#অচেনা_মানুষের_মাঝে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮
সামান্তা মুচকি হাসলো। অন্যহাত দিয়ে তিথির হাত ধরে বলল “শান্ত হও মামুণি কিছু হয়নি।”
তিথি বেডে বসে কেঁদে দিলো “আমাদের জন্য আজ তোর এমন হলো। বিয়েটা দেওয়াই ঠিক হয়নি। আমার ছোট মেয়েটা এতো কিছু সহ্য করেছে।”
সামান্তা তিথির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল “আরে মামুণি নিজেদের দোষ দেওয়া বন্ধ করো তো। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।”
তিথি সামান্তার কথায় কিছুটা সস্থির হলো। সামান্তাকে খাইয়ে দিলো তিথি তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেল নিজের কাজে।
সামান্তা আস্তে আস্তে করে গিয়ে বসলো বারান্দায় থাকা চেয়ারে। বারান্দা থেকে তার প্রিয় কাঠগোলাপের গাছটা দেখা যাচ্ছে। সামান্তা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেইদিকেই। আকাশে মেঘের ছড়াছড়ি। হালকা বাতাস বইছে।
তখনি হুট করে কেউ তার সামনে এসে দাড়ালো। সামান্তা চোখ ফিরিয়ে দেখলো রেদওয়ান দাড়িয়ে রয়েছে। পরনে স্কুলের ড্রেস। সামান্তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে স্কুল থেকে এসেই সোজা তার কাছে এসেছে। সামান্তা রেদওয়ানকে নিজের কাছে এনে ওর কপালে চুমু দিলো। রেদওয়ান ও খুশি হয়ে গেল। বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে বসলো বোনের সঙ্গে লেগে। প্রায় একটা বছর পর বোনকে পেয়ে সে অনেক খুশি। কিন্তু পরক্ষণেই বোনের গায়ের ক্ষত স্থানগুলো দেখেই অস্থির হয়ে পড়লো সে। সামান্তা রেদওয়ানকে শান্ত করে কি হয়নি বলে। তখনই আরাফ আসে। আরাফের সঙ্গে কিছু কথা বলে সামান্তা।
সামান্তা রেদওয়ানকে পাঠিয়ে দেয় ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য। রেদওয়ানের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বোনের কথায় চলে যায়। আরাফ যায় কিছু খেয়ে নিতে। দুইজন কোনোমতে তাড়াতাড়ি করে তাদের কাজ শেষ করে আবার হাজির হয় সামান্তার কাছে। সামান্তা হেসে দেয় ওদের এমন কাজে। ওরাও দাঁত বের করে হাসে। তিনজন মিলে বসে গল্প করতে।
————-
এইদিকে লামিয়া বেগমের সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে একটা সুদর্শন ছেলে। পরনে কালো শার্ট আর কালো জিন্স। চোখে সানগ্লাসে হাতে দামি ঘড়ির। লামিয়া বেগম চোখ ছোট ছোট করে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল “কি চাই!”
আয়ান ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে চোখ থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে বলল “আপনাকে চাই মিসেস।”
লামিয়ার বিরক্ত লাগছে সে রেগে বলে উঠলো “কি বলছেন এগুলো মাথা ঠিক আছে তো।”
আয়ান এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল “মাথা আমার ঠিকই আছে। সমস্যা তো আপনার মধ্যে। কেন শান্তি দিচ্ছেন না সামান্তাকে। কি ক্ষতি করেছে সে। ছেড়ে তো দিয়েছে সব। কেন করলেন এমন। ফারাবির সঙ্গে কেন বিয়ে দিলেন ওর। এতটা পাষাণ কিভাবে হলেন।”
লামিয়া বেগম মুচকি হাসলো। চেয়ারে আরো আরাম করে বসে বলল “আয়ান বাবা যে, কেমন আছো তুমি? দিনকাল কেমন যাচ্ছে।”
আয়ান লামিয়া বেগমের এমন ভাবভঙ্গি দেখে ক্ষেপে গেল। সামনে থাকা টেবিলটায় থাপ্পড় মেরে বলল “আপনার সঙ্গে রসিকতা করতে আমি এখানে আসিনি। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
লামিয়া বেগম হোহো করে হেসে দিলো। আয়ানের চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো লামিয়া বেগমের এমন কাজে। লামিয়া বেগম নিজের হাসি থামিয়ে বলল “টাকা, সম্পত্তি এগুলো ছাড়া জীবন অচল। টাকা থাকা মানে সব থাকা। তুমি এখনো বাচ্চা তুমি এগুলো বুঝবেনা।”
আয়ান এবার দাড়িয়ে পড়লো। আঙ্গুল তুলে বলল “দেখেন ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলছিনা। আপনি যদি মেয়ে না হতেন আমি আপনার গায়ে হাত তুলতে পিছু পা হতাম না। এরপর আপনি যদি সামান্তার কিছু করতে আসেন। আমার চেয়ে কেউ খারাপ হবে না বলে দিলাম।”
কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে গেল আয়ান। লামিয়া বেগম শুধু তাকিয়ে রইলো আয়ানের যাওয়ার দিকে।
————
দুপুরের খাবার আয়ান আরাফ রেদওয়ান তিথি আর সামান্তা একসঙ্গে খেলো। গ্রামের কিছু কাজে আজিজ সাহেব আর আয়েশা বেগম গ্রামে গেছেন। আর রাশেদ অফিসে। আর আয়ান কিছুদিন ছুটি নিয়েছে হাসপাতাল থেকে তার শরীর ভালো না বলে।
চারজন মিলে খাওয়া শেষে বসলো টিভি নিয়ে। টিভিতে মুভি দিয়ে পাঁচজন মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল। সামান্তা যে মনমরা হয়ে আছে তা আয়ানের চোখে পড়লো। আয়ান কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
সবাই মন দিয়ে মুভি দেখছিল তখনই হুট করে কেউ সামান্তার হাত ধরে সোফা থেকে দাড় করিয়ে দেয়। সামান্তার ব্যথায় করা আর্তনাদে সবাই সামান্তার দিকে তাকায়। সামান্তা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ফারাবির থেকে। কিন্তু ফারাবি আরও শক্ত করে ধরছে। ফারাবি দাঁতে দাঁত চেপে বলল “তোর সাহস কি করে হয় আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠানোর। কে দিলো তোর এতো সাহস। ডিভোর্স পেপার পাঠানো আগে একবারও হাত কাঁপলো না তোর।”
বলেই যেই না সামান্তার গায়ে হাত তুলতে নিবে তখনই আয়ান গিয়ে হাত মুচড়ে ধরে ফারাবি। ফারাবির অপর হাত আলগা হয়ে আসলেই সামান্তা তা ছাড়িয়ে গিয়ে দাড়ায় তিথির পিছনে। তিথি মেয়েকে আগলে রাখে।
আয়ান ফারাবির হাত আরেকটু মুচড়ে ধরে বলল “আমি দিয়েছি সে সাহস। তোর কিভাবে সাহস হয় আমার বাসায় এসে।
আমার সামনে দাড়িয়ে সামান্তার গায়ে হাত তুলতে গেছিস।”
বলেই পরপর কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দেয় ফারাবির নাক বরাবর। এতে ফারাবির নাক বেয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ফারাবি আয়ানের গায়ে হাত তুলতে নিবে। আয়ান আবার কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দেয় ফারাবিকে। তখনই বাড়ির ভিতরে পুলিশ আসে।
তিথি আগেই সার্ভেন্ট দিয়ে আরাফ আর রেদওয়ানকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। সামান্তা আরও ভয় পেয়ে যায়। শক্ত করে খামচে ধরে তিথিকে। তিথি বুঝতে পেরে সামান্তাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে। সামান্তাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিথিকে।
আয়ান ফারাবিকে ছুড়ে দেয় একজন পুলিশ অফিসারের কাছে। আর চিল্লিয়ে বলে উঠে “ওই জানোয়ারটাকে নিয়ে যান অফিসার। ও একটা নারী নির্যাতক। ও ওর আগের বউকে মারতো। এমনকি বাচ্চাকেও মারতো । ও যে আগের পক্ষের বউ আছে বাচ্চা আছে তা আমাদের না জানিয়ে আমাদের বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেছে। আর আমাদের বাড়ির মেয়েকে সে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। ওকে নিয়ে যান। ও যেন আর বের হতে না পারে।”
আয়ান সবাইকে থামতে বলে নিজের রুমে যায়। আরেকটা ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসে। আয়ান আগেই আন্দাজ করেছিল এমন কিছু একটা হবে। ফারাবিকে সাইন করতে বললে সে না করে দেয়। পরে তাকে মাথায় বন্দুক তাক করে সাইন করানো হয়। সামান্তাও সাইন করে দেয়।
আয়ানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। পুলিশ চলে যায় ফারাবিকে নিয়ে। ফারাবি একবার রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় সামান্তার দিকে।
আয়ান সোফায় বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। তিথি একজন সার্ভেন্টকে পানি আনতে বলে। সামান্তা গিয়ে বসে আয়ানের পাশে। সামান্তা কাঁপছে সেই ফারাবি ভয়ার্তক চেহারা দেখে। আয়ান বুঝতে পেরে আলতো হাতে জড়িয়ে নেয় সামান্তাকে। সামান্তাও গুটিসুটি মেরে বসে থাকে আয়ানের বুকে মাথা রেখে।
তিথি বলল “যাও দুইজন গিয়েই নিজের নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নেও। আমি যাচ্ছি আরাফ আর রেদওয়ানের কাছে।”
আয়ান আর সামান্তা চলে গেল নিজের নিজের রুমে।
—————-
ঘড়িতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। তিথি কিছু দরকারে মার্কেটে গেছে। আরাফ আর রেদওয়ান টিচারের কাছে পড়তে বসেছে। সামান্তা চুপ করে দাড়িয়ে ছিল নিজের রুমে থাকা বারান্দায়। তখন আয়ান পিছন থেকে বলল
“বাগানে যাবে!”
সামান্তা এক পলক তাকালো আয়ানের দিকে। সাদা টিশার্ট আর টাউজার পড়ে বুকে হাত গুজে তার দিকেই তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে আয়ান।
সামান্তাও আজ সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। চুলগুলো খোপা করে রেখেছে। আয়ান পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সামান্তার দিকে।
সামান্তা আস্তে করে বলল “চলুন”
আয়ান মুচকি হাসলো সামান্তার সম্মতি পেয়ে। সামান্তারও ভালো লাগছিল না। আয়ান আর সামান্তা গিয়ে বসলো আম গাছের নিচের দোলনায়। ছাউনির কাছে আর গেল না। আয়ান গুনগুন করছে। সামান্তা চুপচাপ তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে ঘন কালো মেঘে ঢেকে আছে আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছে। সামান্তা আনমনেই বলে উঠলো
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)