মাতৃত্ব পার্ট:১

0
3816

মাতৃত্ব

পার্ট:১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_নিজেকে কি মনে করো তুমি।এতো দেরিতে নাস্তা বানালে সবাই খাবেটা কখন।ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠেই তো নাস্তাটা বানাতে পারো।অনেক সহ্য করেছি আর না।এইভাবে আর কতো দিন তোমাকে আমরা সহ্য করবো।এতোটা বছর তোমাকে সময় দেওয়া হয়েছে।এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখলাম না।আমার ছেলেটার জীবন তো আমি এইভাবে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না।আমি আমার ছেলের বিয়ে ঠিক করেছি।সামনের সাপ্তাহে বিয়ে।মেয়ে পক্ষকে সব কিছু বলেই আমি বিয়েটা ঠিক করেছি।এইবার তুমি এইবাড়ী থেকে কবে যাবে সেটা চিন্তা করো। আমি চাইনা তুমি এই বাড়ীতে থাকো।তুমি এইবাড়ীতে থাকলে আমার ছেলে কখনোই সুখী হবেনা। তোমার এই অলক্ষুণে চেহারাটা আর দেখতে ভালো লাগছে আমাদের। কথা গুলো বলে আছমা বেগম তার নিজের রুমে চলে গেলো।
কথা গুলো এই কয়েক বছর থেকে শুনতে শুনতে হজম হয়ে গেছে। এখন হাজার বললেও গাঁয়ে মাখি না।কিছু করার নেই শুনতে আমাকে হবেই।
— আপনাদের তো আমার পরিচয়টা দেওয়া হলো না।আমি প্রাপ্তি।যিনি এতক্ষন আমায় কথা শুনাচ্ছিলেন তিনি আমার শাশুড়ি মা আছমা বেগম।ওনার একমাত্র সন্তান আমার স্বামী আয়ান।ওনি এতোটা খারাপ ছিলেন না।হয়তো এখন নিজের বংশের কথা চিন্তা করেই এখন আর আমাকে সহ্য হচ্ছে না।
এইবার আসল কথায় আসি।

__ড্রইংরুমে বসে আয়ান এতক্ষন তার মায়ের সবকথাই শুনছিলো।মাকে সে কিছু বলতে পারেনা কারণ মা যা বলছে সব সত্যি।প্রাপ্তিকে এই বাড়িতে বিয়ে করে এনেছে ১৪ টা বছর।৩ বছর ভালোবাসার পর অনেক কাঠখড় পুড়ে প্রাপ্তিকে বিয়ে করেছে সে।কিন্তু তাদের ঘরে এখনো কোনো সন্তান নেই।কথা গুলো ভাবতে ভাতেই প্রাপ্তি এসে বললো,,,

প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আয়ান ! তুমি এইখানে বসে আছো? অফিসে যাবে না? যাও তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আছমা বেগম প্রাপ্তির কথা শুনে পাশের রুম থেকে ভাবতেছে এই মেয়ে কোণ ধাতু দিয়ে তৈরী এতো কথা বলে আসলাম তারপরেও হাঁসি মুখে কথা বলছে।আল্লাহ ভালো জানে।তবে যাই হোকনা কেন ওর প্রতি আমাকে দুর্বল হলে চলবেনা।

আয়ান -যাবো!তবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে খাটের উপর বসালো।

প্রাপ্তি -কি হয়েছে বলবে তো? এইভাবে টেনে নিয়ে আসছো কেন?

আয়ান প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে

প্রাপ্তি ! চলোনা আমরা কোথাও পালিয়ে যাই।এইভাবে আমি আর থাকেতে পারছিনা।না পারছি মাকে কিছু বলতে।না পারছি তোমার হয়ে কিছু বলতে।

প্রাপ্তি -কি বলছো তুমি এইসব? মাকে রেখে আমরা কোথায় যাবো?তুমি মায়ের একমাত্র সন্তান আমরা চলে গেলে মা কার কাছে থাকবে?

আয়ান -প্রাপ্তি! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাও।আমার কোনো সন্তান লাগবে না। শুধু তোমার ভালোবাসা হলেই হবে।জীবনে সবাই সব কিছু পায়না।আমি না হয় সন্তান পেলাম না।তাতে আমার কোনো আপসোস নেই।তুমি আমার পাশে থাকললেই হবে।প্লিজ চলো না।

প্রাপ্তি -অনেক হয়েছে এইবার রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আয়ান -আমি যা বলছি মেনে নাও, পরে এমন যেন না হয়।সারাজীবনের জন্য তোমাকে প্রস্তাতে হয়
কথাটা বলেই আয়ান রেডি হতে চলে গেলো।

প্রাপ্তিও রুম থেকে আসতেই আছমা বেগম বললেন

আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বুজানো হচ্ছে।যতোই কিছু করোনা কেন বিয়ে আমি আমার ছেলেকে দিবোই।তোমার মতো একটা অলক্ষ্মী মেয়েকে এই সংসারে আমি রাখতে চাইনা।

প্রাপ্তি -মা আমি আপনার ছেলেকে বুজাতে যায়ইনি। ওই আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে।

আছমা বেগম-একদম মিথ্যা বলবেনা।কি মনে করেছো আমি কিছু বুজিনা।যতো কিছু তুমি করোনা কেন আমি সমানের সাপ্তাহে আমার ছেলেকে বিয়ে দিবোই।মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।শুধু আমার ছেলেটা রাজি হলেই হবে।

আয়ান তার মা আর প্রাপ্তির কথা গুলো শুনতে পেয়ে নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।রোজ রোজ এই গুলো তার আর ভালো লাগেনা। প্রাপ্তি এসে দেখে রাহাত নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে খাটের এক কোণায় বসে বসে ভাবছে সেইদিনের কথা যেই দিন মেঘলা এইবাড়ি বউ হয়ে এসেছিলো সবাই কতো আদর করতো।তার শাশুড়ি তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।যখন বিয়ের ৫/৬ বছর হয়ে গেলো কোনো সন্তান হচ্ছিলোনা তখন আস্তে আস্তে তার শাশুড়িও পাল্টে গেলো।অনেক ডাক্তার দিখিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।হয়তো আয়ানের ভালোবাসায় আজও টিকে আছে এই বাড়ীতে।না হলে আরো আগে কোথায় হারিয়ে যেতো সে।না এইভাবে আর চলা যায়না।আয়ানেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে।কিন্তু আমি কি করবো আমি যে তাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। আর আয়ান ! সেওতো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।মা কি সত্যি আয়ানকে বিয়ে করাবে? আমি ছাড়া আয়ানের জীবনে অন্য কোনো মেয়ে! এইটা আমি ভাবতেই পারবো না।
আর না ভেবেই উপায় কি! আমার জন্য তো আর ওর জীবনটা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।
প্রাপ্তি ! প্রাপ্তি ! শাশুড়ি মায়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললো মা! আমায় ডেকেছেন?

শাশুড়ি মা -রান্নাটা কখন করবে শুনি? এমনি তে তো সারাদিন শুয়ে বসে কাটাও।
তাড়াতাড়ি রান্নাটা করে আমায় উদ্ধার করো।

প্রাপ্তি – মা! সারাদিন তো আমিই সব কাজ করি।হয়তো আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেননা। তাই বলে মিথ্যা বলবেন কেন?

শাশুড়ি মা -তোমার এতো বড় সাহস আমি মিথ্যা বলছি? আজ আয়ান আসুক। হয়তো এই বাড়ীতে তুমি থাকবে নয়তো আমি।ও যদি এর কোনো বিহেত না করে আমি খাবার তো দূরের কথা একটু পানিও খাবোনা।

প্রাপ্তি -মা! আমি আপনাকে এইভাবে বলতে চাইনি।আপনি আমায় ভুল বুজতেছেন।

শাশুড়ি মা -তুমি আর একটা কথাও বলবেনা।
কথাটা বলেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রাপ্তিও আর কিছু বললো না।সেই ভালো করেই জানে এখন কিছু বললে আরো বাড়াবাড়ি হবে।এর ছেয়ে ভালো আয়ান আসুক সে সামলিয়ে নিবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো আছমা বেগম দরজা খুলেনি।প্রাপ্তি এর মাঝে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রাপ্তি এসে ড্রইংরুমে বসে আছে।কি করবে বুজতে পারছেনা।আয়ান এসে দেখে প্রাপ্তি চুপচাপ চিন্তিত হয়ে বসে আছে।

আয়ান-কি হয়েছে প্রাপ্তি ? এইভাবে বসে আছো কেন?

প্রাপ্তি -আয়ান! মা সকাল থেকে কিছু খায়নি।দরজা বন্ধ করে বসে আছে।তুমি আসতে আজ এতো দেরি করলে কেন? এইভাবে না খেয়ে থাকলে মার শরীর খারাপ করবে।তুমি বললেই দরজাটা খুলবে।

আয়ান-তোমরা শুরু করেছো কি?আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা? এখন চলো দেখি দরজা খুলে কিনা।

আয়ান কথাটা বলতে বলতে তার মায়ের রুমের দজার সামনে গিয়ে বললো।
মা! মা! দরজাটা খুলো! মা তুমি কি শুনতে পাচ্ছো। দরজাটা খুলো প্লিজ।

আছমা বেগম দরজাটা খুলে চুপহয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান -মা কি হয়েছে বলোতো? তোমরা দুজনে কি আমায় শান্তিতে থাকতে দিবেনা? সারা দিন অফিস করে আসছি।এসে যদি তোমাদের ঝগড়াঝাটী দেখি তাহলে ভালো লাগে বলো?

আছমা বেগম দরজা খুলেছে দেখে প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেছে।এখন এইখানে থাকলে তাকে আরো কথা শুনতে হবে।

আছমা বেগম -আয়ান রুমে আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।

আয়ান -মা আমি ফ্রেশ হয়ে এসেই তোমার সাথে কথা বলবো।আর তুমিও খেয়ে নাও।

আছমা বেগম -না! যা বলার এখনোই বলবো।আর তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমার এই জীবন রেখে লাভ কি।নেজের ছেলেই যখন পর হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না।

আয়ান-(দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে) আচ্ছা এখানে এসে বসো কি বলবে বলো?

আছমা বেগম -আমি আবার তোকে বিয়ে দিবো।আমি মেয়েও ঠিক করে এসেছি।তুই শুধু বিয়েতে রাজি হলেই হবে।

আয়ান -মা! তোমার কি মাথা ঠিক আছে? আমি প্রাপ্তিকে ছাড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।এই কথা তোমাকে আর কত বুজাবো?

আছমা বেগম-ঠিকিতো ওই মেয়েকে তুই ছাড়বি কেন। জানিস! আজ তোর বউ আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে।কয়েদিন পর তো আমাকেই এই বাড়ী থেকে তাড়াবে।আমি এতো কথা বুজিনা,এই মেয়ে থাকুক আর না থাকুক তোকে বিয়ে করতেই হবে।

আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম মেয়েই নয়। ঠিক আছে তুমি আমাদের সন্তান চাওতো আমরা একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিবো।

আছমা বেগম-না! আমি বাহিরের কারো সন্তান এই বাড়ীতে চাইনা।ঠিক আছে তুই যদি বিয়ে না করিস তোর চোখের সামনে দিনের পর দিন আমি না খেয়ে থাকবো দেখি তোর সহ্য হয় কি করে।যখনি বলবি তুই বিয়েতে রাজি তখন আমি খাবো এর আগে নয়।
আয়ান মায়ের মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে উঠে চলে গেলো।রুমে গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আড়াল থেকে তাদের সব কথাই শুনেছে।প্রাপ্তি ভাবছে যেই করেই হোক আয়ানকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে হবে।ওর বিয়েটা দিয়েই আমি বাবার বাড়ী চলে যাবো।শুধু শুধু এইখানে থাকলে আয়ানও কষ্ট পাবে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে প্রাপ্তি কপালে হাত দিয়ে খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

আয়ান -এইভাবে বসে আছো কেন? খেতে দাও ক্ষিদে পেয়েছে।

প্রাপ্তি – হ্যাঁ! খেতে দিবো।তবে তোমাকে একা নয় মা সহ এক সাথে বসে খাবে।চলো আমার সাথে।

আয়ান -কোথায়?

প্রাপ্তি -মায়ের রুমে।আমি সব শুনেছি মা তোমাকে কি বলেছে।তুমি এখন মাকে গিয়ে বলবে তুমি বিয়ে করবে।

আয়ান-(প্রাপ্তিকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে)তুমি কি বলছো তুমি জানো?পাগলের মতো মুখে যা আসে তাই বলো।একবার নিজের কথা ভেবে দেখেছো? আমি বিয়ে করলে এই বাড়ীতে যে আসবে সে তোমাকে টিকতে দিবে? কেন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছো।

প্রাপ্তি -কে বলেছে আমি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ীতে থাকবো?আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ী ছেড়ে আমি চলে যাবো।আর কখনো তোমাদের কাছে আসবোনা। কোনো অধিকার চাইবোনা।শুধু তুমি সুখে থাকবে আমি এটাই চাই।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে