অঙ্গীকার (১৬তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
ভোরের আজানের সুমধুর আহ্বান কানে লেগে ঘুম ভেঙে যায় রাদিয়ার। আজানের শব্দের সাথে ঘুমন্ত পৃথিবী ও জেগে উঠে তার অলস শরীরের আড়মোড়া ভেঙ্গে। আজানে আজানে চারদিক মুখরিত,, গাঢ় অন্ধকারের কালো আঁচলকে সরিয়ে ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় মায়াবী পৃথিবী ক্রমেই চোখ খুলে। রাদিয়া উঠে নামাজ আদায় করে বারান্দায় চলে আসলো। কাল রাতে শাফী আর দরজা খুলেনি। তাই বাধ্য হয়ে সালেহা শাফীর পাশের রুমটায় রাদিয়াকে ঘুমাতে দিয়েছিলো।
রাদিয়া বারান্দায় একটা চেয়ার টেনে বসলো৷ প্রতিদিন সকালে কুরআন পড়ার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখানে কোথায় খুঁজবে। তাই মুখস্থ করা সূরা মূলক বিড়বিড় করে তেলাওয়াত করলো।
রাদিয়াদের বাড়িটা কিছুটা গ্রাম সাইডে হলেও শাফীদের বাড়ি মেইন টাউনে। কোথাও ক্ষুধার্থ কাকের হাহাকার শুনা যাচ্ছে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে ভোর কখনোই গ্রামের শিশির ভেজা ভোরের মত নয়। এখানে পাখির গান নেই,, নেই নদীর কলতান। এখানে মেঠোপথের পাশে ঘাসফুল নেই,, নেই প্রজাতির,, ফড়িং কিংবা শিউলি তলায় ঝরে পড়া ফুলের সমারোহ। এখানে নেই প্রানভরে নিঃশ্বাস নেবার মতো বিশুদ্ধ বাতাস। তবুও মানুষ জীবনের প্রয়োজনে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়। মানুষ বেঁচে থাকে যন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে যান্ত্রিক জীবন নিয়ে।
রাদিয়ার কখনো শহর ভালো লাগতোনা। সেইজন্য আফিয়া যতবারই চাইতো এখানে এসে কয়দিন থাকার জন্য। রাদিয়া বলতো তোদের শহরের যান্ত্রিক জীবনে আমার সইবে না। তোরা থাক তোদের শহর নিয়ে আমার গ্রামই আমার ভালো।
কিন্তু কে জানতো সেই শহরেই একদিন ওর আবাস গড়তে হবে। মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। কখন কার সাথে কি হবে তা শুধু উপরওয়ালা জানে। মানুষের যদি সব জানার ক্ষমতা তাহলে যে সে কি করতো.?
রাদিয়ার চিন্তার জাল ভেদ করে দরজায় টোকা পড়ে। রাদিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আটটা বেজে গেছে। কখন যে এতো সকাল হয়ে গেছে ওর খেয়ালই ছিলোনা ভাবনার মাঝে এতো বেশি ডুবে ছিলো।
বুশরা এখনো উঠেনি। রাদিয়া মাথার ওড়না ঠিক করে দরজা খুলে দিলো।
ইফতি হাসি মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রাদিয়া অবাক হয়ে যায় এই মেয়ে সবসময় এতো হাসি পাই কোথায়। আগেও দেখেছে ওর মুখে হাসি লেগেই থাকে সারাক্ষণ। অবশ্য হাসলে ওকে খুব সুন্দর লাগে।
রাদিয়া আগ বাড়িয়ে সালাম দিলো।
ইফতি জবাব দিয়ে নিজেও সালাম দিলো।
রাদিয়া বললো,,, ভেতরে আসেন ভাবি।
-ইফতি ঠোটের কোণে হাসি রেখে বললো,, সম্পর্কের দিক দিয়ে আমি আপনার ছোট হবো ভাবি। তাই নাম ধরে তুমি করে ডাকবেন।
-সম্পর্কের দিক দিয়ে ছোট হলে কি হবে বয়সে তো ঠিক বড় হবেন।
-বাব্বাহ এতো কথা বলতে পারবোনারে বোন। দুজনেই দুজনকে নাম ধরে ডাকবো হলোতো!!
-রাদিয়া হেসে সম্মতি জানায়।
-ঘুম কেমন হলো?
-আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো ঘুম হয়েছে।
-এতোক্ষন ঘুমে ছিলে নাকি?
-না অনেক আগেই উঠেছি
-ও আচ্ছা। চলো আম্মা তোমাকে নাস্তা করতে ডাকছে উনি বসে আছে।
-এখনো কেউ নাস্তা করেনি?
-না আব্বা,, শাফী ভাইয়া আর আপনার ভাইয়া নাস্তা আরো আগে করেছে।
রাদিয়া বুশরাকে ভালো করে কাঁথা দিয়ে ডেকে দিয়ে ইফতির সাথে বেরিয়ে গেলো।
শাফীর রুমের পাশ দিয়ে যেতেই না চাইতেও সেদিকে নজর চলে গেলো রাদিয়ার। শাফী বালিশে হেলান দিয়ে বসে বই পড়ায় মগ্ন। রাদিয়া পরক্ষণে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে হেটে চলে গেলো।
নাস্তা করা অবস্থায় বুশরার কান্না আওয়াজ পায় রাদিয়া। উঠে যেতে নিলেই সালেহা বললো,,, আরে আগে নাস্তা করে যাও। পাশের রুমে শাফী আছে ও দেখবে।
শেষে রাদিয়া নাস্তা শেষ করে রুমের দিকে গেলো। শাফী বুশরাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসছে রাদিয়া ভিতরে ঢুকতে গিয়ে দুজন দুজনের সাথে বাড়ি খেলো।
রাদিয়া লজ্জা পেয়ে সরি বলে একপাশে সরে দাঁড়ালো। শাফী কিছু না বলে রাগী চোখে একবার তাকিয়ে বুশরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
বিছানা ঠিক করে গুছিয়ে রাদিয়া বুশরার রাতের নষ্ট করা কাপড়গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো পরিস্কার করতে।
বারান্দায় যখন কাপড়গুলো মেলছিলো তখনি শুনতে পায় শাফী ওর মাকে ডেকে বলছে,, মা বুশরার খাবার রেডি করে দাও। ওর ক্ষিধে পেয়েছে।
রাদিয়া তাড়াহুড়ো করে কাপড়গুলো মেলে দিয়ে কিচেনে গেলো। ইফতির হাত থেকে সুজির বয়ামটা হাতে নিয়ে বললো,, ভাবি আমাকে দিন আমি রান্না করছি।
-আবার ভাবি!!
-মনে থাকেনা বলে রাদিয়া সুজি রান্না করায় মনোযোগ দিলো। হালকা মিষ্টি দিয়ে পাতলা করে রান্না করা সুজিটা ঠান্ডা করে রাদিয়া বুশরার পিটারে ভরে নিলো।
সালেহা বেগম বাসায় নাই বোধহয় ছাদে গেছে। রাদিয়া এবার কি করে বুশরাকে শাফীর কাছ থেকে নিবে। শাফীতো বুশরাকে নিয়ে রুমে। এদিকে ইফতিও শাফীর সামনে যায়না। এখন কি করা যায়? রাদিয়া পড়লো বিপদে। ডাইনিংয়ে বসে কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে উঠে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে খুব আস্তে করে বুশরাকে ডাকলো।এমনভাবে ডাকছে ওর নিজের আওয়াজ নিজের কানে আসছিলোনা। রাদিয়া দরজা থেকেই রুমে উঁকি দিলো। রুমে কেউ নেই বোধহয় বারান্দায় আছে। ভেতরে ঢুকা ঠিক হবেনা উনি চাইনা উনার রুমে আমি প্রবেশ করি। দরজায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো তখনি শাফী রুমে আসলো। রাদিয়াকে দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে বললো,, কি দেখছো?.
রাদিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,,, না কিছুনা। বুশরার খাবার রেডি করেছি তাই ওকে নিতে এলাম।
-খাবার আমার কাছে দাও আমি খাইয়ে দিবো?
-না সমস্যা নাই আমার কাছে দিন।
-এতো কথা কেন বলছো? আমার কাছে দিতে বলেছি দাও।
অগত্যা রাদিয়া শাফীর হাতে পিটারটা দিয়ে চলে গেলো।
এভাবেই বেশ কয়দিন কেটে যাচ্ছিলো।যে যার মতো ব্যস্ত আছে। শাফীর সাথে কথা তো দূরে থাক সারাদিনে রাদিয়ার সাথে দেখা হয়না বললেই হয়। শাফী খেতে আসলে রাদিয়া খাবারটা দিয়েই সরে যায়। সেদিন যখন শাফী খেতে বসেছে রাদিয়া খাবারটা বেড়ে দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। শাফী খিটখিটে মেজাজ দেখিয়ে বললো,,, খেগে বসেছি আমি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কি আছে?
-রাদিয়া বললো,,আপনার যদি কিছু লাগে?
-আমার লাগলে আমি নিয়ে নিতে পারবো।এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে খাওয়া যায় নাকি।
রাদিয়া আস্তে করে সরে এলো। আসলে ও চায়নি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে । শাশুড়ী ওকে বলেছে যাই হোক না কেন এখন তো শাফী ওর স্বামী। তাই সব সংকোচ ভুলে ওর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করো। সেদিনের পর থেকে রাদিয়া ও আর যেচে কথা বলেনি, বা ওর সামনাসামনিও হয়নি কখনো।
বিয়ে করে এ বাড়ীতে আসার পরে আর বাবার বাড়ী যাওয়া হয়নি রাদিয়ার। খুব ইচ্ছে করছে বাবা মাকে দেখতে। কিন্তু কাউকে বলতেও পারছেনা। কাকে বলবে এ বাড়ীতে কারো সাথে রাদিয়া এখনো এতটা মিশতে পারেনি। কেমন যেন সংকোচবোধ কাজ করে। আর শাফী তো আছে নিজের মতো কাজের বাহিরে সময় কাটে ওর বুশরাকে নিয়ে। দায়বদ্ধতা থেকে হোক বা যেভাবে হোক ও যে একটা মেয়েকে এ বাড়ীতে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে এটা বোধহয় ও ভুলেই গেছে।
সালেহা রাদিয়াকে ডেকে বললো কি ব্যাপার বউমা,, বেয়াইন নাকি তোমাদের ও বাড়ি যেতে বলেছে কথাটা আমাকে জানাওনি কেনো?
-আসলে আন্টি..
-আবার আন্টি!! কতবার বলেছি আন্টি বাদ দিয়ে আম্মা ডাকবে।
-পুরনো অভ্যাস তো তাই
-পুরনো অভ্যাস বাদ দিয়ে যত তাড়াতাড়ি নতুন অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারবে ততই ভালো।
কবে যেতে চাও?
-মা বলেছে আপনার ছেলেকে সহ যেতে।
-তো যাবে।
-উনি কি যেতে রাজি হবে? আমার সাথে কথাই বলেনা।
-অবশ্যই রাজি হবে। আমি বলবো ওকে।
শাফী বুশরাকে নিয়ে খাটে বসে দুষ্টামি করছিলো। সালেহা শাফীর রুমে গিয়ে বললো,, তোর শাশুড়ি ফোন দিয়েছিলো।
-শাফী একবার তাকিয়ক আবারো বুশরার দিকে নজর দিলো।
-তোদেরকে ওই বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছে।
-আমি যাবোনা।
-কেন যাবিনা?
-আমার এখন ব্যস্ততা বেশি।
-বিয়ে হয়ে আসার পর রাদিয়ার একবারের জন্য ওই বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এভাবে হুট করে নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে কোথাও এভাবে এতদিন থাকলে খারাপ লাগেনা।
-তো ওকে যেতে বলো। আমি তো আর ওকে আটকে রাখিনি।
-বোকার মতো কথা কেন বলছিস? দিন দিন কি জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পেয়ে যাচ্ছে তোর? তুই এখন ওর স্বামী তোকে ছেড়ে ও কিভাবে যাবে? তোর শশুর শাশুড়ি কি ভাববে?
-মা তুমি ও জনো, উনারাও জানে এমনকি রাদিয়া ও জানে বিয়েটা আমি শুধু বুশরার দিকে চেয়ে করেছি। এর বাহিরে আমার সাথে বাড়াবাড়ি করোনা।
-শাফি এ বাড়িতে যা করছিস করছিস! আমি কিছু বলছিনা। কিন্তু তোর শশুর চলে যাবে দুদিন পরে যাওয়ার আগে একবার মেয়ে আর জামাইকে দেখতে চাইছে আবার কবে না কবে ফিরে। যাই ভেবে বিয়ে করিস না কেনো তোরা এখন স্বামী-স্ত্রী।
আমি উনাদের বলেছি তোরা বিকালে যাবি।
-মা আমি যাবোনা।
-শাফী বাড়াবাড়ি করিসনা। সবকিছুর একটা সীমা আছে।
-মা বাড়াবাড়ি আমি করছি?
-হুম করছিস। এতো জিদ ভালোনা। কেউ তোকে এতবেশি জোর করেনি বিয়েতে। তুই নিজেই তোর বউয়ের কথা রাখতে বিয়ে করেছিস। এখন এসব করার কোন মানে হয়না।
ঘরের কথা ঘরে রাখ। বেচারা চলে যাবে তার সামনে পারলে একটু ভালো থাকার নাটক করিস। মানুষটা শান্তি মনে দেশ ছেড়ে যেতে পারবে যে তার মেয়ে সুখে আছে শান্তিতে আছে।
আমি কথা বাড়াবোনা তোরা বিকালে যাবি কথা এটাই বলে উনি বেরিয়ে গেলো।
শাফী জোর দিয়ে বললো,,মা তোমাদের সব সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে কি শান্তি পাও বলোতো।
সালেহা বেরুতে গিয়ে খেয়াল করলো রাদিয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে।
রাদিয়ার হাত ধরে বললো,, কাঁদিস না মা দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। ও আসলে আফিয়ার মৃত্যুটা এখনো মেনে নিতে পারেনি। তুই সব গুছিয়ে নে। যত না না বলুক ও ঠিক যাবে।
দুপুরের পরে রাদিয়া রুমে শুয়ে ছিলো। যাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। উনাকে ছাড়া বাবার সামনে গেলে উনি খুব কষ্ট পাবে। উনারা জানে আমরা খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। কি দরকার ক্ষনিকের জন্য তাদের কষ্ট বাড়ানোর।
তখনি দরজায় টোকা পড়লো। রাদিয়া উঠে দরজায় খুলতে দেখলো শাফী দাঁড়িয়ে আছে। এখনো রেডি হওনি?
-না মানে আপনি….
-এতো নাটক করতে হবেনা। যাও রেডি হও তাড়াতাড়ি। দশ মিনিট সময়। আমাকে পেয়েছে সবাই যে যখন ইচ্ছা সেভাবে ঘুরাবে। আমার কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই এসব বলে বিড়বিড় করতে করতে ও চলে গেলো।
রাদিয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। যাক বাবা অবশেষে রাজি হয়েছে এই অনেক মনে মনে বলে রাদিয়া ঝটপট রেডি হয়ে নিলো। শাফী বুশটাকে নিয়ে আগে আগে গেলো আর রাদিয়া সবার থেকে বলে পরে বেরিয়ে আসলো।
সালেহা রাদয়াকে বলেছে তিনদিন দিনের বেশি থাকবেনা। বাড়ীতে তোমার অনেক কাজ বাকী এখনো।
রাদিয়া মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো।
ও বাড়ীতে যাওয়ার পরে শাফী বেশ স্বাভাবিক আচরণ করলো। অবশ্য না করার কোন কারণ নেই। ওর রেষারেষি তো।চলছে রাদিয়ার সাথে এরা তো সবাই নির্দোষ। বিয়ের পর থেকে শাফীর সাথে ওর শশুরের বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো এখনো তাই আছে।
রাদিয়া ও কাউকে বুঝতে দেয়নি ওদের মাঝের দুরত্বের কথা। আসার সময় ওর শাশুড়ি বারবার করে বলে দিয়েছে ঘরের কথা যেনো ঘরে থাকে। বাবার কথা শশুড়বাড়ি আর শশুর বাড়ির কথা যেনো বাবার বাড়ি না বলে। রাদিয়া সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করছে।
রাতে খাবার পরে শাফী ড্রয়িংরুমে বসে জাওয়াদ সাহেবের সাথে বসে গল্প করছে। রুমে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। আজ না চাইলেও রাদিয়ার সাথে একইরুমে ঘুমাতে হবে।
কিছুক্ষণ পর জাওয়াদ সাহেব বললো,, যাও বাবা ঘুমিয়ে পড়ো রাত অনেক হয়েছে।
শাফী কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা ওই রুমে যেতে ও ইচ্ছে করছেনা, না গেলে ও শশুর কি ভাববে।
অনেক ভাবনা চিন্তার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভিতর দিয়ে রুমের দিকে গেলো।
রাদিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শাফী চিন্তিত মুখে চেয়ারে বসে আছে। রাদিয়া ওর চিন্তার কারণটা বুঝতে পেরে বলে উঠলো,, আপনার চিন্তা করতে হবেনা। আপনি বুশরার সাথে ঘুমান আমি নিচে বিছানা করে নিবো।
-শাফী কিছু বলছেনা রাদিয়ার দিকে রেগে কটমট করে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকালো।
-রাদিয়া শাফীর রাগের কারণ বুঝতে পেরে বললো,,,আসলে আমি অন্য রুমেই ঘুমাতাম কিন্তু বাবা মা দেখলে কষ্ট পাবে।
তাই আজ কষ্ট করে এই রুমটাই ঘুমান। আমি আপনার ঘুমের কোন সমস্যা করবোনা।
আর আপনি কালই চলে যাবো। আমি চাইনা আমার জন্য আপনার কোন কষ্ট হোক।
-একদম ন্যাকামি করবেনা! এজন্যই আমি আসতে চাইনি।
-রাদিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,, আমি কি একবারো আপনাকে বলেছি নাকি আসতে জোর করেছি।
-তা করবে কেন আমার মা তো
শাফী আর কোন কথা বলে উঠে গিয়ে তোমার সাফাই গাইছে দিনরাত। যত্তসব!!! শাফী উঠে গিয়ে বুশরার পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাদিয়া ওই দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্লোরে সোফার ফোমগুলো বিছিয়ে ওখানেই শুয়ে পড়লো। সত্যি উনি যে বলেছে উনাকে বিয়ে করলে সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে আজ তার মাশুল দিচ্ছে হাড়ে হাড়ে। এভাবে এতো কঠিন ভাষায় কথা বলার কি কোন মানে হয়??
সত্যি কি জীবনটা কষ্টে কষ্টে কেটে যাবে????………
চলবে……….