অজানা_অনুভূতি পার্ট:৩৪

0
3220

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৩৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

__রাত অনেক হয়েছে ফারহান এখনো প্রাপ্তির হাত ধরে বসে আছে।সকাল থেকে এখনো কিছু খায়নি সে।সবাই অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তার এক কথা প্রাপ্তির যতোক্ষণ জ্ঞান না ফিরছে সে কিছুই খাবেনা।প্রাপ্তির কেবিনের সামনে, মেজো কাকা, প্রাপ্তির বাবা,মা,ইমরান,মৃদুল,নীরা বসে আছে। আর সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে প্রাপ্তির মেজো কাকা।
নাদিয়া প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকে দেখে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে এখনো চোখের পানি ফেলছে।

নাদিয়া -ফারহান! প্লিজ সকাল থেকে তুই অনবরত কান্না করছিস।মেয়েরাও তো এইরকম কান্নাকাটি করেনা।তোর জন্য আমিও বাসায় যায়নি।এইখানে কি হয় না হয় মন পড়ে থাকবে তোদের কাছে।আচ্ছা, তুই তো আজ কিছুই খাসনি।যার জন্য এইরকম না খেয়ে আছিস সে জ্ঞান ফিরার পর যদি শুনে তুই আজ কিছুই খাসনি তাহলে তো ওর আরো খারাপ লাগবে।

ফারহান -আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।জানিস! প্রাপ্তি আমায় অনেক ভালোবাসে। ওর মতো করে কেউ কখনো আমায় ভালোবাসতে পারবেনা।কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।
নাদিয়া দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে, হয়তো তুই কারো ভালোবাসা বুঝতে চাইতিস না।ভালোবাসাই তুই কখনো বিশ্বাস করতিনা।তোর কাছে ভালোবাসা মানি ছিলো প্যারা, অসহ্য। তাহলে বল কেউ মনের কথা তোকে বলবে কি করে?

ফারহান -ঠিক বলছিস, কিন্তু প্রাপ্তিকে যেইদিন প্রথম দেখেছিলাম সেইদিন থেকে অসহ্য লাগেনি প্যারা মনে হয়নি।শুধু ভেবেছি ওকেই আমার পেতে হবে যেই করে হোক।ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। জানিস ওর ভালোবাসা পেতে কিনা করেছি আমি।আমি কখনো কোনো মেয়ের কাছে ছোটো হয়নি।কিন্তু ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হয়েছি।
কথাটা বলেই ফারহান আবার কান্না করতে শুরু করলো।

নাদিয়া -প্লিজ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িসনা।ওহ্ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।তুই ঠিক বলেছিস প্রাপ্তি কখনো প্রেগন্যান্ট হতে পারবেনা।ওই রির্পোট গুলোতে তাই আছে।
তবে এইটা মীরাক্কেল একটা ব্যাপার তোর ওয়াইফ এখন ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।

ফারহান -এইটা কেমন খুশীর খবর বলতো? যেটাতে কোনো আনন্দ নেই, হাঁসি নেই।আছে শুধু কষ্ট।
এমন সময় নাদিয়ার ফোনটা বেজে উঠতেই,
নাদিয়া -মা ফোন করেছে,হয়তো বাসায় যানি বলে টেনশন করছে, আমি কথা বলেই আসছি।

ফারহান তার ফোনটা খুঁজতে গিয়ে দেখে প্রাপ্তির হাতের আঙুল গুলো নড়ছে।

তাড়াতাড়ি করে প্রাপ্তি হাত শক্ত করে ধরে, প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? প্রাপ্তি দেখো আমি তোমার সাথেই আছি।ফারহানের এইভাবে চিৎকার শুনে প্রাপ্তির মা,বাবা,কাকাই সবাই এসে ফারহানের পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি চোখ খুলে এইভাবে সবাইকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে আছে।শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করতেই ফারহান বললো উঠছো কেন? কিছু বলবে?
কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তিকে আবার শুইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি-ফারহান কি হয়েছে আমার? (চারদিকে তাকিয়ে) ফারহান আমি হাসপালে কেন?
কথা গুলো শুনে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত নিজের গালে ধরে চোখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তির মা ফারহানকে চুপ থাকতে দেখে বলতে লাগলো, প্রাপ্তি তুই জানিস তোর কি হয়েছে? তুই তো,,,,,,,,
ফারহান প্রাপ্তির মাকে থামিয়ে,, আম্মু কথাটা আমি পরে বুজিয়ে বলবো। প্লিজ এখন কিছু বলবেন না।
প্রাপ্তির মা কথাটা শুনে চুপ করে গেলেন।

তখন নীরা বললো বড় মা আমরা সবাই বাহিরে বসে অপেক্ষা করি।ওদেরকে একটু একা থাকতে দাও।

মেজো কাকা -হ্যাঁ নীরা ঠিকি বলছে।আমরা সবাই বাহিরে বসি।আমি বাড়ীতে ফোন দিয়ে জানিয়েদি প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে না হলে সবাই টেনশন করবে।

সবাই বাহিরে গিয়ে বসেছে।প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে,কি হয়েছে আমার? তুমি আম্মুকে কিছু বলতে দাওনি কেনো?

ফারহান -হুম সব বলবো আগে তুমি সুস্থ হও তারপর।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু উঠিয়ে বসাবে? আমার শুয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা।

ফারহান প্রাপ্তিকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসালো।এখন কেমন লাগছে?

প্রাপ্তি -বুজতে পারছিনা।চেহারাটা এই রকম করছো কেন? কান্নাকাটি করে চোখমুখ তো সব ফুলিয়ে ফেলছো। প্রাপ্তি এক হাত উঠিয়ে ফারহানের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো এতো কান্নার কি আছে পাগল একটা, আমি কি মরে গেছিনাকি?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান বললো যদি কখনো যেতে হয় দুজন একসাথেই যাবো।আজকে এইকথাটার জন্য তোমাকে মাফ করে দিলাম।আর যদি কখনো বলো তাহলে দেইখো আমি কি করি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো বলবোনা।এইবার আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরোতো।এইসব কিছু আমার ভালো লাগছেনা।

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললো একজনকে জড়িয়ে ধরলে তো হবে না সাথে যে এখন আরেকজন ভাগ ধরেছে।প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কানের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে, I Love U আমার পরীর আম্মু।কথাটা শুনে ফারহানকে প্রাপ্তি ছেড়ে দিয়ে একটু সরিয়ে কি বলছো এইসব? দুইজন, পরীর আম্মু আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

এমন সময় নাদিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে এইবার কি আসবো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি।

ফারহান এক গাল হাঁসি দিয়ে আয় অপেক্ষা করার কি আছে?

নাদিয়া ভিতরে আসতে আসতে বললো এখন কেমন লাগছে প্রাপ্তি?নাদিয়া প্রাপ্তির দিকে হাতটা বাড়িয়ে congratulation প্রাপ্তি।

প্রাপ্তিও হাতটা বাড়িয়ে বললো কিসের জন্য?

নাদিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে ও কিছু বলেনি তোমাকে? কিরে অপদার্থ ওকে কিছু বলিসনি?

ফারহান -ওর কি অবস্থা সেটা দেখ।এইগুলো পরে বলা যাবে।

নাদিয়া- এইখানে আরেক দিন থাকুক।আর সম্পূর্ণ বেড রেস্ট।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।আজ যা দেখলাম আশা করি তোকে কিছু বলা লাগবেনা।

প্রাপ্তি -ফারহান কি হয়েছে বলোনা?

ফারহান-আচ্ছা সব বাসায় গিয়ে বলবো।এখন কোনো কথা নয়।

নাদিয়া -প্রাপ্তি! তোমার বর আজ সারাদিন না খেয়ে আছে।দুজনে একসাথে খেয়ে নিও।ফারহান! আম্মু বাসায় একা আছে,প্রাপ্তির যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন আর কোনো টেনশন নেই।এখন আমি যাচ্ছি আর শুন আমি সকালে আবার আসবো।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে