অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৫

0
3018

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহান ড্রইংরুমে তার আব্বু আর কাকাইদের সাথে কথা বলছে।ফারহানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহানের ইচ্ছা করছে রুমে যেতে কিন্তু এখন রুমে গেলে সবাই কিভাববে তাই না ছাইলেও সবার কথা বসে বসে শুনতে হচ্ছে। প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো,ফারহান কখন এলে?

মেজো কাকা -ও কি বলবে? ওকে তো ইমরান ফোন করে নিয়ে আসছে। ও নাকি বিকেলে তোকে নিতে আসবে বলেছিলো তারপর আমি ইমরান কে বলে ফোন দিয়েই নিয়ে এসেছি।

প্রাপ্তিরর মা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে, প্রাপ্তি! তুই আগে খেয়েনে পরে কথা বলিস।

ফারহান -মা ঠিকি বলেছে আগে খেয়ে নাও।খেয়ে একটু পরে রেডি হয়ে নিও।

প্রাপ্তির আব্বু -ফারহান, আজ কি সত্যিই চলে যাবে?

ফারহান-জ্বী, সমস্যা নেই পরে এসে প্রাপ্তি কয়েকদিন থেকে যেতে পারবে।

কেউ আর কিছু বললো।প্রাপ্তিও খেয়ে রুমে চলে গেলো।একটু পর ফারহানও প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ফারহান দরজাটা বন্ধ করে খাঁটের এক কোনায় বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই একটা হাঁসি দিয়ে, ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

ফারহান -দেখছি আমার হিটলার বউকে। আচ্ছা কাল রাতে তোমার আমার কথা একবারো মনে পড়েনি? আমাকে মিস করোনি?তুমি রাতে আমাকে একবারো ফোন দাওনি।আমি ভাবেছিলাম কি আর হলো কি।

প্রাপ্তি -(ফারহানের কাছে একটু এগিয়ে)তাইইইইইইইইই? কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে একটুও ভাবি নাই।(কাথাটা বলে প্রাপ্তি আবার হাঁসা শুরু করলো।)

ফারহান-হাঁসো! হাঁসো! যতো খুশি হেঁসে নাও।

প্রাপ্তি -হুম ঠিক আছে,তোমাদের বাড়ীতে গিয়ে যদি হাঁসতে না পারি তাই এখনি হেঁসে নিচ্ছি।কারণ বউ তো এখন সাবধানেই চলতে হবে।

প্রাপ্তির কথা শুনে যতো বেশী না অবাক হচ্ছে তার ছেয়ে বেশী খুশি হচ্ছে এই ভেবে, প্রাপ্তি সবার সাথে মানিয়ে নিতে চাইছে।

ফারহান! ফারহান! একটু এইদিকে আসোতো।
প্রাপ্তির বাবার ডাক শুনে ফারহান উঠে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি তুমি রেডি হয়ে ড্রইংরুমে আসো আমি ওইখানেই আছি।

ফারহান ড্রইংরুমে গিয়ে, আব্বু ডেকেছেন?

প্রাপ্তির বাবা -নীরা আর মৃদুল তো সকালেই চলে গেছে জানো। একটু আগে নীরার শাশুড়ি ফোন করলো তাদের বাসায় সবাইকে যাওয়ার জন্য।এখন তোমরা তো চলে যাচ্ছো আমার মনে হয় তুমি আর প্রাপ্তি যে দিন যেতে পারবে সেইদিনের কথাই বলবো তাদের।এখন কি বলো তুমি?

ফারহান -আব্বু আমি আগে বাসায় যাই।তারপর না হয় আপনাকে ফোন করে জানাবো কখন যেতে পারবো।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো।

প্রাপ্তিও রেডি হয়ে চলে আসছে দেখে প্রাপ্তির কাকা বললো, কিরে একদম রেডি হয়ে চলে আসছিস? (প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)দেখছস ভাইয়া, প্রাপ্তি আমাদের এক নিমিষেই পর করে দিলো। ফারহানের বাড়ী যাবে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই চলে আসছে।
প্রাপ্তিকে যেই যাই বলুক না কেন , কেন জানি ওর একটুও খারাপ লাগছেনা।সবাই তো ভাবে ছিলো প্রাপ্তি আজ যেতে চাইবেনা।সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে হাঁসি খুশি ভাবেই বাড়ী থেকে বিদায় নিলো। প্রাপ্তির মা ও মেয়েকে আজ আর কিছু বললো না।

ওই বাড়ীতে পৌঁছে প্রাপ্তি হাঁসি মুখে সবার সাথে ভালো ভাবেই মিশে গেছে। আজ প্রাপ্তির কাছে মনে হচ্ছে এইটাই তার পরিবার। ফারহানের পরিবারের সবাইও অনেক ভালোবাসে প্রাপ্তিকে।
এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এখন আর আগের মতো আয়ান নামের কাউকে মনে পড়ে না।ফারহানের সাথে আগের থেকে ভালোই সময় কাটছে।ফারহানও প্রাপ্তি সব কাজেই সাহায্য করে।ফারহানকেও প্রাপ্তি আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু ফারহানকে এখনো বুজতে দেয়না।

আজ সন্ধ্যা থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে।
বড় ভাবী নাস্তা বানিয়ে প্রাপ্তিকে ডেকে বললো সবাইকে রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসতে।প্রাপ্তিও সবাইকে নাস্তা দিয়ে এসে ফারহানের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে গেলো।ফারহান এতোক্ষণ শুয়েই ছিলো।
প্রাপ্তিকে দেখে ফারহান উঠে দাঁড়ালো

ফারহানকে দাঁড়াতে দেখে প্রাপ্তি নাস্তাটা রাখতে রাখতে বললো।কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
প্রাপ্তি নাস্তাটা রেখেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে।ফারহান যতো এগিয়ে আসছে প্রাপ্তি ততো পিছাতে থাকলো আর তোতলাতে তোতলাতে বলতে লাগলো ফা ফা ফার হা ন,,,এইইইইইইভা বে, আ আ আ স ছো,,কে কে ন?
আমি প প প ড়ে,,,,, যা যা বো,,,,তো

ফারহান কিছু বলছে না আর প্রাপ্তি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেলো।ফারহান আস্তে আস্তে এসে প্রাপ্তির দুপাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান নিজে মুখটা প্রাপ্তির মুখে কাছে নিতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ফারহান এতোটাই কাছে এসেছে যে প্রাপ্তির বুকের ভেতরের শব্দটা ফারহান শুনতে পাচ্ছে।প্রাপ্তির চোখ বন্ধ করে রেখেছে দেখে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বললো।বৃষ্টিতে ভিজবে?
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চোখ মেলে দেখে ফারহান তাকিয়ে হাঁসছে।

ফারহানের হাঁসি দেখে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে তারদিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -কি ভেবে ছিলে? তোমায় কিস করবো?
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -তুমি জানো? যখন তুমি চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তোমায় অনেক সুন্দর লেগেছে যা তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।তবে তুমি চিন্তা করোনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করবোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।প্রাপ্তির এমনিতে বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে।ফারহানও বারান্দায় গিয়ে প্রাপ্তির পাশে দাড়ালো।

ফারহান -রাগ করছো? আসলে তখন তোমাকে এইভাবে ধরাটা ঠিক হয়নি আমি ও বুজতে পারছি।আচ্ছা সরি আর কখনো এমন করবো না।এইবার আমার দিকে তাকাও। (প্রাপ্তি এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলতে ফারহান আমি একটুও রাগ করিনি তোমার উপর।)

প্রাপ্তি,কানে ধরবো? আমার দিকে তাকাও এই দেখো কানে ধরছি কিন্তু!
প্রাপ্তি আর চুপ থাকতে না পেরে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান চমকে উঠলো।
প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রাখে, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না হলে আবার হারিয়ে যাবো।
ফারহান কথাটা শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা।ফারহান প্রাপ্তিকে এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে প্রাপ্তি এখন যেতে চাইলেও যেতে দিতে পারবেনা।

বাহিরে জোরে বাতাস বইছে দেখে ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এসে খাটে শুয়ে দিলো।ফারহানকে উঠে যেতে দেখে প্রাপ্তি বললো কথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তুমি আসার সময় দরজাতো দিয়ে আসো নাই।ওটাই দিতে যাচ্ছি।এখন কেউ এসে ডিস্টার্ব করুক এইটা আমি চাইনা।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তিকে কখন নাস্তা দিতে পাঠিয়েছো এখনো তো এলোনা।

বড় ভাবী -ফারহান মনে হয় রুমে আছে।হয়তো বসে কথা বলছে।

মেজো ভাবী -তুমি যাই বলো প্রাপ্তি অন্য রকম।ফারহানের প্রতি মনে হচ্ছে তার কোনো দায় নেই।কেমন জানি ওর থেকে দূরে শরে থাকে।

বড় ভাবী -বাদদে ওইসব ওদের ব্যাপার।যদি কিছু হয়ে থাকে নিজেরাই মিটিয়ে নিবে।

ফারহান দরজাটা আটকে এসে প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তিকে এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে প্রাপ্তির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তিও বাঁধা দেয়নি। প্রাপ্তিও আজ ফারহানের ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে চায়।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে