#মন_পবনের_নাও
তিতলী বানরের বাঁশ বেয়ে ওঠানামার হিসেবে ব্যস্ততার মধ্যেও আঁড়চোখে বারবার স্যারকে দেখছিল । হাসিহাসি মুখে চা খাচ্ছেন , এরই মাঝে অলরেডি দুকাপ হয়ে গেছে । ইতিমধ্যে সমাধানও করে ফেলেছে অংকের , তবুও স্যার বসে আছেন !
আরে বাবা বাসায় যেয়ে এই শীতে লেপের নিচে ঢুকলেই তো পারে । শুধু শুধু ………… বিড়বিড় করে তিতলী ।
নতুন বছরের প্রথম দিন । বাইরে সবাই কত্ত মজা করছে ! আর ওকে কি-না পড়তে হচ্ছে !
মাসখানেক পরেই তিতলীর এস এস সি পরীক্ষা ।
স্যার কন্যা সমতুল্য তিতলীকে খুব আদর করেন । এতো ভালোবাসা তিতলী নিতে পারে না ।
স্যার ওকে বলেছেন ঃ একটু কষ্ট কর মা , তারপরই লম্বা ছুটি।
এরপর তো বাঁধাহীন জীবন । কিন্তু তিতলীর এখনই মুক্ত পাখির মতো উড়তে ইচ্ছা করে …….. অসহ্য লাগে সবকিছু ।
এরই মাঝে দুবার বারান্দায় যেয়ে উঁকি দিয়ে এসেছে । শুভ বিপুলদের দুই গ্রুপ আজ ইংরেজি বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছে । পাড়ার সব ছেলেমেয়েরা মাঠে কিংবা ছাদে । আর ওকে কি-না …….
কান্না আসছে তিতলীর ।
স্যার আসার আগে কয়েকবার ছাদে গিয়েছে কাপড় ওল্টানোর নাম করে , বিকেলের দিকে রোদের তেজ কমে যাওয়াতে শীতের দিনে সহজে কাপড় শুকোতে চায় না ।
ওরা থাকে দোতলায় । সিঁড়ি ভেঙে পাঁচ তলার ছাদে ওঠা নামার কারণে পা ব্যথা করতে পারে বলে মা বারণ করে দিয়েছেন । পরীক্ষার আগে যেন কোন অঘটন না ঘটে …… মায়ের কড়া হুকুম ।
ভীষণ হৈচৈ হচ্ছে বাইরে । ঘরে থাকা দায় । স্যার তিতলীর অস্থিরতা দেখে হেসেই ফেললেন ঃ যা আজ ছুটি । তবে ফাঁকি দিস না । ট্যালেন্টপুলে দুটো বৃত্তি আছে , এবারও ঈর্ষণীয় রেজাল্ট চাই…… …… বুঝলি ।
মাঠ থেকে হাই ভলিউমে ভেসে আসছে ……
I’m a barbie girl
in a barbie world
life in plastic
Its fantastic……..
Come on barbie , let’s go party !
Ah- ah- ah-yeah
দারুণ সব কালেকশন বিপুলের । প্রায় রোজই ৪৫ টাকা খরচ করে লেটেস্ট ক্যাসেটগুলো বিপুলের পক্ষেই কেনা সম্ভব । বাসায় সনির বিশাল ডেক সেট । শুধু এ কারনেই সদ্য দশম শ্রেণিতে প্রমোশন পাওয়া শুভ বিপুলকে সহ্য করে । দুজনের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব ।
সারাক্ষণ তিতলী আপুর পেছনে ঘোরা বিপুলকে একদমই পছন্দ করে না শুভ ।
তিতলী আপুর অধিকার কেবল একই পাড়ার শুভরই ।
আর বিপুল তিতলীর ক্লাসমেট । দিনের একটা বড় অংশ তারা এক সাথে কাটায় । সহপাঠী হবার কারণে তিতলীর অধিকার কেবলমাত্র তার ওপরই বর্তায় !
স্কুলের বাইরেও কারনে অকারণে বিপুলকে বহুবার এপাড়ায় দেখেছে তিতলী । ওদের বাসার সামনে এলেই ওর সাইকেলের চেইন পড়ে যায়…….. তো পড়েই থাকে । সহজে তাকে আর ওঠানো হয় না । ওকে একবার দেখতে পেলেই যেন বিপুলের মানব জনম স্বার্থক ।
তিতলী হাসে । ওর ভালো লাগে ।
কিশোরী বেলা……..প্রজাপতির ন্যায় সদ্য রঙ্গিন পাখনা গজানোর সময় ওর । সুন্দরী তিতলীর জীবনে নিত্য নতুন প্রেমের স্বাদ । ছেট বড় সবার মনের গহীনে তিতলী । খুব নরম আর উদার মনের তিতলী কাওকে না করতে পারে না !!!
একটা মেরুন রঙের শাল জড়িয়ে তিতলী দৌড়ে ছাদে চলে যায় । মিষ্টি একটা হিমেল বাতাস এসে কপালের উপরে ওর মৌসুমি কাটের চুলগুলোকে উড়িয়ে , মাঠে দণ্ডায়মান দুই কিশোরের মনে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে
দেয় ।
পুরুষের সাফল্য বা জয়ের পিছনে সবসময়ই শক্তি হিসেবে থাকে কোন না কোন নারী । ওদের মধ্যে তাই তিতলীকে দেখে আগডুম বাগডুম অবস্থা !
দুজনেরই জয়ের নেশা ।
এক বল বাকী আছে । উইকেট শিকারী শুভ লাস্ট উইকেটটি নিতে পারলেই তিতলী ওর !
অলরাউন্ডার বিপুল শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকালেই তিতলী তার !
লাস্ট বলটিই নির্ধারণ করবে মানসকন্যা তিতলী কার হৃদয় খাঁচায় বন্দী হবে ???
বল করছে শুভ ; গভীর মনযোগে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট হাতে বিপুল… …….
#Husne Ara Benuৃন