

নীরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে তুই কি ভাবছিস আমি ভালো করেই জানি।তবে তুই যা ভাবছিস ওইটা ভুল।আমি এমন কিছুই করবোনা যেতে ফারহান কষ্ট পায়। কি ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেটা আমি ফারহানের কাছ থেকেই শিখেছি।আমি এইটাও শিখেছি ভালোবাসাতে কোনো মিথ্যা ছলনা থাকতে নেই।হয়তো তুই এইটাও ভাবছিস আয়ানের কথা আমি ভুলে গেলাম কি করে আমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছেনা? এইটার ও আনসার আমি জানি।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোকে বলে বুজাতে পারবোনা। কিন্তু ফারহানের ভালোবাসার কাছে কিছুই না।যে মানুষ সামান্য একটা ফোনে আমায় এতোটা সন্দেহ করতে পারে তাকে ভালোবাসা বলা যায়না। আর যে সব কিছু জেনেও বিশ্বাস রাখে তাকেই ভালোবাসা বলে।
প্রাপ্তির কথা শুনে নীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, সত্যি বলছি তোর মধ্যে এতোটাই গভীরতা আছে যা আমাদের কারো কাছেই নেই।

প্রাপ্তি, প্তাপ্তি, সেজো কাকী ডাকতে ডাকতে নীরার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, তুই এইখানে, ফারহান তো তোকে ডাকছে।

হঠাৎ প্রাপ্তির মনে পড়ে গেলো ফারহান আসার সময় বলে দিয়েছিলো ও ফ্রেশ হয়ে এসে যেন আমাকে রুমে দেখে।নীরাকে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি দৌঁড়ে রুমে গেলো।

প্রাপ্তিকে এইভাবে যেতে দেখে নীরা সেজো কাকীর দিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে কাকী? কিছুই তো বুজলাম না।

সেজো কাকী আমি ও তো কিছু বুজিনি।ফারহান আমাকে বললো,কাকী প্রাপ্তিকে একটু ডেকে দিন তাই আমি ডাকতে এলাম।

নীরা -ওহ্,,আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রাপ্তি রুমে ঢুকে ফারহান রেডি হচ্ছে দেখে।

কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তোমার সাথে আমার এই কথা ছিলো?তুমি আমাকে রেখে আড্ডা দিবা আর আমি একা একা বসে থাকবো ইম্পসিবল এর থেকে আমার বাড়ীই ভালো।

প্রাপ্তি ফারহান কে আর কোনো কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পর ফারহানের মনে হলো তার পরার শার্টটা বুকের পাশে ভিজা লাগছে।তাড়াতাড়ি করে বুকের থেকে প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে দেখে চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
ফারহান এতোক্ষণ প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি দেখে,এই পাগলি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।তোমাকে ছাড়ে গেলে তো আমি নিজেই থাকতে পারবোনা। প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান নিজের কাছে আরো টেনে এনে প্রাপ্তির কপালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে আস্তে করে, কি হয়েছে বলা যাবে?

প্রাপ্তি -ওহ্

ফারহান -বুজেছি কি হয়েছে।

প্রাপ্তি -কি বুজেছ?

ফারহান -আমার বউয়ের তার বরে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -হুমমম

ফারহান আর কিছু না বলে প্রাপ্তির ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট গুলো নিয়ে প্রাপ্তির ঠোঁট গুলো নিজের করে নিলো। প্রাপ্তিও কোনো বাধা না দিয়ে ফারহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ফারহানের ভালোবাসার কাছে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে