অজানা_অনুভূতি
পার্ট:১৪
ফারহানদের সবাই এসে গেছে।প্রাপ্তিদের মতোই ফারহানদের ফ্যামিলি ও বড়।প্রাপ্তিদের সবাই অনেক খুশি নিজেদের মতো মেয়েক বড় ফ্যামিলিতে বিয়ে দিচ্ছে।আর ফারহান ছেলেটাও ভালো। প্রাপ্তির সেজো কাকী তো বলেই পেললেন নীরাকে, তুই যদি ওই রকম কাজটা না করতি প্রাপ্তির মতো আজ তোর ও বড় ঘরে বিয়ে দিতো।
কাকীর কথাটা শুনেই নীরার মন খারাপ হয়ে গেলো।
সেজো কাকী -নীরা আমি কিন্তু কথাটা সে ভাবে বলতে চাইনি।প্লিজ তুই রাগ করিস না।
নীরা -কাকী রাগ করার কি আছে।মৃদুল হয়তো বড়লোকের ছেলে না। আর সব দিক তো ঠিক আছে।
প্রাপ্তি মা এসে দেখে নীরার মন খারাপ হয়ে আছে।
প্রাপ্তির মা-তোরা এইখানে? ফারহানদের সবাই এসেছে। নীরা প্রাপ্তিকে রেডি করেছিস তো?
নীরা-বড় মা প্রাপ্তিকে অনেক বার বলেছি রেডি হতে।কিন্তু ওই কোনো কথায় শুনছে না।তাই আমি এইদিকে চলে আসছি।দেখেছি ফারহান ভাইয়ার ছোটো বোন আরো কয়েকটা মেয়ে ওর রুমে ঢুকে ওর সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তির মা-তুই যা ওর রুমে।ও এমনি এমনি রেডি হবে না।তুই গিয়ে রেডি করিয়েদে।ও রেডি না হলে তোর আব্বু আর বড় আব্বু সবার উপর রাগ দেখাবে।
ঠিক আছে বলে নীরা উঠে প্রাপ্তির রুমে গেলো।ফারহানের বড় ভাবী প্রাপ্তির সাথে বসে কথা বলছে।
নীরা -ভাবী পরে কথা বলেন।আমি আগে ওরে রেডি করে দিয়ে যাই।
বড় ভাবী -কি আর রেডি করাবে প্রাপ্তিকে এতেই অনেক ভালোলাগছে।
নীরা -না বড় মা বলছে শাড়ী পরাতে।
বড় ভাবী -আচ্ছা ঠিক আছে।
তুমি রেডি করাও আমি আসতেছি।
নীরা -ভাবী ফারহান ভাইয়া এখনো আসে নাই?
বড় ভাবী -আসতেছে।আমাকে বলেছে ওর একটা কাজ আছে, কাজ শেষ করেই চলে আসবে।
কথাটা শেষ করেই ফারহানের বড় ভাবী রুম থেকে চলে গেলো।
নীরা -বসে থাকিস না উঠ।
প্রাপ্তি-সকাল থেকে আয়ান কে অনেক বার ফোন করেছি।ফোন অফ করে রেখেছে।
নীরা- এখনো তুই আয়ানের কথা মাথায় নিয়ে বসে আছিস।আয়ান কে ভুলার চেষ্টা কর।শুধু শুধু এতে অনেক গুলো মানুষ কষ্ট পাবে।
কথা গুলো বলছে আর প্রাপ্তিকে শাড়ী পরাচ্ছে।
প্রাপ্তি কিছু বলছে না।চুপচাপ পুতুলে মতো দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কয়েদিন আগেও শুনলাম ফারহান একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে ওকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করছে?নীরাকে আবার জিজ্ঞাস করবো? না থাক।
নীরা -কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন?
প্রাপ্তি -কিছুনা ভাবছি আমি যদি চলে যাই তোর মন খারাপ হবে না?
নীরা -হলে কি তুই কখনো বিয়ে করবি না?
প্রাপ্তি -তুইও না!
প্রাপ্তিকে সুন্দর করে সাজিয়ে নীরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে আজ তো ফারহান ভাইয়া চোখ ফিরাতেই পারবেনা।
নীরা কথাটা শেষ করতেই ফারহান এসে বললো কাকে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারবোনা নীরা?
প্রাপ্তি কই নীরা?ওইদিকে ফিরে কে তাকিয়ে আছে?
নীরা চোখে ইশারা দিয়ে ফারহানকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফারহান নীরা যাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
দরজা বন্ধের আওয়াজ শুনে প্রাপ্তি সামনের দিকে ফিরে তুমি দরজা আটকাচ্ছো কেন?
ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে নীরাতো সত্যি বলেছে বুড়িটাকে যে এতো সুন্দর লাগছে চোখ ফিরাইতে পারছিনা।
প্রাপ্তি-তোমার এইসব ফাজলামি ভালো লাগেনা। দরজা বন্ধ করলা কেন?
ফারহান- তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। কথা গুলো শেষ করে চলে যাবো।
প্রাপ্তি- এখন কিসের কথা তোমার?
ফারহান- তুমি সত্যি কি এই বিয়ে মন থেকে করতে চাইছো।নাকি সবার কথা রাখতেছো? আমি চাই তুমি পুরোপুরি সব ভুলে আমার কাছে আসো। যদি তোমার সময় লাগে নিতে পারো।
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান বললো
ভয় পেয়েও না যদিও এখন বিয়েটা হয় যতদিন তুমি না চাইবে আমি কখনো তোমার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার চাইবোনা।
প্রাপ্তি- চাইবে কেন? তোমার তো ভালোবাসার মানুষ আছেই।আমি একা আয়ান কে ভালোবেসে দোষ করিনি।তুমিও অন্য কাউকে ভালোবাসো।তুমি তারপর ও কেন এই বিয়েটা করছো আমি বুজতেছিনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসি দিয়ে বললো এক সাথে বিয়ের পরে বুজিয়ে বলবো।
দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে ফারহান মুখে বিরক্তির চাপ নিয়ে দরজা খুলতে খুলতে বললো মন খুলে যে ২ মিনিট কথা বলবো তারও সময় দিবেনা এরা।
সেজো কাকী আর ফারহানের বড় ভাবী ফারহান কে দেখে অবাক হয়ে তুমি এতোক্ষণ এই রুমে ছিলে?
ফারহান-না আসলে ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো সবার সামনে বলতে পারছিলাম না তাই রুমে চলে আসলাম।
তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি বসে আছে।
বড় ভাবী-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! কি এতো কথা যা এতো দিনে বলেও শেষ করতে পারচ্ছোনা।?
প্রাপ্তি-(রাগী চোখ নিয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে)আমি কিছু বলিনি।যা বলেছে ওই বলেছে।
সেজো কাকী -নীরা এইজন্যই আমাদের এইদিকে আসতে দিচ্ছিলোনা।
যাই হোক প্রাপ্তিকে সবাই ড্রইংরুমে ডাকছে।
বড় ভাবী ফারানের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে আর বেশী দিন নেই সামনের সাপ্তাহে
বিয়ের দিন ঠিক করেছে বাবা।
ফারহান-বেশী দিন না মানে।তারপরেও তো অনেক দেরি।একটা দিন মানে একটা বছর।
বড় ভাবী -ঠিক আছে বাবাকে গিয়ে তাহলে বলি।ফারহান বলেছে এক সাপ্তাহ নাকি অনেক দেরি।
ফারহান -ধুতঃ তুমিও না।
সেজো কাকী -আচ্ছা অনেক হয়েছে দেবর আর ভাবী বাসায় গিয়ে কথা বলবেন।এখন চলেন।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে ড্রইংরুমে বসে আছে।
প্রাপ্তিকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসানো হলো।ফারহানের বাবা বললো
বড় বউ ফারহানকে ডাকো তো আংটি টা পরিয়ে দিক।আমার কাজ আছে যেতে হবে।
ফারহান লজ্জা লজ্জা একটা ভাব নিয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়ালো।
ফারহান-বাবা ডেকেছো?
ফারহানের বাবা-বাবা এতো লজ্জা পেতে হবে না।বিয়েটা আজি দিয়ে দিচ্ছিনা।এখন প্রাপ্তির পাশে বসো আর আংটি টা পরিয়ে দাও।
ফারহানের বাবার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।
সবার হাঁসি মধ্যে দিয়ে ফারহান আংটি পরাচ্ছে আর প্রাপ্তির কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলছে
কি! মহারাণী বিয়েটা তাহলে শেষমেশ আমাকেই করছেন।আর আমাকে দেখেছো একটা বুড়ী কপালে জুটেছে।
প্রাপ্তি ফারহানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
ফারহান- ওই ভাবে তাকালে সবাই বলবে এখনি আমাকে না দেখে থাকতে পাচ্ছোনা।বিয়ের পরে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
কথা গুলো বলছে আর মনে মনে হাঁসছে।এখন যতো কিছু বলিনা কেন কিছু করতে পারবেনা সবার সামনে।এই সুযোগ তো আর ছাড়া করতে পারিনা।
ফারহানের বাবা বললো আমি এখন তাহলে আসি। আমার কিছু কাজ আছে। ফারহান! সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আশিস।
প্রাপ্তির মেজো কাকী প্রাপ্তির পাশে গিয়ে বললো ফারহানের বাবা চলে যাচ্ছে ওনাকে সালাম করো।
প্রাপ্তি ভাবছে কিভাবে সালাম করবো? মুখে বলবো নাকি পা ছুঁয়ে।
ফারহান কে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
প্রাপ্তি -ফারহান একটা কথা বলি হাঁসবা না তো?
ফারহান-না বলো কি?
প্রাপ্তি -মেজো মা বলেছে তোমার বাবাকে সালাম করতে।বলেই ওনি চলে গেছে।কিন্তু কিভাবে সালাম করবো মুখে না পা ছুঁয়ে।
ফারহান -(ফারহান হাঁসিটা চেপে রেখে)তোমার যেই ভাবে ইচ্ছা করতে পারো।এতে বাবা কিছু মনে করবে না।
ফারহান মনে মনে ভাবছে সব মেয়েরাই মনে হয় এই সময় সব গুলিয়ে পেলে ভয়ে।তখন নিজের জানা কথা গুলোও অজানা হয়ে যায়।
চলবে,,,,,