স্যার যখন স্বামী পার্ট_৩

0
5256

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

আলমারি থেকে বিষের বোতলটা নিলাম। বিয়ের কয়েকদিন আগে সাগরের সাথে দেখা করেছিলাম। সেদিন কথা বলের ছলে ও আমাকে ১টা বিষের বোতল দিয়েছিলো।

আমাকে এই বিষের বোতল দিচ্ছ কেন?

মেঘ তোমাকে আমি এখন যে বিষের বোতল দিলাম সেটা মাঝেমাঝে খুব কাজে লাগে।

মানে?এই জিনিস আবার কাজে লাগে?কেমন করে?(অবাক হয়ে)

সবাই ভাবে এই বিষ শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিতে জানে,কিন্তু একটু ভাল করে ভিতর থেকে ভাবলেই দেখবে এটা শুধু জীবন কেড়ে নেয় না,বিষাদ কষ্ট থেকে মুক্তি ও দেয়।

তাই নাকি?তা আমাকে এইটা দেওয়ার মানেটা কি?আমার মনেতো কোন কষ্ট নেই।কয়েকদিন পর তোমাকে আপন করে পাব,আমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে,,আমার মনে কোন কষ্ট নেই।

মানুষের ভাগ্য মূহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।কখন কি ঘটে তা তো আর বলা যায় না।রেখে দাও এটা।প্রয়োজনে কাজে লাগবে।

মাঝেমাঝে তুমি কি যে বল না,, কিছুই বুঝতে পারি না আমি।আমার এইসবের প্রয়োজন পড়বে না।

আররে…তারপরও রেখে দাও,,, দেখবে দেখবে এখন না লাগলেও সঠিক সময়ে এটা কাজ দিবে,,,রেখে দাও নিজের কাছে।

তখন সাগরের এই কথার মানেটা বুঝি নিই।কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি ও সেদিন কি বুঝাতে চেয়েছিলো।এরকম পরিস্থিতিতে সাগরের দেওয়া এই জিনিসটা আমার কাজে লাগবে সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।আজকে সত্যিই এই জিনিসটা আমার কাজে লাগবে।

___**___

দেখুন,, আপনারা যদি এরকমভাবে ভেঙ্গে পড়েন তাহলে মেঘের কি হবে? এই পরিস্থিতিতে ওকে সামাল দেওয়ার জন্য আগে আপনাদের শক্ত হতে হবে।প্লিজ আপনারা এরকমভাবে কাঁদবেন না।

বাবা কি করব তাহলে,,ওই ছেলেটাকে আমার মেয়েটা এত্ত ভালবাসলো আর সে ওর বিনিময়ে কি দিল ধোকা!! এত্তবড় প্রতারণা!! এরকম করার আগে একটাবার আমার মেয়েটার কথা ভাবলো না,,,ওই ছেলের কারণে লোকসমাজে আমাদের মাথা কাটা গেল।কি করে আমার মেয়েটাকে সান্তনা দিব। আমার মেয়েটা এইসব শুনলেই মারা যাবে।

প্লিজ এরকম করে বলবেন না আপনারা,, মেঘের কিছু হবে না,,আমার বিশ্বাস আপনারা ওকে সব বুঝিয়ে বললে ও ঠিকইই বুঝবে।একজনের পাপের শাস্তি আরেকজন পাবে সেটা আমি কিছুতেই হতে দিব না।(হঠাৎ মনে হল বাইরে লোকজনের এত সরগোল ভিতর পর্যন্ত যাওয়ার কথা।এত কান্নাকাটি চিল্লানির আওয়াজ মেঘ শুনে নি তা কেমন করে হয়?ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। এতক্ষণ ধরে এই পরিস্থিতিতে ও ঘরে বসে আছে!! ব্যাপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না।এবার বুকের মধ্যে কুহু ডাকা শুরু হয়ে গেছে ,,ও ঘরে থেকে নিজের কোন ক্ষতি করে বসে নিতো!!??)

মেঘের কয়েকজন আত্মীয় -স্বজনকে ডেকে বললাম ওর মা বাবাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য,আমার একটু কাজ আছে। এই কথা বলে,,,আমি মেঘের ঘরের দিকে দৌড় দিলাম।

মেঘ,,মেঘ,,,ঘরে একা একা কি করছ?দরজা খুল,, মেঘ,,শুনতে পাচ্ছ আমার কথা,,, দরজা খুল বলছি,,,দেখ এখন যদি তুমি দরজা না খুল তাহলে কিন্তু আমি দরজা ভাঙ্গতে বাধ্য হবে।এতকিছু বললাম,,জোরে জোরে চিল্লিয়ে ওকে ডাকছি কিন্তু ওর কোন সাড়াশব্দ নেই।তার মানে ও…. আর কিছুই ভাবতে পারছি না,,আমি ওকে কিছু হতে দিবো না,,জানালাটা খুলা ছিল সেখানে উকি দিয়ে দেখি ওর হাতে বিষের বোতল। একদৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে আছে।এই দৃশ্য দেখে ভয়ে আমার শরীর কেঁপে উঠল। তাড়াতাড়ি করে কয়েকজনকে ডেকে এনে দরজা ভাঙ্গতে শুরু করলাম।দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে ওর হাত থেকে বিষের বোতলটা কেড়ে নিলাম।

পাগল হয়ে গেছ কি করতে যাচ্ছিলে তুমি মেঘ??

বিষের বোতল দিয়ে কি করে মানুষ? আমি মরতে চাচ্ছি,, বেঁচে থাকার কোন অধিকার আমার নেই।

কে বলেছে তোমাকে এইসব? পাগলের মতন আবোলতাবোল কি বলে যাচ্ছ কতক্ষণ ধরে?

হ্যা আমি পাগল,,পাগলের মতন একজনকে ভালবেসেছি যার মূল্য আমিসহ আমার গোটা ফ্যামিলি পাচ্ছ।ওদের সামনে কি করে এইমুখ দেখাবো। দেন আমাকে বিষের বোতলটা দেন।এটা খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কি ঠিক হবে শুনি,,কি ঠিক হবে?কিচ্ছু ঠিক হবে না।তুমি যে কাজ করতে যাচ্ছ তুমি জানো তোমার ফ্যামিলি যদি জানতে পারে তাদের মেয়ে এমন একটা কাজ করতে যাচ্ছে তাহলে তারা কি পরিমাণ কষ্ট পাবে।বুঝতে পারছ আমার কথা (মেঘের কাধ ঝাঁকিয়ে)।কোন মা বাবা চায় না তাদের সন্তান কোন ভুল পদক্ষেপ নিয়ে নিজেকে কষ্ট দেক। সন্তানের কষ্ট মা বাবার কলিজায় গিয়ে লাগে। তোমার এই ভুলের মাশুল তোমার মা বাবাকে দিতে হবে। তুমি তো এটা খেয়ে মুক্তি পেয়ে যাবে কিন্তু তুমি ওদের কথা কি একবারও ভেবে দেখেছ যারা তোমাকে অনেক ভালবাসে,, তুমি ছাড়া ওদের কি হবে?তুমি ছাড়া ওদের আছেই বা কে।আর আমাকে বলতো এই বিষ খেলে কি ঠিক হবে,বল(ধমক দিয়ে),,
___

কথা বলছ না কেন? মান সম্মান বেঁচে যাবে,তোমার মা বাবার সামনে মুখ দেখাতে হবে না,, এই জন্য না? তাহলে তুমি এটা একা বসে খাচ্ছ কেন?একটা কাজ করি,, এই বিষের বোতল তোমার মা বাবাকেও দিয়ে আসি আমি।কি বল? তুমিসহ তোমার ফ্যামিলি এই কষ্ট অপমান থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।

আপনি পাগল হয়ে গেছেন কি বলছেন এইসব? আমারা মা বাবাকে আপনি এই মৃত্যুর জিনিস দিবেন!!আপনি মানুষ!!

ও নিজের বেলায় তো ভালো বুঝ। সেল্ফিস মেয়ে একটা।নিজেকে মুক্তি দিবে, মা বাবাকে দিবে না।এই মেয়ে তোমার সাথে সাথে তারাও অনেক কষ্ট পেয়েছে কয় তারাতো ভুলেও এই কাজ করে নি।তুমি এই কাজ করে নিজেকে মুক্তি দিচ্ছ না,একসাথে দুইটা ভুল কাজ করছ। নিজেকে নিজে শেষ করে পাপ করছ যার ক্ষমা আল্লাহর দরবারে নেই আর নিজের মা বাবার কলিজায় আঘাত দিতে যাচ্ছ ।তুমি এই যুগের শিক্ষিত মেয়ে,, কোথায় এইসময়ে নিজের মা বাবাকে গিয়ে সান্তনা দিবে,মা বাবাকে বুঝাবে কিচ্ছু হয় নি,তোমরা শান্ত হও,, তা না ওনি ঘরে বসে নিজের মুক্তির পথ বেছে নিয়েছেন। সেল্ফিস কোথাকার।

আপনি আমাকে সেল্ফিস বললেন!!(কেঁদেকেঁদে)

হ্যা বলেছি।তুমি একটা সেল্ফিস মেয়ে।

আমি সেল্ফিস না।আমি ভেবেছিলাম এই পদ বেছে নিলে সবঠিক হয়ে যাবে।আসলে মাথা ঠিক ছিল না।কি করব না করব মাথায় কাজ করছিল না।ওদের সামনে কেমন করে দাঁড়াবো বলতে পারেন?

কেন দাঁড়াতে পারবে না? কি করছ তুমি। কিচ্ছু করনি। তুমি একজন ভুল মানুষকে ভালবেসেছ যে তোমাকে ধোকা দিয়ে চলে গেছে।ওর পাপের শাস্তি ও পাবে।তুৃমি এইকাজ করলে ওই শয়তানটা জিতে যেত আর তুমি কোন পাপ না করেই হেরে যেতে। দেখ যা হবার তা হয়ে গেছে এইসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না।(মেঘকে আরও নিজের কাছে টেনে) মেঘ নিজেকে সামলাও। আমি আছি কি করতে? আমি সবকিছু ঠিক করে দিব। প্লিজ এইসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না,,মেঘের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে। মেঘ,,চল নিচে চল,,তোমার মা বাবার এখন তোমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে