#অচেনা_মানুষের_মাঝে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২
হঠাৎ করেই রেদওয়ান সামান্তার বুক থেকে মাথা তুলে মিনিমিনিয়ে আধো আধো কন্ঠে বলতে লাগলো “আপু আমার না অনেক ঠান্ডা লাগছে।”
সামান্তা কান্না থামিয়ে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো ছোট্ট রেদওয়ানের দিকে। তখনই কোনো কিছুর তীব্র আলো চোখে এসে লাগলো সামান্তার। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো একটা গাড়ি দ্রুত বেগে ছুটে আসছে তাদের সামনে। গাড়িটা এতোই কাছে চলে এসেছে যে সামান্তা কি করবে বুঝতে পারছেনা। রেদওয়ানকে আকড়ে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো সামান্তা।
————–
হাতের অসহ্য ব্যথায় ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও পিটপিট করে চোখ খুললো সামান্তা। চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্ট করলো যে সে কোথায় আছে। খানিকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর সামান্তা বুঝতে পারলো সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। পরক্ষণেই রেদওয়ানের কথা মাথায় আসতেই লাফিয়ে উঠলো সে। সে আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে উঠতে নিবে তখনই এক বলিষ্ট হাত তাকে ধরে ফেলল।
সামান্তা পাশ ফিরতেই একটা বলিষ্ট দেহির গম্ভীর একটা যুবককে দেখতে পেল। লোকটা হালকা করে সামান্তাকে বসিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তোমার ভাই ঠিক আছে। তোমাকে শুয়ে থাকতে দেখে কান্না করছিল তাই একজন নার্স ওকে খাইয়ে দিয়ে ঘুমা পাড়িয়ে দিয়েছে। ওই দেখ সোফায়।” সোফার দিকে ইশারা করে।
লোকটার কথায় সামান্তা একবার সোফার দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে শুধু “ওহ” বলে চুপ করে রইলো। দৃষ্টি তার বাম হাতের কুনুইয়ের কাছের ব্যান্ডেজটির দিকে। ব্যথায় টনটন করছে। এতোক্ষণ পরিস্থিতি অন্যরকম হলে কান্না করে ভাসিয়ে ফেলতো। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে।
লোকটি চোখ ছোট ছোট করে অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো সামান্তাকে। গলা পরিষ্কার করে লোকটি বলে উঠলো
“তুমি এতো রাতে রাস্তায় একা কি করছিলে? তোমার মা বাবা কোথায় নাম্বার দেও তাদের তো জানাতে হবে।”
সামান্তা তার দৃষ্টি হাত থেকে সরিয়ে লাল চোখে তাকালো লোকটার দিকে। লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে থাকাতে চোখাচোখি হলো তাদের। সামান্তা পরপর কয়েকটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আমাকে একটু পানি দিবেন। গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে।”
লোকটি পাশের টেবিল থেকে পানি এগিয়ে দিতে দিতে বলল ” নাম্বারটা দেও কল দিতে হবে যে। তোমার কি নাম্বার মনে নেই! আচ্ছা যাও বাসার ঠিকানা বলো আমি গিয়ে রেখে আসবো।”
সামান্তা গ্লাসের পানি টুকু খেয়ে ভাঙা গলায় বলল “আমার মা নেই। বাসায় নেই।”
সামান্তার কথায় লোকটির দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। অবাক কন্ঠে জিঙ্গাসা করলো “বাসা নেই মানে! তোমার বাবা কোথায়! কি বলছো কিছুই তো বুঝতে পারছিনা!”
সামান্তা এক পলক তাকালো সোফায় থাকা ছোট রেদওয়ানের দিকে। শান্তিতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে রেদওয়ান। রেদওয়ানের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো সামান্তা। তারপর পাশে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল
“ধন্যবাদ আপনাকে আমার উপকার করার জন্য। আর যদি একটা উপকার চাই করবেন দয়া করে।”
লোকটি সন্দেহ নিয়েই বলে উঠলো “কি উপকার?”
সামান্তা চোখ বন্ধ করে নিলো চোখের কোণ বেয়ে দুফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরল। পুনরায় চোখ খুলে আকুতির সুরে বলল “আমাকে একটা থাকার জায়গা করে দিবেন। সঙ্গে কিছু কাজ যাতে আমি আমার ভাইটাকে বড় করে তুলতে পারি। দিবেন কি!”
লোকটা পাশের টুলটা টেনে আরেকটু কাছে টেনে সামান্তার মাথায় হাত রেখে বলল “কি হয়েছে তোমার? এইটুকু একটা বাচ্চা নিয়ে তোমার মতো একটা ছোট বাচ্চা একা রাস্তায়। আবার কাজ চাইছ।”
সামান্তা হুহু করে কেঁদে উঠলো। কেন যেন এক ভরসা খুঁজে পেল। সব কিছু এক এক করে বলে দিলো।
সামান্তার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল লোকটা। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো টুলটিতে। সামান্তা কান্না থামিয়ে ফোপাচ্ছে।
চারপাশে নিস্তব্ধ। কোনো কথা নেই। অপরিচিত লোকটা মাথা নিচু করে বসে আছে অনেকক্ষণ। এরমধ্যেই তার ফোনটা বাজতে লাগলো। লোকটি ফোনটা কানে ধরে কি যেন শুনলো। তারপর চট করে উঠে দাড়ালো। হনহনিয়ে চলে গেল বাহিরে। সামান্তা তাচ্ছিল্যের হাসলো। হয় তো লোকটা পালিয়ে গেল।
সামান্তা আস্তে করে শুয়ে পরলো। দৃষ্টি তার সিলিং এর দিকে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেইদিকে।
হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢোকার শব্দে সামান্তা দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালো দরজার দিকে সেই লোকটাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো। লোকটা হাসি হাসি মুখ করে কিছু খাবার এগিয়ে দিলো। সামান্তা খেয়াল করলো কিছু ফল আর চকলেট। সামান্তা অবাক হয়ে গেল।
লোকটি বলল “তোমার নামটাই তো জানা হলো না।”
সামান্তা বলল “আমার নাম সামান্তা ইসলাম আর আমার ভাইয়ের নাম রেদওয়ান ইসলাম।”
লোকটি হেসে বলল “তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও তো তোমার আন্টি তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে।”
সামান্তা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল ” আন্টি কোন আন্টি!”
লোকটি তাড়া দিয়ে সামান্তাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সামান্তাকে একটু খাইয়ে দিলো। রেদওয়ানকে কোলে নিয়ে সামান্তার হাত ধরে রওনা হলো হাসপাতালের বাহিরের দিকে।
সামান্তা কিছু বুঝতে পারছেনা। গোল গোল চোখে শুধু তাকিয়ে দেখছে লোকটার কর্মকাণ্ড। লোকটি একটি গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে দিলো। সামান্তা অবাক চোখে এখনো তাকিয়ে আছে।
লোকটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে সামান্তাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। রেদওয়ানকেও পাশে বসিয়ে দিলো। গাড়ির দরজা আটকিয়ে সে চলে গেল সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশের। ড্রাইভার লোকটা অদ্ভুত দৃষ্টি একবার তাকালো সামান্তা আর রেদওয়ানের দিকে।
লোকটা কথায় ড্রাইভার গাড়ি চালাতে মন দিলো।
সামান্তা কিছু আর জিঙ্গাসা করলো না লোকটিকে। সে তার দৃষ্টি রাখলো বাহিরের ব্যস্ত নগরীর দিকে।
খুব মনে পরছে তার রঙিন দিনগুলোর কথা। যা শুধুমাত্র অতীত মাত্র। আপনজন গুলোর অচেনা রূপ ভয়াবহ। তাদের অচেনা রূপের কথাগুলো ধারালো ছুড়ির ন্যায় যার আঘাত অসহনীয়।
তাহলে কি আগের আচরণ শুধু দেখানোর জন্য ছিল। এতো আদর এতো যত্ন। কি হবে ভবিষ্যতে। জীবনের ধারা কোন দিকে যাবে। কিছু জানা নেই সামান্তার। আজ সে গন্তব্যহীন পথের পথিক মাত্র। যে করেই হোক ভাইটাকে মানুষের মতো মানুষ গড়ে তুলতে হবে। কেন যে আর কাউকে বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। পরিস্থিতি তাকে ফুল থেকে পাথর করে তুলছে। তাকে তার ভাইকে ভালো রাখতে হবে। যাই হয়ে যাক না কেন।
সামান্তা এগুলো ভাবছিল তখনই লোকটির কন্ঠে হুশ ফিরলো সামান্তার। লোকটি গাড়ির দরজা খুলে সামান্তাকে নামতে বলছে। সামান্তা দৃষ্টি নিচু করে গাড়ি থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো লোকটিকে অনুসরণ করে সামনের দিকে। দৃষ্টি মাটিতেই নিবন্ধ তার।
রেদওয়ানকে ওই লোকটিই কোলে নিয়ে আছে। সামান্তার হাতে চোট লেগেছিল তখন গাড়ি সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে। কিন্তু রেদওয়ান কোনো আঘাত পায়নি। সে আগলে রেখেছিল তার ভাইকে।
সামান্তা মাথা নিচু করে হাঁটাতে লোকটি মুচকি হেসে সামান্তার হাত ধরে বললেন……
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)