অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১৫
——-ফারহনদের সবাই engaged করেই চলে গেছে।ফারহান আর ফারহানের দুটো ফ্রেন্ড এখনো যাই নাই।তারা প্রাপ্তির ছোটো কাকার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আর প্রাপ্তি বিকেল থেকেই শুধু কান্না করছে।ফারহান আংটিটা পরানো পর থেকেই মনে হলো তার সব কিছু হারিয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে আয়ান নামের মানুষটা।কথাটা যতোই ভাবছে মনে হয় তার কষ্ট দ্বিগুণ হয়েছে। সবাই বুজানো চেষ্টা করছে।কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।সে আরও বেশী করে কান্না করছে।তার কান্না দেখে মাজো কাকী আর চুপ থাকতে না পেরে,
মেজো কাকী -প্রাপ্তি! ফারহান এখনো এই বাসায়।তুই যদি এইভাবে কান্নাকাটি করিস তাহলে সে কি ভাববে বলতো।ও বলবে আমরা তোকে জোর করেই তার সাথে বিয়ে দিচ্ছি।হয়তো সবার জন্য তোর মন খারাপ লাগছে।সারাজীবন তো এইভাবে থাকা যায় না।আর সব মেদেরকে একদিন বাপের বাড়ী থেকে যেতে হয়।
প্রাপ্তির মা- এইভাবে কান্নাকাটি করিস না।এখন তোর আব্বু এসে দেখলে তার ও মন খারাপ হয়ে যাবে।তোর কাকাই আসলে তো সেও তোর কান্নাকাটি দেখে কান্না শুরু করবে।তখন তোর ভালো লাগবে?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে নাজিফা ফারহানের কে গিয়ে বললো ভাইয়া তুমি কি আপুকে কিছু বলেছো?
ফারহান- কই না তো, কেন কি হয়েছে?
নাজিফা – আপু সেই বিকেল থেকেই কান্নাকাটি করছে।কাউকে কিছু বলছেও না।কেন তুমি খেয়াল করনি?
ইমারান-কান্নার কি আছে?
ফারহান -চলো তো দেখি, কাঁদছে কেন?(তার ফ্রেন্ডেদের দিকে তাকিয়ে)তোরা বস আমি আসছি।
ফারহানকে দেখে সবাই কি বলবে বুজতে পারছেনা। প্রাপ্তিও নীরাকে জড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে।
মেজো কাকী -ফারহান তুমি বসো এইখানে।দেখনা প্রাপ্তি এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে ওকে তোমাদের বাড়ীতে একসাথেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ফারহান- প্রাপ্তি! আমি জানি মেয়েদের এই সময় মন খারাপ হয় তাই বলে তুমি এইভাবে কান্নাকাটি করবে।
প্রাপ্তির মা -ফারহান তুমি বুজাও আমরা যাই।এমনিতে অনেক কাজ পড়ে আছে।কথাটা বলতে বলতে সবাই বাহিরে চলে গেলো।নীরাকে প্রাপ্তি যেতে দিচ্ছেনা।
ফারহান-নীরা তুমি বসো।তুমি যাওয়ার দরকার নাই।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে) আমি জানি সবাইকে ছেড়ে থাকতে তোমার কষ্ট হবে।তুমি যখন ইচ্ছা এই বাড়ীতে আসবে আমি কখনোই বাধা দিবোনা।আর না হলে এখনো সময় আছে।তুমি বললে বিয়েটা এখনি ভেঙে দিবো।
নীরা -ভাইয়া এইসব কথা এখন থাক।বিয়েটা হয়ে গেলো তখন দেখবেন এই বাড়ীতেই আসতে চাইবে না।কারণ ফারহান ভাইয়ার ভালোবাসার কাছে প্রাপ্তি তখন এমনিতেই হার মেনে যাবে।
প্রাপ্তি কিছু না বলে বারান্দায় চলে গেলো।সেই বিয়ে ভাঙতে বলতে পারবেনা।এই বিয়ে ভাঙলে সবাই কষ্ট পাবে।এর ছেয়ে ভালো বিয়েটা হোক।ফারহান তো বলেইছে আমি না চাইলে ও কোনো অধিকার ছাইবেনা।
প্রাপ্তি বারান্দায় চলে গেছে দেখে ফারহান আর নীরা বসে কথা বলছে।বিয়ের শপিং নিয়ে।
ফারহান-নীরা! বিয়ের বেশী দিন তো নেই।শপিং কাল থেকে শুরু করাই ভালো হবে।তোমরা কাল যখন যাবে আমাকে ফোন দিও আমি চলে আসবো।
নীরা- প্রাপ্তি হয়তো যাবেনা।আমি সেজো কাকী, বড় মা,আর কাকাই যাবো।তোমার আর আসার দরকার নেই।
ফারহান -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি।প্রাপ্তির মন ভালো হলে আমাকে জানিও।নীরা মৃদুল কোথায় ও কেমন জানি সব কিছু থেকে দূরে সরে থাকে।
নীরা- ও বাসায় গেছে।ওর আম্মু ফোন করেছে।একটু পরেই চলে আসবে।
ফারহান চলে যাওয়ার পর থেকেই প্রাপ্তির এখন মন আগের চেয়ে অনেক ভালো।
সবাই বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাস করছে।
এর মাঝেসেজো কাকী বললো আমার দুইটা প্রশ্ন আছে প্রাপ্তি। তুই যদি না বলিস আমার কিন্তু রাতে ঘুম আসবেনা।এখন বল বলবি কিনা?
প্রাপ্তি -কি প্রশ্ন কাকী ?
সেজো কাকী -প্রথম প্রশ্ন হলো দুপুরবেলা দরজা আটকিয়ে কি বলেছিস দুজনে মিলে?
আর দ্বিতীয়টা হলো ফারহান যখন আংটি পরাচ্ছিলো তোর কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কি বললো।যা শুনে তুই চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে ছিলি?
তোরা কি ভেবেছিস কেউ খেয়াল করেনি।সবাই খেয়াল করেছে,কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।
প্রাপ্তি- বিশ্বাস করো এমন কিছু বলেনি।বললে তো আমি তোমাকে বলতাম।আর ওর সাহস আছে আমাকে কিছু বলবে।
নীরা-কাকী সত্যিতো সময় পেলো কই।তোমরা গিয়েই তো ডিস্টার্ব করলে।
প্রাপ্তি সবার দিকে তাকিয়ে ভাবছে আজ আয়ানের সাথে গেলে হয়তো এতো গুলো হাঁসি মুখ দেখতে পেতাম না।নিজের ভালোবাসার জন্য তো আর সবাইকে কষ্ট দিতে পারিনা।
দিন যতো যায় প্রাপ্তির চিন্তা বাড়ছে আর সবার আনন্দ বাড়ছে।ফারহান মাঝে মাঝে ফোন দেয় কিন্তু প্রাপ্তি কথা বলেনা।ওইদিনের পর থেকে ফারহানে সাথে প্রাপ্তির দেখা হয়নি।প্রাপ্তিদের সবাই ফারহান কে মানা করেছে।বিয়ের এই কয়দিন যেন না দেখা করে।
এইদিকে প্রাপ্তির বাবা, কাকারা সব কিছু রেডি করছে বিয়ের জন্য। বাড়ীটা সুন্দর করে সাজিয়েছে।বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা কোনো কিছুর কমতি যেন না হয়।তাই সব দিকে খেয়াল রাখছে তারা।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! ডাকতে ডাকতে প্রাপ্তির মা তার রুমে এলো।কিরে কি করছিস?
প্রাপ্তি-কিছুনা আম্মু।কিছু বলবে?
প্রাপ্তির মা- ড্রইংরুমে চল।তোর আব্বুরা সবাই বসে আছে।তোকে ডাকছে।
প্রাপ্তি- আচ্ছা চলো!
প্রাপ্তি এসেছে দেখে তার মেজো কাকা তার পাশে বসালেন।
মেজো কাকা -প্রাপ্তি সত্যি একটা কথা বল।ওই বাড়ীতে গেলে কাকে তুই বেশী মিস করবি।কথাটা অনেক কষ্টের তার পরেও আমি শুনতে চাই।
প্রাপ্তি- (অনেকক্ষন চুপ করে থেকে) তোমাকে আর আম্মুকে।
আব্বুকেও মিস করবো তোমাদের থেকে কম।
প্রাপ্তির আব্বু- (হাঁসি দিয়ে) আমি কিন্তু কিছু বলবোনা।পরে দেখা যাবে।
মেজো কাকা -দেখেছিস আমাদের হিংসে করা হচ্ছে।তবে ভাইয়া যাই বলিসনা কেন। সময় কতো তাড়াতাড়ি পুরিয়ে যায়।মনে হচ্ছে এই কিছুদিন আগেও সেই ছোট্র প্রাপ্তি নীরা এইটা সেটার জন্য বায়না করতো।এখন কতো বড় হয়ে গেছে। তাদের বিয়েও দিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু স্মৃতি গুলো থেকে গেছে।
কথা গুলো বলতে বলতে চোখ মুছচ্ছেন প্রাপ্তির কাকা।
প্রাপ্তি তার চোখের পানি দেখে নিজেকে আর সমলাতে না পেরে নিজেও কান্না করছে।
মেজো কাকা-(প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে)তুই কাঁদছিস কেন? তুই মন খারাপ করলে আমরা কি ঠিক থাকতে পারি।
সবার আড্ডার আসরটা আজ কেমন জানি থমথমে হয়ে আছে।শতো আনন্দের মাঝে সবার মন খারাপ।এই বাড়ীতে হৈচৈ আর আগের মতো হবেনা ।এখনি সবকিছু কেমন জানি ঠান্ডা হয়ে আছে।সবার চুপচাপ দেখে মেজো কাকা
নীরা! আর সেজো বউ কে ডাকলেন।কই তোমরা এইদিকে আসো।
নীরা -আব্বু কি হয়েছে?আমায় ডেকেছো?
মেজো কাকা-তোমাদের সবার শপিং শেষ হয়েছে নাকি আরো বাকি আছে? থাকলে একটু পর যেতে পারো ইমরান কে নিয়ে।কাল কিন্তু প্রাপ্তির গাঁয়ে হলুদ,কাল কেউ বাসা থেকে বের হতে পারবেনা।
নীরা- আব্বু সবার শপিং শেষ।
সবার কথার মাঝে কলিংবেল বেজে উঠলো।
প্রাপ্তির আব্বু- ইমরান দেখ তো কে এসেছে! আজ তো মিলিদের আসার কথা ।কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো এলোনা।বড় আপাটা ও না কি।যেখানে যায় দেরী করবেই।
ইমারান গিয়ে দরজা খুলে দেখে ফারহান আর তার ফ্রেন্ড।
ইমরান -ফারহান তুই?বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তো পারিস। বাড়ীর মেয়ের জামাই হয়ে বেঁচে গেলি। আয় ভিতরে আয়।
ফারহান-তুই চুপ কর আমরা আগের মতো থাকবো।
সবাই ফারহান কে দেখে অবাক।
প্রাপ্তির আম্মু -ফারহান! তুমি এই সময়।
ফারহান- আন্টি আমার বিয়ের কার্ড সবাইকে দেওয়া হইছে। কিন্তু একজন কে দেওয়া হয়নি। না দিলে সে আবার আমার সাথে রাগ করবে তাই চলে এলাম।
মেজো কাকা -কাকে তুমি কার্ড দিবে এই বাড়ীতে? তুমি কার্ড না দিলেও এই বাড়ীর সবাই তোমার বিয়েতে থাকবে।
ফারহান -কাকাই যে আগে সব সময় বলতো আমার বিয়েতে গিয়ে নাকি অনেক আনন্দ করবে।আমার বউকে গিয়ে অনেক জ্বালাবে তাকে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি উঠে রুমে চলে গেলো।
প্রাপ্তিকে উঠে যেতে দেখে মেজো কাকা বললো এইবার বুজলাম।আচ্ছা কার্ডটা দিয়ে আসো। সত্যিতো যদি আবার বিয়েতে না গেলো তাহলে তোমার বউকে জ্বালাবে কে? কথাটা বলেই সবাই হাঁসতে শুরু করলো।
ফারহান রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি খাঁটের এক কোণায় বসে আছে।ফারহান এসে তার সামনে বসলো।
ফারহান -এইভাবে চলে এলে কেন?
প্রাপ্তি- তোমার এইটা না করলে হতোনা?
কি মজা পাও তুমি এসব করে?
ফারহান -আসলে কয়েকদিন থেকে তোমাকে দেখছিনা। এইদিকে তুমি আমার ফোনও রিসিভ করছোনা। তাই ভাবলাম তোমায় দেখে আসি আর কার্ডটা ও দিয়ে যাই।
প্রাপ্তি -যাইহোক শর্তটা যেন মনে থাকে।
ফারহান- কোন শর্ত?
প্রাপ্তি -এখনো বিয়ে হলোনা এরমাঝেই ভুলে গেলে? আমি যতো দিন না চাইবো তুমি কোনো অধিকার চাইবে না।
ফারহান -(প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে)হুম মনে আছে।
আচ্ছা একটা কথা বলি সত্যি বলেবে?
প্রাপ্তি -কি কথা?
ফারহান -আয়ানের সাথে তোমার কথা হয়?
প্রাপ্তি -না।কথা বলে আর লাভ কি? শুধু কষ্টই বাড়বে।
এর মাঝেই সেজো কাকী নাস্তা নিয়ে প্রাপ্তির রুমে চলে আসলো।
ফারহান -কাকী এইগুলো কেন এনেছেন?
সেজো কাকী -বড় মেয়ের জামাই এসেছে খালি মুখে বাসা থেকে যাবে নাকি? তুমি এখানে বসে খাও। তোমার ফ্রেন্ডকে দিয়ে এসেছি।আর শুনো যা বলার আজ বলে নাও কাল থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত কথা বলা বন্ধ।
ফারহান- ও এমনিতেই কথা বলেনা।তার উপর এই জারিটা কি ঠিক করলেন?
আমিও এসে গেছি কথাটা বলতে বলতে নাজিফা ফারহানের পাশে এসে বসলো।
নাজিফা -ভাইয়া আমি তোমার পক্ষে আছি কোনো চিন্তা করোনা।
প্রাপ্তি -তোর আর কোনো কাজ নাই।তুই ওর পক্ষ নিবি কেনো?
নাজিফা -এই তুই এখন চুপ করে থাক।বিয়ের কনেকে বেশী কথা বলতে নেই।যেই যা বলবে শুধু চুপচাপ শুনবি।আর যা করতে বলবো করবি।
চলবে,,,,,,,