নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৫

0
28

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৫]
-তামান্না

–রিফা:এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে নিরুকে আগলে ধরে।নিরু এখনো স্তব্ধ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না ঠিক কি হয়েছে?বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তো এমন ছিলো না?চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।এমন দিন কেন বারবার ফিরে আসে? যা হজম করার ক্ষমতা উপর ওয়ালা দেয় নি এমন দিন কেন দেয়?কেন এমন পরিস্থিতি তে ফেলে।মনে মনে এই কথা গুলোই চিন্তা করে।

–রিহানের আম্মু এসে ডাকাডাকির পরে দরজা খুলে রিহান।নিরু রিফা রিহান ওর আব্বু সবাই উপস্থিত।থমথমে পরিবেশ।
–আম্মু :কি হয়েছে তোর?নিরুর সাথে এমন খারাপ ব্যবহার কেন করছিস?
–রিহান :নিশ্চুপ!
–রিফা:ককককি হয়েছে?
–রিহান :একদম চুপ।উঠে দাঁড়িয়ে বলে আমার আর ভালো লাগছে না।প্লিজ তোমরা আমায় ডিস্টার্ব করো না।আর রইলো এই মেয়ে নিরুর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,, একে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলো।
–আম্মু :কি হচ্ছে কি?এগুলো কি ধরনের আচরণ রিহান?রাগ হয়েছে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করো।
–রিহান :অন্য দিকে তাকিয়ে বলে আমি নিরুর মুখ আজকের পর আর দেখতে চাই না আম্মু।আমি আর চাই না আর না।

–রিফা:এগিয়ে এসে ভাইয়ের পা ধরে বলে এমন করছো কেন ভাইয়া?দোষ করে থাকলে আমি করেছি আপুকে কেন শাস্তি দিচ্ছো?নিরুর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কেন কিছু বলছো না আপু?
–নিরু:অন্য পাশে এগিয়ে গিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বলে,,আমি কেন কিছু বলবো?সব সময় আমার অবস্থান এভাবে না বুঝিয়ে দিলে ও তো হয়।সব থেকে ভালো হয় আমার গন্ডির বাইরে থাকলে এতে কষ্ট কম হয়।এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়ির পাশে দাঁড়ায়।

–শ্বাশুড়ি :এমন করো না। রিহান রেগে বলেছে একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে।এগিয়ে গিয়ে রিহান কে জিজ্ঞেস করে নিরুর অন্যায় টা কি?
–নিরু:মাফ করবেন মা,আমি প্রতিবাদ করে কিংবা নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে আগ্রহী নই।আমি সব থেকে বেশি পছন্দ করি বিনা শব্দে জায়গা ত্যাগ করা।যেখানে আমার প্রয়োজন নেই সেখানে শব্দ ব্যবহার করেই বা কি হবে।অভিমানে মাথা নুয়ে আসছি বলে বের হয়ে যায়।রিহান একবার ও পিছনে ফিরে তাকায় নি।

–রিফা আর শ্বাশুড়ি পিছন পিছন আসলে ও নিরু শুনে নি কারো কথা।সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেই কতক্ষণ। দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য।কিছু নিয়ে আসে নি।ফোন টা শুধু,ফোনের কভারের ভিতরে কয়েক টা টাকা আছে এ দিয়েই হয়ে যাবে।

–রিহান জানালা দিয়ে নিরুপমা কে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।একবার ও কেন কিছু জিজ্ঞেস করলো না?তবে কি নিরব যা বলেছে তাই সত্যি? নাকি আগের মতোই সব সময় নিরু অভিমানে সবটা মেনে নৈশব্দে জায়গা ত্যাগ করলো?দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বলে, কোনটা সত্যি?আমি কি বিশ্বাস করবো,, কাকে বিশ্বাস করবো?পুরো রুমের জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলে দেয়।

–একা রাতের শহরে কখনো চলাচল করা হয় নি নিরুর।তেমন একটা অভিজ্ঞতা ও নেই।আজকেই প্রথম,, ভীষণ ভয়েই ছিলো পুরো রাস্তা।তারপর আবার বোরখা হিজাব ছাড়া বের হওয়া।খানিকটা সময় লাগলে ও রিকশায় করেই আসে। মুরব্বি লোকের রিকশায় উঠে খানিকটা স্বস্তি পায়।পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে।কিভাবে রিহান পারলো এই সন্ধ্যা বেলা বাসা থেকে বের করে দিতে।একটা বার পিছনে তাকালো না?এখন বাসায় ফিরে কি জবাব দিবে আম্মু কে?

.
.
–রিফা:আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নিরব!তারপর পুরো ঘটনা টা খুলে বলে। নিরব মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করে নি।আর বলে ও নি যে রিহানের সাথে দেখা হয়েছে।
–নিরব:আচ্ছা!দেখছি সবটা কিভাবে সামাল দেওয়া যায়।রিহান হয়তো এখনো আমাকে ভুল জানে কিন্তু তুমি তো জানো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।
–রিফা:কান্না করতে করতে বলে,, প্লিজ তুমি একটু নিজেকে প্রমাণ করো ওদের সামনে।তাহলে সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে।আমার জন্য অযথা ওদের মধ্যে সমস্যা হলো।এটা আমি সত্যি চাই না।
–রিহান :মনে মনে বলে,, কিন্তু আমি তো চাই।মুখে শয়তানি হাসি টেনে কল কেটে দেয়।

–এদিকে বাড়িতে ফিরে এসেছে আজকে দুই দিন।নিরু রুম আর খাওয়ার টেবিল ছাড়া একবার ও মায়ের মুখোমুখি হয় নি।কিছু জিজ্ঞেস করলে ও উওর দেয় না।রিহানদের বাসায় ফোন দিতে বললে নিষেধ করে দেয়।

–রাতে ছাঁদে বসে আছে একা।পূর্ণিমায় চারপাশ টা জ্বলজ্বল করছে।আকাশের দিকে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।কেন সে বারবার ভুল করে। রিহান তো কোনো দিন ও ভালোবাসে নি।যদি বাসতো তাহলে কখনো রাতের বেলা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলতো না।বাড়ি এসেছে আজকে দুই দিন একটা বার কল পর্যন্ত করলো না।আচ্ছা ভালোবাসলে কি এমন নিষ্ঠুর হওয়া যায়?মনে হাজারও প্রশ্ন জমে আছে।

–এদিকে নিশার ফোনে খোঁজ নেওয়ার জন্যই মাত্র কল করলো রিহান।রাগ জমলে ও মুছে তো ফেলবে না।হয়তো এখনো রাগ শেষ হয় নি তবে ভুলে ও তো যাওয়া যাবে না।
নিশা কলে রেখেই ছাঁদে আসে।ফোন টা হাতে রেখেই বোন কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
–কি করছো?
–নিরু:আনমনা হয়ে বলে,,আব্বুর সাথে কথা বলছি।
–নিশা:কি কথা বলছো?
–নিরু:জিজ্ঞেস করছি কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলো?আব্বু যাওয়ার পর তো আমায় আর কেউ বুঝে নি।সাথে কেন নিয়ে গেলো না?আমার জন্যই তো সবার জীবনে অশান্তি।আমার জন্যই আজ তোরা বাড়ি ছাড়া,, আমার জন্যই তো নিরব ভাইয়া এতো কিছু করছে।কথাটা বলেই কান্না করে দেয়।
–নিশা:বোকা।তুমি জানো তুমি আছো বলেই আমাদের জীবন এতো সুন্দর।তুমি ভালো হয়ে জন্মেছো বলেই মন্দ লোক হাত বাড়ায়।ভালোদের লড়াই করেই বাঁচতে হয়।জীবনে যুদ্ধ না করলে বিজয়ের স্বাদ পাবে কি করে? ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?
–নিরু:চোখের পানি মুছে বলে,,জানি না।তবে হয়তো নিরব ভাইয়া কিছু বলেছে,,কি বলেছে তাও জানি না।তবে এটুকু জানি আমি তার প্রিয় মানুষ নই।দূরের বলেই বের করে দিয়েছে।কথাটা বলেই তাড়াতাড়ি করে ছাঁদ থেকে নেমে আসে নিরু।

–নিশা:শাসনের সুরে বলে কি করেছো আবার? আমার বোনকে সহজ সরল পেয়ে শুধু কষ্ট দাও তাই না?
–রিহান :বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে,,আবার ভুল করে ফেলেছি।আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত বল তো?তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে যে,,নিরব সেদিন বলেছে নিরুই রিফাকে ওর হাতে তুলে দিয়েছে নিজের সেফটির জন্য।প্রমাণ স্বরূপ নিরুর সাথে রিফা আর নিরবের ছবি দেখায়।
–নিশা:কিহ?তুমি বিশ্বাস করে নিলে?তোমার তো মিয়া শাস্তি স্বরূপ আজীবন বউ ছাড়া থাকা উচিত। আমি বাবা কোনো শত্রু পক্ষ নই আমার বোনের,, যে তোমার মতো অবিশ্বাসের বস্তার হাতে তুলে দিবো।

–রিহান :আপাতত রাখছি পরে কথা হবে।কলটা কেটে রিফার কাছে যায়।
–রিফা:কিছু বলবে,, এতো রাতে?
–রিহান :ভয় পাস না।আমি কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো উওর চাই।
–রিফা:ববববলো?
–রিহান :নিরবের সাথে পরিচয় কিভাবে?
–রিফা:ভয় পেলে রিহান আশ্বাস দিয়ে বলে কিছু বলবো না।তারপর বলে কোচিং করার সময় প্রায় দাঁড়িয়ে থাকতো।এটা ওটা বলে ডিস্টার্ব করতো।তারপর একসময় বান্ধবীর থেকে নাম্বার নিয়ে কল করে বিরক্ত করা শুরু করে।তবে নিরব প্রথম থেকেই জানতো আমি যে তোমার বোন।তারপর আস্তে আস্তে এভাবেই এটা ওটা বলে হাত কাটে পাগলামি করে অবশেষে সম্পর্কের শুরু।

–রিহান :মাথা নুয়ে বলে আর নিরু?ওর সাথে তুই নিরু একসাথে কখনো দেখা হয়েছে?
–রিফা:মাথা নেড়ে বলে নাহ।কখনো নামটা ও নেওয়া হয় নি আপুর।
–রিহান ফোন থেকে একটা ছবি বের করে বলে তাহলে তোদের সাথে বোরখা পড়া এই মেয়ে টা কে?
–রিফা:ও তো অনন্যা।আপুর মতো খানিকটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু হাত দেখো,,আপু তো সব সময় চুড়ি পড়ে।কিন্তু তোমার এমনটা মনে হলো কেন ভাইয়া?
–রিহান :বোনের মাথায় হাত রেখে বলে এই কয়দিন বাসা থেকে বের হবি না,,আমি অবশ্যই তোর জন্য যা কল্যানকর তা করবো।যাকে নিয়ে সুখী হবি আমার বোনের তার সাথেই বিয়ে হবে।প্লিজ অবাধ্য হোস না।রিফা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

***************
–রাত বারোটা নিরুর ফোন বাজছে।আজকে পাশে নিশা নেই অথচ বিয়ের আগে একসাথে থাকতো।নিশা এখন মায়ের সাথেই থাকে।যদি ও নিরু একাই থাকতে চাচ্ছিলো।ফোন মিউট করে রাখায় প্রথমে বুঝতে পারে নি যে কল বাজছে। তবে দুই একবার রিং হওয়ার পর ফোনের আলোয় বুঝতে পারে।হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে রিহান কল করেছে।
দুই তিন বার কল কেটে দেয়।তারপর মেসেজ আসে কল রিসিভ করো।
এরপর আর কল আসে নি কারণ নিরু সুইচড অফ করে রেখেছে।

–এদিকে রিহান বাসার নিচে দাঁড়িয়ে কল করছিল।রিসিভ না করায় নিশাকে কল করে। তারপর নিশা দরজা খুলে দিলে ভিতরে আসে।
–নিশা:বর হিসেবে খুব বাজে তুমি।বউয়ের রাগ ভাঙাতে আসলে দুই দিন পর।বউ কিন্তু একা একা অপেক্ষা করছে বর গিয়ে ঝাপটায় ধরবে বলে।
–রিহান :কানটা মুলে বলে পাকা হয়ে গেছিস?গিয়ে দোয়া কর রাগটা যেন ভাঙাতে পারি ওকে?তারপর নিশা হাসতে হাসতে চলে যায়।

–রিহান চুপচাপ এসে দেখে দরজা খুলাই আছে। রুমে গিয়ে আগে দরজা টা আটকে নেয়।নিরু তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে বলে,, এতো রাতে আসলি কেন?আমি একাই ঠিক আছি।
–রিহান :এগিয়ে গিয়ে পাশে শুয়ে এক টানে কাছে নিয়ে আসে।হঠাৎ করে এমনটা হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় নিরু।যার ফলে শক্ত করে ঝাপটায় ধরে রিহান।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে