নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৬

0
30

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৬]
-তামান্না

–রিহান :এগিয়ে গিয়ে পাশে শুয়ে এক টানে কাছে নিয়ে আসে।হঠাৎ করে এমনটা হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় নিরু।যার ফলে শক্ত করে ঝাপটায় ধরে রিহানকে।
তারপর অনেকক্ষণ যাবত মোচড়া মুচড়ি করে নিরু।কিন্তু কোনো ভাবেই রিহান ছাড়ছে না।অন্ধকারে কথা ও বলছে না।তবে নিরুর কাছে পারফিউমের স্মেল টা পরিচিত লাগে।
–রিহান :চুপচাপ শুয়ে থাকো নড়েচড়ে কোনো কাজ হবে না।
–নিরু:ইচ্ছে মতো কিল দিয়ে ছুটার চেষ্টা করে। তারপর না পেড়ে কান্না করে দেয়।একদম নরম হয়ে পড়ে।
–রিহান :আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে শুনেছি অতিরিক্ত রাগ হলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে হয়।এতে রাগ কমে।

–নিরু:ছাড়ুন আমায়।আপনি আমাদের বাসায় এসেছেন কেন?আমার অনুমতি ব্যতীত আমাকে আবার স্পর্শ ও করছেন?
–রিহান :সে জবাব তোমাকে দিবো কেন?আমি তো তোমায় জড়িয়ে ধরি নি,আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি।
–নিরু:একদম ঠেলে তারপর উঠে দাঁড়ায়।ওড়না টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।তারপর লাইট টা অন করে।
–রিহান :এগিয়ে গিয়ে নিরুর হাত ধরতে গেলে নিরু সরে দাঁড়ায়।আবার ও ধরতে গেলে সরিয়ে ফেলে হাত।মুচকি হেসে বলে,,রাগ কমবে কিভাবে?
–নিরু:অন্য দিকে ফিরে বলে, কমবে না।
–রিহান :সোফায় বসে। একটানে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে,,এতো রাগ?
–নিরু:হুম!আজকে কিন্তু বড্ড বেশি গায়ে হাত দিচ্ছেন।
–রিহান :তাই!কোথায় হাত দিচ্ছি?
–নিরু:সেদিন সন্ধ্যা বেলা একা একটা মেয়ে কে বাসা থেকে বের করে দিলেন,,আজকে মাঝরাতে এসে এসব করছেন?কান্না করতে করতে বলে আপনি কি চান?
–রিহান :নিরুর চোখে চোখ রেখে বলে,, সেদিন আমি চোখের সামনে থেকে যেতে বলেছি বাসা থেকে নয়।তাছাড়া আমার বন্ধু তোমার বাসা অব্দি পৌঁছানো পর্যন্ত পিছন পিছন ছিলো।
–নিরু:বিছানায় বসে বলে,কথা শেষ হলে আসতে পারেন।
–রিহান :আমার শ্বশুর বাড়ি আমি থাকবো না যাবো সেটা আমি বুঝবো।বউ মানুষ কই জামাইয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকবা তা না শুধু তাড়িয়ে দেওয়ার ধান্দা।এতো নাক ছিটকানো বউ কেন তুমি?

–এদিকে নিরব অনেক বার চেষ্টা করে ও রিফার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি।ভিতরে ভিতরে প্রচুর ভয় হচ্ছে হাত ছাড়া হয়ে গেলো না তো?এখনো নিরু আর রিহানের জীবন ধ্বংস করা হয় নি।

–রিফা ভাইয়ের কথায় নিরবের সাথে যোগাযোগ আজকে রাখে নি।তাছাড়া এখন এসব কখনোই নিরু বলতো না শুধু মাত্র নিরব বুঝিয়েছে বলেই জানিয়েছে।তাছাড়া ওদের সম্পর্ক ও বেশি দিনের না।
একা শুয়ে আছে রিফা হঠাৎ নোটিফিকেশনের শব্দে ফোন টা অন করে।তারপর রাফির আইডি থেকে একটা ভিডিও আসে। রাফি হলো রিহানের বন্ধু।ভিডিও টা অন করে এক প্রকার মাথা ঘুরে যায়।রিহান আর নিরবের সেদিনের ঝগড়ার ভিডিও সাথে কিছু গোপন কথা নিরবের মুখ থেকে।
ভিডিও টা দেখা মাত্রই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।সম্পর্কে জড়িয়েছিল নিরবের ব্ল্যাকমেইল স্বরূপ পাগলামি দেখে।এটা ওটা নিয়ে ভয় দেখাতো ওকে ছাড়া বাঁচবে না।কোচিং কলেজ সব কিছুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় থাকতো।এক পর্যায়ে রিফা বাধ্য হয়ে সম্পর্কে জড়ায়।কখনো এর আগে রিলেশন করে নি রিফা।যেহেতু প্রথম প্রেম খানিকটা আবেগ ও জন্মায়।তবে কয়েক দিন পর থেকেই ওর মনে হতো নিরবের তার প্রতি আবেগ কম লাগছে।আচরণে পরিবর্তন চলে আসছে।কিন্তু মনে হলেও মনকে পাত্তা দিতো না।
রিফার প্রয়োজনে নয় নিরবের প্রয়োজন হলেই যোগাযোগ করতো।বাসায় জানানোর জন্য এটা ওটা বলে পাগল বানিয়ে ফেলতো।

–এক পর্যায়ে নজরে আসে রাফির।কয়েকবার মেসেজে ওকে নিষেধ ও করে নিরবের সাথে না মিশতে।রিফা কথা দিয়ে ভাইকে না জানাতে নিষেধ করে রাফিকে।
রাফি রিহানের রাগ সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়ায় আর রিহান কে জানায় নি।এরপর ঠিক ঠাক প্রমাণ পেয়ে আজকে রিফাকে পাঠায়।

–ফোনে রিং হচ্ছে রিফা চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে।কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রাফি কল করেছে।রিসিভ করে কানে ধরতেই রাফি বলে,, ঠিক আছো?
–রিফা:নিশ্চুপ!
–রাফি:কষ্ট পাচ্ছিস?সেদিন আমি ও ভীষণ কষ্ট পেয়েছি রিফু।সেই যখন ছোট্ট ছিলি তখন থেকে তোকে পছন্দ করতাম।রিহানের সাথে ছুতো ধরে তোদের বাসায় চলে যেতাম।যখন তুই ছোট্ট ছিলি কোলে ও নিতাম।যদিও আমি অতোটাও বড় ছিলাম না তবে তোর থেকে তো গুনে গুনে কয়েক বছরের বড়ো।আম্মু মাঝে মধ্যেই তোকে নিয়ে আসতো আমাদের বাসায়। তারপর বড় হলাম তুই বড় হলি তবে আমার নজরের বাইরে যেতে দেই নি।

–সময় বাড়লো রিহানের সাথে বন্ধুত্ব গাঢ় হলো,, আস্তে আস্তে ভয় ভীষণ বাড়ে।তোকে পছন্দ করি জানলে যদি রিহান বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়?এই প্রশ্ন সারাক্ষণ মনে ঘুরতো।
তুই জানতি ও না আমি তোকে সব জায়গায় পাহারা দিতাম।মাঝে মধ্যে তোর নজরে পড়ে গেলে কতো কাহিনি বলে কেটে পড়তাম।তারপর আমার চাকরি হলো সেখানে সময় দিতে গিয়ে তিন মাস পেড়িয়ে যায়।এখানে ওখানে আর খোঁজ রাখার সময় হয়ে উঠে নি।নিরব সম্পর্কে ও অবগত ছিলাম না।
একদিন ছুটিতে এলাম।অনেকদিন পর রিহানের সাথে দেখা।বসে আড্ডা দিলাম দুই বন্ধু।এক পর্যায়ে রিহান বলে বসে।
–রিহান:তুই আর রিফাত আমার সব থেকে কাছের বন্ধু,, ভাবছি বোন জামাই বানিয়ে তোর সাথে সম্পর্ক টা আর ও মজবুত করবো।কি বলিস?
এই কথা শুনার পর ভীষণ আনন্দ হলেও রিহানের সামনে প্রকাশ করি নি।তবে লজ্জা পেয়েছি রিহান বুঝতে পেরেছে।জানি না রিহান কেন প্রস্তাব দিয়েছিল,,হয়তো আমার মনের ধারণা কিছু টা হলেও বুঝতে পেরেছিল।

–বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে,,তিন দিন আয়নার সামনে প্র্যাক্টিস করে তারপর সামনে গিয়ে ছিলাম তোর।নিজের সাথে যুদ্ধ করে অনুভূতি প্রকাশ করে ছিলাম।এর আগে আমার ভিতরের এই গোপন খবর কাউকে বলি নি।
তুই প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে সিরিয়াস ভেবে বলেছিলি,, অলরেডি রিলেশনে আবদ্ধ আছিস।
বিশ্বাস কর সেদিন এই শব্দ টা মনে হয়ে ছিলো পৃথিবীর সব থেকে যন্ত্রণা দায়ক শব্দ।

–সেদিন দ্বিতীয় বার উঠে তোর মুখের দিকে তাকায় নি লজ্জায়।তবে বাসায় এসে ভেবে মনে হলো তুই ভুলে আটকে আছিস।নিরব ভালো ছেলে নয় এবং রিহান নিরুর সাথে ও সম্পর্ক ভালো না।কয়েকবার তোকে বুঝালাম কাজ না হওয়ায় প্রমাণ জোগাড় করলাম।
এর ভিতরে রিহান কয়েকবার জিজ্ঞেস করে গেছে বিয়ের প্রস্তুতি কেমন বাসায় কথা বলবে কি না।আমি কথা কাটিয়ে ঘুরিয়েছি।
তবে যখন নিরবের সাথে তোর বিষয়ে কথা বলতে যাবে যখন আমায় বলেছিল রিহান। সেদিন অপরাধীর মতো ফেইসটা করে রেখেছিল আমার সামনে।

–রিফা:নিরব এতো বাজে আমার চোখে কেন পড়ে নি?
–রাফি:ধূলো দিয়ে রেখেছিল চোখে তাই।ভাবিস না আমি পছন্দ করি বলে মিথ্যা বলেছি।এগুলো সবটাই সত্যি রিফু।
–রিফা:কান্না করতে করতে বলে ,,বাজে একজন মানুষের জন্য আমি আমার পরিবারে অশান্তি ডেকে এনেছি ঝগড়া দূরত্ব তৈরি করেছি রাফি ভাই।কেন আমাকে নিরব এভাবে ব্যবহার করলো?আমি কি ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার মতো মানুষ?
–রাফি:সব জায়গায় ভালো কে কদর করতে জানে না।নিজের পিছনে সময় দিয়ে দেখো ঝাপটায় ধরে বুকে রাখার মানুষ আছে।তোমাকে ও কদর করার ভালোবাসার মানুষ আছে।শুধু মন থেকে কয়েক মাসের অধ্যায় টা মুছে ফেলো। নতুন বছরের মতো ক্যালেন্ডার পাল্টে কাল থেকে নতুন করে জীবন শুরু করো।
.
.
–রিহান:প্লিজ চলো বাসায় যেতে হবে এখন।
–নিরু:মাথা নুয়ে বলে,আমার কোনো বাসা নেই। লাগবে না বাসা।
–রিহান:এগিয়ে গিয়ে ফ্লোরে বসে নিরুর হাত ধরে বলে,,রাগ হলে ইচ্ছে মতো মারো একেবারে মেরে ফেলো তাও প্লিজ বাসায় ফিরে চলো।
–নিরু:অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে বিয়ের আগে এমনটা কথা ছিলো না!
–রিহান:উঠে দাঁড়িয়ে নিরুকে ঠাস করে কোলে তুলে নেয়।তারপর লাইটটা বন্ধ করে বিছানায় চলে যায়।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।এভাবে শক্ত করে ধরে থাকায় নিরুর নিশ্বাস ফেলতে ও কষ্ট হচ্ছে।

–রিহান:ওকে নিজের থেকে খানিকটা আলতো করে ছেলে এগিয়ে গিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।নিরুর নিশ্বাস ফেলতে আরও কষ্ট হয়।এবার বড় বড় করে নিশ্বাস ছাড়ে।রিহান ঘাড় থেকে আস্তে আস্তে নিচে নামতে গেলে কান্না করে দেয় নিরু।
রিহান নিরুর মুখে হাত দিয়ে বলে কি হয়েছে?তুমি কান্না করছো কেন?তোমার খারাপ লাগছে?
–নিরু:কান্না করতে করতে বলে,,যখন ইচ্ছে দূরে ঠেলে দিবেন আবার নিজের ইচ্ছায় ভালোবাসবেন এ কেমন আচরণ?
–রিহান:নিরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে নিজের বুকের সাথে নিরুর মাথা টা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।বড় বড় করে নিজেও নিশ্বাস ফেলে।

–নিরু এখন যেন রিহানের পুরো হার্টবিটের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।এইটুকু বুঝতে পারছে দুজনেরই হার্টবিট বেড়ে গেছে।

–খানিকক্ষণ চুপ থেকে রিহান এভাবেই থেকে পুরো ঘটনা খুলে বলে।নরম গলায় বলে আমার মানুষ আমাকে বুঝার মানুষ তো তুমি নিরু।তুমি যদি আমার রাগ অভিমান না বুঝো কোথায় যাবো?
অভিমান আর রাগ হলে অধিকার দেখাতে হয়,, সব সময় নৈশব্দে চলে এলে সম্পর্কে ফাটল ধরে।আমি জানি আমরা দুজনেই দুজনকে ভীষণ ভালোবাসি।তাহলে কাছের মানুষের থেকে অনুভূতি লুকিয়ে দূরে থাকার কোনো মানে আছে?
লজ্জা ভয় এসব শব্দ প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষের জন্য নয়।নিরুর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,

–আমি চাই আমার নিরুপমা আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে,, আমার বদমেজাজে গরম পানি ঢেলে দিয়ে একেবারে ঠান্ডা করে দিক।আমি জানি আমার মতো পুরুষ কে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার নিরুপমার আছে। শুধু সেটা একটু প্রয়োগ করুক আমার বউ।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে