অজানা_অনুভূতি
পার্ট:২২
__প্রাপ্তি ফারহানের কথায় কিছু বলছে না।মনে মনে ভাবছে সত্যিই কি আমি ফারহান কে ভালোবাসে ফেলেছি। আচ্ছা যার কারনে আমি ফারহান কে দূরে সরিয়ে রাখতেছি সে তো একবারো আমার খবর নিলো না।
ফারহান -প্রাপ্তি, তুমি কি ভাবছো? এইভাবে চুপ করে আছো কেন?আমার আনসার কিন্তু তুমি দিলেনা।
প্রাপ্তি -আচ্ছা তুমি যে মেয়েকে ভালোবাসো ওই মেয়েটার সাথে কথা বলো কখন? সারাক্ষণ তো আমার সাথেই থাকো।মেয়েটা কি জানে তুমি বিয়ে করেছো? ও তোমাকে ভুল বুজেনি?
প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসতে শুরু করলো।
ফারহানে হাঁসি দেখেই প্রাপ্তির প্রচুর রাগ হচ্ছে।
প্রাপ্তি-আমাকে কি জোকার মনে হয় তোমার কাছে? এই কথাটা বললেই তুমি হাঁসতে থাকো,ব্যাপার টা কি একটু বলবে?
(ফারহান হাঁসি থামিয়ে)
ফারহান-আসলে কি বলোতো আমি সারাক্ষণ কিন্তু ওকেই সময়দি। কিন্তু সেটা তুমি বুজতেই পারোনা নাকি বুজতে চাও না সেটা আমার জানা নেই।(অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)
প্রাপ্তি! তুমি কি সত্যি কোনো দিন বুঝবেনা? আমাদের সম্পর্কটা কি সারাজীবন এইভাবেই থেকে যাবে?
প্রাপ্তি -ফারহান,,,,
ফারহান-(প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে)চুপ আজ আমাকে বলতে দাও।আমার বলা শেষ হলেই তুমি বলবে।(প্রাপ্তি তখন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো,ফারহান আবার শুরু করেছে।)আমি জানি তুমি একজনকে ভালোবাসতে।আচ্ছা কোনো ছেলেকি কোনো মেয়ের এইসব কিছু জেনেও ওই মেয়েকে বিয়ে করে? কেউই করেনা।তাহলে তোমার মাথায় এইটা আসেনা আমি তোমার সব কিছু জেনেও তোমায় বিয়ে করলাম কেন?কারণ আনসারটা তুমি আমার থেকেও ভালো জানো। কিন্তু বুজতে চাও না।মানলাম তুমি আয়ান নামের ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসো যে কিছু এখন মেনে নিতে পারছোনা।কিন্তু এইটা ভেবে দেখেছো তুমি তাকে না দেখে তার সম্পর্কে ভালো করে না জেনে তাকে তুমি এতো ভালোবেসেছো।তা হলে আমার দিকটা একবার ভাবো তুমি আমার সামনে সারাক্ষণ ঘুরো,কথা বলো,হাঁসো,আমি কি করে ঠিক থাকতে পারি।আমি কিন্তু তোমার শর্ত গুলো মেনে বিয়ে করার পর শর্ত গুলো নাও মানতে পারতাম।কেন মিনেছি জানো? তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই আছে শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা।আমি চাইনা জোর করে কিছু পেতে যেই দিন তুমি মন থেকে আমার কাছে আসবে সেইদিনও আনাকে একিভাবে পাবে।আমি তোমার ছিলাম, আছি,থাকবো।(ফারহান কথা গুলো বলে যাচ্ছে আর প্রাপ্তির চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে।প্রাপ্তি কান্না দেখে) প্রাপ্তি,জানো আমি চাইনা তোমার চোখের কাজল মুছে যাক।আর কখনো চাইবোও না। আমি যতো দিন বেঁচে থাকবো কখনো যেন না দেখি তোমার চোখে পানি।হয়তো আমার কথা গুলো তোমার কাছে কোনো দামই নেই। তবুও বলছি ওই মেয়ে আর কেউ নয় শুধু তুমি।যেইদিন আমি ফাস্ট তোমাদের বাসায় এসেছি সেই দিন তোমাকে একটা বার দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।আর তোমার ফ্যামিলির সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হলো।আমার বাবা,মাকে বলে তোমার ফ্যামিলিতে প্রস্তাব পাঠালাম।কিন্তু তারা বললো তারা রাজি কিন্তু তোমার পড়া লেখা শেষ করেই বিয়েটা হবে।তখন আমিই বললাম বিয়েটা যখন পরেই হবে তোমাকেও পরে বলা হোক।সবাই ও আমার কথা মেনে নিলো সেইদিন। এখন আমি বুজি সেইদিন তোমাকে না জানিয়ে কতো বড় ভুল হয়েছে।প্রাপ্তি, আমি অন্য ছেলেদের মতো না, তোমাকে বলিনি,বলেছি তোমার ফ্যামিলি কে কারণ তোমার একা ভালোবাসা পেলে তো হবে না।আমাকে সবার ভালোবাসাই পেতে হবে।
কথা গুলো বলেই ফারহান একটা সুস্থির নিশ্বাস পেললো। মনে হচ্ছে এতো দিন যে কষ্টগুলো তার বুকে চেপে রেখে ছিলো আজ প্রাপ্তিকে এইগুলো বলে কিছুটা হলেও হালকা লাগছে নিজেকে।
প্রাপ্তি কিছুই বলতে পারছেনা চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতেছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।ফারহান প্রাপ্তির চোখ গুলো মুছতে মুছতে কান্নাকাটি করার কোনো দরকার নেই।কথা গুলো তোমাকে বলতে চাইনি।তবু নিজের অজান্তেই বলে পেললাম।প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।হঠাৎ করে প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান অবাক হয়েই আছে।বিশ্বাসই করতে পারছেনা প্রাপ্তি তাকে জড়িয়ে ধরেছে।অবশ্য এর আগেও নীরার বিয়ের পরে একবার জড়িয়ে ধরেছিলো। আচ্ছা আমি নিজেও কি তাকে জড়িয়ে ধরবো? না থাক!প্রাপ্তি যেইদিন মন থেকে এসে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি সেইদিন তাকে জড়িয়ে ধরবো।এর আগ পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করে যাবো।
ফারহান -প্রাপ্তি আমি তোমাকে কান্না করার জন্য এইগুলো বলিনি।বলেছি ভেবে দেখতে।(প্রাপ্তিকে হাঁসানো জন্য)প্রাপ্তি তুমি যাদি সারাক্ষণ এইভাবে রুমেই থাকো তাহলে সবাই ভাববে প্রাপ্তি তার বর কে কতো ভালোবাসে তাই চোখের আড়াল করতে চায়না বলেই সারাক্ষণ রুমে থাকে।
প্রাপ্তি ফারহানকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফারহান,ভালো হবেনা বলে দিলাম।
ফারহান- খারাপই বা কি হবে।আমি এইটুকু বুজেছি প্রাপ্তি এখন ফারহানকে চোখে হারায়।ঠিক বলছি?
প্রাপ্তি -মোটেও ঠিক বলোনি।তোমাকে চোখে হারাতে যাবো কেন?
প্রাপ্তির কথা শুনতে শুনতে ফারহান ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ৫.৩০ বেজে গেছে।
ফারহান -ওহ কখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে টেরি পেলামনা। বউয়ের কান্নাকাটি দেখলেকি আর কোনোদিকে মন থাকে।একটু পরতো মাগরিবের আজান দিবে।তুমি নামাজ পড়ে নিও আমি আর ইমরান একটু বাহিরে যাবো।কথাটা বলতে বলতে ফারহান দরজা খুলে দেখে সেজো কাকী আর নীরা দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -আপনারা?
সেজো কাকী -তোমরা তো ঘুমাচ্ছিলে তাই বড় ভাবী বলেছে তোমাদের ডেকে দিতে।এখন এসে দরজা নক করতে যাবো তার আগেই তুমি দরজা খুললে।
নীরা -কাকী , ভাইয়াকে দেখেতো মনে হয়না ঘুমিয়েছে।তুমি কি বলো।
নীরা কথাটা বলতে বলতে তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি অন্য দিকে ফিরে শুয়ে আছে।
ফারহান তাদের সাথে কথা না বাড়িয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ইমরানের রুমে চলে গেলো।প্রাপ্তিও তাদেরকে দেখে উঠে বসলো।
সেজো কাকী -কিরে ঘুমাস নাই? আর বড় ভাবী পাঠিয়েছে তোদেরকে জেগে তুলতে।এখন এসে দেখি ঘুমাসই নাই।আচ্ছা নীরা তোরা কথা বল আমি আসছি।ওই দিকে অনেক কাজ পড়ে আছে।
কাকী চলে যাওয়ার পরে নীরা প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, মনে হচ্ছে তুই কান্না করেছিস।
প্রাপ্তি -(একটু চুপ করে থাকে)কান্না করিনি নিজের ভুল গুলোকে শুধরানোর চেষ্টা করছি।আচ্ছা তুইও তো জানতি ফারহান কাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তুই ও আমাকে বলিসনি। যদি তখন বলতি আজ তাহলে এতো গুলো মানুষকে কষ্ট পেতে হতো না।
নীরা- প্রাপ্তি তুই আমাকে ভুল বুজছিস সত্যিই আমি আগে কিছু জানতাম না।যখন জানতে পারলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছিলো। তবে কি জানিস হয়তো তোর কাছে এখন খারাপ লাগছে কোনো একদিক তুই নিজেই বলবি ফারহান ভাইয়াকে বিয়ে করে তুই ঠিকে করেছিস।
প্রাপ্তি -হয়তো তাই।
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ালো
আচ্ছা চল দেখি ওরা সবাই কি করছে।
সন্ধ্যা থেকে সবাই ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ইমরান আর ফারহান বাহিয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে সবাই নানানরকম কথা জিজ্ঞাস করছে।
মেজো মা – হে রে প্রাপ্তি, ওই বাড়ীর সবাই তোকে অনেক আদর করে তাই না?
নাজিফা -মা তুমিও না। আমি একদিন থেকে যা বুজলাম সবার থেকে ভাইয়া আপুকে চোখে হারায়,কতো কেয়ার করে।অবশ্য সবাইও আপুকে অনেক আদর করে।
প্রাপ্তি- ওই তুই কিন্তু বেশী কথা বলছিস।তোকে মেজো মা জিজ্ঞাস করেছে?
নাজিফা -তুই তো কিছু বলছিস না তাই আমি তোর হয়ে বলে দিলাম।ভাইয়াই তো বললো তোর সাথে আমি ফ্রি তাই বলে দিলাম।
নীরা-তোর মুখেতো ভালোই খই ফুটতেছে।এই সবাই কিন্তু শুনে রাখো, প্রাপ্তি আজ বড় মায়ের সাথে ঘুমাবে আর নাজিফা ফারহান ভাইয়ার সাথে।ও যখন নিজের মুখে শিকার করেছে ও প্রাপ্তির সাথে ফ্রি তাহলে ফারহান ভাইয়া দুটো বউ পেয়ে গেলো।
নাজিফা- ধুত্তুরি আর থাকবোই না এখানে।তোরা সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকিস।কথাটা বলেই নাজিফা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।
প্রাপ্তির মা- নীরা বেশী বাড়াবাড়ি করে পেলেছিস।আচ্ছা প্রাপ্তি,ফারহান আর ইমরান আবার কোথায় গেলো,জানিস কিছু?
প্রাপ্তি -না কিছু বলে যায়নি, ওরা দুজন এক সাথে থাকলে কখন কি করে সেটার কি ঠিক আছে।
সেজো কাকী নাস্তা আর কফি নিয়ে এসে, এই আমি কিন্তু এসে গেছি এতোক্ষণ অনেক কিছু মিস করে ফেলেছি।
আবার নতুন করে শুরু করো।
নীরা -হায় হায় কাকী তুমি সব কিছু মিস করে ফেলেছো।(খেপানোর জন্য)প্রাপ্তি তুই যে এতোক্ষণ আমাদের গল্পগুলো শুনাইছোস কাকী তো সব মিস করে ফেলেছে। এখন কি করা যায়?
নীরার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।
সেজো কাকী -নীরা, আমাকে খেপানো হচ্ছে তাই না।আমি সব বুজি।কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাছে আগে খেয়েনে।প্রাপ্তি,তুই ফারহান কে ফোন দে আসার জন্য। ওর জন্য বড় ভাবী, আর মেজো ভাবী স্পেশাল পিঠা বানিয়েছে।
প্রাপ্তি -কাকী, তুমি তো ভালো করেই জানো ও এই সময় কফি খায়না, চা বানাও নি।
সেজো কাকী -বড় ভাবী দেখেছো আমাদের মেয়ে এখন আর আমাদের নেই। পুরোপুরিভাবেই ফারহানের হয়ে গেছে।
(সেজো কাকীর কথা শুনে প্রাপ্তির মা ভাবছে আমি তো এটাই ছেয়েছিলাম।ও ফারহানের হয়েই থাকুক।)
প্রাপ্তি -কাকী তুমিও না।একটা কথা পেলেই হলো আর কিছু লাগেনা।এইটা আবার আম্মুকে শুনানো লাগে।কথাটা বাড়ীর সবাই জানে ফারহান সন্ধ্যায় কফি খায়না।তার পরেও বলতে হলো তোমার।
প্রাপ্তি কথাটা বলেই চুপচাপ বসে ফারহানকে ফোন দিচ্ছে। ফারহান বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে।আবার ফোন দিতে যাবে দেখে ফারহান আর ইমরান দরজা দিয়ে ঢুকতেছে।
ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে
ফারহান -তুমি এমন সময় ফোন দিচ্ছো তখন বাসার সামনে তাই ফোন কেটে দিছি।
মেজো মা-ফারহান, ইমরান নাস্তা করতে বসো।যা বলার পরে বলবে।
চলবে,,,,,,