#মধুবালা [২২]
#ফারজানা_আক্তার
আনজুমা খাতুন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। মা মেয়ে দু’জনেই কাঁদছেন বোবা কান্না। মেয়েকে পেয়ে আনজুমা খাতুন যে মহা খুশি তা সবাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। ধীরে ধীরে সবার সাথেই ফ্রী হয়ে গেলেন সুলতানা মির্জা শুধু বেলাল মির্জা ছাড়া। আলিয়া আর আলিফকেও সবাই খুব আদর স্নেহ করলো। বাড়ির ছোটরা সবাই অবাক। যেনো এক ঘোরের মধ্যে আছে তারা। লিলি ছোঁয়া শুভ্র হঠাৎ একসাথে বলে উঠলো “আমাদের ফুফি আছেন অথচ কেউ আমাদেরকে এই বিষয়ে বলা প্রয়োজন মনে করেনি কখনো, কেনো?”
আনজুমা খাতুন কিছু না ভেবেই বলে উঠলেন “সব তোর বাবার জন্য হয়েছে। তোর বাবা চাইনি এই ঘরে আমার মেয়ের নাম কেউ উচ্চারণ করুক তাই। বড় ছেলে কিনা তোর বাবা এই ঘরের তাই তোর বাবার কথা-ই তো চলে বেশি।”
“তাহলে তো আমি এই বংশের একমাত্র বংশধর এই মুহুর্তে তাহলে আমার কথাও সবার শোনা উচিৎ। ”
“আরে দাদুভাই তোর আবার কি কথা। যাকে চেয়েছিস তাকে তো দিয়েই দিলাম তোর হাতে তুলে।”
“তোমরা তুলে না দিলেও আমার মধুবালাকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারতোনা। এই মধুবালার জন্য কতো কী করেছি তা তো শুধু আমিই জানি।
যাইহোক আমি বলতে চাচ্ছিলাম এতোগুলো বছর পর আমরা জানতে পেরেছি আমাদের একটা ফুফি আছেন, ফুফাতো ভাই বোন আছে তাই আমি চাই আমার ফুফিরা আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবেন। আমাদের পরিবার আবারও পূর্ণ হবে এই বাড়ির মেয়ের আগমনে। আমরা এক পরিবার হবো। আমি চাই আমার এই সিদ্ধান্ত কে সবাই সম্মান করুক।”
শেষের কথাটা শুভ্র নিজের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়েই বলে।
“যে আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার দিকে একবারও তাকানো প্রয়োজন মনে করেনি তার ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবোনা কখনো।”
কথাটা বলেই বেলাল মির্জা নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই শুভ্র বলে উঠে “আপনার মেয়ের বড় ভাই এখনো জীবিত আছে, আমিও দেখবো আমার বোনের বিয়ে কেউ কিভাবে আটকায়।”
বেলাল মির্জা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।
সুলতানা মির্জা হালকা মুচকি হাসেন। তারপর মাকে জিজ্ঞেস করেন বাবার কথা তখন-ই আনজুমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ দেন মেয়েকে।
সুলতানা মির্জার কান্না দেখে আলিয়া আর আলিফও ভে’ঙে পরেন খুব।
ছোঁয়া গিয়ে আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আলিয়া মুচকি হাসে। আলিয়া আলিফ ভীষণ খুশি কারণ ছোট থেকে কোনো আত্মীয় স্বজন তারা দেখেননি চোখে। আলিফের বাবা ছিলেন একজন এতিম আর সুলতানা মির্জার সবাই থেকেও ছিলোনা। আলিফ আলিয়া এতোদিন মনে করতো হয়তো সুলতানা মির্জাও এতিম কিন্তু আজ ওদের ভাবনা টা ভুল প্রমানিত হয়েছে। আলিফের চোখে খুশির জল চিকচিক করছে। সুলতানা মির্জাকে আজকের আগে প্রাণখুলে কাঁদতে বা হাসতে সে দেখেনি তার বয়সে।
দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সবাই খেতে বসেছে। খাওয়া শুরু করার আগে সুলতানা মির্জা বেলাল মির্জার রুমে গিয়ে ভাইয়ের সাথে সব রাগ অভিমান মিটিয়ে এসেছেন আর সাথে খেতে বসেছেন। আনজুমা খাতুন মনে মনে বলেন “আজ আমার মৃত্যু হলেও আর কোনো আফসোস থাকবেনা আমার।”
খেতে খেতেই সুলতানা মির্জা বলেন “মা আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে সেলিনা ভাবীর হাতের পায়েশ খেতে। উনার মতো পায়েশ এই পৃথিবীতে আর কেউই পারেননা বানাতে। কিন্তু সেলিনা ভাবী কোথায়? বেড়াতে গেছেন নাকি কোথাও গেছেন দরকারে? দেখছিনা যে উনাকে।”
সুলতানা মির্জার কথা শেষ হতে না হতেই ছোঁয়া বসা থেকে উঠে নিজের রুমে ছুটে যায়। সুলতানা মির্জা বুঝতে পারেননা বিষয়টা। জায়েদা বেগম ছোঁয়ার পিছু যেতে চাইলে শুভ্র উনাকে আঁটকিয়ে নিজে যায়। শুভ্র যাওয়ার পর বেলাল মির্জা সব খুলে বলেন সুলতানা মির্জাকে। মান্নান মির্জা মাথা নিচু করে বসে আছেন, উনার চোখেও যে জল তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সোহা নেই, সোহা আর সানিয়া নিজের রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে তারা আগেই খেয়ে নিয়েছিলো। নয়তো সোহাকে সামলাতে লাগতো আরেকজন।
সুলতানা মির্জা কিছু বলছেননা, উনার চোখ বেয়ে আপনা আপনিই জল গড়িয়ে পরছে। আলিফের বাবার সাথে সুলতানা মির্জার সম্পর্কের কথা বাসায় কেউ জানতোনা শুধুমাত্র সেলিনা পারভীন ছাড়া। সেলিনা পারভীন সবাইকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বেলাল মির্জাকে কেউ বুঝাতে পারেননি সেদিন। সুলতানা মির্জার চোখে ভাসছে যেদিন তিনি ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন সেদিনও সেলিনা পারভীন উনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত কেউ এই কথা জানেনা সুলতানা মির্জা ছাড়া। এমন মানুষকে এভাবে হারিয়ে ফেলবেন জীবন থেকে তা বিশ্বাস হচ্ছে না সুলতানা মির্জার।
***********
“এই মধুবালা থাম নাহ এবার, আর কত কাঁদবি? দেখ এবার কিন্তু রেগে যাচ্ছি আমি।
তুই কী শুনবিনা আমার কথা? তোর চোখে জল সহ্য হয়না আমার জানিসনা তুই?”
“প্লিজ শুভ্র ভাই একটু একা থাকতে দাও কিছু সময় আমায়।”
“আবার ভাই বললি তুই আমায়। এবার আর ছাড়বোনা তোকে। কাঁচা চিবিয়ে খাবো।”
“আমি কিন্তু আমার আব্বুদের বলে বিয়ে ভে’ঙে দিবো। আমার কিন্তু এখন দুটো আব্বু আছে।”
হেঁচকি তুলে নাক টানতে টানতে কথাটি বলে ছোঁয়া।”
শুভ্র হেঁসে ফেলে তারপর বলে “ওলে আমাল বাবুসোনা ড্রামাকুইন। চল ছাঁদে যাবো।”
“এই ভরদুপুরে?”
“হুম চল।”
ছোঁয়া বসা থেকে উঠেনা। শুভ্র একটা রুমাল ভিজিয়ে এনে ছোঁয়ার মুখটা ভালো করে মুছে দেয়। ছোঁয়া কিছু বলেনা। শুভ্র কয়েকবার বললো ছাঁদে যাওয়ার কথা কিন্তু ছোঁয়া শুনলোনা। হঠাৎ করেই খুব মন খারাপ হয়ে যায় ছোঁয়ার। সেলিনা পারভীনকে মনে পরে ভীষণ।
শুভ্র আর কিছু না বলে ছোঁয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। ছোঁয়া খাটে আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো। শুভ্র ছোঁয়ার কোলে মাথা রাখতেই ছোঁয়া ওর চুলে বিলি কাটতে থাকে। এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর দু’জনেই ঘুমে তলিয়ে যায়। সুলতানা মির্জা আর বাড়ির বড় রা সবাই এসে দেখে শুভ্র ছোঁয়ার কোলে মাথা রেখেই ঘুম আর ছোঁয়া আধশোয়া হয়ে বসে ঘুমিয়ে গেছে। তাই সবাই বেরিয়ে যায়। শুভ্র যে ছোঁয়াকে সামলাতে পেরেছে এটাই অনেক সবার জন্য।
***********
“ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে তুমি আমার মামাতো বউ হলে তবে। এবার তো আর স্যার ডাকা চলবেনা ম্যাডাম।”
“জানেন স্যার আমার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না। এভাবে সব ঠিকটাক হয়ে যাবে। আর আপনার মা আমার ফুফি হবে, সব যেনো ঘোরের মধ্যে যাচ্ছে। ”
“আবারও স্যার বললে কিন্তু। ”
“আহ্ রেগে যাচ্ছেন কেনো? ভালোই লাগে স্যার ডাকতে। আমাদের বিয়ের তিন বছর পর যদি আমাদের একটা ফুটফুটে কিউট বেবি হয় তার নাম ধরে ওমুকের আব্বু তমুকের আব্বু ডাকবো, কেমন?”
আলিফ কুটকুট করে হেঁসে ফেলে লিলির কথায়।হাসতে হাসতেই আলিফ বলে “তিন বছর কেনো? অমুকের আব্বু তমুকের আব্বু ডাক শোনার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করতে পারবোনা ম্যাডাম আমি। আমাদের বিয়ের এক বছরের মধ্যে আমার বেবি পৃথিবীর আলো দেখবে দেখে নিও।”
“ইস্ বললেই হলো নাকি। আচ্ছা আমাদের বিয়ের আর মাত্র আছে ৩দিন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই তিনদিন আমার জন্য তিন বছরের সমান।
ভালোবাসা এমন কেনো বলেন তো।”
“জানিনা। শুধু জানি ভালোবাসি ভীষণ। ”
***********
ছোঁয়ার ঘুম ভা’ঙে সন্ধ্যায়। ঘুম থেকে জেগে ছোঁয়া নিজেকে বিছানায় শোয়া আবিষ্কার করলো অথচ ছোঁয়ার মনে আছে সে আধশোয়া হয়েই ঘুমিয়েছিলো। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্র কোথাও নেই। বেলকনির দিকে চোখ যেতেই দেখে বাহিরে অন্ধকার হয়ে এসেছে, চট করে দ্রুত উঠে বসে ছোঁয়া। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ছোঁয়া হলরুমের দিকে পা বাড়ায়।
পুরো ঘর সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছি দেখে ছোঁয়া অবাক।
শুভ্র একপাশে বসে হিসেব করছে। ছোঁয়া রান্না ঘরের দিকে পা দিতেই জায়েদা বেগম এসে ওর হাতে কফির মগ দিয়ে বলেন “সকাল থেকে অনেক কাজ হয়ে গিয়েছে এখন আর রান্নঘরের কাছেও যেনো না দেখি। দুইদিন পর বিয়ে, ত্বকের যত্ন নে।”
ছোঁয়া মুচকি হাসে। জায়েদা বেগম এখন ছোঁয়াকে তুই করে বলেন আগে তুমি বলতো। ছোঁয়ার বেশ ভালো লাগে। জায়েদা বেগমের মাঝে সেলিনা পারভীন কে খুঁজে পাই ছোঁয়া।
ছোঁয়া কফিতে চুমুক দিতে দিতে শুভ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র ছোঁয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে হালকা কেঁশে বলে “তাহলে অবশেষে ম্যাডামের ঘুম ভা’ঙ’লো। তা নিজে খাচ্ছো আর আমারটা কই কফি?”
“এমা তুমি কিছু খাওনি বুঝি এতোসময়?”
“একটু আগেই ঘুম ভা’ঙ’লো। আর উঠে আসতেই কাজে লাগিয়ে দিলো।”
“আচ্ছা এই নাও আমরটা খাও কফি, আমি কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
ছোঁয়া শুভ্রর হাতে কফি দিয়ে যেতে নিতেই শুভ্র ছোঁয়ার হাত টেনে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বলে “খিদে লেগেছে যে অন্যকিছুর মধুবালা। তুই কেনো বুঝেও না বুঝার মতো হয়ে থাকিস? বুকটা জুড়ে যে ভীষণ পিঁপাসা।”
#চলবে_ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#মধুবালা [২৩]
#ফারজানা_আক্তার
হাত ভর্তি চুড়ি নিয়ে খেলছে ছোঁয়া। আজ ছোঁয়ার এতো খুশি লাগছে যে সে কি করবে না করবে বুঝতেই পারছেনা। সাড়া রুমে পায়চারি করছে আর চুড়ির শব্দ করছে। অপেক্ষা করছে বালাজোড়া কবে হাতে পাবে। আর যে তর সইছেনা। বধু সেজে নিজের রুমে বসে আছে ছোঁয়া। ছোঁয়া আর লিলিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক আনা হয়েছে। ছোঁয়াকে সাজানো শেষ। লিলিকে সাজানো হচ্ছে এখন। ছোঁয়া যেনো রুমে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত তাই সে বারবার বাহিরে চলে যেতে চাই কিন্তু সানিয়া লামিয়া সোহা মিলে ওকে আঁটকায়। শুভ্রর চেয়ে বালা জোড়ার অপেক্ষা তীব্র ছোঁয়ার। একটা লাল কয়েরি লেহেঙ্গা পরে বধু সেজেছে ছোঁয়া। মেকআপ দিয়ে কপালের ব্রণের দাগ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আয়নাতে নিজেকে নিজে দেখেই চমকে যায় ছোঁয়া। শ্যামলাবর্ণ চেহারা টা দুধের মতো সাদা লাগছে ছোঁয়ার কাছে। সাজটা সুন্দর হলেও ছোঁয়ার কেনো জানি ভালো লাগছেনা। ব্রণেই যেনো ছোঁয়াকে একটু বেশি মায়াবী লাগে। সোহা তো মুখের উপর বলেই দিলো আকাশে ভেসে থাকা শুভ্র মেঘের মতো অনিন্দ্য লাগছে ছোঁয়াকে আজ।
সানিয়ার একটু মন খারাপ তবে লামিয়া আবারো বুঝিয়ে দিয়েছে। তবুও মনটা জুড়ে কেমন জানি অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে সানিয়ার। সানিয়া টিনএজার। এই বয়সে এসব স্বাভাবিক তাই লামিয়া তেমন একটা সিরিয়াস নেইনি ব্যাপারটা। আলিয়াকে পেয়ে লামিয়া খুব খুশি। কারণ এই বাড়িতে সবার জোড়া আছে শুধু লামিয়ার ছিলোনা কিন্তু এখন লামিয়ার জোড়া হয়ে এসেছে আলিয়া তাই তারা দুজনই বেশ খুশি। ছোঁয়ার বয়সি লিলি আর সানিয়ার বয়সি সোহা তাই লিলি এতোদিন একটু মন খারাপ করে থাকতো। লামিয়া তো আলিয়াকে নিজের রুমের শেয়ারও দিয়ে দিয়েছে।
আলিফ আপাতত গেস্ট রুমে আছে, বিয়ের পর লিলির রুমে থাকবে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ শুভ্র ছোঁয়া আলিফ লিলির বিয়ে। পুরো বাড়ি জমজমাট আনন্দে।
গতকাল গায়ে হলুদে ছোঁয়া একটুও আনন্দ করতে পারেনি তাই ওর মন খারাপ। শুভ্র ওকে সারাক্ষণ নিজের কাছে বসিয়ে রেখেছে, নাচ গান কিছুই সে করতে পারেনি। মনে মনে অনেক বকেছে শুভ্রকে ছোঁয়া কিন্তু সামনাসামনি কিছু বলার সাহস সে পাইনি কারণ শুভ্র রেগে ছিলো খুব। ছোঁয়ার সব বন্ধু বান্ধব এসেছিলো গায়ে হলুদে আর সেখানে একটা ছেলের নাম নয়ন, এই নয়ন নামের ছেলেটা একটু দুষ্টুমি করে ছোঁয়ার হাত ধরেছিলো যা শুভ্রর মোটেও পছন্দ হয়নি। ছোঁয়া তবুও অনেক বুঝিয়েছে শুভ্র কে, নয়ন ওর বন্ধু শুধুমাত্র, এমনকি নয়নের গার্লফ্রেন্ড আছে এটাও বলেছিলো তবুও শুভ্রর রাগ কমেনি। অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে কিছু করেওনি নয়নকে, না কিছু বলেছে। কিন্তু ছোঁয়াকে এই বিষয় নিয়ে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছে। আজ শুভ্র ছোঁয়ার বিয়ে হলেও দুজন দুজনের সাথে প্রচুর রেগে আছে। শুভ্রর রাগ নয়ন হাত ধরেছে বলে আর ছোঁয়ার রাগ শুভ্রকে সে এতো বুঝানোর পরেও শুভ্র না বুঝার কারণে। সকাল থেকে দুজন দুজনের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। ছোঁয়া ভাবছে বিয়ের পরও সে তার রুমেই থাকবে, যাবেনা শুভ্রর মতো জেদি পুরুষের কাছে।
বাহির থেকে শোনা যাচ্ছে কাজি চলে এসেছে আর এটা শুনেই হঠাৎ বুকের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতি হয় ছোঁয়ার, কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। বুকটা কাঁপছে, ধুকপুক করছে স্পন্দন। সোহা বলে “আজ থেকে আমার আপা হয়ে যাবে এই ঘরের বউ, আর আমি ননদ।”
সোহার কথা শুনে ছোঁয়া বেশ লজ্জা পাই। লজ্জায় কারো চোখের দিকে যেনো তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা।
এতক্ষণে লিলির সাজগোছও শেষ। দুজনকে আজ একই রকম লেহেঙ্গা পরিয়ে বধু সাজিয়েছে। লিলি এসে সানিয়ার হাতে ফোন দিয়ে বলে “এই শোন আমাদের দু’জনের ছবি যেনো খুব খুব সুন্দর হয়।”
সানিয়া কোনো কথা না বাড়িয়ে ছোঁয়া লিলির অনেকগুলো ছবি তুলে দেয়। সানিয়া খুব ভালো ফটোগ্রাফি করতে পারে। একপ্রকার শুভ্রর হাত ধরেই সানিয়া ফটোগ্রাফি শিখেছে তাই হয়তো শুভ্রর প্রতি ওর ভালোলাগা জন্মেছে।
তানহা আর রকিও এসেছে বিয়েতে। রকিকে শুভ্রর কাছে রেখে ছোঁয়ার কাছে যায় তানহা। তানহা দৌড়ে গিয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে। ছোঁয়া খুব খুশি হয় তানহাকে দেখে।
“কেমন আছিস তানহা রানী? সংসার জীবন কেমন কাটছে?”
“আমি তো আলহামদুলিল্লাহ। আর তুইও তো বেশ ভালো আছিস দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু তোর বরটার কী হলো? গোমড়ামুখে বসে আছে।”
তারপর ছোঁয়া তানহাকে সব খুলে বললো। তানহা সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ। সোহা সানিয়া লামিয়া আলিয়া লিলি সবাই-ই হাসতেছে। শুভ্র যে ঘাড়ত্যাড়া এটা কারো অজানা নয়। ছোঁয়া আবার বলে উঠলো “ধুর বাদ দে তো। আমার বালা পেলেই চলবে, শুভ্র ভাই থাকুক উনার জেদ নিয়ে। তুই বল তোর রকির কী অবস্থা? ”
“রকি তো আগে থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে পাঁচ ওয়াক্ত দুই হাত তুলে এই একজন মানুষের ভালোবাসায় চেয়ে যাচ্ছি শুধু। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত রকি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। থ্যাংকিউ ছোঁয়া তুই না থাকলে আমার ভালোবাসা কখনোই আমার হতোনা।”
*************
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে।
আগে লিলি আর আলিফের বিয়ে দিয়ে দিলো শুভ্র। শুভ্রর একটাই কথা আগে সে তার বোনকে বিয়ে দিবে তারপর নিজেরটা। শুভ্রর জেদের সাথে কেউ পারেনি তাই আগে আলিফ লিলিরটা হয়ে গেলো বিয়ে।
ছোঁয়ার মন খারাপ কারণ এখনো ওকে বালাজোড়া পরানো হয়নি। অপেক্ষা করতে করতেই যেনো ক্লান্ত ছোঁয়া।
ছোঁয়া নিজের রুমে বসে আছে সাথে সানিয়া আলিয়া লামিয়া সোহা আছে।
একটু পর শুভ্র ছোঁয়ার বিয়েটাও হয়ে গেলো। ছোঁয়া তবুও খুশি হতে পারছেনা কারণ বালা জোড়া এখোনো দিচ্ছে না বলে ওকে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে আসলো, এখনো ছোঁয়াকে বালাজোড়া দেওয়া হয়নি। ছোঁয়ার মনটা বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে যত সময় গড়াচ্ছে। রাতের খাবার শেষে ছোঁয়াকে শুভ্রর রুমে নিয়ে যেতে আসে লামিয়া আলিয়া সানিয়া সোহা, কিন্তু ছোঁয়া কিছুতেই শুভ্রর রুমে যেতে রাজি হচ্ছে না।
“কিরে আপা এতোদিন সবাইকে পাগল করলে বিয়ে বিয়ে করে আর এখন শুভ্র ভাইয়ের রুমে যেতে চাইছোনা কেনো?”
“বেশি পক পক করিসনা তো। আমি কেনো ওই জেদি ঘাড়ত্যাড়াকে বিয়ে করতে পাগল হবো শুধু শুধু? আমি তো পাগলী হয়েছি শুধু আমার বালার জন্য, মধুর যেমন মিষ্টির অভাব নেই তেমন ওই বালাজোড়ার জন্যেও আমার ভালোবাসার কোনো অভাব নেই। আমার মধুবালা এখনো আমাকে দেওয়া হয়নি কি করে আর মনটা ভালো থাকে বলে।”
“আপা বালাজোড়া নাকি চু’রি হয়ে গেছে।”
“এ্যাঁ কী বলিস তুই এসব? তোর কী মাথা নষ্ট হয়েছে? শুভ্র ভাইয়ের মতো কী তোকেও এখন পাবনা পাঠাতে হবে?”
এবার লামিয়া বলে উঠে “হ্যাঁ রে আপা। সোহা ঠিক বলেছে। চোরকে নাকি শুভ্র ভাই দেখেছে।”
“কী বলিস শুভ্র ভাই কোথায় এখন?”
“শুভ্র ভাই তো চো’র’কে ধরতে চো’রে’র পিঁছু নিয়েছে।”
“আমার বালাজোড়া এ্যাঁএএএএএ।”
ছোঁয়া সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললো। সবাই অবাক। সামান্য বালার জন্য কেউ এতো পাগলামি করতে পারে কারো জানা ছিলোনা। আলিয়া তো সবার থেকে বেশি অবাক কারণ সবাই আগে থেকে ছোঁয়ার এমন পাগলামির সাথে অভ্যস্ত হলেও আলিয়া এসবের জন্য একদম নতুন। ছোঁয়ার বালার প্রতি এমন অদ্ভুত টান, পাগলামি, শুভ্র ভালোবাসা আলিয়ার মনে দাগ কে’টে’ছে, আলিয়া বেশ উপভোগ করছে বিষয়টা।
লিলি ছাড়া সবাই আছে এখানে। লিলি নিজের রুমে হয়তো বাসর করছে আর ছোঁয়া এখনো ন্যাকামী করতেছে। সব বোনেরা মিলে কোনোমতে বুঝিয়ে ছোঁয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। সোহা গিয়ে জায়েদা বেগমকে ডেকে নিয়ে আসে। উনি এসে ছোঁয়াকে আদর স্নেহ করে বুঝাই তারপর বলে শুভ্র কে রুমের দিকে যেতে দেখেছেন তিনি। ছোঁয়া এই কথা শোনেই “শুভ্র ভাই এসেছে, আমার বালা এনেছে তো?”
“তুই নিজে গিয়ে দেখে আয়।”
জায়েদা বেগম কথাটা বলার সাথে সাথেই ছোঁয়া দুই হাত দিয়ে লেহেঙ্গা উপরের দিকে একটু তুলে ধরে ছুটে যায় শুভ্রর রুমের দিকে।
শুভ্রর রুমের দরজা খোলা, ছোঁয়া হাত লাগাতেই দরজা খুলে যায়। ছোঁয়া একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখে পুরো রুম অন্ধকার। ছোঁয়া একটু ভয় পেয়ে ঢুক গিলে সরু কন্ঠে বলে উঠে “শুভ্র ভাই।”
#চলবে_ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।