বালিকা বধূ ১ম পর্ব
লেখাঃ_শারমীন_আক্তার_সাথী_(#সাথী____)
–
*****আমি তোকে নিজের বউ হিসাবে মানি না!
——-তোকে বর হিসাবে মানতে আমারই বয়ে গেছে! হারামি, লাল বাদর, কলা চোর উল্লুক।
——–কি বললি তুই আমাকে? তুই তো নিজেই একটা সাদা গেছো ফিমেইল বাদর!
——–কি বললি তুই আমায়? মুখ সামলে কথা বললি আয়াত ! নয়তো তোর বাঁকা মুখ ঘুষি মেরে আমি আরো বাঁকা করে দিবো
——-দেখ তনয়া মেয়ে আছিস মেয়ের মত থাকবি! বেশি কিছু বললে আমিও কিন্তু আমার ছেলেগিরি দেখাবো।
তনয়াঃ কি? কি করবি তুই আমায়? কান কাটা হনুমান!
আয়াতঃ দেখবি কি করবি ? আমায় কান কাটা হনুমান বলা দাড়া তোকে হনুমান গিরি দেখাচ্ছি!
তনয়াঃ কি আর দেখাবি তুই! কোন কাঁচকলা পারিস? রাঙামাটির রাঙা বাদর!
আয়াতঃ কি বললি দাড়া তোকে বাদরগিরি দেখাচ্ছি বলে তনয়াকে শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তনয়া ঠোটে ঠোট চেপে ধরলো। তনয়া নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু আয়াতের শক্তির সাথে পেড়ে উঠতে পারছে না। তবুও আয়াতেকে কয়েকা কিল দিলো। পাক্কা পাঁচ মিনিট পর আয়াত ছেড়ে দিলো। দুজনই হাপাচ্ছে।
তনয়াঃ ঐ রাম ছাগল তুই এটা কি করলি? তুই আমার অনুমোতি না নিয়ে আমাকে—–,?
আয়াতঃ নিজের বিয়ে করা বৌয়ের কাছে কি অনুমোতি নিতে হয়? পাঁপ হয় পাঁপ।
তনয়াঃ তোর পাঁপের গুষ্টি কিলাই। আর কে তোর বৌ? আমি এ বিয়ে মানি না!
আয়াতঃ সেটাতো আমিও মানিনা। আমরা মানি আর না মানি তবুও আমরা স্বামী স্ত্রী।
তনয়াঃ তোর স্বামীর****টুট টুট।
আয়াতঃ ছিঃ ছিঃ তনু তুই এসব বাজে কথা কোথায় শিখছিস? নিচের বরকে কেউ এভাবে বলে?
তনয়াঃ তোর সাথে আমার কোন কথা নাই। আমি গেলাম। হেরে গিয়ে বেচারি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
আয়াতঃ তনু শোন!
তনয়াঃ হ্যা বল?
আয়াতঃ মিষ্টিটা কিন্তু সেই লেভেলের মিষ্টি।
আয়াতের কথা শুনে তনয়া অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। তারপর রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। ওর যাওয়া দেখে আয়াত হাসছে আর বলছে—
আয়াতঃ চিন্তা করো না #বালিকা_বধূ তোমায় আমি নিজের করে নিবোই। যতই তুমি আমাকে বাদর বলো। এ বাদরের বাদরামি তোমাকে সারা জীবন সহ্য করতে হবে। কারন আমি তোমায় ভিষন ভালোবাসি বাদরের ফিমেইল বাদর। আর আমার বালিকা বধূ। আচ্ছা তনু তুমি কেন আমার সাথে এমন করো? তুমি তো জানতে আমারা সম্পর্কে সেই কবে থেকে আমরা স্বামী স্ত্রী। তাহলে এত বছরে আমার প্রতি কি তোমার এতটুও অনুভুতি জন্ম হয়নি? কেন তনু? কেন তুমি আমায় সহ্য করতে পারো না? আমিতো প্রতি মূহুর্তে তোমাকে এটা বুঝাতে চাই যে তোমায় কত ভালোবাসি। কিন্তু তুমি বুঝেও আমায় কেন দূরে ঠেলে দাও? আচ্ছা তনু তুমার মনে তো অন্য কেউ নাই তাহলে তুমি কেনো আমাকে তোমার মনে জায়গা দিতে পারো না? বলো? কিভাবে বলবে তুমি? তুমিতো নিজের মনটাকে বদ্ধ সিন্ধুকে রেখে চাবি ফেলে দিয়েছো অথৈই সাগরে। সেখান থেকে চাবি খোঁজাটা একরকম অসম্ভব। কিন্তু আমি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করবোই! আমার ভালোবাসার জোড় যে অনেক। সে জোড় দিয়ে তোমার মনের বদ্ধ সিন্ধুকটাকে ভেঙে ফেলবো।
এদিকে তনয়া রাগ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে। নিজেকে নিজে দোষ দিতে থাকে। আর বলতে থাকে।
তনয়াঃ আমি তোমায় ঘৃনা করি আয়াত। প্রচন্ড ঘৃনা। তুমি শত চেষ্টা করেও আমার মনে তোমার প্রতি ভালোবাসা তৈরী করতে পারবে না। পারবে না আমার মনের ভালোবাসা নামক বন্ধ সিন্ধুক খুলতে। শুনছো আয়াত আই হেট ইউ। হ্যা আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু আমি তোমায় ঘৃনা করতে ভালোবাসি। শুধুই ঘৃনা। সাবান দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো বার বার ঘসছে। যাতে আয়াতের ছোয়াটা উঠে যায়। কিন্তু যে ছোয়া মনে লেগে আছে তা কোন সাবান দিয়ে তুলবে? আয়াত ওয়াসরুমের কাছে এসে দড়জায় টোকা দিলো
আয়াতঃ তনু তনু! আই এ্যাম স্যরি। প্লিজ মাফ করে দে । আর কখনো এমন ভুল হবে না। দেখ এটাই প্রথম আর শেষ ভুল। প্লিজ বের হ। বেশি ভিজলে তোর ঠান্ডা লাগবে প্লিজ।
তনয়া দড়জা খুলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। সারা শরীর ভিজা। আয়াত তাড়াতাড়ি টাওয়ালটা দিয়ে তনয়ার মাথা মুছাতে শুরু করলো। তনয়া টাওয়ালটা হাত থেকে টেনে নিয়ে বললো।
তনয়াঃ বেশি স্বামী স্বামী ভাব দেখাবি না। ডিজগাসটিং।
আয়াতঃ আমার ভালোবাসাটা তোর কাছে ডিজগাসটিং লাগে তনু?
তনয়াঃ হ্যা লাগে। কারন আমার তোকে ডিজগাসাটিং লাগে।
আয়াত আর কিছু বললো না। চুপচাপ চলে গেলো। আর ওর চোখ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে কিছু অবান্তর নোনা তরল। অবান্তর কেন বললাম? যে তরলের মায়া, মায়ার মানুষটা বোঝে না তাকে অবান্তর বলাই উচিৎ। তনয়া আয়াতকে চোখ মুছতে দেখে বললো
তনয়াঃ কাঁদ আয়াত কাঁদ। এত বছর ধরে যে কষ্ট সাগরে আমি হাবুডুবো খাচ্ছিলাম সে সাগরে এখন আমি তোকে ডুবাবো। আমি এখানে তোর বালিকা বধূ হতে আসিনি। তোকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে এসেছি। গত নয় বছর ধরে যে যন্ত্রনা আমি সহ্য করছি তা এবার তোর সহ্য করার পালা। তোর কান্না দেখে আমার কষ্ট হয়। সত্যিই অনেক কষ্ট হয়। কারন শত হলেও তুই স্বামী। তার ওপর ছোটবেলার বিয়ে। কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কি জানিস আয়াত?যখন তোর দেয়া আঘাতটা মনে পরে। হৃদয়টা তখন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তোর প্রতি ভালোবাসাটা মূহুর্তেই বিলিন হয়ে যায়। তখন তোর কষ্ট দেখলে শান্তি লাগে।
হ্যা তনয়া আর আয়াতের বিয়ের বয়স দশ বছর। ওদের যখন বিয়ে হয় তখন তনয়া ক্লাস ফাইবে পড়ে আর আয়াত সেভেন এ। ওদের দু পরিবারের সম্মতিতে হয় ওদের বিয়ে। কিন্তু বিয়ের এক বছর পর একটা ঘটনা ওদের সম্পর্কটাকে তিক্ত করে দেয়। পারিবারিক সম্পর্কগুলো ঠিক থাকলেও ঠিক নেই ওদের সম্পর্ক। তিক্ততায় ভরা ওদের হৃদয়ের বাধঁন। আয়াত প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে সম্পর্কটা ভালোবাসাময় করার। কিন্তু আয়াত দু পা এগোলে তনয়া চার পা পিছিয়ে নেয়।
আয়াত সবসময় চেষ্টা করে নিজের ভালোবাসা দিয়ে ওদের বিষাক্ত অতীতটাকে বিষ মুক্ত করতে। কিন্তু কথায় আছে না বিষ যখন মাথায় উঠে যায় তখন সেটা নামানো একরকম অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। যদিও সম্ভব হয় কিন্তু তার জন্য অনেক কাঠখড় পুড়তে হয়। আয়াত নামাজ পড়ে প্রতিনিয়ত এই দোয়ই করে যাতে তনয়ার মনের বিষাক্ত ভাবটা কাটিয়ে ওর মনে ভালোবাসার ফুল ফোটাতে পারে।
তনয়া ঘুমাচ্ছে আর আয়াত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনয়ার দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব মায়া, সব আর্কষন, সব মোহ, মমতা এসে ভির করেছে তনয়ার মুখে। আয়াতের খুব করে ইচ্ছা করছে তনয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। আয়াত তনয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে ওদের জীবনের সুন্দরতম মূহুর্ত গুলোকে।
চলবে——-
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন