নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০২

0
51

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[২]
-তামান্না

–আব্বু :থাকা লাগবে না।আমি এমনিতেই তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো।যেদিন একজন ভালো মন মানসিকতার মানুষ হতে পারবে সেদিনই দেশে আসবে এর আগে নয়।
–আম্মু :এগিয়ে এসে রিহান কে ধরতে নিলে সরে দাঁড়ায়।তারপর বলে এমন করো না আব্বু,, তুমি আমাদের ভীষণ আদরের।অন্যের ক্ষতি করতে নাই তোমার নিজের ও তো বোন আছে বলো?
–রিহান:প্লিজ!আমার ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে যায় রুমে।
রুমে আসতেই কল করে নিরব।রিসিভ করতেই বলে,, কি শুনলাম এটা?এতো ভালো খবর তুই নিজে দিলি না?
–রিহান:সত্যি নিরব এবার আমি নিরুপমার সতী সাবিত্রী চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দিতে পেরেছি।সব সময় তোর কাছে আমার নামে বদনাম করতো না?এবার সামলাতে থাকুক।

–নিরব:ইশশ!বড্ড মিস করলাম সিন গুলো।আমি আজকেই চলে আসছি এসেই আমার চাচাতো বোনের মুখ খানা দর্শন করবো।দেখি কেমন চেহারা করে ঘুরছে।
–রিহান :বাসায় বকা খেতে হচ্ছে আমার। তোর বোন যেমনটা হোক,,অহংকারী হিংসুটে বদমেজাজি আর খারাপ কিন্তু ভীষণ বোকা।তবে চরিত্র খারাপ এটা মেলাতে পারি নি।তুই না বলতি আরও রিলেশন করে?কিন্তু এক বছরে আমার চোখে তো পড়ে নি।
–নিরব:পড়বে পড়বে,, এবার পড়বে।বয়ফ্রেন্ড তো আরও আছে দেখবি এবার গর্ত থেকে বের করে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুরবে।তারপর আরও কিছু কথা বার্তা বলে কল কেটে দেয়।

–নিরব:শয়তানি হাসি হেসে বলে,, এবার মা মেয়ের ভাব সব গুচিয়ে দিবো।দুই মেয়ে কে নিয়ে আমার চাচির বড্ড বড়াই তাই না?এবার আমরা আস্তে আস্তে সব সম্পত্তি গুলো ও দখলে করে নিবো হাহাহা।
তারপর নেকামি করে একা একাই বলে সরি রে নিরু,,খুব সরি।দাঁতে দাঁত চেপে বলে সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় যে হাত দিয়ে চড় মেরেছিলি সে হাত ও এবার আমি ভেঙে দিবো।তারপর হাহাহা করে হাসতে থাকে।

–এদিকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসে নিরু।ছোট বোন স্কুল থেকে ফিরে আসে নি আর আম্মু ও।
আসলে নিরুপমারা দুই বোন।ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে আর আম্মু বোনের স্কুলেরই টিচার। নিরুপমার আব্বু ও একজন টিচার ছিলেন তবে গত হয়ে গেছে প্রায় সাত বছর।তারপর থেকে আম্মুর বেতনের টাকা আর বাবার পেনশনের টাকায় চলে যাচ্ছে।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখে রান্না করা কিছু নেই।তারপর এক বাটি নুডলস কোনো রকম করে রুমে চলে আসে।কলেজ ড্রেস সহই শুয়ে পড়ে। অথচ এই বাজে অলসতা অভ্যাস কখনো নিরুপমার নেই।

*********
–তারপর পরের দিন শুরু হয় নিরবদের অত্যাচার।সবার কাছে এলাকায় প্রচার করে নিরুপমার নামে বদনাম।
–বড় চাচা:আমাদের এতো সুনাম যে মেয়ে নষ্ট করেছে তাকে এই বাড়িতে থাকতে দিবো না।আর যে ঘরে কোনো ছেলে সন্তান নেই তাদের তো একলা এক্সট্রা বাসার ও প্রয়োজন নেই।
–নিরুর আম্মু :এগুলো কি ধরনের কথা?আমার স্বামীর বাড়িতে আমাদের জায়গা হবে না?এরকম অনেক ঝগড়া ঝাটি এটা ওটা হয়।তিন দিন যাবত অনেক অত্যাচার সয্য করে।
এরমধ্যে নিরুপমা কলেজে যায় নি।মাকে সব কিছু খুলে বললে উনি রিহানের আম্মুর সাথে কথা বলতে চাইছিলেন তবে নিরু তা দেয় নি।নিরব ও যা তা এসে বলছে।
–নিরু:তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি সব কিছু ম্যানেজ করো,,অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করো।কান্না করতে করতে বলে এখানে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
–আম্মু :কলেজ থেকে টিসি নিতে হবে আর এখন অন্য কলেজে গেলে এক বছর গ্যাপ হয়ে যাবে।
–নিরু:হোক।এমনিতেই আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারবো না এই সিচুয়েশনে।
–আম্মু :মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,, কেন এসব করলি?তুই কেন এসব ফাঁদে পা দিলি।মা মেয়ে মিলে কতক্ষণ কান্না করে নেয়।
মনে মনে বলে আমার মেয়ের জন্য কখনোই রিহান উপযুক্ত নয়।যে ছেলে একজন মেয়ে কে এভাবে অপমান করতে পারে তার হাতে আমি মেয়ে দিবো না।আমি প্রয়োজনে উনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো তবুও আমার মেয়ে কে দিবো না।প্রয়োজনে আর ভালোর জন্য হলেও কথা ভঙ্গ করতে হয়।

*****
–সাতদিন পরে কলেজে আসে নিরু।ফ্যাকাশে মুখ ভালো করে মাথায় হিজাব পেঁচানো।আজকে আর কলেজ ড্রেস গায়ে নেই।একটা থ্রি পিছ হিজাব আর কাঁধে কলেজ ব্যাগ।
–নিরুকে দূর থেকে দেখেই দৌড়ে এগিয়ে আসে নীলা।এই কয়দিনে বাসায় গিয়ে ও দেখা মিলে নি নিরুর সাথে।তারপর ফোন তো সুইচড অফ থাকে।
–নীলা :কি অবস্থা করেছিস নিজের?তুই ও এতো বোকা নিরু?তোর মতো মানুষ ও ভেঙে পড়ে?
–নিরু:জোর পূর্বক হেসে বলে,, তাড়া আছে রে।ছুটি নিবো কিছু জায়গা আর কিছু মানুষের থেকে। তুই বরং এখানে বস আমি আসছি অফিস থেকে।তারপর সামনে হাঁটা ধরে নিরুপমা।

–রিহান আর ওর বন্ধুরা এতো দিন কলেজে আসে নি।সবাই মিলে ট্যুরে গিয়েছিল।যদিও নিরব ওদের সাথে ছিলো না।আজকে সবাই মিলে যোগাযোগ করে কলেজে আসে।
–রিফাত :নিরুপমার কি খবর রে নিরব?
–নিরব:কি আর খবর থাকবে যখন খবর বের হবে দেখবি তরতাজা হেডলাইন।
–রিহান:এক কাজ কর তো নিরব।তুই বরং রিফাত কে তোদের বাসায় নিয়ে যা কারণ ওও মনে হয় নিরুপমা কে ভীষণ মিস করছে।
–নিরব:নাকি রিহানের মতো এক বছরের চান্স নিবি শা*লা?
–রিহান:তুই কিন্তু ইন ডিরেক্টলি আমাকে বাজে বকছিস!তোর কথায় মাঝে মধ্যে ঝাঁজালো ভাব দেখতে পাই।
–নিরব:কেন?মিথ্যা কিছু বলছি নাকি?একবছর তো ঠিকই ব্যবহার করেছিস।এবার আর সয্য করতে পারে নি রিহান।তেড়ে আসে মারার জন্য। বন্ধুরা মিলে রিহান কে আটকায় তবে নিরব ভীষণ বাজে ব্যবহার করে।

–নিরুপমা অফিসে গিয়ে স্যারের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।এবং গিয়ে জানতে পারে প্রিন্সিপাল স্যার দুই সপ্তাহের ছুটি তে আছেন। তবে স্যারের পরিবর্তে যার উপর দায়িত্ব দেওয়া তার সাথে কথা বলে নেয়।
প্রথমে উনি রাজি না হলে ও অনেক কষ্টে রাজি করায়।
–ইংরেজি স্যার:এই মূহুর্তে তুমি টিসি নিয়ে বের হলে এক বছর গ্যাপ চলে যাবে বুঝতে পারছো?তাছাড়া প্রিন্সিপাল স্যার কলেজে নেই উনার ব্যক্তিগত কাজে দূরে আছেন।
–নিরু:নানা ভাবে এটা ওটা বলে ম্যানেজ করে এবং স্যার ফোন করে প্রিন্সিপালের থেকে অনুমতি নিয়ে রেডি করে রেখে যাওয়া টিসি ফরম পূরণ করে দিয়ে দেয়।নিরুর অনুরোধে প্রিন্সিপাল কে ছাত্রীর নাম টা বলে নি।অনেক বলে রাজি করিয়ে নেয়।
–নিরু:স্যার ম্যাম আপনাদের সবার প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা ভালো থাকবেন।ভীষণ মিস করবো আপনাদের।তারপর নিজের কষ্ট কোনো রকম লুকিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

–চারপাশে অনেকেই তাকিয়ে আছে।ইতিমধ্যে রিহানদের কানে ও পৌঁছে গেছে যে নিরু কলেজে এসেছে।
মাঠে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ায় নিরব।
–নিরব:বাহ্ বাহ্!কলেজে আবার চলে এসেছিস? আমায় রিজেক্ট করে বড়লোকের ছেলে পটিয়ে নিলি এখন কই তোর সেই প্রেমিক?
–নিরু:সেটা একদম আমার পার্সোনাল ব্যাপার।তবে এটুকু বুঝতে পারছি তুমি এসবের মধ্যে যুক্ত আছো।তবে তোমার ভালো কখনো হবে না।

–নীলা:কি হয়েছে? তুই আমার কাছে না গিয়ে এখানে কি করছিস?
–নিরব:তোমার সতী সাবিত্রী বান্ধবী প্রেমিক খুঁজতে বোধহয় এসেছে।
–নীলা:ছিহ!আপনার না নিরু বোন হয়?এভাবে ভাই হয়ে কথা বলা যায়?শুনেছি,, পৃথিবীতে মানুষের সাথে উপর ওয়ালা শয়তান ও সৃষ্টি করেছে আর সেটা বোধহয় আপনি একজন।
–নিরব:দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, খুব বাড় বেড়েছো।তোমাকে তো আমি দেখে নিবোই নিবো।
–নীলা :আঙুল টা নিচে নামিয়ে কথা বলুন মিষ্টার নিরব।আমি নিরুর মতো মেধাবী না তবে ওর মতো সরল আর বোকা নই।কাউকে সম্মান দিতে না পারলে রুম থেকে বের না হয়ে মায়ের চুড়ি আর জামা কাপড় পড়ে বসে থাকবেন ওকে?তারপর নিরুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়। আর পিছনে দাঁড়িয়ে ফুঁসতে থাকে নিরব।

–নিরু:আমি চলে যাচ্ছি নীলা।টিসি নেওয়া হয়ে গেছে।কথাটা শোনা মাত্র ই পা দুটো থেমে যায় নীলার।
–নিরু:নীলা কে ঝাপটিয়ে ধরে বলে মিস করবো অনেক।তারপর ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।নীলা একদম চুপসে যায়।সেই ছোট বেলা থেকে পথচলা ওদের।
–নীলা :শেষ বেলা কোথায় যাবি?সুন্দর গন্তব্য হবে না তো!
–নিরু:দূরে চলে যাবো।সেখানে শেষ বেলা নয় শুরু হবে সবটা।
–নীলা:পালিয়ে যাচ্ছিস শরীরে কাঁদা নিয়ে?
–নিরা:খানিকটা দূরে সরে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে কলেজের দিকে তাকিয়ে বলে,, মাঝে মধ্যে জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।আমি বাঁচতে চাই ব্যস।তবে আমার জীবনে ধোঁকা খাওয়ায় কিন্তু আসল কষ্ট বিষাদ নয়।আমার জীবনে রক্তের মানুষের তাচ্ছিল্যের হাত পড়েছে।অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এতিমের হক খাওয়ার ধান্দা চেপে বসেছে কিছু মানুষের।
তবে আমি ঝামেলা প্রিয় মানুষ নই অতো মানিয়ে নিতে পারি না।তবে ভালো থাকার রাখার চেষ্টা আমি করতে জানি।
তারপর চোখ মুছে বলে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে।কলেজ শেষ করে আমরা এক সাথে ভার্সিটিতে পড়বো।

–নীলা:ভালো থাকিস নিরু।তোর খারাপ থাকা আমাকে ও খারাপ রাখে।তবে আমি ভীষণ একা হয়ে যাবো।তোকে মিস করবো।
–নিরু:ভাগ্য দূরে ঠেলে দিলে ও ভুলবো না তোকে।আসি বলে বের হয়ে আসে।

–রিহান বাইক নিয়ে কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নিরব চলে গেছে আরও আগেই।রিহানের কাছে নিরব কে বিরক্ত লাগছে আজকে।এরমধ্যে চোখে পড়ে নিরুপমা কে বেড়িয়ে আসতে।
–রিহান:রিফাত জিজ্ঞেস করিস কিছু।দেখি কি বলে!
–রিফাত :কেন?আর কেন ওর পিছনে পড়ে আছিস?ওকে ওর মতো থাকতে দে।
–রিহান:পিছনে লাগছি না জাস্ট একটু খবর নিচ্ছি।

–রিফাত :গলা পরিষ্কার করে বলে নিরুপমা? তারপর এগিয়ে যায়।রিহান বাইক রেখে চুপচাপ গাছের আড়ালে চলে যায়।
–নিরু:ভালো থাকুন ভাইয়া।কলেজে একটা সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে হয়েছে।কথাটা বলতেই ছলছল করে উঠে চোখ।
–রিফাত:ক্লাস করলে না,,চলে যাচ্ছো যে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে