শেষ বিকেলের আলো পর্ব-০৭

0
866

#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৭
#লেখক_দিগন্ত
~~বৈশাখী রেইন রহস্য(৩)
বৈশাখী রেইনকে তো বাচিয়ে নেয় কিন্তু নিজের জীবনে ডেকে আনে অনেক বড় বিপদ। রেইনকে বাঁচানোর জন্য রাজার আদেশ অমান্য করে একজন মেয়ে হয়ে সে এতগুলো লোকের সামনে মিলনায়তনে এসেছে। এখন এই কারণে যে তার কি হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে খুব ভালো ভাবে।

মহারাজ লিন ক্ষিপ্ত হয় বৈশাখীর উপর। মন্ত্রী জিয়ান ভয়ে কাপতে থাকে তার মেয়ের পরিণতির কথা ভেবে। এতকিছুর মধ্যে সম্পূর্ণ নিরব হয়ে আছে রেইন। তার চোখ বৈশাখীতেই সীমাবদ্ধ। বৈশাখী অবশ্য আলাদা। তার চোখে মুখে অপরাধবোধ স্পষ্ট। কিন্তু সেই বা কি করত? রেইনকে বিপদ থেকে রক্ষার জন্যই তো এতকিছু করছে।

রাজা লিন সেনাদের আদেশ দেয়,
-“এই মেয়েটাকে এক্ষুনি এখান থেকে বাইরে নিয়ে যাও। আমার আদেশ অমান্য করার স্পর্ধা দেখিয়েছে এই মেয়েটা। ওকে নিজের অপকর্মের শাস্তি পেতেই হবে।”

বৈশাখী নিশ্চুপ ছিল। এখানে কি হচ্ছে তা নিয়ে বৈশাখীর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। বৈশাখী অন্য কোন ভাবনায় মত্ত। মন্ত্রী জিয়ান এগিয়ে এসে বৈশাখীর হয়ে কিছু বলার আগেই রাজা লিন তাকে থামিয়ে দেয়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন,
-“যা বিচার হবার তা কাল হবে। এর আগে আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।”

সেনারা বৈশাখীকে ধরে বাইরে নিয়ে যায়। রেইনও যায় পেছন পেছন। রেইন এসে বৈশাখীকে ধমক দিয়ে বলে,
-“তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য কেন নিজের জীবনের এত বড় ঝুঁকি নিলে? এখন কি হতে পারে ভেবে দেখেছ?”

বৈশাখী হাসে। তার এই হাসির কারণ রেইন বুঝতে পারেনা। বৈশাখী এবার মাথাটা রেইনের কানের কাছে নিয়ে এসে বলে,
-“আপনাকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিতেও দুইবার ভাবব না।”

রেইন অবাক হয় বৈশাখীর কথা শুনে। বৈশাখী আকাশের দিকে তাকায়। ভাবতে থাকে রেইন তখন সরোবরের সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর কি হয়েছিল বৈশাখীর সাথে।

রেইন বৈশাখীকে এভাবে কোন ভাবনায় মশগুল দেখে বিরক্ত হয়। রেইন বৈশাখীর হাতের দিকে ক্ষত লক্ষ্য করে। রেইন আচমকা বৈশাখীকে নিজের কাছে টেনে নেয়। এরপর বৈশাখীর হাতের ক্ষতর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমাকে বাঁচানোর জন্যই মনে হয় এমন হয়েছে। তোমার ব্যাথা হচ্ছে না।”

-“একেবারেই না।”

কথাটা বলে বৈশাখী চলে যায়। রেইন অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, মেয়েটা এত অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছে।
______
বিচার সভায় উপস্থিত ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবাই। হৃদি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে বৈশাখীর দিকে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের নিয়ম অনুসারে কেউ কোন অন্যায় করলে তার মা-বাবাকেও কৈফিয়ত দিতে হয়।

এদিকে রাণী ফুলও রেগে আছে বৈশাখীর উপর। তিনি ফরেস্টের মা, আর রেইনের সৎমা। গতকাল তিনি পরিকল্পনা করে রেইনকে মা*রার চেষ্টা করেছিলেন। আর শুধুমাত্র বৈশাখীর জন্য তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি পারছেন না তো বৈশাখীকে এখনই মে*রে ফেলতে।

রাজা লিন এসে উপস্থিত হন। তিনি বিচারকার্য শুরু করেন। সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈশাখীকে এক সপ্তাহ কারাগারে থাকা হবে। শাস্তির কথা শুনে জিয়ানের চোখে জল চলে আসে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কারাগারে পুরুষ-মহিলা সবার উপর অকথ্য অত্যাচার হয়। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কারাগারে যারাই যায় নরকযন্ত্রণার শিকার হয়। যেখানে একদিন থাকাই কষ্টকর সেখানে ৭ দিন।

জিয়ান কিছু বলতে গেলে হৃদি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-“পরের মেয়ের জন্য এত দরদ দেখানো লাগবে না। তুমি চুপ থাকো তো ভালো হবে।”

জিয়ান আর কিছু বলেন না। হেলেনা, সুজি ওরাও ছিল এখানে। বৈশাখীর শাস্তির কথা শুনে সুজি কেঁদে দেয়। হেলেনারও খারাপ লাগে বৈশাখীর জন্য।

সৈনিকরা বৈশাখীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সুজি সামনে আসে। বৈশাখীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আর বলে,
-“তোকে কতবার বলেছি সাবধানে থাকতে। আমার কোন কথাই তুই শুনিস না। এখন দেখলি তো কি হলো।”

হেলেনা রাগ দেখিয়ে বলে,
-“তোর জন্য এটাই ঠিক হয়েছে। সবসময় অকাজ করে বেড়ানোতে এমনই হতে হতো একসময়। এখন তো আমারও কান্না পাচ্ছে তোর জন্য।”

সবাই এতকিছু বলছে বৈশাখীর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সুজিকে আশ্বস্ত করে সে বলে,
-“আমার কিছু হবে না আপু। তুমি আমার জন্য ফলের রস তৈরি রেখো ফিরে এসে খাবো।”

বৈশাখীকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়না। টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। দূর থেকে জিয়ান অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে। হৃদি হাসে, তৃপ্তির হাসি। অন্যদিকে ফুল আঁটছে অন্য পরিকল্পনা, যে করেই হোক তাকে রেইন নামক পথের কাঁ*টা দূর করতে হবে। যতই ফরেস্ট রাজ্যের যুবরাজ হোক না কেন তাতে তিনি ভরসা পাচ্ছেন না।

রাজ্যের অনেকেই আছে যারা রেইনকে ভবিষ্যতের রাজা হিসেবে দেখতে চায়৷ এক্ষেত্রে রেইন যদি কোন সময় হঠাৎ করে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তাহলে ফরেস্টকে রাজার আসনে দেখার ফুলের ইচ্ছে কোনদিন পূরণ হবে না। তাই ফুল এখন যেকোন মূল্যে রেইনকে সরাতে চায়।
~~~~
পেরিয়ে গেছে একটি দিন। কারাগারে এই একটি দিন বৈশাখীর জন্য এক হাজার দিনের সমান। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। গতকাল সারাদিন কিছু খেতে না দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিয়েছে। খালি পেটে পাথর টেনে নিয়ে আসতে হয়েছে। আজ সকালে যদিওবা খেতে দিয়েছে কিন্তু ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের নিয়ম অনুসারে আজ বৈশাখীকে ১০০ ঘা চাবুক মা/রা হবে। বৈশাখী সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে একজন লোক আসে৷ তার উদ্দ্যেশ্য বৈশাখীকে ১০০ বার বেত্রাঘাত করা। লোকটা বৈশাখীকে বেত্রাঘাত করতে শুরু করেন। ব্যাথায় আর্তনাদ করতে থাকে বৈশাখী। চোখ দিয়ে দুফোটা জল বেরিয়ে আসে। ৫০ টা বেত্রাঘাতেই বৈশাখী আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়।

রেইন তখনই কারাগারে চলে আসে। বৈশাখীর এই অবস্থা দেখে সে রেগে আগুন হয়ে যায়। সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে। রেইন রাজপুত্র তাই তার আদেশ মানতে সবাই বাধ্য হয়।

এদিকে বৈখাশী স্বপ্নে সেদিনের ঘটনা দেখছিল,
সেদিন সরোবর থেকে রেইন চলে যাওয়ার পর বৈশাখীকে যখন চলে যেতে ধরে তখন কেউ তার নাম ধরে ডাকে।

বৈশাখী পেছনে ফিরে রিনেইকে দেখে চমকে যায়। সে বলে,
-“আপনি।”

-“হ্যাঁ আমি। এসেছি তোমাকে কিছু কথা বলতে। তখন রেইন ছিল জন্য বলতে পারিনি। তোমার জীবনের কিছু গোপন রহস্য, আর ভবিষ্যতের খুব ভয়ংকর কিছু আজ জানাবো তোমায়।”

বৈশাখী জিজ্ঞাসা করে,
-“কি জানাবেন?”

-“তুমি কি জানো তুমি আসলে কোন ভ্যাম্পায়ার নও।”

বৈশাখী প্রচণ্ড অবাক হয়। বলে,
-“আমি ভ্যাম্পায়ার নই মানে? তাহলে কে আমি?”

-“তুমি একজন মানুষ। কোন সাধারণ মানুষও নও। তুমি এমন একজন মানুষ যার জন্মই হয়েছে শ*য়তানকে বি*নাশ করার জন্য। এই উদ্দ্যেশ্যেই তোমাকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। কারণ শ*য়তান তার প্রথম নিশানা করেছে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যকেই। তবে তুমি যে শুধু অশুভ শক্তির বিনাশ করতে পারো তাই নয়, তোমার মাঝে সেই শক্তিও রয়েছে যার মাধ্যমে তুমি অশুভ শক্তির সাথে মিশে যেতে পারো, অশুভ শক্তির পক্ষে কাজ করতে পারো।”

-“আমি করবোনা এমন কাজ কখনো।”

-“সেটা সময় বলবে। আগে আমার কথা মন দিয়ে শোন। আমার ছেলেটার অনেক বড় বিপদ ওকে বাঁচাও গিয়ে। ওর কিছু হয়ে গেলে শ*য়তান জিতে যাবে।”

-“মানে? উনি তো মিলনায়তনের ঐদিকে ওখানে আমি কিভাবে যাব।”

-“আমি যা বলছি তাই করো। যদি শয়তানকে হারাতে চাও তাহলে আমার কথা শুনে চলবে। এখন আর প্রশ্ন না করে যাও শীঘ্রই। আমি সঠিক সময়ে এসে তোমাকে পথ দেখিয়ে যাব। জানি সামনে তোমার অনেক খারাপ সময় আসবে কিন্তু তুমি ভেঙে পড়বে না। তোমাকে এখন থেকে শক্ত হতে হবে। আর এই মুক্তাটা নিজের সাথে রাখো। এটা কোন সাধারণ মুক্তা নয়। বিপদে পড়লে এই মুক্তার কাজ সম্পর্কে তুমি জানবে।”
____
জ্ঞান ফেরে বৈশাখীর। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে রেইনের কোলে আবিষ্কার করে। হঠাৎ করে মুক্তাটা জ্বলে ওঠে। বৈশাখী হাসে। মুক্তাটা থেকে আলো বের হয়ে আসে। এই আলো বৈশাখীর সব ব্যাথা, ক্ষত ঠিক করে দেয়। সময়কে এগিয়ে নিয়ে যায় এক সপ্তাহ। বৈশাখী এবং রেইন দুজনই চলে আসে এক সপ্তাহ ভবিষ্যতে!
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে