মন ফড়িং ❤ ৪০.

2
2690

মন ফড়িং ❤ ৪০.

নিধি হাসতে হাসতে বললো
– ছেলেটা কি খুব বেশি সুন্দর?
নীলিমা নির্বিকার কণ্ঠে বললো
– অসম্ভব সুন্দর! প্রথম দেখায় মনে হবে ছেলেটা বাঙালি না। গোলাপি ফর্শা, ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির মতো, চোখ দুটোও নেশায় ভরপুর। আর চুল গুলো উফফ নিধি আমি আর এক্সপ্লেইন করতে পারবোনা।
– আমার তো তাহলে একবার দেখতেই হয়।
– আমি শুধু কল্পনা করি ওর স্ত্রী কতোটা সুখী! যখন ওই ঠোঁট জোড়া দিয়ে ওকে গভীর চুমু দেয়, যখন ওর পুরো শরীরে ওই ঠোঁট ছুঁয়ে যায় তখন ওর কতোটা ভালো লাগে! ওই ঠোঁটের ন্যানো সেকেন্ডের স্পর্শে আমি তো খুন হয়ে যাবো।
নিধি বললো
– তুই তো মনে হয় কল্পনায় চলে যাচ্ছিস?
– নিদ্রকে দেখার পর থেকে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি।
– আচ্ছা তুই কবে নিজেকে কন্ট্রোল করেছিস?
– এতোটা পাগল কারো জন্যই হইনি। ওই চোখ দিয়ে যখন মেয়েটাকে গ্রাস করে তখন ওই মেয়ের ফিলিংসটা আমার ফিল করতে ইচ্ছে করছে। নিদ্র ওর স্ত্রীর দিকে অন্যচোখে তাকায়। সেই তাকানিতে নেশা আছে, নতুন করে পাবার নেশা।
– থাক আর বলতে হবেনা। তুই নিজেই ওর সাথে নিজেকে বেডে কল্পনা করছিস। হা হা হা হা…..
– তুই বুঝতে পারছিস না আমার কেমন লাগছে। একটু আগে ফোন দিলাম। কে না কে রিসিভ করেছে। বললো, স্ত্রীর সাথে ব্যস্ত! বুঝতে পারছিস?
– হ্যাঁ, তোর ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে! দ্যাখ একটা সাজেশন দিবো। নিবি কিনা তোর ব্যাপার। তোর কথায় আমার এটুকু মনে হলো, নিদ্র তার স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালোবাসে। এদের মধ্যে তোর যাওয়াটা উচিৎ হবেনা। ওদের মধ্যে সম্পর্কটাও ভালো। বুঝতে পারছিস?
– নিদ্র ওই মেয়ের তুলনায় আরো ভালো স্ত্রী পাবে। ওই মেয়ে ওর যোগ্য না।
– আমার যা বলার বলেছি। এখন তোর ইচ্ছা। তুই সুন্দরী, অসম্ভব রকমের সুন্দরী তাই বলে সব পুরুষের কাছে না। অনেক পুরুষ চেহারার সৌন্দর্য টাকে গুরুত্ব দেয়না। যেমন ধর না আমার বর…..
– ওহ নিধি আবার শুরু করেছিস।
নিধি চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে গিয়ে বললো
– যা করবি একটু বুঝে শুনে করিস। মনে রাখিস প্রকৃতি কখনো কারো ধার রাখেনা।
নিধি চলে যাবার পর নীলিমা ভেংচি কেটে বললো
– ধার রাখেনা ব্লা…..

নিদ্রের হাতের পাঁচ আঙুলের মাঝে নিজের আঙুল গুলো চালিয়ে দিয়ে অদ্রি কিছু একটা বলতে যাবে তখনই নিদ্র ওর ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো অদ্রির ঠোঁটের মাঝে। গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ থেকে গভীর চুমুতে নিজেকে যেন বারবার হারিয়ে ফেলছে নিদ্র।
অনুভূতি গুলো তীব্র গতিতে দেহের শিরা উপশিরায় বয়ে যাচ্ছে। উন্মাদনার বীজ যেন অদ্রি তার ভেতরে বুনে দিয়েছে!
নীলিমার মতো সুন্দরী মেয়ের কাছে সে কোনো অনুভূতি পাবেনা এতোটা তীব্রভাবে! কারণ একটাই অদ্রিকে সে ভালোবাসে।
কামনার বস্তুর তুলনায় ভালোবাসার মানুষের সাথে আলিঙ্গনে আত্মতৃপ্তি বেশি।
কামনা তো ক্ষণস্থায়ী আর ভালোবাসা…..
নিদ্রের চিন্তাভাবনা গুলো এলোমেলো হতে শুরু করেছে। সে ধীরে ধীরে অদ্রির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে! আর উন্মাদনা যেন উষ্ণ নিশ্বাসের ছন্দে ছন্দিত হচ্ছে!

নাজমুল সাহেব নিকোটিনের ধোয়ায় চিন্তাটাকে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। গভীর দুশ্চিন্তা গুলো মনে হয় এমনই হয়!
এদিকে রীতা বিরক্ত হয়ে আছে। ফোন বেজেই যাচ্ছে। কী বেহায়া মেয়ে, ছিঃ! ফোন রিসিভ করে একদফা ধমকানো হয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি।
নাজমুল সাহেব এদিকে ড্রয়িংরুমে বসেই সিগারেট খাচ্ছেন।
রীতা রেগে গিয়ে নাজমুল সাহেবকে বললেন
– আপনাকে না নিষেধ করা হয়েছে?
নাজমুল সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না৷
রীতা আরো রেগে বললেন
– আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছি।
রীতার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললেন
– আমি খুব চিন্তিত। আপনি সেটা কি বুঝতে পারছেননা?
– আমার মাথায় কি জট আছে যে অন্যের দিলের খবর জেনে যাবো?
নাজমুল সাহেব সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন
– মাথায় জট ব্যাপারটা আবার কী?
রীতা এবার শান্ত হয়ে বুঝাতে লেগে গেলেন
– অনেকের মাথায় একা একাই জট পাকিয়ে যায়। সেই জট কোনো চিরুনি দিয়েও ঠিক করা যায়না। যাদের মাথায় পড়ে তারা নাকি অন্যের ভেতরের কথা, ভবিষ্যৎ এর কথা জানতে পারে।
– জট কাটা যায়না? নাকি কাটতে গেলে কাচি ভেঙে যায়? এরকম ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটে?
– না। চুল কাটা যায় কিন্তু কাটলে ওই মানুষের ক্ষতি হয়।
– কীরকম ক্ষতি হয়?
– অসুস্থ হয়ে যায়, মারা যায়, প্যারালাইজড হয়ে যায়।
– ওহ।
রীতা এবার শান্তস্বরে বললেন
– চিন্তিত হবার কারণ?
– অদ্রি আর নিদ্রের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। অদ্রি ডিভোর্স দিতে চাচ্ছে।
– কী? আমি তো নিদ্রের মধ্যে তেমন কোনোকিছু দেখলাম না।
– হতে পারে অন্যকে টেনশনে ফেলতে চাচ্ছেনা।
– কিন্তু চেহারায় তো চিন্তিত ছাপটা থাকবে!
– তাও কথা। নিদ্র কোথায় এখন জানেন?
– রুমে।
– তাহলে যাই নিজেই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।
– এখন না পরে যান।
– এখন সমস্যা কীসের?
– আপনি একটা গাধা।
রীতা তার রুমের দিকে গেলেন। মনে মনে বললেন
– বুইড়া হয়েছে বাতাসে!

আসমা জামানের আর ভালো লাগছেনা এই বাড়িতে থাকতে। নিজের দেশের বাড়িতে একবারের জন্যও যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কে নিয়ে যাবে? নিদ্র তো বউ নিয়েই মহাব্যস্ত। যেন এই পৃথিবীতে সে একাই বিয়ে করেছে। আর কেউই বিয়ে করেনি, মেয়ে মানুষ পায়নি।
আর নাজমুলটাও ব্যস্ত ছেলের বউকে নিয়ে। যেন সেও পৃথিবীতে একমাত্র শ্বশুর মশাই। দুনিয়ায় আর কারো ছেলের বউ নেই।
এদেরকে একবার করে নিয়ে যেতে বলবে। রাজি না হলে সে নিজেই বের হয়ে যাবেন তার দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

নিদ্রের কপালে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– খাবার রুমে নিয়ে আসবো?
অদ্রির চুলে বিলি কেটে দিয়ে বললো
– একসাথে নিচে গিয়েই খাবো।
– তাহলে উঠুন।
– একটু পর অদ্রি। সুখের আবেশে আরো কিছুক্ষণ থাকিনা! খাবার তো আর দৌঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছেনা।
– কিন্তু আমার পেটের ভিতর ইঁদুর দৌঁড়ঝাপের প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে।
– তাহলে একটা কাজ করুন। আপনি খেয়ে নিন। আমি এখন লম্বা একটা ঘুম দিবো।
– এইতো বললেন, একসাথে খাবো আর এখনই বলছেন….
– আচ্ছা তুমি গোসলে যাও। আমি একটু ঘুমিয়ে নেই, প্লিজ।
– এখনই কেনো ঘুমাতে হবে?
– আপনি বুঝবেন না।
– বুঝিয়ে দিলে কেনো বুঝবো না?
– নাহ, আমি বুঝিয়েও দিবোনা।
নিদ্র দুষ্টু হাসি চেপে রেখে বললো
– ইঁদুর দৌঁড়ঝাপের প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে কিন্তু….

চলবে…..!

© Maria Kabir

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে