অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ২১
সকাল বেলা নিশ্বাসের গরম হাওয়া মুখে পড়তেই প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালো।এই প্রথম সেই ফারহানের এতো কাছাকাছি। ঘুমালে ওকে এতো মায়া লাগে এইটা আগে দেখেনি।ইচ্ছে করছে তাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে।আমি তো ওকে ভালোবাসিনা।তারপরও ওর সবকিছুই ভালোলাগে।হয়তো বিয়ে নামে এই সম্পর্কে জড়ানোর কারনেই কি তার প্রতি আমার মায়া কাজ করছে।ধুত আমি এইসব কি ভাবছি কথাটা বলে প্রাপ্তি উঠে যাবে এমন সময় ফারহান হাত ধরে ফেললো।
প্রাপ্তি-কি ব্যাপার ফারহান হাত ধরলে কেন? তোমার শর্ত ভুলে গেলে চলবে না।
ফারহান -আমি কিছু ভুলিনি।যাচ্ছো কোথায় সেটা বলো।?
প্রাপ্তি -ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যাবো।
ফারহান -ওরা এখন রান্না ঘরে আছে এখন ওদের কাছে গেলে ওরা তোমাকে ইচ্ছে করেই নাস্তা বানাতে দিবে আর আমিতো জানি আমার বউ কিছুই পারে না।
প্রাপ্তি -ছাড়োতো! বেশী ভালোবাসা দেখাইতে আইসো না।যাকে দেখানোর কথা তাকে গিয়ে দেখাও।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
এমন একটা হিটলার নিজের কপালে নিজেই টেনে আনছি বুজালে ও বুজেনা।কথাটা বলতে বলতে ফারহানও উঠে গেলো।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যেতেই
বড় ভাবী -কি ব্যাপার প্রাপ্তি এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?
মেজো ভাবী -উঠেছো ভালোই হয়েছে আজ নতুন বউয়ের হাতে নাস্তা খাবো।কি বলিস সুমি?
প্রাপ্তি কথাটা শুনেই গলাটা শুখিয়ে আসছে।মনে মনে ভাবছে আমি তো কোনো নাস্তাই বানাতে পারিনা।এখন কি করি? ফারহান ঠিকি বলেছিলো তার কথাটা শুনাই ভালো ছিলো।প্রাপ্তি নিজের বিপদ নিজেই টেনে আনলি।
বড় ভাবী -লামিয়া তুই কি যে বলিস না প্রাপ্তি নাস্তা বানাবে কি করে? আজকে থাক ওদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসুক তারপর না হয় আমিই শিখিয়ে দিবো।
মেজো ভাবী -আমি তো কোনো কথা শুনবো না।প্রাপ্তি তুমি আসো তো।
ফারহান তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে তার বাবা বসে পেপার পড়ছে আর বার বার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।কারণ তিনিও জানেন প্রাপ্তি কোনো রান্নাই পারেনা।কিন্তু কিছু বলছে না কারণ তিনি ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে মেজো বউ দুষ্টামি করেই এই গুলো বলছে।
সুমি -ভাবী যাও যাও তোমার হাতের নাস্তা আজ তো মিস করা যাবেনা।
প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে আচ্ছা কি করতে হবে বলো।
মেজো ভাবী -হুম,মামনি সকাল বেলা রুটি ছাড়া অন্য কিছু খায়না তুই রুটি বানিয়ে পেল।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তির মাথা ঘুরতেছে।কি করবে বুজতে পারছে না সবার জোরাজোরিতে আসলাম।কিন্তু রুটি বানাবে কি করে?
ফারহান তাকিয়ে আছে কি করে দেখার জন্য।
মেজো ভাবী- ফারহান তুমি এইখানে কি করছো? যাও এইখান থেকে।নাকি বউয়ের জন্য কষ্ট লাগছে।
ফারহান -ভাবী তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো ও এইগুলো পারেনা।আর একটা মানুষ কে সময় দেওয়া উচিত।হঠাৎ করে কেউই কোনো কাজ পারেনা।
মেজো ভাবী -এতোক্ষন এইটাই জানতে চাইছি তোমার বউয়ের প্রতি ভালোবাসা কতোটুকু।যাইহোক প্রাপ্তি এইবার দেখছো ফারহান তোমায় কতোটা ভালোবাসে।তোমাকে কোনো কাজ করতে দিতে চায়না।আজকে কিন্তু ছেড়ে দিলাম।ওই বাড়ীথেকে আসো তারপর ফারহান বললেও শুনবো না।
প্রাপ্তি-ফারহান তুমি এইখান থেকে যাও।ভাবী, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন আমি পারবো।
ফারহান আর কিছু না বলে তার বাবার সাথে বসে কথা বলছে।
ফারহানের বাবা-ফারহান! প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ফোন করেছে তোরা কখন যাবি?
ওরা যখন এতো বার ফোন দিচ্ছে তোরা রেডি হয়েনে।
ফারহান -ঠিক আছে, প্রাপ্তি ও মনে হয়না আজ থাকবে।
নাজিফা ও এসে ফারহানের সাথে বসেছে।
ফারহানের বাবার দিকে তাকিয়ে আংকেল আপুকি আজকেও যাবেনা?
ফারহানের বাবা- তোমার কি আমাদের বাড়ী ভালো লাগেনা?
নাজিফা- সেই জন্য বলছিনা। কিন্তু আজ তো যাওয়ার কথা।
ফারহানের বাবা-হ্যাঁ,তোমরা নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।
সবাই নাস্তা করে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রাপ্তি গিয়ে রেডি হচ্ছে।মনে হচ্ছে কতো বছর সে ওই বাড়ীতে যায়নি। ফারহান রুমে ঢুকতে যাবে দেখে প্রাপ্তি শাড়ী পরছে।
ফারহান -সরি আমি ইচ্ছে করে আসিনি।
প্রাপ্তি -তোমাকে এইটা ভাবতে হবে এই রুমে তুমি একা নয়। আরো একজন থাকে। রুমে আসার আগে দরজায় নক করে আসতো পারোনা?
ফারহান -সরি বললাম তো(মনে মনে কি হিটলারি নিজের বউকে দেখবো এইটাও পারমিশন নিতে হবে?আমি ও দেখতে চাই কয়দিন এই হিটলারি দেখাও)
নাজিফা -কিরে আপু আসার সময় দেখলাম ফারহান ভাইয়া মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে কি হয়েছে?
প্রাপ্তি -কিছুনা,এমনি।
প্রাপ্তি শাড়ী পরা শেষ করে নাজিফাকে বললো ফারহান কে ডাকতে।
নাজিফা গিয়ে ফারহান কে ডেকে আনলো।
ফারহান-সমস্যা কি একবার তাড়িয়ে দিলে এখন আবার ডাকতেছো।
প্রাপ্তি- তোমাকে রেডি হওয়ার জন্য ডেকেছি। অন্য কিছুর জন্য না।
ফারহান- (হাঁসি দিয়ে)অন্য কিছু কি প্রাপ্তি?
প্রাপ্তি- ধুত যাও তো। কথা বাড়িও না।
প্রাপ্তির ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে সাজতেছে। ফোন বাজতেছে শুনে উঠে এসে দেখে নীরা ফোন করেছে।ফোন রিসিভ করেই।
নীরা -কিরে আর কতোক্ষন।দুপুর হয়ে যাচ্ছে এখনো তোদের খবর নেই।আসবি টা কখন?
প্রাপ্তি- এইতো একটু পরে বাসা থেকে বের হবো।তোরা কি করছিস?
নীরা- কি আর করবো সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।আচ্ছা তাহলে রাখি তাড়াতাড়ি আয়।
প্রাপ্তি ফোন রেখে দেখে ফারহান ও রেডি হয়ে আসছে।
ফারহান -তোমার হইছে নাকি আরো দুইদিন লাগাবা?
প্রাপ্তি -আমার হয়ে গেছে।
প্রাপ্তি ড্রইংরুমে এসে দেখে সবাই বসে আছে।প্রাপ্তি তার শাশুড়ি আর শশুরকে সালাম করে ভাবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।
এইদিকে প্রাপ্তিদের বাসার সবাই অপেক্ষা করছে।
মেজো কাকা -ইমরান একটু ফোন দিয়ে দেখতো প্রাপ্তি কতো দূর এলো?সেই কোন সময় বললো বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো এসে পৌঁছালো না তারা।
কথা টা বলতে না বলতেই কলিংবেলের শব্দ পেয়ে প্রাপ্তির মা বললো মনে হয় প্রাপ্তিরা এসে গেছে আমি গিয়ে দেখছি।
প্রাপ্তির মা দরজা খুলেতেই প্রাপ্তি জড়িয়ে ধরলো তার মাকে।
মেজো মা -সবাই দেখোছো প্রাপ্তি আমাদের কথা কিন্তু ভুলেই গেছে।
প্রাপ্তি -(তার মাকে ছেড়ে দিয়ে) মেজো মা আমি কিন্তু সবাইকেই মনে রেখেছি।কাউকেই ভুলিনি।
মেজো কাকা -সেইটা ভালোকরেই জানি।কিন্তু তোদের এতো দেরী হলো কেন? ফারহান, আগে তোমরা রুমে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।এমনিতে তো দুপুর করে এসেছো। এতো দেরী করলে কেন?
ফারহান -কাকাই প্রাপ্তি সেই সকাল থেকেই সাজতে সাজতে দেরী করেছে।
প্রাপ্তি -কি মিথ্যাবাদীরে,এই আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?
মেজো মা- আসতে না আসতেই ঝগড়া? আচ্ছা এই দুইদিনও কি এইভাবে ঝগড়া করেছিস?
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহান ও পিছুপিছু গেলো।
রুমে গিয়ে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে রাগি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ফারহান -(আস্তে করে) এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি আবার কি করলাম?
প্রাপ্তি -তখন বললে কেন, আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?
ফারহান -আচ্ছা সরি আর বলবো না।
নীরা রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে ভাইয়া আসবো।
ফারহান -আরে নীরা যে! এতোক্ষণ কই ছিলে?
নীরা -আমার রুমেই ছিলাম।মৃদুল কাল রাত থেকে একটু অসুস্থ তাই ওর পাশেই বসে ছিলাম।
ফারহান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)নিজের ছোটো বোনের কাছ থেকেই তো একটু শিখতে পারো কিভাবে বর কে ভালোবাসতে হয়।তা না করে সারাক্ষণ মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা নিয়ে ঘুরো।
প্রাপ্তি -নীরা, তুই আর মানুষ খুঁজে পেলিনা।কার কাছে কি বলছিস।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কই তোরা তাড়াতাড়ি আয়।
সবাই না খেয়ে তোদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
নীরা -ওই যে বড় মায়ের ডাক পড়েছে।তাড়াতাড়ি চলো।
ফারহান -হুম,চলো।
সবাই এক সাথে খেতে বসেছে।
প্রাপ্তির বাবা-আজ অনেক দিন পর মনে হলো এই বাড়ীতে আনন্দ ফিরে এসেছে।মেয়ে গুলো না থাকলে কেমন জানি লাগে।তখন কিছু ভালো লাগে না।
মেজো কাকা -ভাইয়া ঠিকি বলছিস।যাই হোক ফারহান তোমার ব্যবসার অবস্থা কি?
সব ঠিকঠাক চলছেতো?
ফারহান -হ্যাঁ কাকাই, সব ঠিকঠাক।সামনের মাসে ব্যবসার কিছু কাজে দেশের বাহিরে যেতে হতে পারে।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকালো। কারণ ফারহান যতোবারই ব্যবসার কাজে বাহিরে যেতো ততোবার প্রাপ্তির সাথে দেখা করে যেতো।কিন্তু এইবার তো আমি ওর সাথেই ছিলাম কই আমাকে একটা বারও বললো না?
ফারহান কথাটা বলেছে ঠিকি কিন্তু প্রাপ্তির দিকে বার বার তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি কিছু বলছে নিছের দিকে তাকিয়ে খেয়েই চলেছে।
ফারহান নীরাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে প্রাপ্তির দিকে তাকাতে বললো।
নীরা -আরে প্রাপ্তি আস্তে খাঁ গলায় আটকে যাবে তো।কি হয়েছে তোর আবার?
প্রাপ্তি -কিছু হয়নি। আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো
মেজো কাকা -প্রাপ্তির কি হলো আবার এর মাঝে।একটু আগেই তো ভালো ছিলো।
এইভাবে চলে গেলো কেন?
প্রাপ্তির বাবা -সেইটাই তো ভাবছি কি হলো এর।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই ড্রইংরুমে আড্ডা দিচ্ছে।ফারহান আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি শুয়ে আছে।
ফারহান -কি হলো তখন এইভাবে মন খারাপ করে উঠে এলে কেন?
প্রাপ্তি- তুমি বাহিরে যাচ্ছো আমাকে বললে না তো?
ফারহান -যাবো না তো কি করবো? বিয়ে করেছি কোথায় বউকে ভালোবাসবো।বউকে আদর করবো,বউকে নিয়ে ঘুরবো কিন্তু তানা বিয়ের পর থেকে বউয়ের ঝাড়ি খেয়েই যাচ্ছি।তাই ভাবলাম বাহিরে গিয়ে থাকবো।
প্রাপ্তি- যাও যাও এখন আমার কাছে কি?
ফারহান-প্রাপ্তি তুমি কি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো? যদি হ্যাঁ বলো তাহলে ভেবে দেখবো।
চলবে,,,,,,,,