মায়ের কথা পর্ব-০৫

0
25

#মায়ের_কথা
পর্বঃ৫
#সাবাব_খান

পরদিন রাতে দেশে আসিফ ভাই খবর পাঠালো আমি ভয়াবহ এ’ক্সিডেন্ট করেছি। আমার মাথাটাই মেইনলি আ’ঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। একদম সিরিয়াসলি আ’ঘাতপ্রাপ্ত। মগজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এ জীবনে আর আমি মানসিকভাবে সুস্থ হবো না। আমার আব্বার মতই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকবো। আম্ম তো পা’গল হয়ে গেলেন। দেশে কান্নাকাটি পড়ে গেল। আসিফ ভাই আম্মাকে জানিয়েছে আমি শারীরিকভাবে একটু সুস্থ হলে আমাকে কোনোভাবে প্লেনে করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। আমি কখনোই মানসিক ভারসাম্য ফিরে পাবো না।

এ খবর দেশে পৌঁছানোর সাত দিনের মধ্যে পাল্টে গেল সব সমীকরণ। মামা,চাচা সবাই আম্মাকে বিভিন্ন কু’টূক্তি করতে লাগলো। ওরা এখন আর আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে না। আগে যেরকম আম্মার সাথে খা’রাপ ব্যবহার করত তার থেকে আরো বেশি খা’রাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। যেখানে দেশে খবর গেছে আমি অসুস্থ। আম্মার ছেলে অসুস্থ, কোথায় সবাই একটু ভালো ব্যবহার করবে! সেটা কেউ করে নি। উল্টো আম্মাকে বলেছে, ‘পুতেরে আমেরিকা পাঠায়া কয়েকদিন একদম দাঁত জ্বালায়া গেছিল। আল্লায় বিচার করছে!’

আরো কত কি! এমনও বলেছে, ‘ পা’গল-ছা’গলের সাথে যে মাইয়া বিয়া দিতে হয় না এইটাই অনেক। আল্লায় বাঁ’চাইছে।’

এমনকি যেদিন আমার অ্যা’ক্সিডেন্টের খবর দেশে গেছে সেদিন আম্মার শোকে আমাদের চুলোয় আ’গুন জ্বলেনি। কেউ আমাদের ঘরে একটু খাবারও দেয়নি। অথচ নানা বাড়ি,দাদা বাড়ি দুইটাই আমাদের পাশে।

ঘটনার ঠিক দশ দিন পরে আমি ফোন দিলাম আম্মাকে,’হ্যালো আম্মা!’

‘কিরে বাপ, তুই কথা কইতে পারোস?’

‘হ আম্মা, আমি কথা কইতে পারি।’
‘আমি তো মনে করছিলাম এ’ক্সিডেন্টে তুই একদম পা’গল হয়া গেছোস!’

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম, ‘আসলে আম্মা আমি কোনো এ’ক্সিডেন্টই করি নাই।’

‘কি কস তুই এইসব?’

‘আমি নাটক সাজাইছিলাম। আমার মামা,চাচাকে তোমার সাথে আবার পরিচয় করায়া দিতে চাইছিলাম। চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইতে চাইছিলাম ওরা কত খা’রাপ। কতটা স্বা’র্থপর!’

আম্মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ঠিকই কইছস বাপ! অরা অনেক স্বা’র্থপর।

‘তাইলে তুমি কেমনে এই স্বা’র্থপরের মাইয়া আমার জন্য আনতে চাইছো?’

আম্মা চুপ হয়ে গেলেন। আমি বললাম, ‘আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচাইছে! ওরা নিজেরাই সরে গেছে। মামা নাকি বলছে আমার কাছে আর মেয়ে বিয়ে দেবে না। এবার আর ওরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেই পারবে না।’

‘আমি আর আনমু না অগো কারো মাইয়া। তোর যারে পছন্দ হয় তারেই বিয়া করিস। তয় আমার একখান…

আম্মা কথা কমপ্লিট করতে পারেন নি। আমাদের এক প্রতিবেশী নাকি চলে এসেছে ঘরে। তবে আমি আম্মাকে ঠিকই বলে রেখেছিলাম, ‘তোমার বড় ভাইয়ের কাছে যাও। গিয়ে তোমার সম্পত্তি আদায় করে নিয়ে আসো। আমি এইটাই চাইছি বে’ঈমানদেরকে আমাদের কোনোকিছু খেতে দেবো না।’

সেদিন আমি ফোন রেখে দেই। আম্মা তার ভাইয়ের কাছে সম্পত্তির জন্য যায়। তখন আমার বড় মামা আমাকে জানায়, ‘তোর ছেলে সাবাব তো পুকুর বিক্রি কইরা এমেরিকা গেছে। তোরে সম্পত্তি দিলে ওইগুলাও সাবাব বিক্রি কইরা খাইবো। তোর পোলা তো কু’লাঙ্গার। এক্সিডেন্টেরও মিথ্যা নাটক সাজায়। এমন নাটক কইরা তোর কাজ থিকাও টাকা নিতে পারবো। তোর জমিনডা আমার কাছে আছে, আমার কাছেই থাউক। জমিনডা ভালো আছে। তোর জিনিস তোরই থাকবো। কিন্তু দলিল কইরা দিলে তোর নাটকবাজ পোলা কোন সময় কি কইরা বসে, কে জানে!’

আম্মা ভীষণভাবে থ্রেট দেয় বড় মামাকে, ‘ভাই, আপনে সম্পত্তি বুঝায় দিবেন কিনা কন! যদি না দেন, তাইলে আমি মামলা দিমু।’

আম্মা তার সম্পত্তি আদায়ে বদ্ধপরিকর। বড় মামা এখন আর আম্মার কাছে এসে কোনো বুদ্ধি দেয়ার সাহস পায় না। আমার চাচারাও না। আম্মা সবাইকে সমান প্রতিবাদ করে। আমি কিন্তু এটাই চেয়েছিলাম। আম্মা বুঝুক বাস্তবতা। আগেও বুঝেছে। এখন আরেকটু ভালো করে বুঝুক। একটু শক্ত হোক। আম্মাকে শক্ত করার জন্যই আমি রাফাকে বিয়ে করার কথা দিয়েছিলাম। আর এ’ক্সিডেন্টের নাটক সাজিয়ে ওদের আসল চেহারাটা আবার বের করে এনেছিলাম। আম্মা এখন সবই বোঝে। বড় মামাও শীঘ্রই আম্মার জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আজ সকালে আম্মা আবার ফোন দিল। খুব নরম সুরে আমাকে বলল, ‘সাবাব, তুই কি এহনই বিয়া করতে চাস?’

‘না মা! এখনই বিয়া করমু না। আগে এস্টাবলিশড হই, তারপরে বিয়া করমু।’

‘আমার অন্য একটা কতা ছিল। অনেক গোপন একটা কতা। একটা স্বপ্ন। ল এই কারণেই আমি রাফারে তোর বউ কইরা আনতে চাইছিলাম।’

আমি ধ’মক দিয়ে বললাম,’ আবার রাফারে বউ বানাইতে চাইতাছো?’

‘না বাপ। রাফারে আমি বউ বানাইমু না। কিন্তু তোর বিয়ার আগে আমার গোপন কথাটা শুইনা একটা পদক্ষেপ নিস। আমি মনে করছিলাম রাফা আমার ভাইজি। আমার ঘরে আনলে তোর বিয়ার পরও আমার কথা শুনবো। আমার মনের গোপন স্বপ্ন পূরণ করতে পারমু। আপন ভাইজি বেশি গ’ন্ডগোল করব না আমার সাথে। এখন তো দেখি ওরা বে’ঈমান। তুই বিয়া করার আগেই আমার স্বপ্নের কথাটা শুনিস। আর আমার স্বপ্নডাও পূরণ কইরা দিস, যদি পারোস। কারণ তোর বউ আসলে আমার আর তোর মাঝখানে বউ থাকবো। বউ যদি আমার স্বপ্নটা পূরণ করতে না দেয়! অনেক কঠিন স্বপ্ন তো! আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে পইড়া যাইমু। আমার জীবনে যদিও এই একটাই স্বপ্ন। তুই আমার স্বপ্নের কথাটা শুইনা একটু কাজ করিস। তারপরে যারে খুশি তারে বিয়া করিস।’

‘তোমার কি এমন স্বপ্ন আম্মা?’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে