মধুবালা পর্ব-১২+১৩

0
1232

#মধুবালা [১২]
#ফারজানা_আক্তার

ছোঁয়া ছুটে এসে সবার সামনেই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়। শুভ্র কোনোকিছু না ভেবেই ছোঁয়াকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। যেনো হালকা করে ধরলেই তার মধুবালা হাত ফসকে দূরে চলে যাবে তার থেকে। সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে।
হাসি আছে শুধু লিলির ওষ্ঠ জুড়ে। লিলি গিয়ে মান্নান মির্জাকে নিয়ে আসেন। মেয়ের এহেন কান্ডে মান্নান মির্জা সকলের সামনে কিছুটা লজ্জিত হয়ে আছেন।
টিয়া ফুঁসছে রা’গে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ লাল করে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়।

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই ছোঁয়া চলে আসে আর_______

একটু আগের ঘটনা___

দরজায় কটকট শব্দ হওয়ার সাথে সাথেই জায়েদা বেগম ছোঁয়া দরজার দিকে তাকায়। দরজা খোলা থাকায় স্পষ্ট দেখা যায় দরজায় লিলি দাঁড়ানো।
লিলি সাথে সাথেই ঘরে প্রবেশ করে জায়েদা বেগমকে বাহিরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ রে খিল লাগিয়ে দেয়। ছোঁয়া চোখের জল মুছার চেষ্টা করে বারংবার কিন্তু আজ কোনো বাঁধা মানছেনা অবাধ্য জল গুলো। আপন মনে গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।

লিলি কিছুটা কর্কশ কন্ঠে বলল “আর একবার কাঁদবি তো সত্যি সত্যিই খু’ন করবো আমি তোকে। কিভাবে তুই নিজের জায়গা অন্যকাউকে এভাবে দিয়ে দিচ্ছিস? কিভাবে তুই তোর শুভ্র ভাইকে আর বালাজোড়া অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছিস? একটুও কি বুক কাঁপছে না তোর? তুই কি জানিস শুভ্র ভাই তোকে ভালোবাসে ভীষণরকম ভালোবাসে। তুই যদি একবার ভাইকে বলিস তোর মনের কথা তবে এই বিয়ে এখনই বন্ধ করে দিবে শুভ্র ভাই। প্লিজ ছোঁয়া এতো বড় ভুল করিসনা, জেদের বসে নিজের জায়গা অন্যকাউকে দিয়ে দিসনা এভাবে।”

“শুভ্র ভাই আমাকে ভালোবাসলে ও নিজেই আমাকে বলতো, তোর থেকে জানতে হতোনা আমার এটা। আর যদি সত্যিই শুভ্র ভাই আমায় ভালোবাসতো তবে এতোটা কষ্ট দিতে পারতোনা আমাকে।

তাছাড়া আমি আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম ওই বালা জোড়া আর কখনো ছুঁইয়েও দেখবোনা আমি। তাই প্লিজ তুই যা এখান থেকে। একা থাকতে দে আমায়।”

“পারবি তো সহ্য করতে অন্যের পাশে নিজের ভালোবাসাকে আর অন্যের হাতে ছোটবেলা থেকে স্বপ্নদেখা বালাজোড়া?”

“চলে যাবো অনেক দূরে। এতোদিন তো মা ছিলো বলে তবুও কিছুটা গুরুত্ব ছিলো এই পরিবারে আমার কিন্তু এখন তো তাও থাকবেনা বিশেষ করে শুভ্র ভাইয়ের বিয়ের পর থেকে। তাই ভাবছি আব্বুকে আর সোহাকে ম্যানেজ করে চলে যাবো বহু দূরে। আমাকে সবাই অবহেলা করলেও আমি জানি সোহাকে সবাই ভালোবাসেন এই পরিবারের।

আমি জানিনা কেনো সবাই আমাকে অবহেলা করে কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে আমি হয়তো এই বংশের কন্যা নয়।”

“এই ছোঁয়া প্লিজ এভাবে বলিসনা। কোথাও যেতে হবেনা তোকে। শুভ্র ভাই পাঠিয়েছে আমায় তোর কাছে। কাজি চলে এসেছে। চল আমার সাথে। ”

“কোত্থাও যাবোনা আমি।”

“শুভ্র ভাই বলেছে তুই যদি সবার সামনে গিয়ে তোর ভালোবাসার কথা স্বীকার করিস তবে বাকিটা ভাইয়া ম্যানেজ করে নিবে এবং আজকেই তোকে বিয়ে করবে। তারপর টিয়ার একটা ব্যবস্থা নিবে বলেছে। তুই কী জানিস টিয়া একটা ষড়যন্ত্র করেছে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে এবং আব্বুকে ভুলভাল বুঝিয়ে বিয়ের ডেট দ্রুত করেছে যাতে ভাইয়া আর তোর সম্পর্ক ঠিক হওয়ার আগেই ও এই ঘরের বউ হয়ে যেতে পারে। প্লিজ চল আমার সাথে, এখন সব তোর হাতে। ”

“মানে কি বলছিস এসব? টিয়া তো খুব ভালো মেয়ে মনে হয়েছে আমার।”

“আমি বেশিকিছু জানিনা। ভাইয়া কিছু বলেনি আমায়, যেটুকু বলেছে তোকে বলেছি আমি। এবার চল দেরি করলে সব শেষ হয়ে যাবে। ভাইয়া বলেছে তুই গেলেই সবার সামনে ওই টিয়ার মুখোশ খোলাসা করবে।”

ছোঁয়া আর কিছু না ভেবে শুধু পরিবারের কথা ভেবে ছুটে গিয়েছে হলরুমে। হলরুমে পৌঁছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শুভ্রকে।

বর্তমান _____

টিয়া গিয়ে ছোঁয়াকে জোর করে শুভ্রর বুক থেকে আলাদা করে ঠা’স করে থা’প্প’ড় লাগিয়ে দেয় ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়া থমকে যায় মুহুর্তে। শুভ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই টিয়া এমনটা করায় শুভ্রর রা’গ বেড়ে যায় বহুগুণ। টিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠা’স ঠা’স কয়েকটা থা’প্প’ড় লাগিয়ে দেয় শুভ্র বিরতিহীন ভাবে টিয়াকে। ছোঁয়া হা করে দেখছে সব। টিয়ার মা বাবা আর বেলাল মির্জা নাজমা বেগম এগিয়ে এসে টিয়াকে বাঁচান শুভ্রর হাত থেকে। তবুও শুভ্র থেমে নেয়, সবার বাঁধা দেওয়া সত্বেও সে থা’প্প’ড় লাগাচ্ছে টিয়াকে। টিয়া আর বাকি সবাই হতভম্ব শুভ্রর এমন কান্ডে। বেলাল মির্জা এবার রে’গে’মে’গে হুং’কা’র দিয়ে উঠেন। বেলাল মির্জার হুং’কা’রে কোনো হেলদোল নেয় শুভ্রর। লিলি ছোঁয়াকে আগলে দাঁড়িয়ে আছে আর কানে কানে বলছে একটু অপেক্ষা করতে।
এবার মান্নান মির্জা একটু এগিয়ে এসে শুভ্রকে বলে “কি হয়েছে শুভ্র? হঠাৎ মেয়েটাকে এভাবে আ’ঘা’ত করছিস কেনো?”

“তো কি করবো মেজু আব্বু? এই রাস্তার মেয়ের সাহস হয় কি করে আমার মধুবালাকে আ’ঘা’ত করার?”

“তাইবলে একটা মেয়েকে তুই এভাবে অনবরত মা’র’তে থাকবি? এটা ঠিক না।”

“ওকে আমি মে’রে’ই ফেলবো আজ। আমার সামনে আমার ভালোবাসার গায়ে আ’ঘা’ত করবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো সব?”

এবার টিয়া গ’র্জে উঠে বলে “আমার সামনে আমার হবু স্বামীকে কোনো মেয়ে জড়িয়ে ধরলে তখন কি করা উচিৎ আমার? এমনকি আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু হওয়ার পর।”

“বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি।”

“দেখো শুভ্র তুৃমি কিন্তু ভুল করছো।”

“আচ্ছা তুই বল তাহলে সঠিকটা কি?”

“আমাদের বিয়ে।”

“লজ্জা করছেনা তোর? তুই কি মনে করেছিস তোর চালাকি আমি জানতে পারবোনা কখনো? কিন্তু আফসোস তোর চালাকি আমি আরো আগেই জেনেছি তাও তোর থেকেই।”

“মানে কি বলতেছো কি তুমি এসব? আমি কেনো চালাকি করতে যাবো?”

“আমি মির্জা বংশের একমাত্র আঙ্গুর বলিসনি তুই?”

কিছু বলছেনা এবার আর টিয়া। শুভ্রর প্রশ্নে ভয়ে চুপসে গেছে সে আর ভাবছে শুভ্র ছিলো তাহলে সেদিন দরজার বাহিরে। বড্ড বেশি আফসোস হচ্ছে টিয়ার এখন নিজের বোকামিতে।

“কি হলো চুপ হয়ে আছিস কেনো? শুধু মাত্র সম্পত্তির লোভে আমার মা বাবার ব্রেইন ওয়াশ করিসনি তুই?”

“বিশ্বাস করো শুভ্র আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।”

“আর একবার এই জ’ঘ’ন্য মুখে আমার নাম উচ্চারণ করবি তো জিহ্ব টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবো তোর। চিনিস আমায় তুই? তোর মতো মেয়েকে খু’ন করে জে’ল কাটলেও আফসোস থাকবেনা আমার কোনো কারণ তুই একজন খু’নি, আমার মেজু আম্মুর খু’নি তুই।”

এবার বেলাল মির্জা সহ সবাই টিয়ার দিকে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে। কথাটা শোনার সাথে সাথেই মান্নান মির্জা বসে পরে মেঝেতে। সোহাকে জায়েদা বেগম বাহু ধরে জড়িয়ে রেখেছে। ছোঁয়া একদম নরম হয়ে গিয়েছে জ্ঞান হারানোর মতো। লিলি কোনোমতে সামলাচ্ছে ছোঁয়াকে। আর শুভ্র অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিয়ার দিকে।

টিয়া যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে শুভ্রর মুখে এসব শুনে। সেলিনা পারভীন এর ব্যাপারটা যে সে তার মা বাবার সাথেও শেয়ার করেনি তবে শুভ্র জানলো কেমনে। ভয়ে ঘামছে টিয়া অথচ আমেজ চলছে শীতকালের। তেমন ভ্যাপসা শীত না পরলেও মোটামুটি শীত পরছে ইদানীং। শুভ্র আবারো ঝাঁঝালো কন্ঠে টিয়াকে বললো সব সত্যি বলার জন্য। টিয়া এখন পথ খুঁজছে কোনোরকম পালানোর জন্য। টিয়ার বাবা মা খুব গর্ব করে বললো তাদের মেয়ে কখনো কাউকে খু’ন করতে পারেনা। কিন্তু এদের কথা একটুও বিশ্বাস করলোনা শুভ্র। বেলাল মির্জাও এবার টিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলো কারণ উনি জানেন শুভ্র কখনো কারো উপর মিথ্যা অভিযোগ করেনা।

প্রায়ই অনেকক্ষণ পর টিয়া বাধ্য হয়েই বলা শুরু করলো______

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মধুবালা [১৩]
#ফারজানা_আক্তার

আমিই খু’ন করেছি ছোঁয়ার মাকে কারণ আমার মনে হয়েছিলো সেদিন রাতে আমার কথা সব ছোঁয়া শুনেছে। আমি সেদিন রাতে দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে দেখলাম ছোঁয়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। আর ছোঁয়া সবাইকে বলে দেওয়ার আগেই যদি আমি ওর মাকে শেষ করে দিতে পারি তবে ছোঁয়া আমার কথা ভুলে মায়ের শোকে ব্যস্ত হয়ে পরবে। আমি চাইলে ছোঁয়া কেও মা’র’তে পারতাম কিন্তু আমি ভালো করেই জানতাম যে ছোঁয়ার কিছু হলে শুভ্রকে আর পাওয়া হবেনা আমার, শুভ্র ছোঁয়ার শোকে শেষ হয়ে যাবে, আমি জেনে গিয়েছিলাম যে শুভ্র ছোঁয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমি ধন সম্পদের লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ক্ষমা করে দিন সবাই আমায় প্লিজ। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে এবং তাকে আমি খুব ভালোবাসি। শুধুমাত্র ধন সম্পদের লোভেই আমি শুভ্র কে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম এবং মানুষ খু’ন করতেও পিছুপা করিনি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ক্ষমা করে দিন সবাই আমায়। আমি কথা দিচ্ছি আমি সব ছেড়ে চলে যাবো অনেক দূরে।”

ন্যাকা কান্না করতে করতে কথাগুলো বলে টিয়া। টিয়ার মা বাবা ভীষণ অবাক। তাদের মেয়ে যে সত্যি সত্যি এমন একটা কাজ করে বসবে এটা তারা ভাবতেও পারেনি।
ছোঁয়ার মনে পরলো সেদিন ছোঁয়া লিলির সাথে দেখা করেই নিজের রুমে ফিরছিলো। ছোঁয়া এবার শক্ত হয়ে টিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওকে ঠা’স ঠা’স দুটো থা’প্প’ড় লাগিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে “তুই ক্ষমা চাইলেই কী আমার মা ফিরে আসবে আবার? পারবি আমার মাকে ফিরিয়ে দিতে তুই? পারবি আমাদের সংসার টা পূর্ণ করে দিতে তুই? পারবি আমার মায়ের আদর স্নেহ ফিরিয়ে দিতে? যদি পারিস তবেই ক্ষমা পাবি তার আগে নয়। ”

কথাগুলো বলেই আবারও কান্নায় ভে’ঙে পরে ছোঁয়া। শুভ্র এগিয়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে ছোঁয়ার বাহু জরিয়ে টিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে “কিভাবে মা’র’লি তুই মেজু আম্মুকে যে আমরা কেউ একটুও বুঝতে পারিনি?”

“বালিস চেপে। সবাই যখন নাস্তা করতে বসেছিলো তখন আমি আন্টির রুমে গিয়েছিলাম। আন্টি আমাকে দেখে বসতে বললেন। আমি বসলাম আন্টি শুয়ে ছিলেন। বলছিলেন শরীর নাকি কিছুটা অসুস্থ তাই। আমিও এই সুযোগে আমার কাজ সেরে চুপচাপ এসে নাস্তা করতে বসে গিয়েছিলাম।”

“তুই বল এখন তোকে কি করা উচিত?”

“প্লিজ শুভ্র ক্ষমা করে দাও আমায়?”

“লজ্জা করছেনা তোর? কোন মাটি দিয়ে তৈরি রে তুই? তোকে এখন নিজের মামাতো বোন ভাবতে ঘৃ’ণা হচ্ছে আমার।

শুভ্র ভাই তুমি কিভাবে জানলে টিয়া মেজু আম্মুকে মে’রে’ছে?”

খুব রা’গ নিয়ে কথাগুলো বলে লিলি। শুভ্র একটু গলা খাখারি দিয়ে বলে “যখন সবাই আহাজারি করছিলো মেজু আম্মুর মৃত্যুতে তখন আমিও খুব ভে’ঙে পরছিলাম আর ছোঁয়ার অবস্থা দেখে ওর কাছে আসার সাহস পাচ্ছিলাম না তাই দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ তখন আমার চোখ যায় টিয়ার দিকে। টিয়ার ঠোঁটে অদ্ভুত রহস্যময় হাসি দেখে আর আগের রাতের কথাগুলো শুনে কেনো যেনো ওর উপরে সন্দেহ হলো কারণ আমাদের মেজু আম্মুর তো তেমন কোনো রোগ ছিলোনা যে এভাবে হঠাৎ মৃত্যু হবে তাই আমি সবার আঁড়ালে মেজু আম্মুর রুমে যায় তখনই এবং ওখানে গিয়ে অনেক খুঁজাখুঁজির পর একটা বালিসের সাথে পেলাম নীল রংয়ের একটা নক। আর আমাদের বাসায় এমন রংয়ের আলাদা কেনা নক টিয়া ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করেনা তারপর দেখলাম ভাগ্যক্রমে আমি ওই রুম থেকে আসার পরেও ওই নক গুলো টিয়ার নকে লাগানো ছিলো শুধু একটা নক বাদে।

বাই দ্যা রাস্তা এতক্ষণ টিয়া নিজের মুখে যা স্বীকারোক্তি করেছে সব রেকর্ড করা হয়েছে তাই ওর বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।”

সবাই স্তব্ধ। থমথমে পরিবেশ। ছোঁয়ার গাল বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে। টিয়া খুব মিনতি করে বলছে ওকে ক্ষমা করার জন্য। এবার বেলাল মির্জাও মুখ ফিরিয়ে নিলেন টিয়ার থেকে। নাজমা বেগম খুব অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। টিয়া যে তার ভাইয়ের মেয়ে। শুভ্র যদি এই বিষয়ের জন্য উনার থেকে আরো দূরে চলে যান এটার জন্যই উনার ভয় হচ্ছে বেশি।

নীরবতা ভে’ঙে টিয়া বললো ও ঢাকা চলে যাবে। সাথে সাথেই শুভ্র পুলিশ ডাকে। এবার টিয়া সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে যায়। মহিলা পুলিশ এসে টিয়ার হাতে হাত খরা পড়ালো। টিয়া চিৎকার করছে কিন্তু আজ টিয়ার চিৎকারে কেউ কান দিচ্ছেনা শুধু ওর বাবা মা ছাড়া।
দেখতে দেখতে টিয়া সবার চোখের আঁড়ালে চলে গেলো। এবার কাজি সাহেব মুখ খুললেন। নরম কণ্ঠে বললেন “যা বুঝলাম বিয়ে তো আর হবেনা এবার আমি চলি তবে।”

এটা বলেই কাজি চলে যেতে নিলে শুভ্র আঁটকায় উনাকে। সবাই আবারও অবাক হয় কারণ শুভ্র বলে বিয়ে এখনই হবে শুভ্র ছোঁয়ার। কথাটা শুনতেই বেলাল মির্জা আর আনজুমা খাতুন রেগেমেগে কয়েকটি কথা শুনিয়ে দেন শুভ্রকে। শুভ্র তবুও বলে সে ছোঁয়াকে বিয়ে করবে এবং আজই করবে। ছোঁয়া এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলো, এখন সে মাথা উঁচু করে শুভ্রর দিকে তাকিয়েছে কারণ এই প্রথম শুভ্র ছোঁয়ার জন্য বেলাল মির্জা আর আনজুমা খাতুনের সাথে তর্ক করছে। জীবন মির্জা কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারেননি কারণ উনার কথা বলার মতো যে মুখ নেই। মান্নান মির্জা কিছু বলেছেননা আজ কারণ মান্নান মির্জার জায়গায় আজ শুভ্র দাঁড়ানো, শুভ্র আজ ছোঁয়ার পাশে আছে তাই মান্নান মির্জা নিজের জায়গায় বসে দেখছে যা হচ্ছে। স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি এখন আর নিজের মধ্যে নেই। লিলি ওর বাবা আর দাদির উপর বেশ অসন্তুষ্ট তবে শুভ্রর প্রতি ভীষণ সন্তুষ্ট আজ।

লিলি মনে মনে ভাবছে এভাবে যদি সে আলিফ কে পেয়ে যায় তবে আর কোনো চাওয়া থাকবেনা ওর কিন্তু আলিফের মধ্যে যে অন্য রহস্যের বাসা তা লিলি ঠিকই টের পেয়েছে শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছে সে।
বেলাল মির্জার গর্জনে লিলির হুঁশ ফিরে।

“এই ছোঁয়া কে আমি কখনোই আমার ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবোনা। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি আর কিছু শুনতে চাইছিনা।”

“তাহলে তুমিও শুনে রাখো আমি ছোঁয়াকেই বিয়ে করবো তা আজকেই। ছোঁয়াকে নিয়ে আমি দূরে চলে যাবো এই পরিবার থেকে। অনেক দূরে চলে যাবো। যেভাবে ছোটবেলায় আমার মা আমাকে নিজের থেকে এই পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো সেভাবে এখন আমি নিজেই নিজেকে সবার থেকে আঁড়াল করে নিবো। শুধু পার্থক্য হবে সেবার আমি ছোট ছিলাম আর এখন আমি বড় হয়েছি এবং আমার সাথে আমার ভালোবাসার মানুষ থাকবে এবার।”

“দেখ শুভ্র তুই কিন্তু তোর মাকে এখনো ভুল বুঝে আছিস। হ্যাঁ আমি প্রথমে চাইনি তোকে বোডিং স্কুলে ভর্তি করতে কিন্তু পরে আমিও চেয়েছিলাম আর তাই তোর মা তোকে ভর্তি করতে পেরেছে। তোর ভালোর জন্যই তোর মা তোকে বোডিং স্কুলে ভর্তি করেছিলো। তুই ছোটবেলায় প্রচুর দু্ষ্টু ছিলি, রোজ মানুষে তোর নামে অভিযোগ নিয়ে আসতো বাসায় তাই বাধ্য হয়ে তোর মা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এবং আমরাও তাতে মতামত দিয়েছিলাম। শুধু শুধু এতোগুলো বছর ধরে তুই তোর মাকে ভুল বুঝে দূরে সরে আছিস তার থেকে। এখন আবার এসব বলে তুই তোর মাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছিস বুঝতে পারছিস তুই?”

“এতো বুঝাবুঝির দরকার নাই আমার। ছোঁয়াকে মেনে নিলে আছি আমি নয়তো চলে যাবো ওকে নিয়ে। এবার সিদ্ধান্ত তোমাদের হাতে। আমার নাহ আমার মায়ের ভাইয়ের মেয়ের মতো ধন সম্পদে এতো লোভ নাই আবার। আমি সাধারণ ভাবে চলতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাই তো অন্য কোম্পানিতে উঁচু পদে জব করি নিজপর যোগ্যতায়।”

“দেখ দাদুভাই আমার জন্য তোরা সবাই সমান। তাই বলে বাড়ির মেয়েকে বাড়ির বউ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নাহ।”

“ওহ্ সিরিয়াসলি দাদিই? তোমরা ছোঁয়াকে এই পরিবারের একজন মানো? বিশ্বাস করো ছোঁয়া এই বংশের-ই মেয়ে?

আর এতো লুকালুকি করিও না প্লিজ। সব জেনে গিয়েছি আমি। ছোঁয়ার জন্ম পরিচয় জেনে গেছি আমি এবং এটাও জেনে গিয়েছি যে ছোঁয়া এই বংশের-ই মেয়ে এবার তোমরা বিশ্বাস করো বা না করো তাতে আমার কিছুই যাই আসেনা।”

ছোঁয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে। আজ যেনো সে এক নতুন শুভ্রকে দেখছে।
ছোঁয়ার বুকটা হঠাৎ ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলো। ওর জন্ম পরিচয় কি হতে পারে? কেনো সবাই ওর সাথে এমন আচরণ করে তা সে জানার জন্য অধীর আগ্রহে আছে।

সবাই আজ শুভ্রকে নতুন রুপে দেখছে যেনো এমনভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

এবার শুভ্র ওর মা নাজমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন “কি আপনিও কী রাজি নয় আমার আর ছোঁয়ার বিয়েতে। থাক কাউকেই রাজি থাকতে হবেনা। কাজি মোল্লা মামা বিয়া পড়ান।”

সবাইকে চমকে দিয়ে নাজমা বেগম বলে উঠলেন “এই বিয়ে হবেনা এভাবে। আমি হতে দিবোনা এই বিয়ে। আমার ছেলের বউ আমিই পছন্দ করবো। নিজ হাতে সাজাবো আমি আমার ছেলের বউকে। ছোঁয়ার মধ্যে আমি আমার ছেলের বউয়ের কোনো প্রতিচ্ছবিই পাচ্ছিনা।”

শুভ্র রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই_____

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে