অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ২৩
_রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো। প্রাপ্তি আর নীরা তার মায়ের রুমে বসে গল্প করছে।প্রাপ্তির বাবা ফোনে কথা বলতেছে ওনার এক ফ্রেন্ডএর সাথে।ফারহান, মৃদুল রুমে বসে কথা বলছে।
প্রাপ্তির মা ঘড়ী দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক রাত হয়ে গেছে তারপরও নীরা আর প্রাপ্তি বকবক করেই যাচ্ছে।
প্রাপ্তির মা -কিরে দুই বোন মিলে আর কতোক্ষণ গল্প করবি।রাত তো অনেক হয়েছে। এখন যে যার রুমে যা ফারহান মৃদুল একা বসে আছে।
প্রাপ্তি -আম্মু আরেকটু থাকিনা! ওই বাড়ীতে এইবার গেলে আবার কখন আসতে দিবে তার কি ঠিক আছে।হয়তো আমি আসতে পারলে নীরা আসতে পারবে না। আবার নীরা আসলে আমি আসতে পারবোনা।
নীরা -বড় মা, প্রাপ্তি ঠিকি বলেছে।প্রাপ্তি এখন গেলে কি আর ফারহান ভাইয়ার মা এতো তাড়াতাড়ি আসতে দিবে?
এমন সময় ফারহানের ডাকাডাকি তে প্রাপ্তি উঠতে উঠতে বললো, এর আবার কি হলো, আচ্ছা গিয়ে দেখে আসি।নীরা চল!আম্মু তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে ফারহান আর মৃদুল কথা বলছে।
প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আমাকে ডেকেছো কেন?
ফারহান- এতো দিন তো পড়া লেখায় ফাঁকি বাজি বহুত করছো।কাল থাকে আবার কলেজে যাবে। মৃদুল কাল নীরা কে নিয়ে যাবে, তুমিও তাদের সাথে যেও।আমিই যেতাম এখন কাল সকালে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।
প্রাপ্তি মৃদুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে হ্যাঁ বুজালো।
মৃদুলও একটা হাঁসি দিয়ে নীরার সাথে উঠে চলে গেলো।
মৃদুল চলে যাওয়ার পর প্রাপ্তি বসতে বসতে বললো আমি কলেজে যাবো না।তুমি মৃদুল ভাইয়ার সামনে বললে বলে আমি হ্যাঁ বললাম।
ফারহান-কলেজে যাবা না মানে?প্রাপ্তি দেখো তোমার সবকিছুই আমি মেনে নিই বলে এইটা ভেবো না এই অন্যায় আবদার টা ও মেনে নিবো।
প্রাপ্তি ফারহান কে কিছু না বলে বিড়বিড় করতে করতে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তির কান্ড দেখে ফারহান বললো,
আমি কোনো মাছিকে বিয়ে করেনি রাতের বেলায় কানের কাছে এসে বিড়বিড় করবে।তবে তুমি যখন বিড়বিড় করে কথা বলো তখন তোমায় খুব সুন্দর দেখায়।
প্রাপ্তি -হাওয়া দিতেছো? ভালো খুব ভালো।
(একটু নরম সুরে) ফারহান কাল কলেজে না গেলে হয়না? নতুন বউ কলেজে যায়? লোকে কি বলবে?
ফারহান -যে যাই বলুক তাতে তোমার কি।আর এইভাবে কথা বলে ফারহানকে পটানো যায়না।যাই হোক কাল কলেজে যাবা এইটাই ফাইনাল। এই বার ঘুমাও।
সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই হয়তো আমি বের হয়ে যাবো। এসে যেন শুনি তুমি কলেজে গেছো।কাল কোনো অজুহাত দেখাবে না।
প্রাপ্তি -(মুখ গোমরা করে)ঠিক আছে।(মনে মনে ভাবছে তোমার কথা আমি কখনি শুনতাম না।শুধু সবার কাছ থেকে বাঁচার জন্য।যদি একবার মুখ খুলো তাহলে আমি শেষ)কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি কখন ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।
প্রাপ্তি সকালে উঠে দেখে ফারহান নেই।কখন উঠে গেছে তাও টের পায়নি।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই বসে নাস্তা করছে।
প্রাপ্তিকে আসতে দেখে মেজো কাকা বললো,কিরে তোর ঘুম ভাঙলো? আয় বস নাস্তা করেনে।
মৃদুল -হ্যাঁ,প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নীরা আর তুমি রেডি হয়ে নাও।না হলে কলেজের দেরী হয়ে যাবে।
প্রাপ্তির বাবা- মৃদুল ওরা কি কলেজে যাবে নাকি? নীরা যাবে বুজলাম ফারহান প্রাপ্তিকে আজ যেতে বলেছে?
মৃদুল -বড় আব্বু আমি নীরাকে আজ কলেজে নিয়ে যাবো শুনে ফারহান কাল রাতে বললো প্রাপ্তিকেও যেন সাথে নিয়ে যাই। ওই নাকি যেতো ওর জরুরী মিটিং থাকার কারনে যেতে পারবেনা।
মেজো কাকা -তাহলে তো ভালো কথা কি বলিস ভাইয়া? প্রাপ্তি উঠে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে সেজো কাকীকে বললো, কাকী ফারহান কি খেয়ে বের হইছে?
সেজো কাকী -না রে অনেক বার বলেছি।ফারহান বললো ওর নাকি এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।সময় পেলে বাহিরে খেয়ে নিবে।
প্রাপ্তি আর কিছু বললো না।রুমে এসে রেডি হয়ে নীরা আর মৃদুলের সাথে বেরিয়ে গেল।
অনেক দিন পর কলেজে গেছে। প্রাপ্তিকে পেয়ে তার ফ্রেন্ডরা খুব খুশি।অনেক দিন পর সবাই আজ এক সাথে হলো।
প্রাপ্তির ফ্রেন্ড রিয়া এর মাঝে বললো কিরে প্রাপ্তি নীরা মৃদুলকে নিয়ে আসতে পারছে তুই কেন ফারহান ভাইয়া কে নিয়ে এলিনা।
বিথী -আরে তুই বুজোস নাই কেন আনে নাই।যদি আমাদেরকে ট্রিট দিতে হয়।প্রাপ্তি , কয়দিন এইভাবে নিজের বর কে বাঁচাবি? একদিন না একদিন ঠিক আদায় করে নিবো। কি বলিস তোরা?
প্রাপ্তি চুপ করে থাকলেও নীরা বলে পেললো,তোরা যা ভাবছিস ভুল।ভাইয়াই আসতো কিন্তু ভাইয়ার আজ একটা মিটিং ছিলো তাই আসে নাই।আমার মনে হয় কাল ঠিকি আসবে।
রিয়া-ঠিক আছে তাহলে আমাদের সবাইকে কালকের জন্য অপেক্ষা করতে সবে।
প্রাপ্তি -অনেক কথা বলেছিস এইবার সবাই চল ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
ক্লাস শেষ করেই প্রাপ্তিরা সবাই কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখে ফারহান গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাপ্তি- যাহঃ আজ সেরেছে।
প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নীরা প্রাপ্তির কানের কাছে এসে, প্রাপ্তিইইইইই ফারহান ভাইয়া এইখানে আসবে যে তুই জানিস না? এখন এরা আজ কেউই ছাড় দিবে না।
প্রাপ্তি কিছু না বলে শুধু হে হে হে করে হেঁসেই যাচ্ছে।
রিয়া -এই দুই বোন মিলে কি এতো ফুসুরফাসুর করছিস? যতোই বর কে বাঁচানো চেষ্টা করো কোনো লাভ নেই।
ফারহান তাদের কাছে এগিয়ে এসে কি ব্যাপার কখন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি। যাইহোক আপুরা সবাই কেমন আছো?
সবাই এক সাথে বলে উঠলো, জ্বী ভালো।
রিয়া -ভাইয়া, বিয়ের পর প্রাপ্তি এই ফাস্ট কলেজে আসছে এখন তো আমাদের সবাইকে আপনি ট্রিট দিতে হবে।
ফারহান -আজকেই?
বিথী -হুম, আজকেই।
ফারহান -তাহলে আর কি সবাই রেস্টুরেন্টে চলো।আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি তোমরা সবাই আগে যাও।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? সবাই যাচ্ছে তো।
প্রাপ্তি-(সবাই চলে যাওয়ার পর)তুমি ওদের এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলে? আজ তোমাকে ওরা সবাই মিলে ডুবিয়ে ছাড়বে।
ফারহান -তাতে কি হয়েছে।আমার বউকে তো আর ছোটো হতে দিতে পারিনা!
আর একটাও কথা না গাড়ীতে উঠো।
মৃদুলকেও একটা ফোন দিয়ে বলি আসার জন্য।
রেস্টুরেন্টে এসে সবাই খাবার অর্ডার করছে যেই যার পছন্দ মতো।প্রাপ্তির ফ্রেন্ড ৮ টা।সবাই কিভাবে ফারহানের খরচ বাড়ানো যায় সেই চিন্তায় আছে। মৃদুলও এসে বসতে বসতে বললো,ফারহান!ওই দিন আমাকে সবাই মিলে ১২ টা বাজাইছে আর আজ তোমাকে, বলেই হাঁসা শুরু করলো মৃদুল আর নীরা।
ফারহান -মৃদুল! কিছু করার নেই বউ খুশি মানে সব খুশি।এর ছেয়ে ভালো আমরাও একসাথে খাওয়া খেয়ে বাড়ী ফিরি।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডরা চলে গেলো। প্রাপ্তিরাও তাদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় আসার জন্য গাড়ীতে উঠলো।
প্রাপ্তি আর নীরার আসার দেরী দেখে সবাই দুপুরে খেয়ে প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে ব্যবসা নিয়ে
কথার ফাঁকে প্রাপ্তির মার এসে বললো, মেয়েদের কে ফোন দিয়েছো এখনো তো এলো না।এইদিকে ফারহান এসেই তো প্রাপ্তির খুঁজ করবে।
প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা আবার ফোন দিয়ে দেখি। কথা টা বলে ফোন হাতে নিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
ওই যে গিয়ে দেখো হতো তোমার মেয়েরাই হবে।
প্রাপ্তির মা গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে এক সাথে দেখে।
প্রাপ্তি -কি আম্মু এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
প্রাপ্তির মা -তোদের জন্য সবাই চিন্তা করছে।আর তোরা সবাই এক সাথেই আছোস।
নীরা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সব বললো আজ কি কি হয়েছে।
সবাই শুনে মেজো কাকা বললো ফারহান ১২ টা তো ভালোই বাজাইছে।তো কতো খরচ হয়েছে?
ফারহান -বেশী না কাকাই ২৫ হাজার টাকা।
নীরা -আসলে আব্বু ওরা সবাই প্লান এইটাই ছিলো কিভাবে ভাইয়ার টাকা বেশী খরচ করা যায় এই আর কি।
চলবে,,,,,