স্যার যখন স্বামী পার্ট_২০

0
4213

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

সকালেই উনি আমাকে বলে রেখেছেন আমি আজকে যাতে তাসপিয়ার সাথে বাসায় চলে যায়। এখন সকালের কথাটা উনি আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন।সাবধানে বাসায় যেও উনার কথা শুনে মনে হল উনি আমার অনেক কেয়ার করেন।হ্যা কেয়ারতো অনেক করেন সেটা সত্যি কিন্তু কোনদিনও আমাকে ভালবাসেন নি।আমাকে যদি কোনদিনও ভালবাসতো তাহলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রায়ি দেখা করতেন না। হাত ধরাধরি করে কথা বলতেন না।কালকে উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলেছিলেন।আজকে প্রিয়া ম্যাডাম আর উনার একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা ছিলো।সেটা আমি জানতাম।তাই কালকে রাতে আমিও সাগরকে কল করে জানিয়ে দিয়েছি সেই রেস্টুরেন্টে চলে আসতে।
.
.
উনাদের আসার আগেই আমি আর সাগর সেই রেস্টুরেন্টে উপস্থিত।আমাকে দেখা মাত্রাই সাগর আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“সাগর প্লিজ ছাড়ো আমাকে।আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন আমি এখন অন্য কারোর স্ত্রী।”
“দেখো মেঘ আমার একটা ভুলের কারণে তুমি তোমার স্যারকে বিয়ে করেছো তার মানে এই নয় যে তুমি উনাকে ভালবাসো।তুমি তো আমাকে আগে ভালবাসতে আর এখনো আমাকে ভালবাসো।আমি সেটা জানি।”
“আপনাকে এইসব কথা কে বলেছে।কি আজগুবি কথা বলছেন।আমি আপনাকে আর ভালবাসি না।আমি এখন আমার স্বামী তন্ময়কে ভালবাসি।
“বাহ আগে তুমি করে ডাকতে আর এখন আপনি!”
“কারণ “তুমি” করে ডাকার অধিকার অনেক আগে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন”
“মেঘ প্লিজ আমি আর কোন কষ্ট নিতে পারছিনা।তোমার থেকে আপনি ডাকটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে।আমি তোমাকে ভালবাসি মেঘ। কেন সেটা বুঝতে পারছো না তুমি।”
“কিসের ভালবাসা!ভালবাসা কথাটা তোমার মুখে শোভা পায়না।তোমাকে আমি আগে ভালবাসতাম। শুধু আমি ভালবাসতাম…… তুমি না।তুমি আমাকে না কাল ভালবেসেছ না আজকে।শুধু নিজের ইগো, স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমাকে ব্যবহার করেছ আর এখনি ঠিক একি কাজ করছ।তোমার নিজ স্বার্থের জন্য আমাকে ভালবাসার মিথ্যা বাণী শুনাচ্ছ।তোমার মতন ছেলেরা কখনো কোন মেয়েকে ভালবাসতে জানো না শুধু একটা মেয়ের মন আর স্বপ্নকে নিয়ে খেলতে ভালবাসে।”
.
.
“মেঘ আমি আর আগের মতন নেই।আমি এখন ভাল হয়ে গেছি।মেঘ তোমাকে কষ্ট দেওয়ার পর আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলাম।কারণ আমি যা করতে চেয়েছিলাম তা পেরেছি।অবশ্য এর জন্য আমাকে বিয়ের আগেই পালিয়ে যেতে হয়েছিলো।কিন্তু আমার কাছে সেটা বড় ব্যাপার ছিলোনা।তোমাকে কষ্ট আর যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে ফেলা আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।এরপর আমি যে এলাকায় যাই সেখানের এক অপরুপ সুন্দরি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাই। ওকে ভালবেসেও ফেলি।নিজের সব ইগোকে পিছনে ফেলে ওকে প্রপোজ করি।ও নিজেও তা একসেপ্ট করে।দিন দিন ওর প্রতি আমার ভালবাসা বাড়তে থাকে।কিন্তু একদিন আমার ভালবাসার মানুষটা আমাকে জানাই সে আমাকে ভালবাসে না। আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস করেছে।ও অন্য আরেকজনকে ভালবাসে।ওর কথা শুনে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলাম তা তোমাকে বুঝাতে পারবোনা।কত রাত যে কেঁদেছি তোমাকে বলতে পারবোনা।তখন তোমার সেই কথাগুলো বারবার মনে পড়ল। সত্যিইই কাউকে সত্যি ভালবাসলে যদি এর বিনিময়ে কষ্ট যন্ত্রণা পেতে হয় তা যে কতটা যন্ত্রণার তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝে।এরপর মনে হলো তোমার মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।আমি তোমাকে ভালবাসেনি সেটা সত্যি কিন্তু তুমিতো ভালবেসেছিলে।তাই আমি আবার তোমার কাছে ছুটে এসেছি।যে ভুল আমি একবার করেছি দ্বিতীয়বার তা করতে চাই না।আমাকে যে মেয়েটা অনেক ভালবাসতো তার কাছে আজকে আমি ছুটে এসেছি শুধু একটুকু ভালবাসার পরশ পাওয়ার জন্য।মেঘ আমার কাছে ফিরে আসো।বিশ্বাস করো তোমার ভালবাসার প্রকৃত মর্যাদা দিবো আমি।আর কষ্ট দিবো না তোমাকে আমি।সব ফেলে ফিরে আসো আমার কাছে প্লিজ।আমার এখন তোমাকে বড্ড প্রয়োজন।প্লিজ মেঘ, প্লিজ।”
আমার হাত ধরে কথাগুলো বলছিলো আর কাঁদছিলো।
.
.
“বাহ্ মেঘ বাহ্ এতদিন ধরে তাহলে এইসব চলছে।আজ নিজের চোখে এইসব না দেখলে জানতাম না।এইজন্য তো বলি তুমি আর আগের মতন নেই কেন?কেন আর আমার সাথে আগের মতন মিশোনা,কথা বলোনা।পুরানা প্রেমিক এসে গেছে এইজন্য না।এখন আর আমাকে দরকার নেই।”(তন্ময় স্যার)
…….
“এই ছেলেটা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে কষ্ট দিয়েছিলো, পুরো গ্রামের মানুষের সামনে তোমাকে আর তোমার পরিবারকে অপমান করিয়েছে আর আজকে তুমি আবার সেই ছেলেটার সাথে দেখা করতে আসছো।”(তন্ময় স্যার)
“দেখুন তন্ময় সাহেব আমি মানছি আমি যা করেছি….”(সাগর)
“you….just shut up.আমি আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলছি, আপনার সাথে না।আমাদের মাঝে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে।”(তন্ময় স্যার)
“কারণ আমি ওকে ভালবাসি।”(সাগর)
“ইউ……. আর একবার এই মুখ দিয়ে আমার মেঘকে ভালবাসি কথাটা বললে আমি তোকে মেরেই ফেলবো।কোথায় ছিলো তোর এই ভালবাসা যখন তোকে মেঘের পাশে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল,কোথায় ছিলো তোর সেই ভালবাসা যখন ওকে মরার জন্য বিশেষ গিফট বিষের বোতল দিয়েছিস।এতদিন ওকে কাঁদিয়ে এখন ভালবাসা দেখাতে এসেছিস।আমার সংসারে আগুন লাগাতে এসেছিস তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।”(তন্ময় স্যার)
“ওকে ছাড়ুন বলছি।মরে যাবে ও…..”
“ও এখন ওর প্রতি মায়া উতলে পড়ছে।অবশ্য পড়বে না কেন পুরানো প্রেমিক বলে কথা।আজকে আমি এর শেষ দেখেই নিবো। চলো আমার সাথে বাসায়……”(তন্ময় স্যার)
.
.
“কি করছিলে তুমি ওর সাথে।মেঘ বলো কি করছিলে ওইখানে…..”
…….
উনি এবার আমার গালে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারলেন।
“এতদিন তোমার জন্য যা যা করে এসেছি আজ তার এই মূল্য দিলে তুমি।ছিহ…..।সেদিন তুমি বলেছিলে তাসপিয়ার সাথে বাসায় যাবে।আমি তোমাকে যেতে দিয়েছি। আমাকে মিথ্যা কথা বলে তুমি সাব্বিরের সাথে পার্কে যাও।শুধু এই নয় মধ্য রাতে বারান্দায় গিয়ে কথা বলো।তুমি কি মনে করো এইসবের কিছুই আমি জানি না।এতদিন শুধু তোমার কাহিনী দেখছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম আর কতদূর তোমার এই নোংরামি চলে।আর আজকে সাগরকে রেস্টুরেন্টে দেখে বুঝতে পারলাম রাতে লুকিয়ে তুমি সাগরের সাথে কথা বলতে।কেন মেঘ তুমি কি আমাকে নিয়ে হ্যাপী থাকতে পারছো না।তোমাকে হ্যাপী করার জন্য কোন জিনিসের কমতি রেখেছিলাম আমি বলো….।তোমাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছি,পড়ালেখা করে ভালো কিছু করতে পারো, আমার বউও জীবনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে সেজন্য আমি নিজে তোমাকে পড়ালেখা করাচ্ছি।সবসময় তোমার বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার চেষ্টা করেছি।কোনদিনও তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে নি।তোমার ইচ্ছাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি।তোমার মা বাবা তোমাকে এতটা বছর আগলে ধরে তোমাকে নিরাপদে রেখেছে আমিও সে চেষ্টা করেছি।তাহলে!তাহলে কেন এমন করলে আমার সাথে।একজন না দুইজনের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছ। আমি এতটা বছর ধরে যে মেঘকে চিনে এসেছি তুমি সে মেঘ নও।আমার চিনা সে মেঘের সাথে আজ তোমার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না।তোমাকে বড্ড অচেনা লাগছে।অনেক বদলে গেছো তুমি… অনেক বদলে গেছো।”
“হ্যা আপনি ঠিক ধরেছেন আমি অনেক বদলে গেছি।পরিস্থিতি আমাকে বদলাতে সাহায্য করেছে।থ্যাংকস আপনি নিজ থেকে সব বুঝে গেছেন।আমার মতন মেয়েদের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।তাই এক কাজ করুন আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিন।” আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে দিলেন উনি।
“ডির্ভোসতো আমি তোমাকে কখনো দিবো না।বিয়ে করেছি তোমাকে, সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো বলে। তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি বিয়ে করেনি।এত সহজে আমার থেকে ডির্ভোস পাবে না।এত সহজে তোমাকে আমি মুক্তি দিবোনা।তোমার এই ধরণের অপরাধের জন্য আমি তোমাকে তিল তিল করে কষ্ট দিবো।তোমাকে কিভাবে ঠিক করতে হবে তা আমার জানা আছে।”
.
.
“দেখুন এইসব বাজে কথা রাখুন।যে আমাকে বিশ্বাস করে না,কোনকিছু না বুঝে শুনে অবিশ্বাস করে আমাকে অনেক বাজে কথা শুনাই তার সাথে আমি একমুহূর্তের জন্যও থাকতে রাজি না।আর আমিও জানি আপনি মনে মনে এই চান আমি এখান থেকে চলে যায় কারণ আমি না গেলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রেম কেমন করে করবেন তাকে বিয়ে কেমন করে করবেন।আমি চলেই গেলেই তো আপনার জন্য ভালো হয়।সুতরাং ভালোই ভালোই আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন।এতে আমার আপনার আমাদের জন্যই মঙ্গল হবে।”
.
.
“আর আরেকটা বাজে কথা বললে তোমাকে মেরেই ফেলবো। একতো নিজে অপরাধ করো আবার আমার নামে কিসব আজে বাজে কথা বলছো।প্রিয়ার সাথে আমার কিসের রিলেশন। এইসব বাজে কথা তোমাকে কে বলছে।আর ডির্ভোসের কথা আরেকবার বললে নিজের হাতে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।”
……….
“তোমাকে আজকে এই ঘরে আটকে রাখবো। একদিন এইভাবে আটকে রাখলে তারপর তোমার মাথার তার কাজ করবে।আর ডির্ভোসের পাগলামিও মাথা থেকে সরে যাবে।”
.
.
এরপর সেদিন রাতে ওনি আমাকে একটা রুমে আটকে রাখলেন।খুব ভয় করছিলো।আর এরপরি কারেন্ট চলে গেলো।অন্ধকারে তো এমনিতেই ভয় পাই,তারউপর আবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ভূত এসে গেল। মনে মনে এইসব ভাবার কারণে আর ভয় পাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

এরপরে রাতে দেখি উনি আমার মাথার পাশে বসে আছেন।চোখ দুটি লাল হয়ে আছে।
“মেঘ কি হয়েছিলো তোমার?কত ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাকে!”
“আপনার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা নাই।কিভাবে আপনি ওই রুমে আমাকে আটকে রাখলেন।আপনার জন্যই আমার এই অবস্থা।”
“আমার জন্য…”
“হ্যা আপনার জন্য। আর প্লিজ এখন আর কোন প্রশ্ন করবেন না আমার মাথা ব্যাথা করছে ঘুমাবো।”
উনার সাথে এইভাবে কথা বলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।কিন্তু কিছুই করার নেই।উনি এতদিন আমার উপকার করেছেন তাই উনার ভালোর জন্য যা যা করা লাগবে আমি করবো।
সকালে উনার জন্য একটা চিঠি রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।মা বাবা এখন সেখানেই থাকেন।বাড়িতে এসে পা রাখতে না রাখতেই মা বাবা কতবার যে উনার নাম নিলো তা বলে বুঝাতে পারবো না।এখন ওদেরকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।সময় হলে সব বলে দিবো।সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত ছিলাম।কিছু খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।সকালের দিকে ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিল আমি উনার বুকেই শুয়ে আছি।চোখ খুলে দেখি উনি…..! এটা কি করে সম্ভব। উনি এখানে কেন?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে