নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৯

0
2800

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি কেউ আমার সাথে কোনো কথা বলছে না। মেঘ বারবার আমাকে ডেকে উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল বলে ডক্টর ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে, জানিনা মেঘের ঘুম কখন ভাঙবে ওদিকে ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে। চাচ্চু তো আমাকে রেখে যাবে না, মেঘের ঘুম না ভাঙলে হয়তো মেঘের সাথে শেষ কথাটুকুও হবেনা।
তোহা: নতুন আম্মু ও নতুন আম্মু… (তোহার ধাক্কায় যেন ঘোর কাটলো)
আমি: হুম মামুনি বলো।
তোহা: আব্বুর কি হয়েছে?
আমি: কিছু হয়নি মামুনি তোমার আব্বু তো একটু পরই ভালো হয়ে যাবে।
বাবা: ডক্টর তো বললো অবস্থা খুব খারাপ এতো তাড়াতাড়ি ভালো হবে না। (বাবার কথা শুনে মেঘের দিকে তাকালাম হাতে ব্যান্ডেজ, মাথায় ব্যান্ডেজ, পায়ের গোড়ালিটা বোধহয় ভেঙ্গে গেছে)
বাবা: দোষ তো আমার ছেলের তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবার আমার ছেলেটাকে ক্ষমা করে দাও মা।
চাচ্চু: এখন এসব ব্যাপারে কথা না বলাই ভালো। আর হ্যাঁ একটু পর আমাদের ফ্লাইট আমরা কণাকে নিয়ে কানাডা চলে যাচ্ছি।
মা: আমার ছেলেকে এই অবস্থায় রেখে তুমি যেতে পারবে বৌমা?
চাচ্চু: কণা আমি আবারো বলছি তুই আমার কথা না শুনলে আমি তোদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবো।
আমি: শেষ করতে হবে না চাচ্চু আমি কানাডা যাবো।
চাচ্চু: হুম এটাই ভালো হবে, এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনো মানে হয়না। এক্সিডেন্ট করেছে বলে যে মেঘ শোধরে যাবে তাতো নয়।
রুহান: চলে যাবে যখন এখনি চলে যাও কেন বসে আছ এখানে?
চাঁচি: বৌমা আমি জানি তুমি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না তাও বলছি মেঘকে ছেড়ে যেওনা। (চাঁচির কথা শুনে এতোক্ষণে চাঁচির দিকে নজর পড়লো, যাবার আগে তো রুহান আর চাঁচিকে এক করে দিতে পেরেছি)
আমি: ক্ষমা না করলে কি আপনি বাসায় ফিরে আসতে পারতেন? আমার কারো উপর কোনো রাগ নেই আ…
পপি: তাহলে চলে যেতে চাইছ কেন?
চাচ্চু: মেঘ এতোকিছু করার পর এই প্রশ্নটা করা তোমাদের মানায় না।
চাচ্চুর কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। চাচ্চুর রাগ এখনো কমেনি তাই কানাডা যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কাছে। তাছাড়া আমারো এখন কানাডা চলে যেতে মন চাইছে, অনেক তো অপেক্ষা করেছি মেঘ ভুল বুঝতে পারবে এই ভেবে কিন্তু মেঘ তো শোধরায়নি উল্টো এখনো আমাকে অবিশ্বাস করে।

মেঘের ঘুম তো ভাঙ্গছে না ওদিকে ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে। মেঘের সাথে শেষ কথাটুকুও মনে হয় হবেনা।
ভাবি: কণা.. (কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকালাম, ভাবি দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: কেন এসেছ?
ভাবি: তুমি এমন পরিস্থিতিতে আছ আমি না এসে পারি?
আমি: আজ মেঘ এক্সিডেন্ট করেছে তাই এসেছ সেদিন তো আমাকে ফেলে রেখে ঠিকি চলে গিয়েছিলে। হ্যাঁ সেদিন আমি এক্সিডেন্ট করিনি ঠিকি কিন্তু মেঘের থেকে দূরে থেকে আমি কেমন পাগলের মতো ছিলাম তুমি তো দেখেছিলে তারপরও…
ভাবি: কণা তুমি অজতা আমার উপর রেগে আছ। তুমি সারাক্ষণ মেঘের জন্য কাঁদতে আর তোমার এই অবস্থা দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হতো কারণ তোমাদের দুজনের আলাদা হওয়ার জন্য আমিতো কম দায়ী নই, আর তাই আমি তোমার সামনে থাকতে পারিনি…
আমি: এজন্য অন্য বাসায় চলে গিয়েছিলে। কি পেয়েছ অন্য বাসায় গিয়ে? একা একাই তো থাকতে হয়েছে, আমাদের সাথে থাকলে কি হতো? ভাইয়া তো তোমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে গিয়েছিল আর তুমি…
ভাবি: তোমার প্রতি করা অন্যায় গুলো আমাকে রোজ কষ্ট দেয় কণা আর সেটা অনেক বেশি বেড়ে যায় যখন তোমাকে মেঘের জন্য কাঁদতে দেখি।
আমি: আরে আমিতো তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এসবে তো তোমার কোনো দোষ ছিল না।
পপি: ভাইয়া.. (পপির ডাকে মেঘের দিকে তাকালাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কণা..
মা: কথা বলিস না বাবা তোর কষ্ট হবে।
মেঘ: ওর সাথে যে আমার কথা বলতে হবে আম্মু।
আমি: কিছু বলতে হবে না তুমি রেস্ট নাও।
মেঘ: তুমি আমার পাশে বসে থাকবে তো?
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: না ও বসে থাকবে না তোমার পাশে কারণ আমাদের ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে।
মেঘ: কণা যেওনা প্লিজ!
আম্মু: কণা তুই কিন্তু বলেছিলি এখানে তোকে আসতে দিলে তুই আমার সব কথা শুনবি, চল এবার।
মেঘ: কণা প্লিজ যেওনা। (মেঘ আমার হাত ধরে ফেললো, ওর হাতটা আস্তে আস্তে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলাম)

জোহা: আপু আর কেঁদো না এখন তো আর কিছু করার নেই।
চাচ্চু: চল মা।
ভাবি: দাঁড়াও কণা। (ভাবির ডাকে পিছনে তাকালাম, পপি আর ভাবি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে)
ভাবি: মেঘের এই অবস্থা দেখেও চলে যাচ্ছ এই তোমার ভালোবাসা?
পপি: কাকে কি বলছ ও তো আমার ভাইকে ভালোবাসে না, বাসলে হসপিটালের বেডে ফেলে রেখে চলে যেতে পারতো না।
ভাবি: তোমার কাছে তোমার রাগটা বড় হয়ে গেল মেঘের অসুস্থতা কিছুই না?
পপি: তোহা? তোহার জন্য তো থাকতে পারো, তোহা তো তোমার মেয়ে। ওহ এখন হয়তো তোহাও তোমার কেউ না, যদি সত্যি তোহা তোমার মেয়ে হতো তাহলে নিজের সন্তানকে ফেলে রেখে কখনো কানাডা চলে যেতে পারতে না।
আমি: চুপ করো তোমরা।
জোহা: আপু.. (একটা চেয়ারে বসে পড়লাম, আর এসব কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না মাথা ঘুরছে)
জোহা: তোমরা আপুকে কেন এসব কথা শুনাচ্ছ? আব্বু আর চাঁচি যদি আপুকে জোড় করে কানাডা নিয়ে যায় তাতে আপুর দোষ কোথায়? আপু কানাডা চলে যাচ্ছে এইটা তোমাদের চোখে পড়ছে আর ভাইয়া যে বারবার আপুকে অবিশ্বাস করছে সবার সামনে ছোট করছে এইটা চোখে পড়ছে না?
চাচ্চু: জোহা আস্তে কথা বল ভুলে যাসনা এইটা হসপিটাল।
আম্মু: কোনো মা সন্তানকে অসুখী দেখতে চায় না। আমিও চেয়েছিলাম আমার মেয়েটা সবার সাথে মিলেমিশে সুখে সংসার করুক। কিন্তু মেঘ বারবার আমার মেয়েকে কষ্ট দিয়েছে এবার তোমরা বলো আমি মা হয়ে কিভাবে আমার মেয়েকে এমন ছেলের কাছে রাখি। (আম্মুর কথা শুনে পপি ভাবি দুজনেই চুপ হয়ে আছে)
আম্মু: মেঘের সাথে আমার মেয়ের কোনো বন্ধন থাকুক তা আমি চাই না তাই আমি ঠিক করেছি কানাডা গিয়ে কণার আবার বিয়ে দিবো। তোমরা এবার আসতে পারো আমাদের যেতে হবে নাহলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। (ভাবি আর পপি মাথা নিচু করে চলে গেল। আমি বসা থেকে উঠতে চাইলাম কিন্তু সবকিছু ঝাপসা লাগছে মনে হচ্ছে এখনি পরে যাবো)
জোহা: আপু কি হয়েছে এমন করছ কেন?
আম্মু: কণা… (চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসলো আস্তে আস্তে লুটিয়ে পড়লাম)

চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে দেখতে পেলাম, জোহা পাশের চেয়ারে বসে আছে। আম্মু আর চাচ্চু দূরে দাঁড়িয়ে ডক্টর এর সাথে কথা বলছেন।
নার্স: মেডাম প্যাসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। (নার্সের কথা শুনে ডক্টর আমার দিকে এগিয়ে আসলো, সাথে আম্মু আর চাচ্চুও এগিয়ে আসলো)
আম্মু: কিরে মা এখন কেমন লাগছে?
ডক্টর: এই অবস্থায় কেউ এতোটা কেয়ারলেস হয়ে থাকে হুম? তোমার শরীর তো খুব দূর্বল, এভাবে চললে বেবির খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। (ডক্টর এর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম কি বলছে ডক্টর এসব)
ডক্টর: অবশ্য এখনো বেবির অবস্থা খুব বেশি ভালো না এভাবে চললে বেবির কন্ডিশন আরো খারাপ হয়ে যাবে তখন কিন্তু বাচ্চাটা বাঁচানো সম্ভব হবেনা।
আমি: আম্মু ডক্টর এসব কি বলছে?
ডক্টর: তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করে লাভ কি উনি নিজেই তো বুঝতে পারননি তুমি যে প্রেগন্যান্ট। দেখো তোমার শরীরের এখন যা অবস্থা তোমাকে কিছুদিন বেডরেস্টে থাকতে হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে নিজের খেয়াল রাখতে হবে, তুমি সুস্থ থাকলেই তো বাচ্চা সুস্থ থাকবে। তুমি কি চাওনা তোমার বাচ্চা সুস্থ থাকুক। (ডক্টর এর কথা গুলো শুনে সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে কি বলছে এসব? আমি মা হবো অথচ আমিই বুঝতে পারিনি)
চাচ্চু: ডক্টর ওকে কি এখানে রাখতে হবে নাকি…
ডক্টর: আপনারা চাইলে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন তবে অবশ্যই মেয়ের খেয়াল রাখতে হবে।
আম্মু: ঠিক আছে। (ডক্টর চলে যেতেই আম্মু এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন)
চাচ্চু: বাসায় চলে যাই কণাকে এই হসপিটালে না রাখাটাই ভালো হবে, যদি প্রয়োজন হয় একজন নার্স বাসায় নিয়ে যাবো ওর দেখাশোনা করার জন্য।
জোহা: তার আর প্রয়োজন হবে না আমিই আপুকে দেখে রাখতে পারবো।
আম্মু: ঠিক আছে চলো।
জোহা: একটা কথা বলবো আব্বু?
চাচ্চু: হুম বল।
জোহা: যদিও এমন পরিস্থিতিতে এই খুশির খবরটা আমরা শুনেছি তাও আমার মনে হয় ও বাড়ির সবাইকে বিশেষ করে ভাইয়াকে জানানো প্রয়োজন। আর ওরা তো সবাই এই হসপিটালেই আছে।
চাচ্চু: না কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। মেঘের সন্তান হলেও মেঘের মতো ছেলের ছায়া বেবির উপর পরুক আমি চাইনা। আর হ্যাঁ তোরা জোড় করলে আমি কণাকে এই অবস্থাতেই কানাডা নিয়ে যেতে বাধ্য হবো।
আমি: না চাচ্চু এমন করো না আমি মেঘের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবো না তাও কানাডা নিয়ে যেওনা প্লিজ!
চাচ্চু: ঠিক আছে আপাতত বাসায় চল। নতুন বাসা কিনে ওখানে তোদের রেখে আমি কানাডা যাবো আর মেঘ জানবে তুই কানাডা আছিস।
আমি: হুম।

বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে দাঁড়ালাম না সোজা রুমে চলে আসলাম, ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি। তোহা সবসময় বলতো নতুন আম্মু একটা পুঁচকে পুতুল এনে দাও আর তোহার এই কথা নিয়ে মেঘ কতো দুষ্টুমি করতো, আজ এতো বড় খুশির সংবাদটা না মেঘকে জানাতে পারছি না তোহাকে।
আম্মু: কণা.. (আম্মু আসছে শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। আম্মু এসে আমার পাশে বসলেন)
আম্মু: কাঁদছিস কেন? বুঝতে পারছি তোর কষ্ট হচ্ছে মেঘকে খবরটা জানাতে পারবি না ভেবে কিন্তু তুই বল যে তোকে এতো কষ্ট দেয় তার সাথে তোকে আমরা কিভাবে থাকতে দেই।
আমি: আম্মু বাদ দাও এসব।
আম্মু: দেখ আগে আমরা ভেবেছিলাম তোর বিয়ে দিবো আবার কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়। তুই মেঘের জন্য অপেক্ষা কর আমি মানা করছি না, মেঘ যদি ভালো হয়ে ফিরে আসে তাহলে আমরা তোদের আর আলাদা রাখবো না কিন্তু মেঘ ভালো না হলে আমাদের কিছু করার নেই।
আমি: না আম্মু আমি কারো জন্য অপেক্ষা করছি না আর করবোও না। আমার সন্তানকে আমি নিজেই লালনপালন করতে পারবো।
আম্মু: রাগ করিস না দেখ মেঘ তোকে এতো কষ্ট দেয় এখন যদি তুই সবকিছু ভুলে ওর কাছে ফিরে যাস তাহলে ও তোকে আরো বেশি কষ্ট দিতে দিদ্ধাবোধ করবে না। তারচেয়ে ভালো হবে তুই ওর চোখের আড়ালে থাক তোর শূন্যতা অনুভব করে হয়তো ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে, আর মেঘ যদি সত্যি তোকে ভালোবেসে থাকে তাহলে একদিন ঠিক ফিরে আসবে।
আমি: হুম।
আম্মু: তোর আব্বু নেই এই সময় যদি তোর চাচ্চু আমাদের উপর রাগ করে কানাডা চলে যায় তাহলে আমাদের কি হবে বল, তাছাড়া তোর চাচ্চু তো তোর ভালোর জন্যই তোকে মেঘের থেকে দূরে রাখতে চাইছে। আপাতত মেঘের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন নেই।
আমি: হুম।
আম্মু: আর কান্নাকাটি করিস না নিজের প্রতি যত্নবান হ, তুই ভালো থাকলে তবেই তো বেবি ভালো থাকবে। আর এখন তো বেবিটাই তোর সবকিছু তাইনা? আসছি আমি তোর জন্য খাবার রেডি করি তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।
আমি: ঠিক আছে।
আম্মু চলে যেতেই উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে ঢুকলাম তখনি আয়নার দিকে নজর পড়লো, আস্তে আস্তে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সত্যি অনেক রোগা হয়ে গেছি এভাবে চললে আমার বেবির ক্ষতি হয়ে যাবে। পেটে হাত রেখে আয়নায় তাকালাম, আম্মু ঠিকি বলেছেন এই বেবিটাই এখন আমার সবকিছু। মেঘকে ভুলে গিয়ে এখন আমার বেবির কথা ভাবতে হবে, ও ছাড়া তো এখন আমার কেউ নেই ওর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
জোহা: আপু খাবে এসো।
আমি: আসছি।

আমি: চাচ্চু কোথায়রে? (চাচ্চুকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে জোহাকে প্রশ্ন করলাম)
জোহা: বাইরে গেছেন।
আমি: এই সন্ধ্যাবেলায় বাইরে কেন?
জোহা: আব্বুকে কাল চলে যেতে হবে তাই আমাদের জন্য বাসা খুঁজতে গেছেন।
আমি: বাসা এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে সম্ভব?
আম্মু: টাকা হলে সব সম্ভব তুই এসব নিয়ে টেনশন করিস নাতো। খেয়ে নে আর এবার একটু নিজের খেয়াল রাখতে শিখ, এখন তো মা হবি নিজের সাথে সাথে সন্তানের যত্নও নিতে হবে। পাগলামি ছেড়ে বেবিটার কথা ভাব।
আমি: এতো জ্ঞান দিওনা তো আর এসব কি দিয়েছ আমি এসব ফলমূল খাই নাকি? আমার নোডলস দাও।
জোহা: নাশতায় এখন থেকে ফলই খেতে হবে ভাজাভুজি একদম খাওয়া যাবে না।
আমি: ডক্টর হলি কবে?
জোহা: যখন শুনেছি আমি খালামণি হবো তখন থেকে।
চাচ্চু: জোহা দেখছি খালামণি হবে শুনে খুব খুশি। (চাচ্চুর কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম, বাসা হয়তো পেয়ে গেছেন তাই চলে এসেছেন)
জোহা: হ্যাঁ আমিতো অনেক খুশি, তোমরা বুঝি খুশি নও?
চাচ্ছ: খুশি হবো না আবার নানা হবো যে হাহাহা।
আম্মু: বাসা পেয়েছ?
চাচ্চু: হ্যাঁ, সকালে তোমাদের নতুন বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাবো।
আম্মু: ঠিক আছে।
চাচ্চু: জোহা তুই কি সিদ্ধান্ত নিলি এখানেই থাকবি নাকি?
জোহা: হ্যাঁ আমি আপুকে রেখে কোথাও যাচ্ছি না, ভাবছি এখানেই ভালো কোনো ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হয়ে যাবো।
চাচ্চু: ঠিক আছে যা ভালো মনে হয় কর। আমি কাল চলে যাচ্ছি কয়েক মাসের মধ্যে আর আসা হবে না।
জোহা: ঠিক আছে।
চাচ্চু: আর কণা মেঘের সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না একদম।
আমি: হুম।

জোহা: আপু হলো তোমার তাড়াতাড়ি এসো।
আমি: আসছি। (নতুন বাসায় চলে যাচ্ছি মেঘের সাথে তো আর দেখা হবেনা ওর ছবিটা লুকিয়ে সাথে নিলাম)
জোহা: এতো দেরী করলে হবে আব্বু আর চাঁচি গাড়িতে বসে ওয়েট করছেন।
আমি: এইতো শেষ চল।
জোহা: চলো।

চাচ্চু আমাদের নতুন বাসায় নামিয়ে দিয়ে এয়ারপোর্ট চলে গেলেন। একই শহরে হলেও আগের বাসা থেকে এই বাসা অনেক দূরে মেঘ চাইলেও আমাকে খুঁজে পাবে নাহ।
আম্মু: কিরে বাসা পছন্দ হয়েছে তোদের?
জোহা: হুম অনেক।
আম্মু: নিজেদের রুম গিয়ে গুছিয়ে নে।
জোহা: ওকে।

রুমে এসে চারপাশটা ভালোভাবে দেখে নিলাম, এই চার দেয়ালের মধ্যেই তো এখন জীবন কাটাতে হবে। বিছানার সামনের দেয়ালে মেঘের ছবিটা রাখলাম যেন ঘুমানোর সময় দেখতে পারি। মেঘের ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি সামান্য একটা অবিশ্বাস আজ আমাদের দুজনকে কতোটা দূরে নিয়ে গেল। একই শহরে থাকবো অথচ মেঘের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবো না, দেখা হবে না কখনো দুজনের। এজন্যই লোকে বলে অবিশ্বাস করে পস্তানোর চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া অনেক ভালো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে