মধুবালা পর্ব-১০+১১

0
1289

#মধুবালা [১০]
#ফারজানা_আক্তার

প্রথম দেখায় আপনাকে খুব ভালো লেগেছিলো আমার স্যার কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি কখনো। ফেসবুকে সবসময়ই ফলোও করি কিন্তু কখনো একটা মেসেজ দেওয়ার সাহস যোগাতে পারিনি। সত্যিই মনটা বেশ আনচান করে। কিন্তু আপনি যে এভাবে হুট করে মেসেজ দিয়ে বসবেন তা কল্পনার বাহিরে ছিলো। পুরোটাই যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে আমার।

সত্যি সত্যি স্বপ্ন দেখছিনা তো আমি?”

মেসেজটা লিখে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আলিফের নাম্বারে সেন্ড করে দেয় লিলি।
ভীষণ নার্ভাস হয়ে আছে লিলি। বুকটা যেনো অদ্ভুত রকমের অনুভূতিতে ভরে উঠেছে। মুখটা লজ্জায় লালছে হয়ে উঠেছে। ফর্সা মুখটা লালছে রঙে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।

আলিফ মেসেজটা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। আলিফ কখনোই ভাবেনি তার মায়াবীনি তাকে মেসেজের রিপ্লাই দিবে তাও এতোটা সুন্দরভাবে। আলিফের যেনো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না।

“স্বপ্ন নয় সত্যি। হৃদয়ের সবটা জোড়ে কিভাবে তুমি মিশে গিয়েছো মায়াবীনি? তুমি কি জাদু জানো?”

“আমার নাম্বারটা কোথায় পেলেন স্যার?”

“কিছু কথা অস্পষ্ট থাক। সব কথা একবারেই বললে পরে বলার মতো কথা খোঁজে পাবোনা যে।”

“বড্ড দুষ্টু স্যার আপনি।”

“তুমিও তো কম নাহ মায়াবীনি। প্রথমদিন-ই আমাকে এলোমেলো করে ছেড়েছো।”

এভাবে চলতে লাগলো আলিফ লিলির বার্তা আদান-প্রদান। দু’জনের মনেই দুজনের জন্য অসীম ভালোবাসার পাহাড়। কিন্তু কে জানে এর পেঁছনেও রয়েছে কোনো রহস্যের গন্ধ।
**********
দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসছে শুভ্রর বিয়ের দিন।
একদিন কে’টে গেছে সাতদিন থেকে। হাতে আছে আর মাত্র ছয়দিন। শুভ্র এখন মোটামুটি সুস্থ। সকালে নাস্তা শেষ করেই শুভ্র বাড়ির সকল ছোট সদস্যকে ডাকে ছাঁদে কিন্তু ছোঁয়া আসেনি। টিয়াও আছে শুভ্রর পাশে। লিলি আর সানিয়া কয়েকবার ডেকেছে ছোঁয়াকে কিন্তু ছোঁয়া বিভিন্ন ব্যাস্ততা দেখিয়ে তা এড়িয়ে গেছে।
সানিয়া খুব উদাস মনে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং ঘেঁষে। কাউকে সে তার মনের কথাগুলো বুঝতে দিতে চাইনা তবুও এই টিয়া মেয়েটাকে বড্ড বেশি হিংসা হয় সানিয়ার।
সানিয়ার বড় বোন লামিয়া ইন্টারে পড়ে। লামিয়া মাঝে মাঝে সন্দেহ করে সানিয়ার অদ্ভুত আচরণ শুভ্রর প্রতি কিন্তু কখনোই সে এই সন্দেহকে বাস্তব হতে দিতে চাইনা। তবে আজ সানিয়ার ফেস দেখে লামিয়ার সব বুঝা হয়ে গিয়েছে নিজে নিজে।
শুভ্র সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে ছোঁয়াকে ডাকতে যায়। টিয়া সাথে যেতে চাইলেও সে নিয়ে যায়না ওকে।
শুভ্র নিচে চলে যাওয়ার পর লামিয়া সানিয়াকে ডেকে ছাঁদের এক কোণে নিয়ে যায়। সোহা টিয়াকে ব্যস্ত রেখেছে এটা সেটা নিয়ে বকবক করতে করতে। আর লিলি তো মগ্ন আলিফ স্যারের ভাবনায়।

“দেখ সানিয়া তোর এই বয়সটা একটা আবেগি বয়স। আমি জানি তুই শুভ্র ভাইকে পছন্দ করিস কিন্তু এটা কখনোই ভালোবাসা হতে পারেনা। আমি তোর দোষ দিবোনা বোন, এটা বয়সের দোষ। তবুও নিজেকে একটু কন্ট্রোল কর প্লিজ। এভাবে মন খারাপ করে থাকিসনা। দেখবি কলেজ লাইফে পা দিলেই শুভ্র ভাইয়ের ভুত মাথা থেকে চলে যাবে তোর।”

“আপা প্লিজ এই কথাটা কারো সাথে শেয়ার করিসনা। আমি জানিনা তুই কিভাবে জানলি কিন্তু সত্যি বলতে আমি নিজেও জানিনা কেনো এতো ভালো লাগে শুভ্র ভাইকে আমার। শুভ্র ভাইয়ের চোখগুলো খুব নেশালো রে আপা।”

“ঠিক হয়ে যাবে সব। চল সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবি। আর হ্যাঁ চিন্তা করিসনা, কাউকে বলবোনা আমি।”

লামিয়া সানিয়াকে হাত ধরে সবার সাথে গিয়ে দাঁড়ায়। সানিয়ার ফেস আগে থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বোধয়। বোনের কথাগুলো খুব ভালোভাবে বুঝেছে সানিয়া। সানিয়া খুব বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। সহজেই কঠিন বিষয় বুঝে ফেলে স্বাভাবিক ভাবেই।
************
শুভ্র সিঁড়ি বেয়ে নেমে সোজা ছোঁয়ার রুমে গিয়ে ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে “কী? সেদিন তো ঠিকই একটু কথা কাটাকাটিতে আমার গালে থা’প্প’ড় লাগিয়ে দিতে পেরেছিস চট করে আর আজ সহ্য করতে পারছিস নাহ আমার বিয়েটা অন্যকারো সাথে তাইনা? কিন্তু তোকে যে সহ্য করতে হবে মধুবালা। তোর শুভ্র ভাই তোর বালাজোড়া তোর চোখের সামনেই অন্যের হয়ে যাবে আর তোকে সব সহ্য করতে হবে।”

থতমত খেয়ে যায় হঠাৎ এমনটা হওয়ায় ছোঁয়া। ছোঁয়া নিজের রুমে বসে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো ঠিক তখনই শুভ্র এসে ওর হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে কথাগুলো বলে। ছোঁয়া অনেকক্ষণ চুপ থেকে হাত ঝা’ড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে “আপনি বিয়ে করুন বা যা-ই করুন না কেনো তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই বুঝেছেন। কেনো আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ভালোবাসি? কখনো বলেছি আপনাকে ভালোবাসি আমি? হ্যাঁ ওই বালাজোড়ার জন্য পাগল ছিলাম আমি কিন্তু এখন আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। তখন অবুঝ ছিলাম তাই এমন পাগলামি করতাম কিন্তু এখন আমি বড় হয়েছি বুঝ হয়েছে আমার। এখন আর ফা’ল’তু জিনিসের প্রতি লোভ নেই আমার। তাই আপনিও এখন থেকে আমাকে আর মধুবালা ডাকবেননা কারণ ওই বালার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই আমার আর।”

ছোঁয়া এতো কথা বললেও ছোঁয়ার কোনো কথায় শুভ্রর হ্যালদোল হয়নি। শুভ্র রা’গে ফুঁসছে শুধু ছোঁয়ার মুখে আবারো আপনি শব্দ টা শোনে। শুভ্রর চোখগুলো বেশ লাল হয়ে উঠেছে। কথা থামিয়ে ছোঁয়া কিছুটা ভয়ে একটু পিঁছিয়ে গিয়ে বলে “স সরি শুভ্র ভাই। আর কখনো আপনি বলবোনা।”

“আচ্ছা চল, সবাই ছাঁদে আছে। তুইও চল। সবাইকে শপিং করাবো। সবাই আমার গায়ে হলুদে একইরকম ড্রেস পরবি।”

কথাটা বলেই শুভ্র চলে যায়। ছোঁয়া থ মে’রে যায়। শুভ্র রে’গে গিয়েও কেনো নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো ছোঁয়া বুঝতে পারেনি।
আর শুভ্র যেতে যেতেই একটা দুষ্টু হাঁসি দেয়। ভ’য়ং’ক’র হাসি।
শুভ্র এখনো বুঝতে পারছেনা ছোঁয়া যে ওকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে। শুভ্র মনে করে শুধু বালার জন্যই ছোঁয়া শুভ্রকে বিয়ের কথা বলতো। তাই শুভ্র হাসে, শুভ্র যে ছোঁয়ার থেকে ওর বালা ছি’নি’য়ে ওর সামনেই অন্যের হাতে পরিয়ে দিবে এটা ছোঁয়া সহ্য করতে পারবেনা কখনো। শুভ্র ভালো করেই জানে যতই ছোঁয়া মুখে বলুক ও চাইনা বালাজোড়া আর তবুও এই বালার প্রতি এক অদ্ভুত দূর্বলতা আছে ছোঁয়ার।

ছোঁয়া আর কিছু না ভেবে শুভ্রর পেঁছন পেঁছন যায়।

সবাই মিলে ঠিক করলো নীল ওড়না আর পায়জামা নিবে আর হলুদ জামা নিবে সব মেয়েরা। আর সেটাই হলো।
শুভ্র সবাইকে নিয়ে শপিংমলে চলে গেলো। সেখানে টিয়াকে নিয়ে খুব লাফালাফি করলো শুভ্র ছোঁয়ার সামনে। ছোঁয়ার তা দেখে খারাপ লাগলেও ছোয়া শুভ্রর সামনে কিছু প্রকাশ করেনি। বেশ অভিমান হয় এতে শুভ্রর।

“কেনো ভালোবাসতে পারলিনা তুই আমায় মধুবালা? কোনো আমাকে এভাবে জড়িয়ে নিলি তোর সাথে? তুই ছাড়া যে আর কারো সাথে ঘর বাঁধতে চাইনা আমি। তবে কেনো তুই বুঝিসনা? কেনো এতোটা খামখেয়ালি করিস তুই? কেনো আমাকে একটুখানি ভালোবাসতে পারলিনা তুই? খুব যে ভালোবাসি তোকে?”

টিয়া একটু সামনে এগিয়ে গেলে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে শুভ্র কথাগুলো।
*************
সারাদিন শপিং করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে লিলি ফ্রেশ হয়ে একটুও বিশ্রাম না করেই কল দেয় আলিফকে। ওদের কথোপকথন এখন মেসেজ থেকে কল পর্যন্ত গড়িয়েছে। বেশ ভালোই সময় কাটে একে অপরের সাথে ওদের।
লিলি আলিফের সাথে কথা বলছিলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। লিলি দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়ায় ছোঁয়া নক না করেই রুমে ঢুকে যায়।

ছোঁয়া বেশ অবাকই হয়েছে লিলির কথা শোনে। ছোঁয়া বুঝতে পেরেছে লিলি কোনো ছেলের সাথেই কথা বলতেছে কিন্তু ছেলেটা কে সেটা সে এখনো জানেনা।
ছোঁয়া গিয়ে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে লিলিকে। হঠাৎ চমকে উঠে লিলি। হাত থেকে পরে যায় লিলির ফোন। ছোঁয়া লক্ষ করলো লিলির ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে আলিফ নামটা। চোখ বড় বড় করে ছোঁয়া লিলির দিকে তাকায়।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মধুবালা [১১]
#ফারজানা_আক্তার

তুইও তো ভালোবাসিস ছোঁয়াকে। তুই তো বুঝিস ভালোবাসার মর্ম তবে কেনো এমন করছিস আমার সাথে? ছোঁয়া তার জেটাতো ভাই শুভ্রকে ভালোবাসে শুধু। প্লিজ ফিরিয়ে দিসনা আমায়। ভীষণ ভালোবাসি তোকে।

কান্নারত কন্ঠে তানহা কথাগুলো বলে রকিকে। রকি কানে ফোন চেপে রেখে শুনছে সব। ছোঁয়া শুভ্রকে ভালোবাসে কথাটা শুনতেই জলে চোখ ভরে উঠলো রকির। রকি যে ছোঁয়াকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছে। তানহা রকির কোনো রেসপন্স না পেয়ে চুপ করে শুনছে রকির নিশ্বাসের শব্দ। এই অদ্ভুত রকমের শব্দ টাই যে তানহাকে আরো পাগল করে তুলেছে।
রকি কিছু না বলেই কল কেটে দেয়। তানহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
*********
ছোঁয়া কিছুতেই মানতে পারছেনা আলিফ লিলির সম্পর্ক। ছোঁয়ার মোটেও ভালো লাগেনা আলিফ নামের পুরুষটাকে। আলিফের নাম শুনতেই ছোঁয়ার মুখে ফুটে উঠে বিরক্তির রেখা। আলিফকে যেনো ছোঁয়ার শ’ত্রু’র মতো মনে হয় কিন্তু এর কারণ সে নিজেও জানেনা।
ছোঁয়া মুখ গু’মো’ট করে বসে আছে। লিলি বসে আছে অপরাধীর মতো। লিলির বেলকনিতে একটা দোলনা আছে। এই দোলনাতেই দু’জন বসে আছে আর নীরবতা পালন করছে।
সব নীরবতা ভে’ঙে লিলি বলে “এই ছোঁয়া প্লিজ এমন মুখ করে বসে থাকিস না। আলিফ স্যার সত্যিই অনেক ভালো রে। আলিফ স্যারের বোন আলিয়া আমাদের সানিয়ার সাথে একই কলেজে একই সেকশনে পড়ে। আর আমার নাম্বার টা নাকি আলিয়া সানিয়ার থেকে নিয়ে আলিফ স্যারকে দিয়েছে।

তুই শুধু শুধুই চিন্তা করছিস।
আলিফ স্যার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হলেও মনটা বেশ ভালো আলিফ স্যারের। খুব ভালোবাসে আমায় আলিফ স্যার।

এই ছোঁয়া। ”

লিলি কথা বলেই যাচ্ছে। ছোঁয়া এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে বাগান বিলাশ করছে।
লিলির বেলকনি থেকে বাগানের ফুলগুলো বেশ দারুণ লাগে দেখতে। ছোঁয়ার রুম নিচে হওয়ায় তেমন ভালো করে উপভোগ করতে পারেনা সে। ছোঁয়াকে চুপচাপ দেখে লিলি খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। মুহুর্তেই ফিক করে হেসে দেয় ছোঁয়া। লিলিও হাসে।
************
টিয়া শুভ্রর রুমে আসে ওকে গুডনাইট বলার জন্য কিন্তু শুভ্র ওকে পাত্তা দেয়না। এতে টিয়ার খুব ক্ষোভ হয় ছোঁয়ার উপর। টিয়া জেনে গেছে শুভ্র যে ছোঁয়ার সাথে জেদ ধরেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে। টিয়া তার ফুফি নাজমা বেগমকে অনেক দিন ধরেই বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে এই বিয়ের জন্য। তারপর নাজমা বেগম বেলাল মির্জাকে বলে শুভ্রকে জানিয়েছে।
টিয়া নিজের রুমে গিয়ে রা’গে ফুঁসছে আর ছোঁয়াকে বাজেভাবে গা’লি দিচ্ছে। টিয়ার বাবা মা কোনোভাবে ওকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। টিয়া রা’গি কন্ঠে বলে উঠে “আরে আব্বু আম্মু তোমরা বুঝতেছো নাহ। এই মির্জা বংশের একমাত্র আঙ্গুর শুভ্র। ওকে হারালে কিভাবে চলবে বলো? এই মির্জা বংশের সব ধন সম্পদ শুভ্রর। শুভ্রকে জিততে পারলে আর পিঁছু ফিরে তাকাতে হবেনা আমাদের। তোমরা কিছু না করলে আমি কিন্তু ওই ছোঁয়াকে শেষ করে দিবো, খু’ন করে ফেলবো আমি ওকে মনে রেখো তোমরা।
ছোঁয়ার মতো দুই টাকার মেয়েকে গু’ম করতে আমার ১সেকেন্ডও লাগবেনা।”

“দেখো আম্মু মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে এখন। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তো সব তোমার হাতে। আর শুভ্র বাবা যদি একবার জানে ছোঁয়ার জন্ম পরিচয় তবে ছেলেটা নিজেই ছোঁয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।”

টিয়ার বাবা কথাটা শেষ করতেই টিয়ার মা উনার হাত চেপে ধরে বলেন “দেখুন ওইদিকে। দরজার বাহিরে মনে হয় কেউ আছেন। আমাদের কথা কেউ শুনে ফেললো না তো?”

টিয়া ওর মাকে থামিয়ে দ্রুত দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। টিয়ার মনে এক অজানা সন্দেহ বাসা বাঁধতে শুরু করলো।
আর কয়দিন পরেই তো বিয়ে। এটা ভেবেই নিজেকে সান্তনা দেয় টিয়া।
*********
শুভ্র ছোঁয়ার মা সেলিনা পারভীনের কাছে গিয়ে বসে আছে। কোনো কথা বলছেনা। সেলিনা পারভীন কফি করে এনে দিলেন। শুভ্র কফিতে চুমুক দিয়ে সেলিনা পারভীনের দিকে তাকিয়ে “মেজু আম্মু একটা সত্যি কথা জানতে চাইলে বলবে কী আমায়। প্লিজ মেজু আম্মু না না করিওনা।”

*
রাত হয়েছে অনেক। ছোঁয়ার ঘুম আসছেনা। সে এখনো ভাবছে সত্যি কী বিয়ে করে ফেলবে শুভ্র ভাই অন্যকাউকে? এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো ছোঁয়া। বুকটা যেনো শূন্য হয়ে আছে ভীষণ।

সকালে ঘুম ভা’ঙ’তে’ই ছোঁয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।
মোনাজাতে চাইলো শুধু শুভ্রকে আর বালা জোড়া।
পরে নিজের এমন চাওয়াতে নিজেই হেঁসে উঠলো।

সবাই উপস্থিত আছে নাস্তার টেবিলে কিন্তু সেলিনা পারভীন নেই। ছোঁয়া ওর মায়ের রুমে গিয়ে দেখে ওর মা ঘুমিয়ে আছেন।
ছোঁয়া অনেক ডাকাডাকি করলো সেলিনা পারভীন কে কিন্তু সেলিনা পারভীন আর উঠলেন না। শান্তির ঘুম দিয়ে চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য।

ছোঁয়া কাঁদতে কাঁদতে বারবার চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। পরিবারের সব মহিলা/মেয়েরা ছোঁয়াকে সামলাতে ব্যাস্ত। কিন্তু সামলাতে বেশ কষ্ট হয়ে পরছে ওকে। একমাত্র মা ছাড়া আর কারো কাছে ছোঁয়া ছোটবেলা থেকে নিঃস্বার্থ আদর ভালোবাসা পায়নি। শুভ্র দূর থেকে দেখছে সব কিন্তু কাছে এসে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরার মতো সাহস সে পাচ্ছেনা। শুভ্র নিজেও কাঁদছে।
মুহুর্তেই মির্জা বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কিন্তু কারো নজরে পরেনি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা টিয়ার রহস্যময় হাসি।

মান্নান মির্জা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত। সেলিনা পারভীনকে কবর দিয়ে এসে বসে আছেন অসহায়ের মতো।
ছোঁয়া ছুটে গিয়ে মান্নান মির্জাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভে’ঙে পরেন। কাঁদতে কাঁদতে আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছোঁয়া।

সোহার চোখের জল যেনো শুকিয়ে গেছে। অষ্টাদশীর মনটা একেবারেই ভে’ঙে গিয়েছে মায়ের হঠাৎ মৃত্যুতে।
ছোঁয়া আর সোহা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে কিন্তু ছোঁয়া এখনো কান্নায় লুটিয়ে থাকলেও সোহা মূর্তি হয়ে বসে আছে এক কোণে।
**********
কেটে গেলো কয়েকদিন। আজ শুভ্রর বিয়ে। গায়ে হলুদ আর করা হলোনা বড় অনুষ্ঠান করে।
শুভ্র বিয়েটাও বন্ধ করতে চেয়েছিলো কিন্তু বেলাল মির্জা রাজি হয়নি।
বেলাল মির্জা বলেছেন অনুষ্ঠান পরে হোক কিন্তু বিয়েটা হয়ে যাক। সবাই সেটা মেনে নিয়ছেন।
একবার এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়ে পিঁছিয়েছে তাই এখন আর পিঁছাতে চাননা তিনি বিয়েটা। শুভ কাজ নাকি এভাবে বারবার পিঁছানো ঠিক না। তাই মান্নান মির্জা আর কিছু বলেননি কিন্তু উনি জানিয়ে দিয়েছেন ছোঁয়া সোহা আর উনি এই বিয়েতে উপস্থিত হতে পারবেননা।
এবার কিন্তু আনজুমা খাতুনও চেয়েছিলেন বাড়ির শোক কেটে গেলে তারপর বিয়েটা নামাতে কিন্তু কারো কথায় পাত্তা দেননি বেলাল মির্জা। বেলাল মির্জার মনে টিয়া ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে দেরি হলে ছোঁয়া শুভ্রকে বস করে নিতে পারে আর বেলাল মির্জা ছোঁয়াকে মোটেও সহ্য করতে পারেননা।

টিয়া বঁধু সাজার জন্য পার্লারে চলে গিয়েছে। বাড়ির ছোটদের মনেও আনন্দের ছিটাফোঁটা নেই। লিলি তো সকাল থেকেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে একা। শুভ্র লিলির দরজায় কয়েকবার নক করেছে কিন্তু লিলি ইচ্ছে করেই দরজা খুলেনি।

জায়েদা বেগম ছোঁয়ার চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো এখনও কোমর ছুঁতে পারেনি তবে আগে থেকে কিছুটা লম্বা হয়েছে। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। জায়েদা বেগম অনেক বুঝিয়েছেন তবুও ছোঁয়ার কান্না থামছেনা।
জায়েদা বেগম নিজেও কাঁদছেন আঁচলে মুখ লুকিয়ে কিন্তু ছোঁয়াকে তা বুঝতে দিচ্ছেননা উনি।

টিয়া বঁধু সেজে ফিরেছে পার্লার থেকে। শুভ্রকে বর সাজে সাজিয়েছেন ওর ছোট চাচা জীবন মির্জা। যদিও জীবন মির্জারও মনমানসিকতা ভালো নেই তবুও এইটুকু করা যে তার কর্তব্য।

কাজিও চলে এসেছেন। শুভ্রর মনে হচ্ছে সব যেনো খুব দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। আরেকটু দেরি হলেও মন্দ হতোনা। শুভ্রর বুকটা ভার হয়ে উঠেছে হঠাৎ। পাশাপাশি বসানো হয়েছে শুভ্র টিয়াকে। টিয়ার মুখে রহস্যময় হাসি।

এইদিকে কাজি এসেছে শুনে জায়েদা বেগমকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয় ছোঁয়া। তখনই দরজায় কেউ নক করতেই সেদিকে তাকায় দু’জনেই।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে