ভুল বুঝনা আমায় পর্ব-০৪

0
1145

#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৪]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

ট্রেনের মধ্যে ওঠি ঈশান বাহিরে দিকে তাকিয়ে থাকে। নুসরাত এবার ঈশানকে বলল — চিন্তা করতে হবে না আমি ট্রেন থেকে নেমেই আপনার টাকা দিয়ে দেবো।

ঈশান মনে মনে বলতে থাকে — কি মেয়ের পাল্লায় পড়লাম রে। মেয়েটা একটু চুপচাপ থাকতে পারেনা। একটা মানুষ কি ভাবে এতো কথা বলতে পারে?

এমন সময় ভাবী কল দিলো। তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম। ভাবী বলল — ঈশান ঢাকা পৌছে গেছো নাকি?

— নাহ ভাবী। এখনো ট্রেনে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যাবো।

— আচ্ছা সাবধানে থেকো। তোমাকে সবাই খোজা খুঁজি করছে। অনেক ঝামেলা হচ্ছে এখানে। আর হে আমি তোমাকে লুকিয়ে ফোন দিয়েছি। ঢাকা পৌছে আমাকে ফোন দিবে। আর যদি কোনো টাকার প্রয়োজন হয় আমাকে অবশ্যই বলবে। একদম লজ্জা পাবেনা ভাই ঠিক আছে?

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— রাখলাম এখন ভালো থেকো।

— ভাবী আব্বু আম্মু দাদি সবাই কেমন আছে?

— সবাই ভালো আছে। তোমাকে তাদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। রাখলাম ভাই আল্লাহ হাফেজ।

এবার ঈশান মোবাইলে গান ছেড়ে দিয়ে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন ঢাকায় পৌছে যায়। নুসরাত আগে ট্রেন থেকে নেমে যায়। ঈশান একটু পরে ট্রেন থেকে নেমে দেখে নুসরাত নেই। ঈশান একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাটতে শুরু করে দেয়। মনের ভিতরে ভয়। নতুন যায়গা রাস্তাঘাট কিছুই চিনেনা। যেদিকেই তাকায় সেদিকেই শুধু বড় বড় দালানকোঠা। ঈশান হাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আবার খিদেও পেয়েছে। তাই সে একটা ছোট খাটো খাওয়ার হোটেল খুঁজে বের করে খাবার খেয়ে নেয়। রাত হয়ে গেলো এখন সে কোথায় থাকবে? সেই চিন্তাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে যে একটা বাসা নিবে সেই টাকাও তার কাছে নেই। ঈশান হাটতে একটা ছোট টেবিল দেখতে পায়। এতক্ষণে ঢাকা শহর খালি হয়ে গেছে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। নেই কোনো গাড়ি। ঈশান আর কোনো উপায় না পেয়ে টেবিলের উপরে বেগ রেখে সে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম ভেঙে যায়। ঈশান চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন মাতাল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশান তাদের দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়।

একজন মাতাল বলল — কিরে তোর বাশা কোথায়? বাসায় না গিয়ে এখানে কি করিস?

— ঢাকা শহরে আমার কেউ নেই। আমি আজকে প্রথম ঢাকা আসছি। তেমন কিছুই চিনিনা। কোন বাসা না পেয়ে এখানেই ঘুমিয়ে আছি।

একজন একজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। তারা মনে মনে ভাবছে একটা মুরগী পেয়ে গেলাম।

একজন বলল — তোর বেগের ভিতরে কি আছে বের কর।

— ভাই আমার বেগে জামা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই।

একজন একটা চাকু বের করে বলল — তোর কাছে কি কি আছে সব আমাদের দিয়ে দে৷

চাকু দেখে আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমি তাদের কাছে হাত জোর করে কান্না মাখা গোলায় বললাম — দেখুন আমি এখানে নতুন। আর আমি বাসা থেকে পালিয়ে আসছি।

তাদের মধ্যে একজন সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল — তুমি পালিয়ে আসলে কেন? বাসায় কি কোনো সমস্যা হইছে?

এবার আমি সব ঘটনা তাদের খুলে বললাম। একজন আমার কথা শুনে চোখের পানি পড়তে শুরু করে৷

সে আমাকে বলল — তোমার মতো আমিও পরিবারের অবহেলা পেয়ে আজ বাড়ি ছাড়া হয়েছি তোমার কষ্ট আমি বুঝতে পারছি। রাতে খাবার খেয়েছ?

— জ্বী ভাই।

— শোনো এখানে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে ঠিক আছে। আর এই নাও এখানে কিছু টাকা আছে তোমার কাজে লাগবে। আমি আসি।

আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে চলে গেলো। আমি আবার ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। গাড়ির শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার বেগ টা আর নেই। আশেপাশে আমার বেগ খুজতে থাকি কিন্তু বেগ খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কেউ নিয়ে গেছে আমার বেগ। এবার হাটতে শুরু করে দিলাম। এখন আমার কাছে গায়ের জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। একটা দোকানে গিয়ে নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষ করে আবার হাটতে শুরু করে দিলাম অজানা পথের উদ্দেশ্যে।

একটু সামনে যেতেই দেখি একটা বাচ্চা ছেলে ফুটবল নিয়ে খেলা করছে রাস্তার মধ্যে। হঠাৎ করে দেখি একটা গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। আমি বাচ্চাকে কয়েকটি ডাক দিলাম কিন্তু সে খেলা করেই যাচ্ছে। আমি আর কোনো চিন্তা না করে এক দৌড় দিলাম। গাড়ি টাও বাচ্চাটার খুব কাছে চলে আসে। আমি তাড়াতাড়ি করে বাচ্চাটাকে রাস্তার সাইডে নিয়ে যেতেই আমি ধাক্কা খেলাম একটা পিলারের সাথে। আমার কপাল পেটে র*ক্ত বের হয়ে যেতে থাকে। আর আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমার আর কোনো কিছুই মনে নাই। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডের উপরে আবিষ্কার করলাম। পাশে তাকি আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটি যার সাথে আনার ট্রেনের মধ্যে পরিচয় হয়েছে। আমি একটু উঠে বসতে চাইলাম তখনই কপালে একটু ব্যাথা অনুভব হলো। কপালে হাত দিয়ে দেখি বেন্ডেজ করা।

আমি নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বললাম — আমি এখানে কি করে আসলাম?

— আপনাকে এখানে আমার আব্বু নিয়ে আসছে। আপনি যাকে বাচাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করছেন সে আমার ছোট ভাই। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো তার কোনো ভাষা জানা নেই আমাদের।

এমন সময় নুসরাতের আব্বু চলে আসে আমার কেবিনের ভিতরে। উনি এসে আমার পাশে বসে বলল — বাবা তুমি এখন কেমন আছো?

— জ্বী আংকেল এখন একটু ভালো আছি।

নুসরাত বলল — আব্বু তোমাকে আমি একটা ছেলের কথা বলছিলাম না যে ট্রেনে পরিচয় হলো উনি সেই ছেলে।

— তাই নাকি? বাবা তোমাকে কি বলেজে ধন্যবাদ দেবো।

— আংকেল ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নাই। এখানে অন্য কেউ হলেও এই ভাবেই এগিয়ে আসতাম। আংকেল একটা কথা বলার ছিলো।

— কি কথা বাবা?

— আংকেল আমার ফোন টা পাচ্ছিনা। ওটা কি আপনাদের কাছে?

— না তো বাবা। তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমি তোমাকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। হয়তো ফোন কোথাও পড়ে গেছে। আচ্ছা তোমার নাম্বার টা দাও আমি দেখি কল যায় কিনা।

এবার আমি নাম্বার দিয়ে দিলাম। আংকেল ফোন দিয়ে দেখে নাম্বার অফ। বুঝতে বাকি রইলোনা যে মোবাইল কেউ নিয়ে গেছে। মন খারাপ করে বসে রইলাম আমি। আংকেল বলল — বাবা চিন্তা করোনা আমি তোমাকে একটা নতুন ফোন আর সিম কিনে দেবো।

— আংকেল আমার সিম টা দরকার ছিলো। ওখানে সবার নাম্বার ছিলো। এখন আমি বাড়ির সবার খোঁজ কি ভাবে নেবো?

— বাবা বুঝতে পারছি আমি। আচ্ছা তুমি যাবে কোথায়? ঢাকা তুমি কার কাছে আসছো?

আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আংকেল আবার বলল — কি হলো বাবা?

— আংকেল এখানে আমার কেউ নেই। আমি এখানে নতুন এসেছি। আমার একটা সমস্যা হইছে। আর কাল রাতে আমার বেগ নিয়ে চলে গেছে।

— ওহ আচ্ছা। তা বাসায় কি সমস্যা হইছে বলা যাবে?

— আসলে আংকেল আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। আমার পরিবারের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।

এবার আংকেল আর নুসরাতকে সব কিছু খুলে বললাম। আমার কথা শুনে নুসরাত আর তার বাবার চোখে পানি চলে আসলো।

আংকেল আমাকে বলল — তাহলে তুমি এখন থাকবে কোথায় বাবা?

নুসরাত বলল — বাবা ওনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গেলে কেমন হয়? বাসা তো খালিই পড়ে আছে।

— ঠিক কথা বলেছিস। তাহলে বাবা তুমি আমাদের সাথে বাসায় চলো।

— আংকেল আমার জন্য আপনাদের বাসায় সমস্যা হতে পারে।

— কোনো সমস্যা হবে না তুমি আমাদের সাথে চলো। তুমি গেলে সবাই আরো অনেক বেশি খুসি হবে৷

এবার আমি রাজি হয়ে গেলাম।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে