অঙ্গীকার (১১তম পর্ব)

0
1833
অঙ্গীকার (১১তম পর্ব) লেখা – শারমিন মিশু রাত দশটার দিকে শাফী রুমে আসলো। আফিয়া শুয়ে আছে। তার পাশে বুশরাটাও মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মায়ের পাশে তার সন্তান তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে এটা পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্য। কিন্তু আর কয়দিন পরে এই বাচ্ছাটাকে তার সেরা আশ্রয়স্থলটা হারিয়ে ফেলবে এটা ভাবতেই শাফীর ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে গেলো।
আফিয়াকে চোখ খুলতে দেখে শাফী বললো,,, এখন কেমন আছো?? -হুমম,, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আফিয়া খাটে হেলান দিয়ে উঠে বসতে বসতে তাকালো শাফীর দিকে। এ কয়দিনে কেমন শুকিয়ে কেমন রোগা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে অসুখটা আফিয়ার না শাফীর। আফিয়াকে উঠতে দেখে শাফী বললো,, এইই,, আমি আসছি দাঁড়াও। আফিয়াকে ধরে বসিয়ে দিতে দিতে বললো,, আমাকে বললেই হতো বসবে তুমি। অসুস্থ শরীর নিয়ে একা একা উঠতে গেছো। -এ আর এমন কি অসুখ,, সামান্য মাথাব্যথা!! অবশ্য ব্যথাটা ভয়াবহ বলে একটু হাসল আফিয়া। -হুম তাইতো বলছি,, এইতো, এখন ঠিক আছে? -হুম। আচ্ছা অসুস্থ আমি নাকি আপনি? -কেন? -চেহারার কি অবস্থা খেয়াল করেছেন? আপনাদের সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে আমি আজই মারা যাচ্ছি। -শাফী একটু ধমকে বললো,,, চুপ করবে তুমি? যতসব আজবাজে কথা। -খাবার আনবো?? -পালিয়ে কেন বেড়াচ্ছেন আমার থেকে? -আমি এই কথা বলিনি। খাবার আনবো?? -আমার কথার উত্তর দিন? -কোথায় পালালাম? আমি তো সবার সামনেই আছি। -হাসপাতালে তিনদিন ছিলাম আপনাকে দেখিনি কেনো? -অন্য সবাইতো ছিলো সেখানে তাই। -অন্য সবাই আর আপনি এক? বুঝিতো আমি!! বাবা কতো করে বললো বাবার বাসায় যেতে আমি যাইনি। বলেছি এখানে থাকবো। কিন্তু কেন থাকবো এখানে আমি? কার জন্য? কালই আমি বাবার বাসায় চলে যাবো। -শাফী আফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,,, সরি ম্যাডাম দোষ করেছি ক্ষমা করুন। তারপরও ওই বাসায় যাওয়ার নাম মুখে আনবেন না। আপনাকে ছাড়া থাকা যে কত কষ্টের তা বুঝবেন কি করে? দুদিকে মুখ রেখে দুজন মানুষ নিরবে কেঁদে চলেছে। কেউ কাউকে বুঝতে দিচ্ছেনা কারো কষ্টের কথা। শাফীর হাতের বাঁধনে জড়িয়ে থেকে আফিয়া বললো,,, আপনার অনুমতি না নিয়ে আমি একটা কাজ করেছি। – শাফী কন্ঠটা কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো,,, কি করেছো? -আপনার দেয়া লাল শাড়ীটা রাদিয়াকে দিয়ে দিয়েছি। -কি বলো? শাড়ীটা না তোমার অনেক পছন্দের ছিলো? -হুম সেজন্যই দিলাম। মৃত্যুর আগে আগে প্রিয় জিনিস সেইভে রাখা আরকি!!! -শাফী চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো। -আপনারা না বললে ও আমি জেনে গেছি এ পৃথিবীতে আমার স্থায়িত্ব অল্প কয়দিনের। -শাফী অবাক হয়ে গেলো এই মেয়ের এতো শক্ত মনোবল দেখে। কত সহজ ভাবে না ও কথাটা বলছে। শাফী বললো,,,তোমার মতো স্বার্থপর মানুষ আমি দেখিনি বলে উঠে চলে গেলো। যেতে যেতে বলে,, আমাকে কষ্ট দিয়ে বেশ আনন্দ পাও না???? আফিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাসখানিক পরে আফিয়া মায়ের বাসায় গেলো। বাবার সাথে একদম সময় কাটানো হয়নি তাই। মুনিরা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। আচ্ছা মা,,, শুধু শুধু কাঁদছো কেন? ক্ষিধে পেয়েছে। অনেকদিন তোমার হাতের ঝাল মাংসটা খাওয়া হয়নি। আর শুনো ঝালটা একটু বাড়িয়ে দিয়ো বলেই হেসে দিলো। আমি কিন্তু কয়দিন থাকবো এখানে। -মুনিরা মনে মনে বললো,,, সাধ্য থাকলে সারাজীবন তোকে আমার কাছে রেখে দিতাম। কিন্তু উপরওয়ালা তা চায়না রে মা। বাবার সাথে গল্প করে এসেও দেখে মুনিরা কাঁদতেছে। আচ্ছা মা তুমি কি বলোতো? এতো কান্নাকাটির কি আছে? আমি কি আজই মারা যাচ্ছি নাকি? আসার পর থেকে কেঁদে যাচ্ছে একটু খুশি মনে কথা বললে কও হয়। -আমার বুক ফেটে যায়রে মা। যতই বলি কাঁদবোনা এই মন তো আর মানেনা। কি করবো বলবি আমায়?? – যা কেঁদেছো কেঁদেছো। আজই শেষবারের মতো কাঁদবে। এরপর আর কখনো আমার জন্য কাঁদতে পারবেনা। আর শুনো আমি যেদিন মারা যাবো সেদিন তোমরা কেউ চিৎকার চেঁচামেচি করে কাঁদবেনা বলে দিলাম এটা আমার আদেশ বলতে পারো। এতে যেমন তোমাদের পাপের বোঝা বাড়বে তেমনি আমার ও শাস্তি বাড়বে। জানো মা,,,হাদীসে কি বলেছে, মাতমকারিনী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে কিয়ামত দিবসে তাকে আলজকাতরার পাজামা ও খোস-পাঁচড়াযুক্ত বর্ম পরিহিত অবস্থায় তোলা হবে। আমি কিন্তু তোমাদের ওই অবস্থায় দেখতে চাইনা। কারো মৃত্যুতে আহাজারি করে,, চিৎকার করে কাঁদা মহা অন্যায়। আমার জন্য দোয়া করো মা। কেউই এই পৃথিবীতে অমর নয় মৃত্যু তো আসবেই। এটা নিয়ে এতো কেনো কান্নাকাটি। আমি জানি তোমাদের কষ্ট হচ্ছে আমার ও তো হচ্ছে কই আমিতো কাঁদছিনা। আমাকে দেখো আমি একদম ফিট আছি। যতদিন আছি তোমাদের সাথে হাসিখুশি ভাবে কাটাতে চায় মা। আমি একটু ভালো থাকতে চায় মা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছুটা সংকোচ নিয়ে আফিয়া বললো ,,, একটা কথা বলবো মা? -কি কথা? -আমি চলে গেলে আমার বুশরাটা তো বড্ড একা হয়ে যাবে। পারলে রাদি কে বলো ওর মায়ের দায়িত্বটা নিতে। আমার ওকে বলতে খারাপ লাগছে। ওর ওতো কোন স্বপ্ন আছে। ওকে কোনো জোর করবেনা। ও যদি নিজ ইচ্ছায় রাজি হয় তো হবে না হলে না? তোমাদের জামাই কিন্তু অনেক ভালো মানুষ সেটা তো তোমরা ভালো করে জানো। রাদি ভালো থাকবে উনার কাছে। -আমি চেষ্টা করবো মা তোর চাওয়াটা যেনো পূরণ করতে পারি। -চেষ্টা করো মা কিন্তু ও রাজি না হলে জোর করোনা।
কয়েকদিন পর রাতের বেলা শাফী বারান্দায় বসে আছে। আফিয়া পিছন থেকে বললো,,, চা খাবেন?? -নাহ‌!! -প্লিজ!!! খান না। অনেকদিন ধরে আপনাকে কোন কিছু রান্না করে খাওয়াতে পারিনা। রান্নাঘরে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। সবাই যেনো আমার মৃত্যুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বসে আছে। আচ্ছা এভাবে কি থাকা যায় বলেন??? আমি মরে যাবো বলে সবাই আমাকে এখনি সংসার থেকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছে। -আফিয়া!!! শাফী ঝাপসা হয়ে আসা চোখগুলো কৌশলপ মুছে নিলো। আজকাল ও আফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেনা। বড্ড ভয় হয়!! হারানোর ভয়!!! মৃত্যু আসবেই যে কোন দিন এটা মানতে কেনো এতো কষ্ট??? -আফিয়াকে বারান্দায় থাকা চেয়ারটাতে বসিয়ে বললো,,, তুমি বসো আমি বানিয়ে আনছি চা। -এমন করছেন কেন? আমি বানিয়ে দিই না। আর কখনো হয়তো আপনাকে চা করে খাওয়ানোর সৌভাগ্য হবেনা আমার এ বলে আফিয়া চা বানাতে উঠে গেলো। -এ কথাতে শাফী থেমে গেলো। আচ্ছা এই মেয়েটার কি মিনিটে মিনিটে মৃত্যুর কথা স্মরণ না করিয়ে দিলে হয়না। নাকি এ কথা বলে আমায় আঘাত করে বেশ শান্তি পায়। এও বুঝতে পারেনা আমার কষ্ট হয়? চা খেতে খেতে আফিয়া বললো,,, যতই অসুস্থ হইনা কেন আমাকে কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে পচিয়ে পচিয়ে মারবেন না। হাসপাতালে গেলে সুস্থ্য মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যায়। চারিদিকে কেমন দুর্গন্ধ!! যতদিন থাকি আপনাদের মাঝে হাসিখুশি থেকে বিদায় নিতে চায়। -আচ্ছা কথায় কথায় কি চলে যাবে এ কথা না বললে তোমার হয়না? -আফিয়া জবাব না দিয়ে বললো,,, আমি মারা গেলে আপনি কিন্তু আবার বিয়ে করবেন। নিজের জন্য না হলেও বুশরার জন্য। আমি কিন্তু মেয়ে ও ঠিক করে ফেলেছি। মেয়ে কে জানেন?? আমাদের রাদি। বুশরার জন্য ও পারপেক্ট মা হবে। -ভালো করে জেনে নাও তোমার জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবোনা। তাই আর কখনো এ কথা মুখে আনবেনা। বিয়ে তো আমার একবার হয়েছেই আর দরকার নেই। -আমার জায়গা তাকে কেন দিবেন? তার জন্য নতুন করে জায়গা করে নিবেন। আমি জানি আপনি যা বলেন তাই করেন। কিন্তু আজ আপনাকে আমার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে আপনি আবার নতুন করে বিয়ের বন্ধনে জড়াবেন। সেটা রাদি হোক না অন্য কেউ!! -আমি পারবোনা!! -একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ আপনাকে একটা অনুরোধ করছে আর আপনি এভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছেন!!! -এবারে শাফী আফিয়াকে জড়িয়ে ধরে আটকে রাখা চোখের নদীর স্রোতটা ছেড়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,, তুমি আমায় এমন কোন অনুরোধ করোনা যা আমি পারবোনা। তোমার জায়গায় কাউকে বসানো কখনোই সম্ভব না। কি করে থাকবো তোমায় ছাড়া বলোতো? জীবনে একসাথে থাকার অঙ্গীকার করে আজ নিজেই তা ভঙ্গ করে আমায় ছেড়ে যাচ্ছো নতুন করে অঙ্গীকার নিচ্ছো। – আমি আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি কে বললো। আপনার থেকে বেশি না হলেও আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এখানে আপনার সাথে জীবন কাটাতে পারিনি তো কি হয়েছে!! জান্নাতে কিন্তু আপনাকে ই আমি আমার সঙ্গী হিসাবে আল্লাহর কাছে চেয়ে এসেছি। অপেক্ষা করবো চীর যৌবনের দেশ জান্নাতে আপনার সাথে জীবন কাটানোর জন্য। ওখান থেকে তো আর কেউ আলাদা করতে পারবেনা আমাদের। কিছুক্ষন চুপ থেকে আফিয়া আবারো বললো,,, এবারে কিন্তু আপনি ঠকবেন না। রাদি আপনাকে অনেক ভালো রাখবে। জানেন তো ও বদলে গেছে। আগের রাদি আর এখনকার রাদির মাঝে অনেক তফাৎ। ও ভীষণ ভালো মেয়ে নিজের বোন বলে বলছিনা। আপনার সাথে বেশ মানাবে। -চুপ করবে তুমি? -বুশরার কথাটা তো ভাববেন? -বুশরার জন্য তো আমি আছি আর কে লাগে? -একজন বাবা কি সন্তানের সব চাহিদা পূরণ করে সন্তানকে বড় করে তুলতে পারে? মায়ের অভাব কি বাবা কখনো পূরণ করতে পারে? রাদি কিন্তু অনেক ভালো মা হতে পারবে। বাচ্ছাদের সামলাতে হয় কিভাবে এটা ও আমার থেকেও ভালো জানে। -তুমি খুব স্বার্থপর!!! খুব!!! সবসময় নিজের স্বার্থের জন্য ভেবেছো আজও তাই করছো। -আফিয়ার গলা ধরে এলো,,,হুম আমি খুব স্বার্থপর। তাইতো নিজের সবচেয়ে পছন্দের প্রিয় জিনিসগুলোকে অবহেলায় নষ্ট হতে না দিয়ে যত্ন করে রাখার চেষ্টা করছি। কারো ভালোবাসা কেউ নিতে পারেনা। ভালোবাসা আপনা আপনি তৈরী হয়ে যায়। -আমি পারবোনা আফিয়া। তুমি আমায় রিকুয়েস্ট করোনা । এটা যে অসম্ভব?? -কোন কিছুই অসম্ভব নয়!! আমরা চাইলে সবই সম্ভব। আফিয়া কিন্তু কথার পিঠে শাফীর কাছ থেকে সেদিন রাতে কথা নিয়েই ছেড়েছে। শাফী খুব কঠিন হলেও আফিয়ার জন্য ও সব করতে পারে। আফিয়া চাইনা ওকে হারানোর যন্ত্রনায় মানুষটা ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাক। তাইতো ওর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের পাল্লায় পড়ে কথা দিতে সেদিন বাধ্য হয় শাফী। সেদিন রাতে ও প্রতিদিনের মতো শাফীর বাহুবন্ধনে জড়িয়ে আফিয়া ঘুমিয়েছিলো। মাঝরাতের দিকে ওর চাপা গোঙানির শব্দে শাফী জেগে গেলো। আফিয়া কেমন যেনো করছে। ওর চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে। কিছু বলতে চাচ্ছে ও কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছেনা। শাফী ভয় পেয়ে গেলো। আফিয়া গোঙানির শব্দে হাত বাড়িয়ে পানি চাইলো। -শাফী পানি এগিয়ে না দিতে আফিয়া হড়হড় করে সেদিনের মতো রক্ত বমি করে বিছানা সহ পুরো ফ্লোর ভাসিয়ে দিলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় শাফী পানির গ্লাস ফেলে ওকে জড়িয়ে ধরলো। কাউকে ডাকতে ও পারছেনা মনে হচ্ছে গলার স্বরটা কেউ চেপে ধরে রেখেছে। তারপর ও নিজের সর্বশক্তি দিয়ে মাকে ডাকলো। কিন্তু পরপর তিনবার বমি করার পরে আফিয়া পুরো নিস্তেজ হয়ে গেলো। না কোন গোঙানির শব্দ না চোখের পাতা নড়ছে। চোখগুলো খোলা আছে বুকের ডিপ ডিপ শব্দটা বন্ধ হয়ে গেছে। কান,, নাক আর মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে এখনো। শাফী হাত চেপে পালস চেক করলো। রেসপন্স করছে কি করছেনা ও নিজেও বুঝতে পারছেনা। একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেছে আফিয়া। আফিয়া যে আর নেই তা বুঝতে পেরে শাফী কালেমা পড়ে ওর খোলা চোখগুলো নিজের হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো। মাত্র কয়েক মিনিটের মাঝে সব শেষ হয়ে গেছে। আচমকা শাফীর এতো জোরে চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠলো। এতোরাতে কি হলো কাঁচাঘুম ভেঙে সবাই যে যার মতো ছুটে আসলো। শাফীকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেলো। শাফীর পুরো শরীর রক্তে রন্জিত। ওর কোলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে আফিয়ার দেহটা। বিছানায় শুয়ে থাকা বুশরার শরীরটাও রক্তে ভরা। সালেহা গিয়ে আফিয়ার মাথার পাশে বসলো। শাফীর কোলের উপর থেকে আফিয়ার মাথাটা নামিয়ে বালিশে রাখলো। গায়ে হাত দিয়ে দেখলো গরম আছে কিনা। কিন্তু না সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ক্বাফী দোড়ে গেলো গাড়ি বের করতে এখনি হসপিটালে নিতে হবে ক্বাফীর বউ ইফতি নার্সিংয়ে পড়ছে। ও এগিয়ে গিয়ে পালস চেক করলো। না সব শিরা উপশিরার রক্ত চলাচল থেমে গেছে। সাথে সাথে বললো,,, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে ইফতি বললো,,, আম্মা হাসপাতালে নিয়ে লাভ হবেনা। ভাবি আর নেই আম্মা বলেই ওর কথা আটকে গেলো। ইফতি আস্তে করে পরিস্কার চাদর দিয়ে আফিয়ার শরীর ডেকে দিলো। ঘুমিয়ে থাকা বুশরাকে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে শুইয়ে দিলো। ক্বাফী এসে দেখলো মা অজোরে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদছে। দরজার বাহিরে বসে ইফতি কাঁদছে। শাফী ফ্লোরে দুহাতে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে যে বাড়ীটা ছিলো আনন্দে পরিপূর্ণ এখন সেখানে চলছে শোকের মাতম। স্রষ্টার এ কোন কঠিন খেলা চলছে?? খবর পেয়ে আফিয়ার বাড়ির লোকেরা সেই রাতেই ছুটে এলো। মেয়েকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে না পাওয়ার শোকে মুনিরা মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। কে কাকে সামলাবে? সবাই তো শোকে বিহ্বল। ক্বাফী এগিয়ে এসে শাফীকে ফ্লোর থেকে তুলে রুমের বাহিরে নিয়ে গেলো। আফিয়া সবাইকে বারবার করে বলে গেছে ও মারা গেলে কেউ যেন শব্দ করে না কাঁদে। তারপর ও মনতো কারো মানা মানেনা। পরে রাদিয়া সবাইকে বললো,,, কি শুরু করেছেন আপনারা? আমার বোনটাকে কি কবরে শান্তিতে যেতে দিবেন না? কেউ কাঁদবেন না!! একদম কাঁদবেন না!! নিজের গুনাহ তো কামাচ্ছেন সাথে ওকেও তার ভাগিদার করছেন। সবাই ওর জন্য দোয়া পড়ুন। শাফী হতবিহ্বলের মতো পড়ে আছে। না কোনো কথা বলছে না কোনো চোখের পানি ঝরাচ্ছে। ও যেনো পাথর হয়ে গেছে। কথায় আছে,,, অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর। আজ ওর সেই অবস্থা। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রনা হয়তো সেই বুঝে যার কাছ থেকে তার সেই মানুষটা হারিয়ে যায়। এ যন্ত্রনা যে মুছবার নয়। মানুষটাকে যদি না রাখবে তবে এতো ভালোবাসা দেয়ার কি দরকার ছিলো? ভালোবাসা যদি দিবে তবে শোকটা কেন দিবে?? কেন এই মায়ার বাঁধন!!!! কেন এতো ভালোবাসা কেন এতো হারানোর যন্ত্রনা!!! কেনো এতো আহাজারি!!! এই সব মিথ্যে!!! সব মিথ্যে!! চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে