অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১৩
আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক কষ্ট লাগছে। যেই সম্পর্কের মাঝে কোনো বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্ক রেখেই বা লাভ কি।সারাজীবন কষ্ট ছাড়া কিছু থাকবেনা।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি ফারহানের রুমে গেলো।
ফারহান ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে কতো দিন সেই ঘুমায়নি।সত্যিই তো সেই দুইদিন থেকে ঘুমায়নি।আমিও বোকার মতো কি ভাবছি।
ফারহান কে ঘুমে দেখে প্রাপ্তি চলে আসার সময় প্রাপ্তির মেজো কাকা দেখে প্রাপ্তি ফারহানের রুম থেকেই আসতেছে।
মেজো কাকা-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! তুমি ফারহানের রুমে কেন গিয়েছিলে? তুমি জানোনা ও ঘুমাচ্ছে?
প্রাপ্তি-কাকাই ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো তাই এসেছি।
মেজো কাকা-আচ্ছা!তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার রুমে আয়।
কথাটা বলার সাথে সাথেই প্রাপ্তির গলাটা শুকিয়ে গেলো।কাকাই কি বলবে আমাকে।কাকাই কি কিছু জানে নাকি? আল্লাহ ভালো জানে।
মেজো কাকা-কি হলো আসো।
প্রাপ্তি-জ্বী!
প্রাপ্তি তার কাকার পিছন পিছন রুমে গেলো।
মেজো কাকা-বসো এইখানে।এমন ভাব করছো মনে হয় কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছো।
প্রাপ্তি-না কাকাই।আমি কিছু নিয়ে চিন্তা করছিনা আপনি কি বলবেন বলেন।
নিচের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তি কথা গুলো বললো।
মেজো কাকা-আমি চাই না ভাইয়ার কানে কোনো কিছু যাক।তুমি মানুষকে যতোটা বোকা ভাবো কেউ এতোটা বোকা নয়।সেইদিন তোমার মা তোমার বিষয় এমন কিছু জেনেছে যা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।এইটা আমি নিশ্চিত। তবে আমি তোমাকে এই নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।তোমার ফারহানের সাথে যে বিয়েটা হচ্ছে এইটা তো নিশ্চয় শুনেছো? ফারহান কিছু দিনের সময় নিয়েছে।তোমার কি এই ব্যাপারে কিছু বলার আছে?
প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, অনেকক্ষণ পরে মাথা নাড়িয়ে না বললো।
মেজো কাকা-প্রাপ্তি! এই কথাটা ভাবতে তোমার তো এতো সময় নেওয়ার কথা না।
কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো।
প্রাপ্তি-না কাকাই আমার কোনো সমস্যা নেই।তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।তোমরা তো আর আমার খারাপ চাইবে না।
প্রাপ্তি তার কাকাইয়ের সামনে কথাটা বলেছে ঠিকে কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে।
মেজো কাকা-তুই তো আমাদের মেয়ে। আরমাদের মেয়ের কখনোই খারাপ চাই না।আচ্ছা আবারও আমি ফারহানের সাথে কথা বলি।দেখি ও কি বলে।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে এলো।অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। অনেক কান্ন করছে সে।আয়ানকেও অনেক বার ফোন দিয়েছে।সে রিসিভ করছেনা।হয়তো সে আর কখনোই করবে না।না দেখার ভালোবাসা টা যে এতো কষ্টদায়ক এইটা আমি কাউকে বুজাতে পারবোনা।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।
সকাল বেলা বাচ্চাদের চেঁচামিচিতে প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১ টা বেজে গেছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে দেখে নীরা বললো
তোকে অনেক বার ডাকতে গিয়েছি তোর রুমের দরজা বন্ধ দেখে বড় মা বললো না ডাকতে তাই আর ডাকিনি।
প্রাপ্তি-ওওও! কখন সকলা হলো বলতে পারিনি।
আচ্ছা এইখানে কিসের আড্ডা হচ্ছে?
নীরা -কেন! তুই জানিস না?সব কিছুতো তুই কাল রাত ঘটিয়ে দিলি এখন বলছিস কিছুই জানিস না।
সেজো কাকী -নীরা তুইও না! ও এখন জেনেও না জানার ভান করবে।দেখিস না নিজে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
প্রাপ্তি-কাকী বিশ্বাস করো আমি কিছু বুজতেছিনা।
প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তোকে আমি বুজিয়ে বলছি।তুই আম্মুর কথা রেখেছিস আম্মু এইটাতে অনেক খুশি। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন তোর কাকাই বললো তুই এই বিয়েতে রাজি সাথে সাথেই মনে হলো আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিলো।এই হাঁসির মাঝে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে তা কখনো কাউকে দেখনো সম্ভব না।
নীরাও কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে সত্যি বলছি প্রাপ্তি আমিও চেয়েছিলাম তুই ফারহান কে বিয়ে কর।তোকে কখনো বলিনি তুই হয়তো আমার উপর রাগ করবি তাই।
মেজো কাকী -আচ্ছা তোমরা ৩ জনে মিলে কি ফিসফিস করছো আমাদেরকে রেখে।
নীরা-মা! ফিসফিস তো সবে মাএ শুরু।
আচ্ছা সবাইকি একটা বিষয় খেয়াল করেছো। প্রাপ্তি বিয়েতে হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই এই বাড়ীর আনন্দ গুলো আবার ফিরে এসেছে।
ফারহান ভাইয়া যে ৩/৪ মাসের সময় নিয়েছিলো সেটাও আর হচ্ছেনা।তার ফ্যামিলিকে নিয়ে কালকেই নাকি আসবে।
নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু হয়ে গেছে শুধু কি একটা হ্যাঁ জন্য সব আটকে ছিলো।
সেজো কাকী -প্রাপ্তি ওই ভাবে নীরার দিকে তাকিও না।আরো ও আছে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়া তোমার কাকাই এক সাথে বাজারে গেছে কেনাকাটা করতে।
প্রাপ্তির মা -আচ্ছা তোরা কি বলতো? ঘুম থেকে উঠে এসে মেয়েটা কিছু খায়নি।আর তোরা কি শুরু করেছিস এইগুলো।এইসব নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।আগে নাস্তাটা খেয়েনে।
প্রাপ্তি নাস্তা মুখে নিবে,নাজিফা হাতে ফোন নিয়ে এসে বললো
নাজিফা-অনেকক্ষন থেকে তোমার ফোন বাজতেছে তাই আসার সময় নিয়ে এলাম।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফারহান।
সেজো কাকী প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে ফারহান ফোন করেছে তাইনা।আজ দুইজনে কি বলবে আমরা শুনবো এখানেই কথা বলো উঠতে পারবেনা।কি বলিস নীরা এইটা কি মিস করা যাই।প্রাপ্তি আর ফারহান এই ফাস্ট সব ঠিক হওয়ার পর কথা বলছে।
কি হলো রিসিভ করো!
প্রাপ্তি -পরে কথা বলবো। এখন কি বলবো?
সেজো কাকী -আচ্ছা বুজেছি,লাউড স্পিকার দিতে হবেনা,দেখি তুমি কি বলো সেটাই শুনবো।
এইদিকে সবাই হাঁসাহাঁসি করছে।
কোনো উপায় না পেয়ে প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করলো।
প্রাপ্তি- হ্যাঁ বলো?
ফারহান-ঘুম থেকে কখন উঠছো? সকালে ঘুমে ছিলা তাই বলে আসতে পারিনি।
প্রাপ্তি-হুম।
ফারহান-তুমি নাকি এই বিয়েতে রাজি হইছো?
প্রাপ্তি-হুম
ফারহান- তখন কিন্তু ৩/৪ মাসের সময় আমি আমার জন্য নি নাই।নিয়েছি তোমার জন্য। আয়ান কে ভুলার জন্য তোমার একটা সময়ের দরকার ছিলো।কিন্তু দেখছি তুমি অনেক ফাস্ট। সময়ের দরকার নেই।তাই কাকাই যখন আমাকে বলেছে তুমি এই বিয়েতে রাজি তাই আমিও আর সময় দিলাম না।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক রাগ হচ্ছে কিছু বলতে পারছে না হুম ছাড়া।
প্রাপ্তি-হুম।
ফারহান -তোমার কি কোনো কথা নেই।হুম হুম ছাড়া।হুম করো আর যাই করো প্লিজ কাল এই ভাবে আমার ফ্যামিলির সামনে এমন কিছু করো না যাতে সবার খারাপ লাগবে।
সব কিছু মিটে গেলে আমার উপর সব রাগ দেখাইও। শুধু সবার সামনে নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করো।
প্রাপ্তি এইবার আর চুপ থাকতে না পেরে, ওই! আমাকে তোর কি মনে হয় আমি কি রিমোট যে নিজের রাগ কন্ট্রোল করবো।যখন খুশি বাড়াবো যখন খুশি কমাবো।তোর এই সব ফালতু জ্ঞান নিয়ে তুই থাক আমি তোর এইসব ফালতু জ্ঞান শুনতে পারবো না।
প্রাপ্তির খেয়ালি নেই সবাই তার কথা গুলো শুনছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের রাগটা আর ধরে রাখতে পারেনি।
মেজো কাকী -ওই থাম।এখুনি এই অবস্থা বিয়ের পর কি করবি।
ফারহান -সবাই কি তোমার সাথে?
প্রাপ্তি-(একটু শান্ত হয়ে)হুম।
ফারহান- এতোক্ষন বলোনি কেন? তুমি ওদের সামনে আমাকে তুইতোকারি করছিলে?
প্রাপ্তি-আমি এখন রাখছি।
প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে ওরা থাকাতে আজ বেচে গেলি।না হলে আজ তোর খবর ছিলো।
নীরা-রাগ থামিয়ে খেয়েনে।
নাজিফা- মেজো আপু! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?
নীরা-কী?
নাজিফা-বড় আপু কেমন জানি চুপচাপ থাকে।সবকিছুতে রাগ দেখায়।
নীরা -(নাজিফাকে বুজানোর জন্য)এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেতো তাই।তোরও যখন বিয়ে ঠিক হবে দেখবি তুইও এই রকম করবি।
নাজিফা- আমি কখনো এইরকম করবো না। উল্টো নাচতে নাচতে এই বাড়ী থেকে যাবো।
নীরা -(হাঁসি দিয়ে)ঠিকি বলেছিস তোকে বিশ্বাস নেই।
চলবে,,,,,