#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৭]
-তামান্না
–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।
নিরুদের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর কারো সাথে যোগাযোগ হয় নি।এমনকি এই শহরেই যে ওঁরা আছে তা ওদের চাচারা জানেন ও না।
–মিতা:পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবা আর নিরবকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবা।কখন কি করে বসে বলা যায় না। রিহান কে দিয়ে কতো বাজে একটা কাজ করালো।
–নিরু:রিহান ছোট বাচ্চা নয়।মানছি নিরব ভাইয়া খারাপ তবে তোমার আদরের বান্ধবীর ছেলে কে আমি ভালো বলতে পারছি না সরি!
–মিতা:কম বুঝার চেষ্টা করিস,,বড়দের থেকে বেশি বুঝতে নেই।
–নিরু:বাদ দাও না আম্মু।পরীক্ষা দিতে বের হবো এসবে আমার অস্বস্তি হয় ভালো লাগে না।মিতা কিছু বলে নি।মেয়ে কে তৈরি হতে বলে চলে যায় ভাত আনতে।প্রথম দিন সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আজকে স্কুলে ও দরকারী মিটিং আছে।
–নিশা:চলো তোমাকে প্রথম দিন পরীক্ষায় আমি নিয়ে যাই।বাবার দায়িত্ব আমিই না হয় পালন করে দেই।
–নিরু:খাবার মুখে নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,, বাচ্চা মানুষ বাবার দায়িত্ব পালন করতে আসছে। পরে দেখা গেছে পরীক্ষা বাদ দিয়ে আমার তোকে খুঁজতে বের হতে হবে।চুপচাপ স্কুলে যা আর মনে মনে আমার জন্য দোয়া দুরুদ পড়।
–নিশা:মুখ ভেংচি কেটে বলে আমার অতো সময় নেই হুম।আমি নিজের জন্য দোয়া দুরুদ পড়বো।তারপর নিরু হেসে ওঠতেই চলে যায় নিশা।
–নীলা :নিরুকে কয়েক বার কল করে না পেলে ওর মায়ের নাম্বারে কল করে জিজ্ঞেস করে বের হয়েছে কি না।নীলা প্রায় পৌঁছে গেছে।
–নিরু:আসছি।তারপর মায়ের থেকে দোয়া আর বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায়।যেখানে পরীক্ষা হবে ঐ কলেজ গতকাল কে মায়ের সাথে দেখে এসেছে।
*****
–আব্বু :তোমার আম্মু কে ডাক্তার দেখিয়ে সেন্টারে যাবো।ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা টা দিও।
–রিহান:আচ্ছা বলে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের গালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়ে যায়।বাসার গাড়ি নিয়েই যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আব্বু বারণ করায় নেয় নি।পরীক্ষা দিতে যাবে এখানে এতো বড়লোকি ভাবের দরকার কি?
–আর কথা বাড়ায় নি।একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় স্টেশনে ওখান থেকে বন্ধুদের নিয়ে চলে যায় কলেজে।
–নিরব:রিহান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,,একটা লুজার কে খুব সুন্দর করে নিজের মতো নাচালাম।শা*লা হাঁদারাম হাহাহা।
–কথাটা একদম রিহানের কানে পৌঁছে যায়,, রাগে তেড়ে আসে রিহান।রিফাত আটকে দেয়।পরীক্ষায় এসে এসবে জড়ানো ঠিক হবে না।কোনো রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে।তারপর সবাই কে রেখেই নিজের সিট খুঁজতে চলে যায়।
–নিরু নীলার সাথে খুঁজে নিজেদের সিট বের করে।বরাবরের মতোই ওদের দুই বান্ধবীর সিট আলাদা রুমে পড়ে।কখনো পাশাপাশি কিংবা এক রুমে বসে ওদের পরীক্ষা দেওয়া হয় নি।এই আফসোস বোধহয় থেকেই যাবে।কতক্ষণ দুজনে আড্ডা দিয়ে তারপর যার যার রুমে গিয়ে বসে।নিরু চুপচাপ বসে আছে।
কলেজ ড্রেস আর হিজাব চোখে চশমা,, মুখের মাস্ক টা খুলে রেখেছে।বেশিক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকতে পারে না নিরু।কারণ চশমা টা ঘোলাটে হয়ে যায়।
–পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট পর নিরুর চোখ যায় পাশের বেঞ্চে।পাশাপাশি টেবিলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে রিহান।এতোক্ষণ তো মাথায় ও আসে নি।নিরু আর রিহান চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নেয় নিরু।
মনে মনে ভাবে তবে কি এতোক্ষণ আমায় দেখছিল রিহান?নাহলে আমায় দেখেই বা মুচকি হাসি দিবে কেন?পুরো অস্থির হয়ে যায় নিরু।নিজেকে স্বাভাবিক করে মনোযোগ দেয় খাতায়। তারপর আর কোথাও তাকায় নি।
–রিহান বসা ছিলো আগেই,, তবে নিরু আসার সময় দেখতে পায়।আর এই মেয়ে বেঞ্চে বসে অন্য কোথাও তাকায় নি ফলে রিহান কে দেখতে পায় নি।রিহান এতোক্ষণ বসে দেখছিল এই অতিসাধারণ আর সহজ মেয়ে বসে কি করছিল।চারপাশে এতো মেয়ে তবে একটা ও নিরুর মতো এতো সাধারণ নয়।কিন্তু নিরুকে সাধারণেই বেস্ট লাগে মায়াবী লাগে।সহজে একদম মনে বসে যাওয়ার মতো মায়াবতী।
–আসার সময় মেয়ে কে নিয়ে না আসতে পারলে ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার বিশ মিনিট আগে এসে বসে থাকে।
নিরু পরীক্ষা শেষ করে বের হলে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রিহান।একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে ক্লান্ত লাগছে ভীষণ!মুখ টা মুছে নাও।
–খানিকটা দূরে থেকে টিজ করে নিরব বলে আহারে পুরনো প্রেম জেগে ওঠলো!
ভ্রু কুঁচকে মাস্ক টা পড়ে ডান পাশে তাকায় নিরু।মূহুর্তেই নরম হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, এড়িয়ে চলা এবং শান্ত থাকা একজন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য।সবাই কে সবার কথাকে মনে রাখতে এবং শুনতে নেই।তারপর চুপচাপ চলে যায়।এই কথা বলার কারণ হলো নিরু জানে ও চলে যেতেই রিহান তেড়ে যাবে নিরবের দিকে। তাই ঠান্ডা মাথায় একটা সুন্দর কথা বলে চলে গেলো।
রিহান বুকে হাত দিয়ে নিরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।নিরুর এই রাগ আর নরম স্বভাব টা যেন তার সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।এই হঠাৎ জড়িয়ে নিবে কিন্তু ফেইস পর্যন্ত ই,,মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার আগেই নরম হয়ে যায়।এটা ইদানীং বেশি মিস করে রিহান।
–মিতা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন হলো পরীক্ষা?
–নিরু:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কিন্তু শুরুতেই তোমার বান্ধবীর ছেলেকে পাশের সিটে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে গিয়ে ছিলাম।
–রিহান:কেন আন্টি?আমি কি পরীক্ষার সেন্টারে এসে তোমার মেয়ে কে মারতাম নাকি?রিহানের এমন কথায় পিছনে তাকায় নিরু।তবে এরপর আর দাঁড়ায় নি চলে যায় সামনে নীলার সাথে।
–মিতা:ভালো হয়েছে তো?
–রিহান:আলহামদুলিল্লাহ তবে তোমার মেয়ের থেকে ভালো নয়।ছেলে মানুষ কে থাকতে হয় উপরে কিন্তু তোমার মেয়ে দেখছি সব সময় আমায় পিছনেই রেখে দিবে।অবশ্য এতো সুন্দরী বউ পেলে পিছনে থাকতে ও আমি রাজি…কথা টা বলে মাথা চুলকাতে থাকে রিহান।
–মিতা:তোদের দুজনকে নিয়েই তো আমার যতো চিন্তা।
রিহান আর মিতা দুজনেই হেসে ওঠে একসাথে।
*****************
–তারপর এভাবেই পরীক্ষা টা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়।আজকেই শেষ পরীক্ষা।একটু আগে এসেছে নীলা আর নিরু।এসে কলেজের বকুল গাছটার নিচে বসে।
এরমধ্যে কলেজের কয়েকজন ক্লাস মেট এগিয়ে এসে নিরুর থেকে ক্ষমা চায়।
–নিরু আচমকা ওদের ক্ষমা চাওয়ার কারণ টা বুঝতে পারে নি।
–সবাই :সত্যি সরি গো।তোমায় আমরা ভুল বুঝে ছিলাম কিন্তু রিহান নিজের মুখে সবাই কে ডেকে সত্যি টা বলেছে।তোমার মতো মানুষ কে খারাপ ভাবা না জেনে,, আমাদের অনেক অন্যায় হয়েছে। প্লিজ আমাদের মাফ করে দিও।
–নিরু:খানিকটা অবাক হলেও প্রকাশ না করে বলে,,তোমাদের দোষ নেই হয়তো আমার জীবনে এতোটুকু অসম্মান লেখা ছিলো।তারপর টুকটাক কথা বলে চলে আসে।এরপর নীলার থেকে পুরো কাহিনি শুনে।
নিরু কষ্ট পাবে বলে এরপর আর রিহানের কথা তুলে নি নীলা।নিরু খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চারপাশ টা একটু সহজ হয়।
–রিহান:নিরুপমা?পরীক্ষা শেষ হলে প্লিজ একটু দাঁড়িয়ো!
–নিরু কথাটা শুনলে ও চোখ তুলে ফিরে তাকায় নি।চুপচাপ পরীক্ষা দিতে থাকে।অর্ধেক পরীক্ষা দেওয়ার পর দেখে রিহান প্রশ্ন দেখছে তবে লিখতে পারছে না।বোধহয় কমন পড়ে নি।তারপর নিজ ইচ্ছায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ইশারায় রিহান কয়েক টা প্রশ্ন কমন পড়ে নি বলে। তারপর নিরু খাতা তুলে ওকে দেখায়।
–নীলা :আজকে চল একটু ঘুরি?চারপাশে নাকি অনেক সুন্দর!
–নিরু:আন্টিকে বলে আমাদের বাসায় চলে আসবি পুরো শহর ঘুরে দেখাবো।আজকে না আজকে বাসায় চল।
–নীলা :মিরা বলছিল আজকে নাকি সামনের পার্কে তিন দিন ব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে চল যাই।
–রিহান তাদের বন্ধুদের নিয়ে ওদের পিছনে এসে বলে চলো আমরা নিয়ে যাই।
–নিরু:শুনুন?আমাদের কোনো বডিগার্ড লাগবে না আর আপনারা যে বিনা পয়সায় মেয়েদের হেল্প করতে কলেজে আসেন তা কি বাবা মা জানে?
–রিহান:ওদের টা জানে কি না জানি না।তবে আমার আব্বু আম্মু জানে যে তাদের ছেলে নিরুপমার বডিগার্ড।
–নীলা :ভীষণ জ্বালাচ্ছেন কিন্তু।যার যার মতো আলাদা পথে হাঁটুন না!
–রিফাত:একধাপ বেশিই তো দেখি বুঝো,, তারপর খানিকটা ঝুঁকে বলে,, একটু সাহায্য করতে পারো না আমার বন্ধু কে?
–নীলা :বেশ জোরে বলে,, সরেন।আমি নিরু নই যে চুপচাপ সব শয়ে যাবো এবং ভুলে যাবো বা সরে যাবো।ভুল আর অন্যায় দুটো আমার কাছে এক শব্দ নয়।
–তারপর রাগে নীলা আগে চলে যায়।কিছুটা এগিয়ে যেতেই হাতে টান পড়ে।
–নীলা:চল আমরা মেলায় যাই নিরু,, ভীষণ মজা হবে।
–নিরব:এর থেকে বেশি ভালো হবে হোটেলে গেলে,,সত্যি অনেক ম*জা পাবে,, চলো!
–পিছনে তাকিয়ে নিরব কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নিরু কে ও দেখতে পাচ্ছে না।ভয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।এবার মনে হয় কান্নায় করে দিবে নীলা।
–নিরব:সাথে টাকা ও দিবো বোনাস হিসেবে চলো সুন্দরী?
–নিরব হাত ধরে টেনে নেওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে ফেলে নীলা।হঠাৎ হাতটা আলগা হতেই চোখ খুলে দেখে রিফাত দুই তিন টা থাপ্পড় মেরে দিয়েছে অলরেডি।
–এরমধ্যে অনেক টা হাতাহাতি হয়ে যায় নিরবের সাথে।রিহান এগিয়ে আসতেই কেটে পড়ে নিরব।
–রিফাত :ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নীলার গালে।রেগে বলে খুব তো গলা ফাটাতে এবং মুখ খারাপ করতে পারো।কই ছিলো এতোক্ষণ তোমার মুখ?নাকি নিজে ও প্রস্তাব গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলে?এবার মাথা নুয়ে কান্না করে দেয় নীলা।এরমধ্যে নিরু এগিয়ে আসতেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় নীলা।
নিরু রিহানের আব্বুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতে খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে ছিলো।আর রিহানরা বকুল গাছটার নিচে বসে ছিলো।
তারপর পুরো ঘটনা আমানের থেকে শুনে নিরু।
–নিরু:কষ্ট পাস না।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,, আমাদের দুজনের শুধু খারাপ লোকের সাথেই পরিচয় হয়।তবে এটাই বোধহয় উপর ওয়ালা ও চায় নয়তো এমন হতো না।কথা টা বলার সময় আড় চোখে রিহানের দিকে তাকায় নিরু।রিহান বুঝতে পারে এটা ওকে উদ্দেশ্য করেই নিরু বলেছে।
–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।
#চলবে