অঙ্গীকার (৫ম পর্ব)

1
2183
অঙ্গীকার (৫ম পর্ব) লেখা- শারমিন মিশু আফিয়া কথা বলছে আর রাদিয়া তা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। শুন রাদি,,, এইযে তোরা নারী স্বাধীনতা,, নারী অধিকার,, ফ্যাশন আর আধুনিকতা নিয়ে কথা বলছিস। এগুলোর মানে জানিস? তোরা যে নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করিস আসলে কি তোরা মুসলমানের কোন নীতি অনুসরণ করিস? শুধু নামে মুসলিম হলে হয়না কাজে প্রমান করতে হয়। যে পাশ্চাত্যের তালে তোরা লাফাচ্ছিস সেই পাশ্চাত্যের খাঁটি মুসলিমরা পরিপূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে। আমাদের মতো নামে মাত্র মুসলিমদের নিয়ে তারা হাসাহাসি করে। একটা কথা কি জানিস,, ইসলামকে আমাদের থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আজকাল কত রকমের অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। একটা কথা শুনলে অবাক হবি,,, এইযে ইন্টারনেট বলিস আর অন্য কোন মাধ্যম বলিস ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব অপতৎপরতা চলছে এসবে কিন্তু অমুসলিমদের চেয়ে মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়া মুনাফিকরা বেশি ভূমিকা রাখছে। এরা না হিন্দু না খ্রিষ্টান আর না মুসলিম। এরকম কিছু জানোয়াররা আমাদের মনে মুক্তবুদ্ধি বা মুক্তচিন্তার বীজ বপন করছে। এদের কথায় যারা চলবে তারাই এ জিন্দেগী আর পরের জিন্দেগী দুটোই হারাবে। জাহেলি যুগে মুশরিকদের ঘরে জন্ম নিয়েছে ওমর,, আলী,,, আর খালেদের মত বীর আর আল্লহভীরু লোক। আর আজকের নব্য জাহেলী যুগে মুসলিমেদের ঘর থেকে জন্ম নিচ্ছে আবু জাহেলদের মতো কিছু জালেম। এদের তো মুসলিম বললে মুসলমানদের অপমান করা হবে। এরা ইসলাম ধ্বংস করার খেলায় নেমেছে আর আমরা ওদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছি কখনো কি ভেবে দেখেছিস?
আর পর্দার ব্যাপারটা হলো,,,নামাজ রোযা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদের উপর ফরয। রমযান মাসের একমাস রোযা ফরয। সারা বছরে আর কোন ফরয রোযা থাকেনা। তেমনি নামায ও দিনে পাঁচওয়াক্ত ফরয এর বাহিরে আর কোন ফরয নামাজ নাই। হজ্জ বা যাকাত দেওয়া বছরে একবার ফরয। কিন্তু পর্দার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা সার্বক্ষনিক ফরয। কুরআনে বলা হয়েছে,,, মুমিন নারীদের বলে দাও তারা যেনো তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায় যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতীত। -পর্দা কেন শুধু মেয়েদের করতে হবে পুরুষরা কেন করবে না? তাদের কথা কেন বলোনা। পুরুষরা ও তো মেয়েদের দিকে রাস্তায় বেরুলে লোভনীয় দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে থাকে। -এজন্য বলেছি ইসলামকে ভালো করে জানার জন্য। কে বলেছে পুরুষদের পর্দা নাই? পুরুষরা ও পর্দা করবে। আল কোরআনে মহিলাদের আগে পুরুষদের পর্দা করার জন্য তাগিদ দিয়েছে। বলা হয়েছে,,, হে নবী,, মুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন তাদের নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আরো বলেছে তাদের স্ত্রী আর মুহাররাম নারীদের ছাড়া অন্য নারীদের দিকে তাকানো তাদের জন্য জায়েয নয়। ভুলবশত একবার চোখ পড়ে গেলে তা ক্ষমাযোগ্য কিন্তু আকর্ষনীয় মনে করে আবার দৃষ্টিপাত করলে তা ক্ষমাযোগ্য নয়। এ ধরনের যিনাকে চোখের যিনা বলা হয়েছে। -আলহামদুলিল্লাহ কি চমৎকার কথা!!! কিন্তু আপু পুরুষরা তো এগুলা মেনে চলেনা। -যেসব পুরুষ আল্লহর ভীতি মনে নিয়ে ইসলামকে মনে প্রানে গ্রহন করেছে তারা এসব মেনে চলে। কিন্তু যাদের মনে শয়তান প্রবেশ করেছে তারা কি করে মানবে? সব পুরুষ খারাপ না আবার সবাই ভালো ও না। ভালো খারাপ সবার মধ্যে আছে। এখন তারা মানবেনা বলে তুই মানবিনা এটা তো কথা হতে পারেনা। তুই তোর দিক থেকে সম্পূর্ণ মেনে চলবি। তাদের জবাবদিহি তারা করবে। আমাদের এই যাপিত জীবনে যত অশান্তি বেশির ভাগ এই বেপর্দা থেকে সৃষ্টি। পৃথিবীতে যতো দুঃখ কষ্ট বিপদ মুসিবত,, যতো সমস্যা সবকিছুর পিছনে একটাই কারণ,, তা হলো আল্লাহর দেয়া বিধানকে অমান্য করা। রাদি,,, তোর পৃথিবীটা এখনো খুব ছোট,,রঙ্গীন একুরিয়ামের মতো সীমাবদ্ধ। তোর কাছে এখন যেদিকে তাকাবি সবকিছু সুন্দর লাগবে। এই বয়সটাই এমন যা দেখবি তাই ভালো লাগবে। এখনো পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা তুই দেখিস নি। তোকে এখনো বাস্তবতার কঠিন চাবুকের নির্মম আঘাত স্পর্শ করেনি। যেদিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে সেদিন বুঝবি বাস্তবতা কাকে বলে। পড়াশুনা করবি এটার জন্য কেউ নিষেধ করবেনা তোকে। কিন্তু বেপর্দা হয়ে নিজের নির্লজ্জতা প্রকাশ করবি কেন? এখনো সময় আছে নিজের ভালো বুঝতে শিখ। যাদের সাথে মিশলে ভালো কিছু শিখতে পারবি তাদের সাথে মিশবি। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারেনা। শয়তান তাদের যেকোনো সময় ধোঁকা দিতে পারে। মুসলমান তো সেই ব্যক্তি,,, যে বলে ‘সামিয়ানা ওয়া আতানা’। আমি শুনলাম এবং মেনে নিলাম। ইসলাম অর্থ,, আত্মসমর্পণ করা বা আনুগত্য করা। আর মুসলমান হলো,,, আত্মসমর্পনকারী। যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করিস,, তবে আল্লাহর কুরআনের সব আদেশ – নিষেধ মানা তোর জন্য ফরয হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,, “জীবনের সকল সমস্যার সমাধান নিতে হবে আল কুরআন থেকে”। এখন তুই যদি আমাদের চাপে পড়ে পর্দা বা ইসলামের হুকুম আহকাম মেনে চলিস তবে তুই তার মজা পাবিনা। এগুলো করতে হবে আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বতস্ফূর্তভাবে। তবেই দেখবি তোর ইবাদতের স্বাধ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এতে একপ্রকার অপার্থিব মজা পাবি। কেউ কাউকে জোর করে কিছু করাতে পারেনা। তোর নিজের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ শান্তি চাইতে শিখিয়েছেন। কিন্তু চাওলেই তো পাওয়া যায়না,, পাওয়ার উপযুক্ত হতে হয়,, চাওয়ারও উপযুক্ত হতে হয়। সেই মহান মালিকের বিধান লঙ্গন করেলে তিনি আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন এটাহ স্বাভাবিক। তিনি অসন্তুষ্ট হলে কি আমাদের চাওয়াগুলো কি পাওয়া হবে? যৌবনকালটাই হলো প্রকৃত ইবাদতের সময় জিবরাঈল (আঃ) বলেছেন আমি বৃষ্টির ফোটা গুনতে পারবো কিন্তু মানুষের যৌবনকালের ইবাদত গুনে শেষ করতে পারিনা। আখেরাতে যে পাঁচটা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক পাও নড়তে দেয়া হবেনা তার মধ্যে প্রধান প্রশ্নটা হলো,, যৌবনকালটা কোন কাজে অতিবাহিত করেছো? কি জবাব দিবি সেদিন? বাবা দেশে নেই,, বাড়িতে অন্য কোন পুরুষ মানুষ থাকেনা। মা একা তোদের নিয়ে এ বাড়িতে থাকে। তোরা দুইবোন বলতে গেলে সারাদিন বাহিরে থাকিস। এতে মায়ের চিন্তা হয়না বল? আর এভাবে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করলে তো আরো বেশি চিন্তা হবে। – বোনের কথায় রাদিয়ার নিভৃত অন্ধকার জীবনের আঙ্গিনায় এক নিমিষে জ্বলে উঠলো হাজারো আলোর প্রদীপ। এক মুহুর্তে বোনকে জড়িয়ে ধরে রাদিয়া কান্না করে দিলো। আপু তুই আমার চোখের পর্দা সরিয়ে দিয়েছিস। আল্লাহ তোকে ভালো রাখুক। জাযাকাল্লাহু খায়রান। -বারাকাল্লাহ!! আরেকটা কথা শুন রাদি,,, ইসলামকে ভালো করে জানার একমাত্র মাধ্যম হলো বই। বেশি বেশি করে ইসলামীক বই পড়বি। দেখবি তোর দুনিয়াটা কত সুন্দর হয়ে গেছে। মহিলা সাহাবীদের জীবন কাহিনী পড়বি দেখবি কত সুন্দর ছিলো তাদের জীবন। পৃথিবীতে অন্য যতগুলা ধর্ম আছে সবকিছুর মধ্য থেকে ইসলামই হচ্ছে সবচেয়ে শান্তির ধর্ম। ইসলাম আমাদের যে সুন্দর জীবন বিধান দেয়া হয়েছে অন্য ধর্মে তা দেওয়া হয়নি। বেশি বেশি ইসতেগফার করবি। তওবা মানুষকে অন্যায়ের দিকে ঝু্কতে দেয়না। আমাদের রাসূল (সাঃ) একেবারে নিষ্পাপ পুতঃপবিত্র হওয়া সত্ত্বেও দিনে সত্তর বার তওবা করতেন। কিন্তু আমাদের একবার তওবা করতে কষ্ট হয়ে যায়। নিজেকে পাপমুক্ত রাখতে বেশি বেশি করে দোয়া করবি,, ইসতেগফার করবি। আমাদের কাছে নয় আল্লাহর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হবি তবেই দেখবি জীবন কত সুন্দর। -ইনশাহআল্লাহ্ আমার জন্য দোয়া করিস আপু। আমি চেষ্টা করবো নিজেকে পরিবর্তন করতে। তোর মতো একজন বোন থাকলে কোন মেয়ে আর অন্ধকারের পথে হাটবেনা। পাগলী একটা!! বলে আফিয়া সফলতার হাসি হাসলো। তার এতোদিনের চেষ্টাটা আল্লাহ হয়তো সফল করেছেন। দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। এ কান্না আনন্দের,,, এ কান্না অন্ধকার থেকে আলোতে আশার পথের সন্ধান পেয়ে যে অনুভূতি হয় তার কান্না। মুনিরা দরজার বাহিরে থেকে হাত দিয়ে চোখ থেকে আনন্দের অশ্রুটা মুছে নিলো। আল্লাহ যেনো তার মেয়েদের এভাবেই ঈমানের পথে অটল রাখেন এই দোয়াটাই করলেন।
চলবে……….

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে