অজানা_অনুভূতি পার্ট:২৬

0
3028

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

___ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই অসহায় এইটা প্রাপ্তি আজ ঠিকি বুজেছে।যাকে একদিন সহ্য করতে পারতো না।আজ সেই মানুষটিকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে।
ফোনের রিং কখন থেকে বেজে যাচ্ছে দেখে
ফারহান উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান খাঁটের এক কোণায় বসে কথা বলছে,আর নিজের চুল গুলো ঠিক করছে।প্রাপ্তির ফারহানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে এগুচ্ছে।প্রাপ্তি চলে যাচ্ছে দেখে ফারহান ফোন রেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি কথায় যাচ্চো? জিজ্ঞাস করলেনা তো কার সাথে কথা বলছি!

ফারহানের ভাব দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে যাকিছু হয়েছে সে সব ভুলেই গেছে।খুব সাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।ফারহান ইচ্ছা করেই এইভাবে কথা বলছে সেই ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে কিছু বললেই সে আরো লজ্জা পেয়ে যাবে।

প্রাপ্তি- ( অন্য দিকে ফিরে)আমি কি করে জানবো?

ফারহান -ওই দিকে কে আছে যে ওই দিকে ফিরে কথা বলছো?
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তির সামনে গিয়ে প্রাপ্তি দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে ) এতোদিন অনেক অবহেলা সহ্য করছি এখন থেকে আর না।এখন থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।

প্রাপ্তি -ছাড়ো তো আবার কি শুরু করছো বলতো?(কথাটা বলতে বলতে সন্ধ্যায় যে ফারহানের জন্য নাস্তা এনেছে তার দিকে চোখ পড়লো তার।)এই ফারহান! তুমি তো নাস্তাই খাওনি।চা তো ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে।

ফারহান- (মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে)নাস্তার ছেয়ে বেশী কিছু খেলে নাস্তার কি প্রয়োজন।

প্রাপ্তি- ঠিক আছে আজ থেকে সব কিছু খাওয়া বন্ধ।,,,,,,,,কথা টা শেষ করতেই দরজা ধাক্কানো শব্দ পেয়ে প্রাপ্তি গিয়ে দরজা খুলে দেখে মেজো ভাবী।

মেজো ভাবী রুমে ঢুকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, এই জন্যই তো বলি প্রাপ্তি সেই সন্ধ্যায় রুমে ঢুকলো এখনো আসছে না কেন? যাইহোক এখন আর কিছু বলবো না।ড্রইংরুমে চলো বাবা খেতে ডাকছে। ওনি তোমাদের অপেক্ষায় বসে আছে।

ফারহান -তুমি যাও আমি আসছি।

ফারহানের বাবা, মা, সুমি পরিবারের সবাই বসে আছে। বড় ভাবী আর মেজো ভাবী খাবার গুলো রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে।
ফারহান এসে একটা চেয়ার টেনে তার বাবার পাশে বসলো।প্রাপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে বড় ভাবী সাথে সাহায্য করছে।সুমি অনেকক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান ভাতের লোকমা মুখে দিয়েছে মাত্র তখনি সুমি বলে উঠলো, হে,,রে ভাইয়া! তুই তো এই সময় কখনো গোসল করিসনা।আজ এই বৃষ্টির মধ্যে ও গোসল করেছিস তোর ঠাণ্ডা লাগবেনা? কথাটা শুনেই ফারহান গলায় ভাত আটকে ঢেকুর দিতে শুরু করলো।
ফারহানের বাবা ছেলের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা।ফারহানের মাও চুপচাপ কিছু না শুনার মতোই ছেলের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে, পানি খেয়েনে ঢেকুর কমে যাবে।প্রাপ্তি লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফেঁটে নিছেই চলে যেতে।বড় ভাবী সুমিকে চিমটি কেঁটে,কানের কাছে গিয়ে তুই কি এখনো ছোটো আছিস নাকি।কোথায় কি বলতে হয় মাঝে মাঝে কি সব কথা খেয়ে বসে থাকিস নাকি?
প্রাপ্তি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।ফারহান চুপচাপ খেয়ে উঠতে যাবে তখন ফারহানের বাবা বললো, একটু বস আমি খাওয়াটা শেষ করি তোর সাথে কথা আছে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে হাত ধুয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

প্রাপ্তির কথা ভেবে ফারহানের খারাপ লাগছে।বেচারি না খেয়ে লজ্জা পেয়েই রুমে চলে গেলো।হয়তো আমার উপরে রাগ করে বসে থাকবে।সুমিকেও বা কি বলা যায় সেও হয়তো না বুজেই বলে ফেলেছে।

ফারহানের বাবা খাওয়া শেষ করে এসে তিনি ও সোফায় বসলেন।অনেকক্ষণ পরে বললেন তোমার মেজো শশুর ফোন কেরেছিলেন।কাল নাকি ওনারা সবাই নীরার শশুর বাড়ীতে যাবে। এখন তোমদেরকে যাওয়ার জন্য বলছে।আর তুমিও নাকি তাদের বলেছো কাল যেতে পারবে।এখন কি তোমরা যাচ্ছো?

ফারহান -হ্যাঁ একটু আগে নীরার শাশুড়ি আমার সাথে কথা বলেছিলো, আমি তাদের কথা দিয়েছি কাল যাবো।

ফারহানের বাবা- আচ্ছা তাহলে ভালো কথা।তোমরা ঘুরে আসো।আর তুমি তো এই মাসে তোমার ব্যবসার কি কাজে বাহিরে যাওয়ার কথা ছিলো এখন কি যাবে?

ফারহান -বাবা ওইটা আমি কেন্সেল করে দিয়েছি।

ফারহানের বাবা বুজতে পেরেছে ছেলের না যাওয়ার কারণ। একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেই ভাবে ভালো মনে করো।কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন ফারহানের বাবা।

ফারহান রুমে যাওয়ার সময় বড় ভাবীর দিকে তাকিয়ে, ভাবী প্রাপ্তির খাবার গুলো রেহানা (তাদের কাজের মেয়ে)কে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।ফারহান রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোনে নীরার সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তিকে দেখে বুজা যাচ্ছে মনটা মোটামুটি ভালোই আছে।ফারহান পাশে গিয়ে বসে প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের আরো কাছে এনে বসিয়েছে।প্রাপ্তি কিছু বলতেও পারছেনা নীরার সাথে কথা বলছে বলে।বার বার ইশারা দিয়ে বুজাচ্ছে এই রকম করছো কেন?
এইদিকে নীরা বলেই যাচ্ছে, প্রাপ্তি জানিস তোকে আজ তো কনগ্রুয়েন্স জানানো উচিত।
প্রাপ্তি -কেন? কি করলাম আমি?

নীরা -তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না? একটু আগে ভাইয়ার সাথে কথা হলো আমাকে বলেছে।
(প্রাপ্তি এই কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান বুজতে পেরেছে নীরা বলে দিয়েছে তাকে যে কথা গুলো বলছি।)আচ্ছা যাইহোক কাল সকালে তোদের একসাথে হাঁসি মুখ গুলো দেখার অপেক্ষায় আছি।।

প্রাপ্তি হুম ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে তুমি এইটা কি করলে সব কিছু ওকে বলে দিলে?

ফারহান -তুমি যখন ফ্রেশ হয়ে আসছিলে তখন ওর সাথেই কথা বলছিলাম।ও বার বার জিজ্ঞাস করছিলো কেন ফোন ধরতে দেরী করছি।তখন না বলে আর উপায় আছে তাও আবার যদি শালী জিজ্ঞাস করে?
এমন সময় রেহানা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আসবো?
ফারহান -হুম আসো।

প্রাপ্তি- রেহানা কার জন্য খাবার এনেছো তোমার ভাইয়া ওইখানে খায়নি?

রেহানা -ভাবী ভাইয়া তো,,,,,,
রেহানাকে ফারহান থামিয়ে দিয়ে, বাকী গুলো আমি বলে দিবো তুই যা।রেহানাও আর কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -তুমি না খেলে আমিও আজ খাবোনা।তাই দুজনের জন্য একসাথেই আনতে বলেছি।(ফারহান প্রাপ্তিকে এই মিথ্যা কথাটা না বললে হয়তো প্রাপ্তি খাবেও না।ফারহান না খেয়ে আছে শুনলে না খেয়েতো উপায় নেই।)

প্রাপ্তি -ওহ্। তুমিও না।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ফারহান -আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এইবার তো খাবে।
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি আর না করতে পারলোনা।
প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ফারহান খাচ্ছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো, আমাকে খাওয়াচ্ছো তুমি খাচ্ছো না কেন?

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, সরি প্রাপ্তি! মিথ্যা কথাটা বলার জন্য।কিন্তু মিথ্যেটা না বললেতো খেতেনা।তাই বললছি।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।

ফারহান -আমি হাত ধুয়ে আসি, তুমি শুয়ে পড়ো।
প্রাপ্তির মাথায় একটায় চিন্তা সকাল হবে কখন কতো দিন পর সবার সাথে দেখা হবে।অবশ্য বেশিদিন হয়নি তবুও প্রাপ্তির কাছে অনেক দিন মনে হচ্ছে।
ফারহান এসে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে শুয়ে শুয়ে কিছু ভাবছে।

ফারহান- (প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে) এতো দূরে শুয়ে আছো কেন?আর তোমার বালিশ টা এই খাটে যেন আর না দেখি।

প্রাপ্তি -ফারহান, বেশী বাড়াবাড়ি করছো।তাহলে আমি ঘুমাবো কি করে?

ফারহান- কোথায় আবার ফারহানের এই বুক থাকতে বালিশের কি প্রয়োজন। হিটলারের জন্য ফারহানের বুকেই যথেষ্ট।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে তাইতো এতোক্ষন তো এইকথা ভাবিনী। ফারহান কে শুইয়ে সত্যি সত্যিই প্রাপ্তি ফারহানের বুকে শুয়ে পড়লো।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে