স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০১
##লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“তমা!তুই!”
“মামণি……”
“কেমন আছিস মা।আমাকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে চলে এলি।তমা তোর শরীরের এই কি হাল!চোখের নীচটা এত কালো!মা তুই ঠিক আছিসতো!কিছু হয়েছে তোর।চুপ করে থাকিস না।আমাকে কিছু খুলে না বললে আমি কি করে বুঝবো তোর কি হয়েছে।”
হঠাৎ করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হল।
“তমা!!”
.
.
“আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর গায়ে জ্বর আসছে।তাই হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছে।প্লিজ অযথা চিন্তা করবেন না।”
“আহাদ!কি বলছ তুমি।তুমি এই কথা কিভাবে বলছ!?তুমি কি চোখে কিছু দেখতে পাও না নাকি জেনেশুনে অন্ধ হওয়ার অভিনয় করছ?দেখেছ আমার মেয়েটার শরীরের কি হয়েছে।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে কতটা রাত ও ঠিকভাবে ঘুমায় না।জানি না কি হয়েছে ওর।কিসের এত চিন্তা ওর।”
“আন্টি আপনার নিজের শরীরের অবস্থাও বেশি ভালো না।তাই বলছি উত্তেজিত হবেন না।আমি আছি তো।আমি সব ঠিক করে দিবো। প্লিজ ভরশা রাখুন আমার উপর।এখন যান রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।আমি আছি ওর পাশে।”
“না বাবা,আমি ঠিক আছি।তুমি বরং বাসায় যাও।”
“দেখো আন্টি।আমার রাগ উঠিও না।চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতন রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো।অসুস্থ মানুষের যত্ন আমিও নিতে পারি।”
“আচ্ছা বাবা,যাচ্ছি। এত রাগ দেখাস কেন?”
.
.
তমার কপালে জলপট্টি দিচ্ছি।হঠাৎ ওর গলার দিকে চোখ পড়ল।গলায় অনেক বড় একটা দাগ।গলার দাগটা হাত দিয়ে ছুয়ে দিতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।বুঝায় যাচ্ছে কেউ খুব হিংস্রভাবে ওর গলায় আচড় টেনেছে।অজান্তে চোখের পানি চলে আসলো।ওর গলার সে দাগে চুমু দিয়ে দিলাম।কি হয়েছে ওর!ওর সাথে কি খারাপ কিছু হয়েছে যার জন্য ওর আজকে এই অবস্থা।কি ছিল আগে আর এখন কি হয়ে গেছে।ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছি।
.
.
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।ছেড়ে দাও।আমি আর ভুলেও কাউকে বিশ্বাস করে এখানে আসবো না।আমার ভুল হয়ে গেছে।প্লিজ ছেড়ে দাও।তিথি…. আমি এটা করতে পারবো নারে।ওকে মারতে পারবো না।মারতে পারবো না বলে ছটফট করতে লাগলো।ওর কথার আওয়াজ শুনে চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম।হঠাৎ ও জোরে চিৎকার করে উঠল।
“তমা কি হয়েছে?”
ও পাগলের মত নিজের সাথে নিজে কথা বলে যাচ্ছে। কোন হুশ নেই মেয়েটার।ওর কাছে এসে ওকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে আটকে রাখলাম।
“তমা রিলেক্স।কিচ্ছু হয়নি।তুমি শান্ত হও।”
“ওরা খুব খারাপ।অনেক ভয়ানক……”
“কারা?”
“ওরা….ওরা অনেক খারাপ লোক।খুব খারাপ।বলে কেঁদে উঠল।”
বুঝতে পারছি ওর সাথে খারাপ কিছু হয়েছে।কিন্তু কি হয়েছে তা বুঝতে পারছিলাম না।
“তিলোত্তমা কিচ্ছু হবে না।আমি জানি না তোমার সাথে কি হয়েছে? কেন তুমি এমন করছ।কিন্তু বিশ্বাস কর এরপর থেকে তোমার সাথে আমি আর খারাপ কিছু হতে দিবো না।আমি সব ঠিক করে দিবি।সবসময়ের জন্য আমি তোমার সাথে থাকবো। শান্ত হও।প্লিজ।” ওর চুলে আলতো করে বিলি কেটে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম।এছাড়া এই মূর্হুতে আমার আর কিছুই করার ছিল না।আস্তে আস্তে ও শান্ত হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর বুঝলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।ওকে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।
.
.
একঘণ্টা পর,,
“হ্যা দিপা বল?আচ্ছা আচ্ছা আমি আধাঘন্টা পর আসছি।”
রান্নাঘরে গিয়ে তমার প্রিয় খাবার নোডলস বানিয়ে আনলাম।তমা… তমা, মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ডাকছি।কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলে তাকাল।
“আপনি এখানে!?”
“হ্যা আন্টি কল দিয়ে জানালো তুমি নাকি অনেক অসুস্থ তাই তোমাকে দেখতে আসলাম।”
“ও…..”
“তমা কিছু খেয়ে নাও,ঔষুধ খেতে হবেনা?”
“কিছু লাগবে না।”
“তুমি অনেক অসুস্থ।না খেলে অসুখ সারবে কি করে।উঠ।”
“আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?”ওর কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তা বুঝতে পারছিলাম।
“একটা না অনেক প্রশ্ন করিও।কিন্তু এখন না।কারণ তুমি কথা বলার মতন অবস্থায় এখন নেই।এই নাও পানিটুকু আগে খাও।”
নিজ হাতে ওকে পানি খাইয়ে দিলাম।এরপর ওকে অনেকক্ষণ লাগিয়ে খাইয়ে দেওয়ার পর মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বললাম,”এবার রেস্ট নাও।আমি কালকে আবার আসবো।”
চলে আসতে গিয়ে হাতে টান অনুভব করলাম।তমা আমার হাত ধরে আছে।
“কিছু বলবে?”
“আমার প্রশ্নটা কিন্তু এখনো করা হয়নি।”
“তমা কালকে,এখন না।এখন রেস্ট নাও।”
আমি কি খুব খারাপ?”
.
.
ওর এই অদ্ভুত প্রশ্নে অনেকটা অবাক হলাম।হঠাৎ করে ও আমাকে এই প্রশ্ন করে বসবে আমি ভাবতেও পারে নি।চুপচাপ খাটে বসে পড়লাম।ওর হাত দুটি নিজের হাত দুটোর মুঠোয় আবদ্ধ করলাম।
“আচ্ছা তার আগে তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও।তুমি আজ পর্যন্ত কারোর ক্ষতি করেছ বা চেয়েছ?!
“না”
“কারোর মনে কষ্ট বা কেউ তোমার দ্বারা কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হোক এমন কিছু তুমি ইচ্ছে করে করেছ?”
“না”
“তাহলে?তাহলে তুমি খারাপ কি করে হলে?তুমি খারাপ না।তোমাকে এতটা বছর ধরে আমি দেখে আসছি কখনো আমি বা আমার পরিবার এই কথাটা ভুলেও ভাবি নেই যে তুমি খারাপ।হে যদিউউ আগে রাগটা একটু বেশি ছিল,অনেকটা বদমেজাজি আর রাগচটা ছিলে কিন্তু তুমি সবসময় সবার ভালো চেয়ে এসেছ।ওইসব বদঅভ্যাসগুলো বাদ দিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার চোখে তুমি এখনো আমার সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে আপনজন মনে হয়।তুমি কখনো খারাপ হতে পারো না তিলোত্তমা বুঝতে পেরেছ।এখন এইসব কথা বাদ দাও আর রেস্ট নাও। আসছি।”
.
.
সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।এখন কিছুটা ভালো লাগছে।একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি।বাগানে আসলাম।সকালের শিশিরভেজা ভেজার উপর হাঁটতে বেশ লাগছে।
“আরে তমা তুমি এত সকালে?”
“হ্যা একটু হাঁটতে আসলাম “এই বলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে উনি আমার হাত ধরে ফেললেন।
“আরে যাচ্ছ কোথায়?”
“বাসায়।”
“এখন থেকে সকাল সকাল হাঁটার অভ্যাস করে ফেলবে।এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বাসায় যেতে হবে না।আমার সাথে হাঁট।ভালো লাগবে।”
.
.
“আচ্ছা একটা কথা বলতো হঠাৎ রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে চলে আসলে।সব কিছু ঠিক আছেতো।”
বিরাশভরা কণ্ঠে জবাব দিলাম,” হ্যা সব ঠিক আছে।”
“Are u allright toma?”
“হ্যা”
“দেখো কেন জানি মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঠিক নেই।কোথাও কোন সমস্যা অবশ্যই আছে।আমি বলে কি তোমার আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নেই।তুমি এই বছর এইখানে ভর্তি পরীক্ষা দাও।মনোযোগ দিয়ে এইবছর আমার কাছে ভালোভাবে পড়।গতবছর এখানে টিকোনি বলে এইবছরও টিকবে না তেমনতো নয়।এইবছর ইনশাআল্লাহ অবশ্যই টিকে যাবে।এখানে তোমার আপনজনরা আছে।ওইখানে তো তাও নেই।তোমার ওইখানে থাকা নিয়ে আন্টি সারাদিন কি পরিমাণ চিন্তা করে তা বলে বুঝাতে পারবো না।এইখান থেকে সবকিছু নতুন করে আবার শুরু কর।”
“হ্যা নতুন করে আবার সব কিছু শুরু করব।আবার নতুন করে বাঁচবো।ওইখানের সব পুরাতন স্মৃতিগুলো একেবারের জন্য মুছে ফেলে এখানে চলে এসেছি।ওইখানে আর পড়ালেখা করবো না।আমার সব আপনজন এখানে।তাই এইবছর ভালো করে পড়বো যাতে এখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি টিকে যেতে পারি।এখান থেকে আর ভুলেও কোথাও যাব না।”
ওর কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে যাচ্ছি।এতসহজে আমার কথায় রাজি হয়ে যাওয়ার মতন মেয়ে তমা নয়। ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকার পর সেখানে পড়ার জন্য ও আগে রীতিমতন ওর মা আর আমার পরিবারের সাথে অনেক ঝগড়া করে অনেকদিন ধরে অভিমান করে ছিল।ঠিক মতন খেত না,কারোর সাথে ঠিকভাবে কথা বলতো না।পরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আন্টি পারমিশন দিয়েছিল ওত দূরে পড়তে দেওয়ার জন্য।ওর চোখে কি আনন্দটা নাই ছিল সেদিন।ওর বান্ধবীর বাসায় থেকে ও পড়াশুনা করতো। আন্টি, আমি মোবাইল করে ওকে এরপর কতই না বুঝাতাম ওইখান থেকে চলে আসার জন্য।কিন্তু ও তখনো ওর মতামতেই বদ্ধপরিকর ছিল।কিছুতেই সেখান থেকে সে আসবে না।সেখানে থেকেই ও পড়বে। আর সে তমাই আজকে বলছে সেখানে আর পড়বে না।এখানে থেকে পড়বে।তাও আবার আমার এক কথায় রাজী। বুঝতে পারলাম আসলেই কিছু ঠিক নেই।ও কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে।
চলবে,,,,