অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! ও প্রাপ্তি! উঠনা দেখ কয়টা বাজে কলেজে যাবিনা?
মা! আরেকটু ঘুমাই না।
জানিস কয়টা বাজে?কখন রেডি হবি আর কলেজে যাবি?
(ঘুম ঘুম চোখে)কয়টা বাজে মা?
সাড়ে আট টা বেজে গেছে।
কথাটা বলার সাথে সাথে প্রাপ্তি বললো এর আগে তুমি কোথায় ছিলে বলোতো।এখন আমার লেট হয়ে যাবে।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হলো না ফ্রেশ হতে হতে পরিচয়টা শেরে পেলি।
আমি তাসপিয়া জান্নাত প্রাপ্তি।এইবার ইন্টার ১ ফাস্ট ইয়ার। আমার একটা ছোটো ভাই আছে।বাবা বেশির ভাগ সময় দেশের বাহিরে থাকে। আমাদের এখনো জয়েন্ট ফ্যামিলি। আমার কাকা ৪ জন আমার বাবা সহ ৫ জন।আমার বাবা সবার বড়।আমার মেজো কাকার দুইটা মেয়ে আমার সমবয়সী। নীরা আর নাজিফা।সব কাকার ঘরেই ছেলে মেয়ে আছে। তবে এখনো ছোটো।নীরা,নাজিফা আমি সব সময় একসাথেই থাকতাম।যেহেতু আমি ফ্যামিলির বড় মেয়ে তাই সবার ভালোবাসাটা বেশী আমি পাই।
বাকী গুলো পরে বলবো আগে খেয়ে নি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
এসে দেখি সবাই চুপ হয়ে বসে আছে।
মেজো কাকা -প্রাপ্তি এতো দেরি হলো কেন? তুমি জানোনা বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী সবাই সকাল বেলা একসাথে বসে নাস্তা করে।কাল থেকে যেন আর লেট না হয়।তাড়াতাড়ি বসে খেয়ে নাও আজ আমি ৩ বোন কে একসাথেই পৌঁছে দিবো।
আমি -কাকাই নাজিফা তো স্কুলে যাবে।আমাদের সাথে গেলে ওর দেরি হয়ে যাবে না।
সেজো কাকা -ভাইয়া! তুমি নীরা আর প্রাপ্তি কে দিয়ে আসো।আমি নাজিফাকে নিয়ে যাবো।এখনকার দিনকাল তো ভালো না।কোন সময় কোন বিপদ ঘটে।অনেকের নজর এই ৩ জনের উপর পড়ে আছে।
আমি-তোমরা এমন ভাব দেখাচ্চো মনে হয় পৃথিবীতে আমরাই শুধু মেয়ে হয়ে জন্মেছি।
মা -তুমি একদম কোনো কথা বলবে না।বড়রা যাই বলে তাই শুনতে হয়।
মায়ের কথা শুনে কিছু বললাম না।আমি আর নীরা চুপচাপ কলেজে চলে গেলাম।
আমি -আচ্ছা নীরা আমাদের এই ফ্যামিলির লোক গুলো এই রকম কেন? সব কিছুতেই দোষ ধরে।ভালো লাগেনা আমার।ইচ্ছা করে অনেক দূরে চলে যাই।
নীরা -হয়তো আমাদের ভালোর জন্যই করে।তোকে তো সব দিক থেকে সবাই ছাড় দেয় আমার তো তাও না।
আমি-হুম ঠিক বলছিস।
কলেজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখি কার যেন বিয়ের কথা নিয়ে আলাপ করছে।
নীরা -বড় মা (আমার মা)কার বিয়ের কথা হচ্ছে এইখানে?
মা- তোর বড় ফুফির মেয়ের বিয়ে। কাল ছেলেরা এসে দেখে গেছে। এখন ছেলের মা চায়৭/৮ দিনের ভিতরে বিয়েটা হয়ে যাক।
আমি -তার মানে আমরা সবাই যাচ্ছি বিয়েতে?
সেজো মা-হ্যাঁ আমরা সবাই যাচ্ছি।না হলে তোর ফুফু রাগ করবে।আর তোদের ৩ বোন তো ২ দিন আগে যেতে বলেছে।মিলি (ফুফির মেয়ে)একটু আগেও ফোন করেছিলো।
মা -আগে যা ফ্রেশ হয়ে আয়,যাবার ব্যাপারে পরে কথা বললেও চলবে।।
আমি আর নীরা কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম রুমে।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! সন্ধ্যায় সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় মেজো কাকা বাহিরে থেকে এসে আমাকে ডাকতে শুরু করলো।
আমি দৌঁড়ে গিয়ে বললাম কাকাই কি হয়েছে?
মেজো কাকা-তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আমি -কি সারপ্রাইজ কাকাই।
মেজো কাকাই -সেই দিন তোর ফোন নাকি নষ্ট হয়ে গেছে তাই তোর জন্য নতুন ফোন।
আমি -সত্যি!thankyou.বলে নীরার দিকে তকালাম।
নীরা মন খারাপ করে তার রুমে চলে গেলো দেখে আমিও পিছন পিছন গেলাম।
আমি -তুই মন খারাপ করেছিস তাই না?
নীরা -আরে নাহ! কে বললো তোকে আমি মন খারাপ করেছি?
আমি -তোর মুখ দেখেই বুজা যাচ্ছে।সমস্যা নাই তুই আর আমি একি ফোন ইউজ করবো।আমার তো ফোন বেশী লাগেনা।
নীরা আর কিছু বললো না।প্রাপ্তির ফ্যামিলির সবাই অনেক ভালো।কারো মনে হিংসে নাই।সবাই একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসে।মনে হয় সবাই একি সুতায় বাধায়।
প্রাপ্তি নতুন ফোনে আবার সব কিছু চালু করলো। ফেসবুক থেকে শুরু করে সব কিছু।ফেসবুকে তার তেমন কোনো ফ্রেন্ড নাই। কারো সাথে এসএমএস ও করে না।শুধু একজনের সাথে এসএমএস করে।সে হলো ফারহান।অনেক ভালো একটা ফ্রেন্ড।
প্রাপ্তি সবসময় তারকাছে সবকিছুই শেয়ার করে।ফারহান প্রাপ্তির ৫ বছেরর সিনিয়র। ফারহান ঢাকা কলেজে পড়ে।প্রাপ্তির ছোটো কাকার জের ধরেই প্রাপ্তি সাথে ফারহানের সম্পর্ক। ফারহান তার ছোটো কাকার সাথেই পড়ালেখা করে।মাঝে মাঝে তাদের বাসায়ও আসে।প্রাপ্তিদের সবাই ফারহানকে নিজের ছেলের মতই ভালোবাসে।
প্রাপ্তির মা এসে দেখে প্রাপ্তি এখনো ফোন নিয়ে বসে আছে।কারো সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তির মা -কিরে তুই এখনো ঘুমাসনি?কার সাথে কথা বছিস? অনেক রাত হয়েছে ফোন নিয়ে বসে আছিস। কাল কলেজে যাবিনা?
প্রাপ্তি -ফারহানের সাথে।ওর সাথে কথা শেষ করেই ঘুমাচ্ছি।তুমিও যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
প্রাপ্তির মা মেয়েকে আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।
প্রাপ্তিও ফারহানের সাথে কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে নীরা কলেজে যায়ইনি দেখে প্রাপ্তিও যায়ইনি।
মেজো মা -কিরে কলেজে যাসনি কেন তোরা?
নীরা -মা একদিন না গেলে কিচ্ছু হবে না।
মেজো মা -কি হয়েছে তোর? নাজিফা আর তুই আজ আবার ঝগড়া করেছিস তাই না? তোদের কে নিয়ে আর পারি না।তোরা দুই বোন এই রকম কেন বলতো?
নীরা -মা তুমি কি চুপ করবে? আমি আর প্রাপ্তি একসাথে বিকেলে ফুফির বাসায় যাবো বলেছি।নাজিফাকে বলেছি কাল তোমাদের সাথে আসতে।না সেই আমাদের সাথেই যাবে। আমাদের সাথে ওর কি বলতো?
মেজো মা -ওহঃ এই নিয়ে ঝগড়া করেছিস।আমাকে বললেই তো হতো।ঠিক আছে ও আমাদের সাথেই যাবে।
নীরা আর কিছু না বলে প্রাপ্তিকে বললো সব কিছু গুছিয়েনে আমরা বিকালেই যাব।মিলির সাথে আজ কতো দিন দেখা হয়না বল?কিরে প্রাপ্তি! তুই চুপ করে আছিস কেন? আমি তোকে কিছু বলছি! প্রাপ্তি! চিৎকার দিয়ে
প্রাপ্তি -কি হয়েছে চেঁচাচ্ছিস কেন?
নীরা -আমি যে তোকে এতো কথা বললাম তুই শুনছ নাই? ও তুই তো ফোন নিয়ে busy।
প্রাপ্তি -আর বলিস না,হঠাৎ একজনে মেসেঞ্জারে এসএমএস দিলো। ওই লোকটা সাথে এসএমএস দিতে গিয়ে তোর কথা শুনা হয়নি।এইবার বল?
নীরা -কে এই লোক? তুই তো কারো সাথে এসএমএস করিস না। তাহলে কি এমন এসএমএস দিলো তোকে তুইও রিপ্লাই দিলি।
প্রাপ্তি -জানি না কেন জানি আনসার দিয়েছি।নাম আয়ান মাহমুদ।আর জানিস এমন ভাবে কথা গুলো বলে আমাকে মনে হয় তার কতো চিনা।বাদ দে এখন চল সব কিছু গুছিয়েনি।দেরি হলে মা আর মেজো মা বকাবকি করবে।
নীরা -হুম চল,আর ওই ছেলের সাথে কথা বলা বেশী দরকার নাই।
চলবে,,,,,,,,