অজানা_অনুভূতি
পার্ট:১৬
_ সকাল থেকে গাঁয়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে দুই বাড়ীতেই।প্রাপ্তির ২ ফুফু মামার বাড়ীর সবাই চলে এসেছে প্রাপ্তিদের বাড়ীতে।অনেক গেস্ট চলে এসেছে যারা বাকী আছে সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে।
মিলি, নীরা, প্রাপ্তি সবাই বসে প্রাপ্তির রুমে আড্ডা দিচ্ছে।বাড়ীর ছেলেরাও যে যার কাজে ব্যস্ত।নাজিফাও ব্যস্ত তার বান্ধবীদের নিয়ে।
প্রাপ্তির মা কাকীরা গেস্টদের আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত
বড় ফুফু- (প্রাপ্তির মাকে)বড় ভাবী একটু প্রাপ্তির রুমে চলো।কাল রাতে এসে মেয়েটার সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি। আজ আবার একটু পর ওকে পার্লারে নিয়ে যাবে,কথা বলার সময়ও পাবোনা।
প্রাপ্তির মা-আপা আপনি এইভাবে বলছেন কেন? আচ্ছা চলুন!
মিলি -কিরে প্রাপ্তি কাল রাতে এসে দেখলাম ফারহান আর তুই বসে বসে কথা বলছিস।এতো ভালোবাসা তোদের একদিন কথা না বলে থাকতে পারিস না?
প্রাপ্তি কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার মা আর বড় ফুফু রুমে ঢুকলো।
বড় ফুফু-তোরা একটু উঠ আমি মেয়েটা পাশে একটু বসে কথা বলি।
কাল তো চলেই যাবে। তারপর কি আর এইভাবে কথা বলতে পারবো?
নীরা-ফুফু তুমি এমন ভাব করছোনা যেন প্রাপ্তি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে।
বড় ফুফু- চুপ করতো। শশুড় বাড়ীতে কতো ঝামেলা থাকে সব কিছু সামলাতে সামলাতে দিন যায়।তখন হয়তো এইভাবে আর কথাও হবেনা।
প্রাপ্তির মা-আপা তাহলে আপনি বসেন আমি ওই দিকটা সামলাই।
কথাটা বলেই প্রাপ্তির মা চলে গেলো।
প্রাপ্তি তার ফুফুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর তার ফুফুতো বকবক করেই যাচ্ছে।কিন্তু প্রাপ্তির এই দিকে মন নেই।তার মন পড়ে আছে আয়ান নামের ছেলেটার কাছে।
আচ্ছা আমি কেন ওর কথা ভাবছি।ও হয়তো আমার কথা একবারো ভাবেনা।যদি ভাবতো আমায় একবার হলেও ফোন দিয়ে বলতো।প্রাপ্তি তুমি আমার কাছে চলে এসো।এই কথা বলা তো দূরের কথা উল্টো ফোন অফ করে রেখে দিয়েছে।
নীরা -কিরে ফুফু এতো কথা বলতেছে তুই ওইদিকে মন না দিয়ে কি ভাছিস?
প্রাপ্তি -কিছু না।
নীরা- না ভাবলে উঠে গোসল করেনে।
নীরার ফোনে ফারহান ফোন করেছে দেখে নীরা উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো
নীরা-কি ব্যাপার? কিছু বলবে?
ফারহান-প্রাপ্তি কি করে?
নীরা- গোসল করতে পাঠিয়েছি।কথা বলবে?
ফারহান- না থাক।পার্লার থেকে সাজিয়ে এনে ফোন দিয়েও।
নীরা- তাহলে আমায় গিফট করতে হবে।আর শালি দের কিছু দাবি আছে সেগুলো মানলেই হবে।
ফারহান- এখনো ওই বাড়ীতে যাইও নাই।এর আগেই দাবি? বোন আমার তুমি যদি আমার সাথে হিটলারি করো তাহলে এইটাকি ঠিক হবে?
নীরা-কালকের জন্য না হয় একটু হিটলারিই করলাম এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবেনা তোমার।
ফারহান- আমার বউটা তো একটা হিটলার।এখন দেখি শালিও হিটলার।অবশ্য লোকে যে বলে বউরে সাথে শালি ফ্রি।এখন দেখি হিটলার বউয়ে সাথে হিটলার শালি ফ্রি।
নীরা- আচ্ছা ঠিক আছে।এখন রাখছি।
এইদিকে ফারহান প্রাপ্তির মনের মতোন করে তার রুম সাজিয়েছে। আগোছালো রুমটা আজ নিজের হাতে গোছাচ্ছে। প্রাপ্তির আগোছালো জিনিশ একদম অপছন্দ।
ফারহানের ছোটো বোন সুমি ফারহান কে ডাকতে এসে দেখে ফারহান সবকিছু গুছিয়ে রাখছে।
সুমি -কি ব্যাপার ভাইয়া? সপ্ন দেখছি না তো?
ফারহান- জেগে জেগে তোর মতো পাগলি ছাড়া কেউ সপ্ন দেখতে পারেনা।
সুমি- ভালো হবে না কিন্তু।আমি কিন্তু এখন সবাইকে ডেকে বলবো ভাইয়া প্রাপ্তির ভয়ে,,,,,
ফারহান- চুপ করবি।কি শুরু করেছিস? কেন আসলি সেটা বল।
সুমি- সবাই তোমাকে ডাকছে। তোমার ফ্রেন্ডরা সবাই আসছে।তোমাকে রেডি হয়ে যেতে বলেছে।
ফারহান -(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো টেরি পেলাম না।তুই যা আমি আসছি।
এইদিকে প্রাপ্তিকে পার্লার থেকে সাজিয়ে এনেছে।প্রাপ্তির মা মেয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা কে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে এনেছে তুবুও কেমন গম্ভীর হয়ে আছে।সবকিছু মাঝে থেকেও যেন কি যেন নেই।প্রাপ্তির মা মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন।
প্রাপ্তির মা-(প্রাপ্তি মাথা তার বুকের সাথে লাগিয়ে)কারো জন্য কিছু বসে থাকেনা।যা চলে গেছে তাকে যেতে দিতে হয়।আর যা জীবনে আসছে তাকে হাঁসি মুখে মেনে নিতে হয়।দেখিস ফারহানের কাছে তুই সুখেই থাকবি।তুই যদি এইভাবে গম্ভীর হয়ে থাকিস তাহলে সবার ভালো লাগবে বল?
প্রাপ্তি-আম্মু! আমি সব কিছু হাঁসি মুখেই মেনে নিয়েছি।তুমি ভেবেনো আমি কষ্ট পাচ্ছি।আসলে তোমাদের অনেক মিস করবো ওই বাড়ীতে।তাই খারাপ লাগছে।
(প্রাপ্তি তার মাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য কথা গুলো বলছে ঠিকি এই দিকে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।)
মেয়ের কান্না দেখে প্রাপ্তির মা নিজেও কাঁদছে।
প্রাপ্তির মেজো মা এসে দেখে মা মেয়ে দুজনেই কাঁদছে।
মেজো কাকী – ভাবী তুমি এইভাবে কাঁদলে মেয়েকি আর ঠিক থাকতে পারে?
মেজো কাকী কথাটা বলতে বলতে নিজেও কেঁদে পেললেন।
প্রাপ্তির মা- এতো তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে বিদায় দিবো ভাবিনি।
মেজো কাকী -এখনি সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।আচ্ছা চলো ভাইয়া ডেকে পাঠিয়েছে।
ফারহান দের বাড়ী থেকে অনেক লোকজন এসেছে গাঁয়ে হলুদে।সুমি দৌড়ে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।কি ব্যাপার কেমন আছো?
প্রাপ্তি-ভালো।
নীরা-প্রাপ্তি! রোবটের মতো না দাঁড়িয়ে থেকে একটু হেঁসে কথা বল।
সুমি- নীরা আপু সমস্যা নেই। ভাবীর মন খারাপ তাই হয়তো এইভাবে আছে।তবে ভাবী আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
সুমির মুখে ভাবী ডাকটা প্রাপ্তির খুব অসস্থি লাগছিলো। হয়তো ফাস্ট শুনছে তাই এই রকম লাগছে।শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
—হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো।শুধু নীরা আর প্রাপ্তি ছাদে এখনো বসে আছে।রাত ৩ টা বেজে গেছে সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই দুজনের।
নীরা -দেখেছিস! মৃদুল টা কেমন ঘুম পাগল।আমরা দুজন ছাদে বসে আছি ওইতো এসে আমাদের সাথে একটু আড্ডা দিতে পারতো।ফারহান ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখি কি করে।
প্রাপ্তি- ও হয়তো ঘুমাচ্ছে।
নীরা -আরে কি বলিস আজ ওর ঘুম হবে?(ফারহান কে ফোন দিতেই রিসিভ করে পেললো।)
নীরা -কি ব্যাপার ঘুম নাই? ফোন যাইতে না যাইতে রিসিভ করে ফেলছো?
ফারহান -ঘুম কি আর আসে? কখন সকাল হবে আর আমার প্রাপ্তির মুখটা দেখতে পারবো সেই অপেক্ষা করছি।আচ্ছা আমার হিটলার বউ কি করছে?
নীরা-ছাদে বসে আছি।তাই ভাবলাম তোমাকে একটা ফোন দিয়ে একটু জ্বালাই।
আচ্ছা “তাহলে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করো আমি রাখছি।
কারো উপরে উঠার শব্দ পেয়ে দুজনে পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তির মা।
নীরা -বড় মা! তুমি এখনো ঘুমাওনি?
প্রাপ্তির মা- ঘুম আসছেনা।প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখি প্রাপ্তি নেই।ভাবলাম ছাদে আছিস তাই উপরে উঠে আসলাম।
তোরা দুজন কখন ঘুমাবি।সকাল হলে তো ঘুমাতেও পারবিনা।এখন চল আমার সাথে।আর এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
মায়ের কথা মতো প্রাপ্তি আর নীরা নিচে এসে যে যার রুমে ঘুমাতে গেলো।
চলবে,,,,,,,