নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ১০
মেঘ কপালে হাত দিয়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, করতে চাইলাম কি আর হলো কি। তাড়াতাড়ি মেঘ’কে ধরে বিছানায় বসালাম।
আমি: সরি আমি এমনটা চাইনি।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখি হাতটা সরাও।
মেঘ: লাগবে না ব্যান্ডেজ করা।
আমি: লাগবে না নাকি আমি করে দিচ্ছি বলে… (মেঘ আমার হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো)
আমি: দিবো না ব্যান্ডেজ করে যাও তোমার শায়লাকে গিয়ে বলো ব্যান্ডেজ করে দিতে।
মেঘ: আবার বলছ।
আমি: একশ একবার বলবো।
মেঘ ব্যান্ডেজ না করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল আমিও বারান্দায় চলে আসলাম। সত্যি আমি এমনটা চাইনি খুব কষ্ট হচ্ছে এখন। মেঘ তাল সামলাতে না পেরে এভাবে পরে গিয়ে এতোটা আঘাত পাবে আমি ভাবতেও পারিনি।
পপি: ভাবি তোহা… একি তুমি কাঁদছ কেন?
আমি: কোথায় নাতো। (মেঘকে কষ্ট দিয়ে আমিও যে কখন নিজের অজান্তে কেঁদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি, পপি আসাতে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
পপি: ভাইয়ার কপালে কি হয়েছে?
আমি: (নিশ্চুপ)
পপি: তোমরা কি ঝগড়া করেছ?
আমি: হু।
পপি: আরে মন খারাপ করো না এসব দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়া কিছু করতে হয়।
আমি: তোমারও তো মন খারাপ।
পপি: এসব বাদ দাও। (হেসে উঠলো পপি, কষ্ট লুকিয়ে রেখে হাসাটা সত্যি খুব যন্ত্রণার। রুহান যে কবে পপির ভালোবাসা বুঝবে)
পপি: আসছি আমি। (পপি তোহাকে রেখে চলে গেল। তোহা রুম থেকে কিছু খেলনা নিয়ে এসে বারান্দায় খেলতে বসে পড়লো)
কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না শায়লা কিভাবে জানলো তোহার নামে সবকিছু দিয়েছি। সেদিন তো আব্বু আর আমি ছাড়া আব্বুর রুমে অন্য কেউ ছিল না যে শুনবে। নাকি রুমের বাইরে থেকে কেউ শুনেছে? মেঘ শুনেনি তো? সেদিন একমাত্র মেঘই তখন আব্বুর রুমের দিকে গিয়েছিল কিন্তু মেঘ শুনলে শায়লাকে বলতে যাবে কেন? তবে কি মেঘ শায়লা দুজন মিলে আমাকে নিয়ে খেলছে? সম্পত্তি পেয়ে গেলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে শায়লাকে মেঘ আবারো বিয়ে করবে এটাই কি ওদের প্ল্যান? উফফফ সবকিছু কেমন যেন ঘুলিয়ে যাচ্ছে।
তোহা: নতুন আম্মু তোমার ফোন। (তোহার ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো ও ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ফোনের রিংটোন বাজছিল শুনতেই পাইনি। ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার)
আমি: হ্যালো।
–শায়লা বলছি তুমি মেঘকে এভাবে…
আমি: মেঘ কোথায়?
শায়লা: আমার কাছেই আছে।
আমি: আমি ওর মাথায় আঘাত করেছি এবার তুমি ব্যান্ডেজ করে দাও যত্তোসব।
শায়লা: হ্যাঁ দিবো তো, তুমি আর কখনো এমন করবে না বুঝেছ?
আমি: ফোনটা মেঘ’কে দাও। (শায়লা রাগে গজগজ করতে করতে ফোনটা মেঘের হাতে দিলো)
মেঘ: হ্যালো ক…
আমি: এক্ষণি বাসায় এসো।
মেঘ: কণা আমি অফিসে।
কণা: অফিস তোমার নাকি আমার? যা হবে তা আমি বুঝবো তুমি এক্ষণি এসো।
মেঘ: হুম।
মেঘ ফোন রেখে দিলো। সাহস কতো বড় আমি ব্যান্ডেজ করে দিতে চেয়েছি করেনি চলে গেছে শায়লার কাছে। আগে তো শুধু কপাল কেটেছে এখন ওর পুরো মাথা ফাটাবো।
রুহান: আম্মু তুমি এসব কি বলছ আমি কণাকে সত্যি ভালোবাসি। (রুহানের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ রুহানের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম)
চাঁচি: হ্যাঁ সেটা আমিও জানি তাইতো বলছি তু…
রুহান: তুমি যা করছ তা ঠিক না আম্মু।
চাঁচি: তুই কি কণাকে তোর করে চাস না?
রুহান: হ্যাঁ চাই কিন্তু তাই বলে এভাবে?
চাঁচি: ভালোবাসায় একটু জোড় খাটাতে হয় বুঝেছিস গাধা।
রুহান: কিন্তু…
চাঁচি: তুই একটু পাগলামি কর দেখবি সবাই মেনে নিবে তাছাড়া মেঘ তো কণাকে মেনে নেয়নি তুই চাইলেই মেঘ কণাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
রুহান: তাতো বুঝলাম কিন্তু তুমি কণাকে আমার বউ বানানোর জন্য এতো…
চাঁচি: এসব তোর এই গোবরের মাথায় ঢুকবে না। যা বলেছি তাই কর। (চাঁচি এদিকেই আসছেন বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি সরে গেলাম, চাঁচি রুহানকে কি করতে বললেন কিছুই তো বুঝতে পারলাম না। আর আমাকে রুহানের বউ বানিয়ে চাঁচির কি লাভ)
মেঘ: ওহ তুমি এখানে? এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললে যে? (এমনিতেই টেনশনে আছি তার উপর মেঘ এর কপালে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করা দেখে রাগ মাথায় ছড়ে বসলো। ওর শার্টের কলার চেপে ধরে ওকে টেনে রুমে নিয়ে আসলাম)
মেঘ’কে খাটে বসিয়ে টেনে হিছড়ে ওর কপালের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললাম।
আমি: শায়লাকে দিয়ে ব্যান্ডেজ করানো হয়েছে আমার হাতে ব্যান্ডেজ ভালো লাগে না… (মেঘ আমাকে টান দিয়ে শুয়ে দিলো বিছানায়, আমার উপর শুয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দুচোখের দিকে। মেঘের এমন চাহনি দেখে খুব অসস্থি হচ্ছে)
মেঘ: আল্লাহ্ যেন প্রত্যেকটা ছেলের জীবনে এমন গুন্ডি বউ দেন। (মেঘ মিটিমিটি হাসছে ওর কথার অর্থ বুঝতে একটু সময় লাগলেও বুঝে ফেলেছি একটু আগে ওর শার্টের কলার এভাবে ধরাতে এই কথা বলছে, লজ্জা পেয়ে ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেললাম)
মেঘ: মেঘের কণা লজ্জা পেলে যে এতোটা সুন্দর লাগে আগে তো দেখিনি… (মেঘ আমার নাক টেনে দিলো, ও আমার এতোটা কাছে আছে ভাবতেই মনে অন্যরকম এক শিহরণ জেগে উঠলো। আবারো ওর চোখের দিকে তাকালাম)
কতক্ষণ মেঘের চোখের গভীরতায় ডুবে ছিলাম ঠিক বলতে পারবো না, মেঘের এক আঙ্গুল আমার গলায় খেলা করছে বুঝতে পেরে ওকে তাড়াতাড়ি ঠেলে সরিয়ে দিলাম।
মেঘ: এইটা কি হলো?
আমি: শায়লা তোমার কপালে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে কথাটা ভুলে যাইনি। (উঠে চলে আসতে চাইলাম মেঘ আমার কোমরে ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দিলো। আমার পিছনে বসে চুলে নাক ঘষতে শুরু করলো)
মেঘ: ব্যান্ডেজটা অফিসে যাওয়ার সময় ফার্মেসি থেকে করিয়েছি, শায়লা আমাকে এতটুকুও স্পর্শ করেনি।
আমি: কথাটা কতটুকু সত্যি?
মেঘ: যতটুকু সত্যি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা।
আমি: তাহলে তো বিন্দু পরিমাণও সত্যি না কারণ তুমি আমাকে ভালোবাস না।
মেঘ: তাই?
আমি: আরে কি করছ?
মেঘ: কণা আমি তোমাকে আমার করে পেতে চাই। (মেঘ আমার পেটে ওর হাত দিয়ে খেলা করছিল, ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে আমি দূরে এসে বসলাম)
আমি: শায়লাকে যদি চিরতরে তোমার জীবন থেকে সরাতে পারো তবেই আমাকে পাবে নাহলে ভাববো তুমি আমাকে নিয়ে খেলা করছ। (মেঘ চুপচাপ বসে আছে দেখে রুম থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়ালাম পরক্ষণেই মেঘকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো, ফিরে আসলাম ওর কাছে)
আমি: আচ্ছা মেঘ শায়লা যে তোমার কাছে ফিরে আসতে চাইছে ওর স্বামী কোথায়? তুমি তো বলেছিলে শায়লা ওর প্রেমিকের কাছে ফিরে গেছে তাহলে এখন আবার তাকে রেখে তোমার কাছে ফিরে আসতে চাইছে কেন?
মেঘ: শায়লা তো বললো ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
আমি: কেন হলো?
মেঘ: বললো তো সামান্য ঝগড়াঝাঁটি নিয়ে।
আমি: শায়লা বললো আর তুমি বিশ্বাস করে ফেললে? ভেবে দেখেছ ছয় মাসের ছোট বাচ্চাকে ফেলে যে শায়লা চলে গিয়েছিল তার প্রেমিকের কাছে তাদের কেন সামান্য ঝগড়াঝাঁটি থেকে ডিভোর্স হবে? আচ্ছা আদৌ কি ওদের ডিভোর্স হয়েছে নাকি ওরা তোমাকে কোনো কারণে বোকা বানাচ্ছে? (মেঘ চিন্তিত হয়ে বসে আছে, ভাবো মেঘ শায়লা সত্যি তোমার কাছে ফিরে আসতে চাইছে কিনা। আমার তো মনে হচ্ছে শায়লা কোনো চালাকি করছে। শায়লাকে পরে দেখছি আগে জানতে হবে চাঁচি রুহানকে কি শিখিয়ে দিয়েছে)
ড্রয়িংরুমে এসে দেখি দাদি আর রুহানের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে, দাদি রেগে গিয়ে রুহানকে একটা থাপ্পড় মারলেন। রুহান গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
দাদি: আগেই বলেছিলাম কণাকে ভুলে যা ওকে শান্তিতে সংসার করতে দে।
রুহান: ভাইয়া তো কণাকে ভালোবাসে না তাহলে ডিভোর্স দিতে সমস্যা কোথায়? আমি তো বলেছি কণাকে আমি বিয়ে করার পরও কণা তোহার মা হয়েই থাকবে আমি কিছু বলবো না তাছাড়া তোহা তো আমার মেয়ের মতোই।
দাদি: আবার তুই ডিভোর্স এর কথা বলছিস? তোকে তো আমি এই বাসা থেকেই বের করে দিবো।
রুহান: বাসা থেকে বের করতে হবে না আমি এই পৃথিবী ছেড়েই চলে যাবো আমি সুইসাইড করবো।
আমি: রুহান দাঁড়াও।
দূর রুহান রাগ করে রুমে চলে গেল। তারমানে বেশি বেশি পাগলামি করার কথা চাঁচি রুহানকে বলে দিয়েছে। কিন্তু এতে চাঁচির লাভ কি? চাঁচির প্ল্যান কি?
চাঁচি: তোমাকে আমি বলেছিলাম এই মেয়ের জীবন থেকে মেঘ’কে সরানোর জন্য যা যা করতে হয় তাই করো কিন্তু তুমি কি করছ… (চাঁচির সাথে কথা বলার জন্য উনার রুমের দিকে এসেছিলাম কিন্তু উনি ফোনে কথা বলছেন শুনে রুমের বাইরে থমকে দাঁড়ালাম। ফোনের অপর পাশ থেকে কে কথা বলছে বা কি কথা বলছে কিছুই তো শুনতে পাচ্ছি না তাহলে বুঝবো কিভাবে)
চাঁচি: আমি খুব তাড়াতাড়ি ওদের ডিভোর্স চাই বুঝেছ? তোমার যা করতে হয় করো শুধু মেঘ কণাকে আমি আলাদা দেখতে চাই। (দেখাচ্ছি তোমাকে মেঘ কণা কতোটা আলাদা, আমাকে চিনো নাই তোমার সব প্ল্যানে আমি জল ঢেলে দিবো)
চাঁচি: আচ্ছা তুমি আমাকে একটা কথা বলতো শায়লা, কণার বাবা সবকিছু তোহার নামে উইল করে দিয়েছে এই কথাটা তোমাকে জানিয়ে আমার কি লাভ হলো? তুমি কণার বাবাকে খুন করালে কিন্তু মেঘ’কে তো ফাঁসাতে পারলে না, মেঘ আর কণা তো এখনো একসাথেই আছে। (চাঁচির মুখে কথাগুলো শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, তারমানে আমার ধারণাই ঠিক শায়লা করছে এসব। কিন্তু চাঁচি কিভাবে শায়লাকে হেল্প করছে এতোটা খারাপ উনি আর চাঁচি আব্বু আর আমার কথা শুনলো কিভাবে? তাহলে কি সেদিন রুমের বাইরে চাঁচি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল? উফফ সবকিছু কেমন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে)
রুমে এসে চুপচাপ বসে রইলাম, কি করবো এখন আমি চাঁচিকে পুলিশে দিবো?কিন্তু এতে তো এই পরিবারের সম্মান যাবে আর এই পরিবারের সম্মান যাওয়া মানে বাবা আবারো আঘাত পাবেন স্টোকও করতে পারেন। আব্বুকে হারিয়েছি এখন বাবার মতো শশুড়কে হারাতে পারবো না। তাড়াতাড়ি বাবার রুমের দিকে দৌড় দিলাম।
বাবাকে সবকিছু খুলে বললাম, উনি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলেন।
আমি: এখন কি করবো বাবা?
বাবা: আর যাই করো মা ওকে পুলিশে দিওনা আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।
আমি: হুম আমি উনাকে ক্ষমা করতে পারি একটা শর্তে।
বাবা: কি শর্ত?
আমি: শায়লা যে আব্বুকে খুন করিয়েছে এই সাক্ষী উনাকে দিতে হবে।
বাবা: অপরাধী কি কখনো নিজের অপরাধ স্বীকার করে তাছাড়া শায়লা তো রুহানের মাকেও মেরে ফেলতে পারে।
আমি: আপাতত কোনো সাক্ষী দিতে হবে না আমি প্রমাণ জোগাড় করি তারপর নাহয়…
বাবা: আমি ভাবছি রুহান এসব শুনলে ছেলেটা কতোটা কষ্ট পাবে। নিজের মায়ের সম্পর্কে এমন কথা কোনো সন্তানই শুনতে চায় না। (ওর মায়ের এই একটা ভুলই তো আমি কাজে লাগাবো বাবা, এই ভুলটাই হবে রুহান আর পপিকে এক করার অস্ত্র)
আমি: শায়লার ব্যাপার আমি পরে দেখছি আগে আপনি আমাকে একটা কথা বলুন তো।
বাবা: কি কথা মা?
আমি: যদি কখনো অনেক বড় অন্যায় করে ফেলি আমি তখন কি আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন? (বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলেন)
বাবা: রায়হান কখনো কোনো অন্যায় কাজ করেনি যাই করেছে কারো না কারো ভালোর জন্যই করেছে তাই তোমার উপরেও আমার বিশ্বাস আছে মা, রায়হানের মেয়েও কোনো অন্যায় করবে না যা করবে কারো ভালোর জন্যই করবে। (মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাবার শেষ কথাটায় অনেক ভরসা পেলাম। এবার আমি আমার কাজ শুরু করতে পারবো)
রুহানের রুমে আসলাম ও জানালার কাছে দাঁড়িয়ে চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছে, ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: রুহান জানো তো মানুষ সবসময় যা চায় তা কিন্তু পায় না। তবে এইটাও সত্যি যা চেয়েও পাওনি তারচেয়ে ভালো কিছু একদিন ঠিক পাবে। তেমনি তুমি যেমন আমাকে পাওনি বলে কষ্ট পাচ্ছ একদিন ঠিক এমন কেউ তোমার জীবনে আসবে যে আমাকে ভুলিয়ে দিবে তোমার মন থেকে। তার ভালোবাসায় তখন তোমার মনে হবে…
রুহান: আমি তোমার কাছে জ্ঞান চেয়েছি?
আমি: জ্ঞান দিতে আসিনি আমি, এসেছি একটা সত্য কথা জানাতে।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: কথাটা শুনার পর হয়তো তুমি আমার সব কথা শুনবে।
রুহান: মানে?
আমি: তোমার আম্মু আমার আব্বুর খুনের সাথে জড়িত আছেন এখন তুমি ভাবো নিজের মাকে কিভাবে বাঁচাবে।
রুহান: কি বলছ এসব?
আমি: বিশ্বাস নাহলে তোমার আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো অবশ্য উনি স্বীকার নাও করতে পারেন, অপরাধী তো নিজের অন্যায় নিজে স্বীকার করে না যতোক্ষণ না পর্যন্ত পুলিশ…
রুহান: আম্মু এতোটা নিচে নামতে পারেন আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আমি: এটাই সত্যি রুহান, এখন তুমি বলো উনাকে পুলিশে দিবো নাকি…
রুহান: কণা প্লিজ আম্মুকে মাফ করে দাও।
আমি: হুম কিন্তু শর্ত আছে।
রুহান: আমি তোমার সব শর্তে রাজি শুধু আম্মুকে পুলিশে দিওনা। আম্মু জেলে গেলে এই পরিবারের সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে তাছাড়া চাচ্চু আবারো স্টোক…
আমি: বাবার কথা ভেবেই আমি উনাকে মাফ করবো ভেবেছি নাহলে তো…
রুহান: প্লিজ তুমি রেগে যেও না। তুমি যা বলবে তাই আমি শুনবো।
আমি: তাহলে চলো আমার সাথে।
রুহান: কোথায়?
আমি: প্রশ্ন না করলেই ভালো হবে।
রুহান চুপচাপ আমার সাথে আসলো। পপি আর জোহা একটু বাইরে গিয়েছে, ওদের মেসেজ করে কাজী অফিসে আসতে বললাম।
রুহান: ড্রাইভার এদিকে কোথায় যাচ্ছ?
আমি: শপিংমলে।
রুহান: কিন্তু কেন?
আমি: উফফ রুহান তুমি না বড্ড বেশি কথা বলো। (রুহান চুপচাপ বসে রইলো)
একটা বেনারসি আর একটা পাঞ্জাবী আর কিছু গয়নাগাটি কিনলাম।
রুহান: এসব কিসের জন্য?
আমি: আবার কথা বলছ?
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: চলো।
রুহানকে নিয়ে কাজী অফিসে আসলাম, জোহা আর পপি দাঁড়িয়ে আছে। জোহার হাতে বেনারসি আর গয়না গুলো দিলাম।
আমি: পপিকে সাজিয়ে নিয়ে আয়।
পপি: মামামানে?
আমি: যাও আর রুহান এই পাঞ্জাবীটা পড়ে এসো। (এতোক্ষণে রুহান বুঝতে পেরেছে আমি কি করতে চলেছি)
রুহান: কণা কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
আমি: শর্তের কথা ভুলে গেছ?
রুহান: না তবে পপি কখনো আমার ভালোবাসা পাবে না কথাটা মনে রেখো।
আমি: এইটা পপির উপর ছেড়ে দাও ওর ভালোবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, একদিন ঠিক ও তোমার ভালোবাসা জয় করে নিবে। রুহান রাগে গজগজ করতে করতে পাঞ্জাবীটা হাতে নিয়ে চলে গেল।
রুহান আর পপির বিয়েটা দিয়ে দিলাম, জানিনা কতোটা ঠিক কাজ করেছি তবে মনে হচ্ছে একটি মেয়ের এতো বছরের ভালোবাসা আজ সার্থক হয়েছে।
জোহা: আপু বিয়ে তো হয়ে গেল কিন্তু বাসায় গিয়ে কি বলবে?
আমি: আগে বাসায় তো চল।
জোহা: চলো।
সারা রাস্তা রুহান কারো সাথে কোনো কথা বললো না আর পপি তো ভয়ে আছে বাসার সবাই মানবে কিনা তাছাড়া রুহান ওকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিবে কিনা।
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন, রুহানকে বর সাজে আর পপিকে কনে সাজে দেখে উনি হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।
আমি: মা নতুন বর বউকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন নাকি?
মা: এসব তুমি কি বলছ?
আমি: ভিতরে এসে বলি? (মা সরে গেলেন ভিতরে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম সবাই)
মা: এসব কি বৌমা?
আমি: পপি রুহানকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে তাই ওদের বিয়ে দিলাম।
চাঁচি: বিয়েটা কি তোমার কাছে ছেলেখেলা মনে হয়? (চাঁচি উপর থেকে নেমে আসতে আসতে চিৎকার করে বললেন, উনার চেঁচামেচিতে সবাই ড্রয়িংরুমে আসতে শুরু করলো)
রুহান: চুপ করো মা, শুধুমাত্র তোমার একটা ভুলের জন্য আজ আমায় এই রাস্তা বেছে নিতে হলো।
রুহান মাথার পাগড়ী ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রুমে চলে গেল। আমায় মাফ করে দিও রুহান, পপির ভালোবাসার জন্য তোমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে হলো তবে হ্যাঁ আমার বিশ্বাস একদিন তুমি আমাকে এই কাজের জন্য ধন্যবাদ দিবে। চাঁচি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন দেখে উনার পাশে এসে দাঁড়ালাম। সবার চোখের আড়ালে উনার কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম “কেমন দিলাম চাঁচি শাশুড়ি? মেঘ আর আমাকে আলাদা করে নিজের ছেলের বউ করতে চেয়েছিলেন, দিলাম তো আপনার প্ল্যানে জল ঢেলে”
চলবে?