প্রতিশোধ পার্ট_13

0
3068

প্রতিশোধ
পার্ট_13
জামিয়া_পারভীন

তুষার এর গাড়ির ব্রেক টা নষ্ট করে দেয় মাসুদ। তুষার গাড়িতে উঠার পরই ব্রেকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। মাথায় প্রচুর আঘাত পায় তুষার, এছাড়া হাত এর দুইটা হাড় ফ্রাকচার, দুই পা ই ফ্রাকচার সাথে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হয়েছে। এতো মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তুষার মৃত্যুর সাথে লড়ছে।

নিরা বাবা থেকে দূরে থেকেছে বলে কষ্ট পেলেও তৃণার কষ্ট টাই ছিলো বেশি। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে আর পাগলের মতো প্রলাপ বলছে। তৃণার হাহাকার মা বোন মিলে কেউই থামাতে পারছেনা। এদিকে মাসুদ এসে লুকিয়ে লুকিয়ে সবার আহাজারি দেখছে কিন্তু সামনে আসছেনা। আসলে কি বলবে এসে, এক্সিডেন্ট টা তো হয়েছেই তার জন্য। যে বাবা তাকে আর তার মা কে অত্যাচার ছাড়া কখনো ভালোবাসেনি তার জন্য প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যে মানুষ তাদের ভরণপোষণ চালিয়েছে তাকেই খুন করার চেষ্টা। এটা মহা অন্যায় হয়ে গেছে, নিজের মাঝে প্রচুর অনুশোচনা জন্মেছে।

নিরা মাসুদ কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে ,
__ ভাই তুমি এসেছো, বাবা খুব অসুস্থ। আর রাগ করে থাকিও না প্লিজ।

__ (মাসুদ এর চোখ দিয়ে আজ পানি ঝরছে। যে বোনকে কখনো আদর দেয়নি তাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে আর।) কান্না মুছে বলে, ” মাফ করে দিস। ”

__ কেনো কি করেছো তুমি? কেনো মাফ চাইছো? ( নিরা)

__ খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি রে। বাবার মতো ওই লোকটাকে আমি মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। ( মাসুদ)

__ কি বলছো তুমি? আমি এগুলো বিশ্বাস করতে পারছিনা। বাবাকে তুমি? নাহ এটা হতে পারেনা। ( নিরা)

__ আমাকে পুলিশে দে তুই, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। ( মাসুদ)

__ এই কথা আর কাউকে বলিও না, আমার ভাই এর ক্ষতি আমি কিভাবে চাই বলো। মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এখন তোমার উচিৎ মা আর তোমার আরেক বোনের দিকে খেয়াল রাখা। তৃণা খুব ভেঙে পড়েছে। ( নিরা)

,
মাসুদ এগিয়ে যায়, সবার কাছে নিজের কষ্ট প্রকাশ করে। হেনা ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে খুব। আবির নিরার কাছে এসেছে, নিরা আবির কে দেখে, আবিরের কোলে গিয়ে কান্না শুরু করে।

__ এতো টেনশন করো না নিরা, দেখিও বাবা ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)

__ এতোদিন পর বাবাকে দেখলাম আর বাবা কিনা ( কথা বলতে পারেনা কান্নাতে) ( নিরা)

__ সব ঠিক হয়ে যাবে, চুপ করো, একটু ধৈর্য ধরো প্লিজ। ( আবির)

__ বোনের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা, বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। আর এখন জ্ঞান গেছে ফিরছেনা, পাসের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। ( নিরা)

__ আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, স্পেশাল কেয়ার নিবে সবাই। দেখিও সবাই সুস্থ হবে, এখন ভেঙে না পড়ে দোয়া করো। এটাই সবার জন্যই মঙ্গল জনক হবে। ( আবির)

এইভাবে ১০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অবস্থার উন্নতি কারোর ই হয়নি। তুষার আই সি ইউ তে অজ্ঞান হয়ে আছে, সব রকম চিকিৎসা তার চলছে। আর তৃণার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, শুধু সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে, মাঝেমাঝে একা একাই কথা বলছে। আর হেনার কথা অনুযায়ী মাসুদ ই তুষার এর সব ব্যবসা দেখছে।

__ তৃণাকে নিয়ে কি করবে এখন ( নিরা)

__ ওকে একবার সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে গেলে ওর জন্যই ভালো হতো। ( আবির)

__ কি বলছো? বোন কি পাগল নাকি। ( নিরা)

__ পাগল হয়নি, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। আর এর চিকিৎসা এখনি না করালে ওর আরোও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ( আবির)

__ কার কাছে নিয়ে যাবে? ( নিরা)

__ সব চেয়ে বড় সাইকোলজিস্ট তো সাইফ আহমেদ। কিন্তু…. ( আবির)

__ কেনো উনার কাছে নিলে নিবে কিন্তু কেনো বলছো। ( নিরা)

__ নাহ কিছুনা, পরে একসময় বলবো। তৃণার জন্য উনার কাছে কাল ই এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখি তাহলে। ( আবির)

মাসুদ কে এখন অনেক কাজ সামলাতে হচ্ছে। এতো বড় বিজনেস অন্য কারো হাতে দিলে শুধু লস ই খাবে। তাই নিজেই সব চালাবে ভাবে, বোনদের অংস তার অংশ সব কিছুই এখন তাকেই ম্যানেজ করতে হচ্ছে। আর হেনা একবার তুষার এর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদে আবার তৃণার সামনে গিয়েও কাঁদে ?।

,
,
আবির নিরা এসেছে সাইকোলজিস্ট সাইফ আহমেদ এর কাছে। তৃণা অনেক ডিপ্রেশন আছে সেটা ডাঃ সাহেব বললেন।ভিতরে রোগীর সাথে একজন যাবে তাই আবির বাইরে বসে থাকে আর নিরা ভিতরে যায়। তৃণার হয়ে নিরাই সব কথা বলে ডাঃ কে। ডাক্তার সাহেব দুই বোনের দিকেই তাকিয়ে আছে, দুইজনে ই হুবহু দেখতে আর অসম্ভব সুন্দরী দুইজন।

ডাক্তার ১৫ দিনের ঔষধ দিয়েছে তৃণাকে। আর ১৫ দিন পর তৃণাকে আবার দেখতে চায়। আবির, নিরা,আর তৃণাকে নিয়ে তৃণাদের বাসায় যায়। ( আসলে তৃণাকে জানতে দিবেনা তাই তুষার বলেছিলো এটা ভাড়া বাসা, কিন্তু এটা তুষার এর ই বাসা। )

মাসুদ ও বিজনেস সামলানোর জন্য এই বাড়িতেই থাকছে। আর মাহমুদ কে দেখার জন্য তো নার্স থাকেই সেটা নিয়ে মাসুদের কোন মাথা ব্যথা আর নাই।

তুষারের অবস্থা ভালো হয়নি এখনো, লাইফ সাপোর্ট এ বেঁচে আছে ২৫ দিন হয়ে গেলো। তৃণা ঔষধ খেয়ে একটু কথা বলছে সবার সাথে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর ড্যাডি তুমি কোথায় বলে কান্না করে আবার চুপ হয়ে যায়। এখন একটু হলেও মা বোন কে চিনতে পারছে তৃণা। কিছুদিন তো নিরাকে ওর আয়না ভাবতো। নিরা সামনে গেলেই ভাবতো ওর আয়না এসেছে। তাই নিরা কে বলতো ” আয়না তুমি হাটতে পারো?” অনেকটা ছোট বাচ্চার মতো হয়ে গেছে তৃণা এখন।

নিরাও তৃণাকে নিয়ে খুব চিন্তিত, এতো দিন পর বাবা আর বোন কে পেয়ে বাবা হাসপাতালে আর বোন কিনা পাগল হয়ে যাচ্ছে।

এতো সব টেনশনে নিরা আবিরকে এতোটুকু সময় ও দিতে পারেনা। আজ আবিরের অনেক গুলি ক্লাস নিতে হবে তাই আবির নিরাকে সঙ্গ দিতে পারেনি। নিরা একাই তৃণাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
,
,
(#কাল ও ভাইবা আছে ???, আজ ভাইবা দিয়ে এসে ঘুমিয়ে গেছিলাম, আবার উঠে গল্প লিখে পোষ্ট দিলাম আপনাদের জন্য)

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে