বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৯
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
♦গল্পের নতুন মোড়♦
ছেলেটির ডায়েরী_
সেদিন আমার জন্মদিনে মায়া’কে দেখে যতটা না অবাক হয়েছিলাম তার থেকেও বেশী অবাক হয়েছিলাম মায়া’কে বোন হিসেবে বাবা যখন আমার হাতে সমর্পণ করে দিল। আর অবাক না হয়ে’ই বা যাব কোথায়? মনে মনে যাকে হৃদমাজারে স্থান দিয়ে ফেলেছি, তাকে’ই বোন বানিয়ে দেওয়া হলো..!!!
বাবা যখন কিছু না বলে ওর হাতটা আমার হাতে দেয়, তখন ও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আর আমি তাকিয়ে ছিলাম ওর মায়া মায়া মুখের দিকে। সেদিন বাবা যখন বলেছিল,
সিয়াম–
আজ থেকে মায়া এ পরিবারের’ই সদস্য। ও যেখানে যে অবস্থায় থাকুক সবসময় তোর ওর পাশে ছায়ার মত থাকতে হবে, ওর খুঁজ নিতে হবে, যেমন’টা তোর বোনের ক্ষেত্রে এখনো করিস। সেদিন কিছুক্ষণের জন্য মন খারাপ হলেও সেই মন খারাপ’টা বেশীক্ষণ স্থায়ি হতে পারে নি। কারন, একটাই চোখের সামনে আমার মায়া পরিটা হাঁটাচলা করে, হাসি-আনন্দ, গল্পে মেতে থাকে বাবা-মায়ের সাথে। এটা দেখে মনটা শান্ত হয়ে যেত। মনটাকে এই ভেবে শান্তনা দিতাম,
যাক-
ও সবসময় আমার বাড়িতে আমার সামনে থাকবে, এটাই অনেক….?
বাবা বোন বানিয়ে দিয়েছে, আমি তো আর বোন মানি না, মানব না….??
ও আমার কল্পরাজ্যের রাজকন্যা ছিল, আছে, থাকবে….??
ভালো যখন বেসেছি, বেসে যাব আজীবন।
বসে বসে এই কথা গুলো’ই লিখছিলাম ডায়েরীর পাতায়। হঠাৎ’ই রোকসানা রুমে প্রবেশ করল-
– স্যার-
আপনাকে বেগমসাহেবা ডাকতেছে। সবাই ডাইনিং টেবিলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি চলেন….
~ঠিক আছে, তুই যা। আমি আসতেছি। কাজের মেয়ে চলে গেল। ডায়েরী’টা রেখে নিচে গেলাম। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম সকালের ব্রেকফাস্ট করার জন্য….
বাবা-মা দু’জনে’ই বসে ছিল।
আমার মায়াপরীটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আশেপাশে তাকালাম। নাহ, আশেপাশেও কোথাও নেই। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে?!!!
কি দেখছিস?
এবার’তো খাওয়া শুরু কর!!!
হ্যাঁ, খাচ্ছি….
আচ্ছা মা!!!!
ও কোথায়?
কে?কার কথা বলছিস?….
-‘ আমি আসলে ওর…(.?.)….
কথাটা পুরো’টা বলতে পারলাম না, তার আগেই মায়া এসে উপস্থিত হলো। চেয়ার’টা ফাঁক করে মায়ের পাশে বসে পড়ল। মা হাসোজ্জল মুখে জিজ্ঞেস করল,
কিরে?!!!
হয়েছে তোর কাজ?!!
-‘ হুম, মা। হয়েছে।(মায়া)
-‘ মা, বাবার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলছে__
” এই নাও…
তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও…
তারপর গোসল করে তোমার না কি জরুরী কাজ আছে ঐখানে যাও।”
বাবা তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পরল।
-‘ আজ আর গোসল? খেয়ে কেউ গোসল করে?”
বাবা চলে গেল মেনেজার আংকেলের সাথে….
মাকে জিজ্ঞেস করলাম__
” মা! বাবাকে গোসল না করিয়ে খেতে দিলে কেন?”
মা হেসে বলল, আমি কি করব বল? তোর বাবাকে তো পাঠাইছিলাম গোসল করতে, এরই ভিতর গিয়ে দেখি তোর বোন একবালতি কাপড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। সেটা দেখে তোর বাবা চলে এসেছে…
-‘ মানে কি মা? ও উপরে বাথরুম রেখে নিচে কেন গেল??
-‘ সেটা’ই তো! আমিও বুঝতে পারছি না। কতবার করে বলেছি, তুই সাইমার বাথরুমে যাবি, না।।।
কে শুনে কার কথা….?!!!
-‘ স্যরি, আম্মু….?
আর কখনো এমন হবে না।(মায়া)
-‘ এই মেয়ে! মন খারাপের কি হলো এতে? চুপ করে খেয়ে নে….মায়ের কথা শুনে আচ্ছা বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে পরল মায়া। আমিও খেয়ে-দেয়ে রুমে চলে গেলাম।
-‘ অাজ শুক্রবার,
অফিসে যায় নি। তাই রুমে চুপটি করে শুয়ে আছি। অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে আছি কিন্তু ঘুমাতে পারছি না কিছুতেই।Uff!আর পারছি না। অসহ্য গরম….
এখন’ই গোসল করতে হবে।
শরীর থেকে গেঞ্জী’টা খুলে তাওয়াল হাতে নিয়ে ছুটে চললাম বাথরুমের দিকে। ধাক্কা দিয়ে দরজা’টা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। তারপর দরজাটা ক্ষাণিক’টা মিশিয়ে যেই না ঘুরে দাঁড়ালাম ওমনি আমি কুপোকাত…..
‘থ’ হয়ে গেলাম।
এ ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি….
বুঝতে পারিনি এখানে এসে মায়াকে দেখব।
তাও এইভাবে….
ও লজ্জায় শরীরটা কোনোরকম ঢেকে চোখ’টা বন্ধ করে ফেলল।
আমি ততক্ষণে হাতে রাখা তোয়ালে’টা দিয়ে আমার চোখ দুটো ঢেকে নিয়েছি। তারপর-
স্যরি, আমি রিয়েলি স্যরি….
আসলে বুঝতে পারব তো দুরের কথা কল্পনাও করিনি তুমি আমার বাথরুমে গোসল করছ। বুঝতে পারলে আমি এখানে আসতাম না। বিশ্বাস করো,
আমি সত্যি’ই জানতাম না…
মায়া, চোখ খুলে আমার দিকে তাঁকালো। আমার দিকে কিছুক্ষণ ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে, চোখটা ফিরিয়ে নিল। ও লজ্জা পাবে কি? আমি নিজে’ই লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে গেলাম, যখন বুঝতে পারলাম আমি এতক্ষণ উন্মুক্ত শরীর নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। লজ্জায় কোনোরকম ইয়ে, মানে স্যরি
বলেই ঐখান থেকে বেরিয়ে এলাম……☺☺
মেয়েটির ডায়েরী_
সেদিন ওনার জন্মদিনে ওনি কতটা সারপ্রাইজড হয়েছিলেন জানিনা, শুধু এটুকু জানি….
সেদিন ভালো আংকেল আমায় খুব বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন। আমায় ওনার বাড়িতে ওনার মেয়ের সম্মানে থাকতে দিয়েছিলেন। আর দিয়েছেন সিয়ামের মত একজন ভালো মানুষের বোন হওয়ার সুযোগ। আজ আর আমার মনে কোনো কষ্ট নেই, ওনাকে হয়ত আপন করে পাওয়াটা আমার জন্য অসম্ভবের চেয়ে বেশী, সারাজীবন বোন হয়ে ওনার পাশে ছায়ার মত থাকতে পারব। পারব, ওনাকে প্রতিটা মুহূর্ত দেখতে, সেটাই অনেক বেশী প্রাপ্তি আমার জন্য।
ওনাকে পাশবালিশে পাওয়া কিংবা ঘুম ভাঙলে ওনার মুখটা আগে দেখা সেটা না হয় স্বপ্ন হয়েই থাক….
……..
অনেকদিন পর ডায়েরীটা আবার হাতে নিলাম…..
আজ লিখব….
হ্যাঁ, আজ লিখব…..
আমার প্রিয় ডায়েরী আমি আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করব কিভাবে সেদিন দুপুরে ওনি আমার বাহুগুলো দেখেছিলেন, আর আমি দেখেছিলাম আমার স্বপ্নের রাজকুমারের উন্মুক্ত বুক। যা ছিল ঘন লোমে ঘেরা…..
আচ্ছা, শুনো তাহলে কিভাবে কি হলো……
সেদিন ছিল শুক্রবার।
বরাবরের মত সেদিন দুপুরে আর বাবার বাথরুমে যায়নি, যেতে চেয়েছিলাম আমার বাথরুমে। যেটা আগে সাইমা ইউজ করত। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আর সাইমা এবং স্যারের স্যরি ভাইয়ার বাথরুম একসাথে থাকায় ভুল করে সেই বাথরুমেই ঢুকে পরি। তারপর…
তারপর…………
মনে হচ্ছে আম্মু ডাকছে। ডায়েরী’টা হাত থেকে রেখে আম্মুর রুমের দিকে ছুটে চললাম। নিচতলায় আম্মুর রুমে গিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম। আম্মু তখন শুয়েছিল, আমাকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসল। তারপর বলল,
ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম মা?
আমি আম্মুর হাত’টা ধরে বললাম, এইসব কি বলছো আম্মু?!!! ঘুমের ডিস্টার্ব হবে কেন?? তুমি আমার ‘মা’…..তুমি আমায় ডেকেছ, অন্য কেউ তো নয়। আর তাছাড়া আমি এখনো ঘুমাইনি। এখন বলো কি বলবে?
-‘ তোর ভাইটার না অনেক মাথা। বিকেল থেকেই প্রচন্ড মাথা ব্যথা। ঔষধও খাচ্ছে না, তুই গিয়ে মলম লাগিয়ে ওর কপালের চারপাশটা একটু টিপে দিবি?!!!!
আমার শরীরটা বেশী ভালো লাগছে না তাই তোকে বলছিলাম। না করিস না…….
-‘ মা তোমার মুখের উপর না করব এটা তুমি কল্পনা করলে কিভাবে? তুমি বলবে আর আমি তা শুনব না তা ভাবলে কিভাবে? তুমি নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকো, আমি আসছি। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলাম। উপরে গিয়ে ওনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেদিনের ঘটনায় এতটাই লজ্জা পেয়েছিলাম যে, ওনার সামনে আর যাওয়া হয়নি। গেলেও ওনার দিকে তাকাতে পারিনি। ওনার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওনার রুমে ঢুকব কি ঢুকব না সেই দ্বিধা-দ্বন্ধে ছিলাম। হঠাৎ’ই ভেতর থেকে একটা পেলাম। কারো গোঙ্গানির আওয়াজ। আর কিছু না ভেবে’ই ছুটে চললাম ওনার রুমের দিকে। যা ভাবছিলাম তাই……
ওনি চোখ বোজে কান্না করতেছে মাথা ব্যথায়। আমি গিয়ে ওনার কাছে বসলাম। ওনি আরো জোরে কান্না করছে। হাতে রাখা মলমটার কৌটা থেকে কিছু মলম আঙুল দিয়ে নিয়ে ওনার কপালের চারিপাশে লাগিয়ে দিলাম। তারপর আস্তে আস্তে টিপতে শুরু করলাম। ওনি কান্না করতেছে আর আমি ওনার মাথা’টা টিপে দিচ্ছি। আস্তে আস্তে কান্নার মাত্রাটা একটু একটু করে কমে আসে। কপাল থেকে হাত সরিয়ে আমি যখন চলে আসি তখন ওনার কান্নার মাত্রাটা দ্বিগুন বেড়ে যায়।
সাহস হয় না এভাবে রেখে চলে যাওয়ার। আরেকটু টিপে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায় ওনার দিকে। ওনি কান্না করে আর আমি মাথা টিপে দিচ্ছি। আর ভাবছি-
আহারে! বেচারা মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় কত্ত কষ্ট পাচ্ছে। ওনার মাথা টিপতে টিপতে কখন যে সে স্থানেই ঘুমিয়ে পরি, বুঝতে পারিনি। ঘুম ভাঙলে নিজেকে ওনার বুকে আবিষ্কার করি। এত্ত রাত্রে ওনার বুকে এভাবে…….
ভয় পেয়ে গেলাম।
ভয়ে ওনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য যেই না মাথা উঠাতে গেলাম ওমনি ওনি আমার মাথাটা ওনার বুকে চেপে ধরলেন। আবারো উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
এবার ওনি আমায় আরো শক্ত করে জাপটে ধরলেন-
– কি করছেন এসব? (আমি)
~শুনো, এই বুকে কান পেতে শুনো আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমার কথায় বলছে…..
হৃদকম্পন টের পাচ্ছ কি? বুঝতে পারছো কি আমার না বলা কথাগুলো? (সিয়াম)
-‘ ভাইয়া,কি বলছেন এইসব?
মাথা ঠিক আছে আপনার?(আমি)
-‘ ওনি ধপাস করে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। তারপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। মাথা নিচু করে বললেন, স্যরি…….
চলবে….