জীবনের_ডায়েরি পার্ট : ৬

0
3012

জীবনের_ডায়েরি পার্ট : ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

রাতের রান্না শেষ করে রোমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে অনেক গুলা মিসড কল, কে হতে পারে এতো গুলো কল দিয়েছে ভাবতে ভাবতেই সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসলো রিসিব করলাম
–আসসালামু আলাইকুম
–ওয়ালাইকুম আসসালাম
–কে বলছেন
–আমি শ্রাবণ
–ওহ
–কেমন আছো
–এই তো ভালো তুমি
–ভালো কি করতেছ
–বসে আছি হঠাৎ ফোন দিলা যে
–না এমনি ভাবলাম কি কর দেখি
–হুম

শ্রাবণ এর সাথে অনেক সময় কথা হলো, একটু ফেবু তে ঘুরাঘুরি করে খেয়ে এসে শুয়ে পড়লাম, আজ আম্মুর কথা মনে পরতেছে আম্মুটা যে কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলো এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম

এভাবে প্রায় একমাস চলে গেলো, ইদানীং শ্রাবণ এর সাথে অনেক কথা হয় কলেজে, ফোনে, ফেবুতে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছি আমরা
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি রিয়া ফোন দিল
–কিরে কলেজে আসবি না
–হুম রেডি হচ্ছি
–তোর সাথে নাকি শ্রাবণ এর কি কথা আছে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে
–কি এমন কথা যে তাড়াতাড়ি যেতে হবে
–জানিনা এসেই দেখ কি বলে
–হুম আসছি রাখ

রিক্সায় বসে ভাবতেছি শ্রাবণ কি এমন কথা বলবে যে কলেজে তাড়াতাড়ি যেতে বলছে, ভাবতে ভাবতেই কলেজে চলে আসলাম রিয়া আর শ্রাবণ সামনে এসে হাজির
শ্রাবণ: আজ ক্লাস করবো না
আমি: কেন
শ্রাবণ: তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
আমি: তো বলো
শ্রাবণ: এখানে না চলো কোনো রেস্টুরেন্ট এ যাই
রিয়া: কথা বলার জন্য রেস্টুরেন্ট এ যেতে হবে কেন আর গেলে তোরা যা আমি যাবো না
আমি: আমিও যাবো না যা বলার এখানে বলো
শ্রাবণ: প্লিজ চলো তোমরা আর কখনো কিছু চাইবো না আজকে কথা গুলো না বলতে পারলে আমি হয়তো মরেই যাবো

ওর এমন কথা শুনে তিন জন রেস্টুরেন্ট এ আসলাম
আমি: হুম বলো কি বলবা
শ্রাবণ: কিছু খাবার অর্ডার দেই
আমি: আমি খাবো না তোমাদের জন্য দাও
রিয়া: আমি খাবো
আমি: তুই সারা জীবন পেটুকই থেকে যাবি
রিয়া: আগে খাওয়া তারপর দুনিয়ার সব
আমি: হুম তুই অর্ডার দে আর শ্রাবণ বলো কি বলবা
শ্রাবণ: আসলে আমি যে কথা গুলো বলবো জানিনা তুমি কিভাবে নিবে কিন্তু কথা গুলো না বলে আমি আর থাকতে পারতেছি না
আমি: এতো আমতা আমতা না করে বলো
শ্রাবণ: তোমার সাথে প্রথম দিন ধাক্কা খাওয়ার পর যখন তোমার দিকে থাকিয়ে ছিলাম তখনি তোমাকে আমার ভালো লাগছিল আমি ভাবছিলাম সেটা শুধু মাত্র ক্ষণিকের জন্য ভালো লাগা তারপর তোমার সাথে প্রতিদিন দেখা হওয়া কথা বলা থেকে বুঝতে পারছি আসলে সেটা শুধু মাত্র ভালো লাগা না ভালোবাসা, বিশ্বাস করো তমা আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলছি তোমার সাথে কথা না হলে আমি যেন অস্থির হয়ে যাই তোমাকে একদিন না দেখে আমি থাকতে পারিনা তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা
আমি: অনেক বলে ফেলছ থামো এবার তোমার সাথে আমি জাস্ট বন্ধু হিসেবে কথা বলি আর তুমি এই সুযোগে ভালোবাসার কথা বলতেছ আসলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করাটাই আমার ভুল হইছে, আর কখনো আমাকে ফোন দিবা না আমার সামনে আসবা না (উঠে চলে আসলাম)
শ্রাবণ: তমা শুনো যেও না প্লিজ
রিয়া: এই তমা দারা

কারো কথা শুনলাম না বাসায় চলে আসলাম আমি কাউকে আমার এই জীবনের সাথে জরাতে চাই না, ফোনটা অফ করে রেখে দিলাম, সারা দিন এভাবেই কেটে গেলো রাতে ফোন অন করলাম আব্বুকে ফোন দেয়ার জন্য তখন শ্রাবণের একটা মেসেজ আসলো না পড়েই আব্বুকে ফোন দিলাম
–কিরে মা কেমন আছিস
–ভালো তুমি কেমন আছো
–ভালো কি করছিস
–বসে আছি এই সপ্তাহে কি বাসায় আসবা না
–কাজের খুব চাপ দেখি সুযোগ ফেলে আসবো
–আচ্ছা
–তোর আম্মু তোর সাথে ঝগড়া করে না তো
–না ঝগড়া করবে কেনো আমরা ভালোই আছি
–তুলি কি তোকে আপন বোন ভাবে নাকি তোর মায়ের মতই খারাপ আচরণ করে
–তুলি আর কি বুঝে তাও আমাকে বড় বোন ভাবে অনেক ভালোবাসে
–হুম তোরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকিরে মা
–আমাদের জন্য চিন্তা করো না নিজের খেয়াল রেখো
–আচ্ছা রাখি
–হুম

আব্বুর সাথে কথা শেষ করে শ্রাবণের মেসেজ পড়তে শুরু করলাম
তমা বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আজ রিয়া তোমার সম্পর্কে আমাকে সব বলেছে, আমি বুঝতে পারছি তুমি হয়তো আমাকে তোমার জীবনের সাথে জরাতে চাইছো না কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি আমি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে চাই আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিবো না প্লিজ একটু ভেবে দেখো

মেসেজটা পড়ে রিয়ার উপরে খুব রাগ উঠলো আমার সম্পর্কে শ্রাবণ কে কেন বলতে গেলো আমি চাই না কেউ আমার কষ্ট শুনে আমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে থাকাক

পরের দিন আর কলেজে গেলাম না সারা দিন বাসার কাজ করেই কাটিয়ে দিলাম, রাতে রান্না করে রোমে আসলাম ফোন হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবণ এর অনেক গুলো ফোন, ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে বসলাম আকাশের তারা গুলা মিটিমিটি করে জ্বলছে ছোট বেলায় শুনতাম মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায় এটা কি সত্যি, যদি সত্যি হতো অনেক ভালো হতো আমি রাত হলেই আম্মুকে দেখতে পারতাম, আচ্ছা আম্মু থাকলে আমাকে কতোটুকু ভালোবাসত আমাকে হয়তো কষ্ট কি বুঝতেই দিতো না আচ্ছা আমি কি পাপ করছিলাম যে আল্লাহ এতো ছোট থাকতেই আমাকে মা হারা করলেন, এসব ভাবছি আর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবণ বুঝি না ছেলেটা কেন বার বার ফোন করছে এসব পাগলামি করে তো লাভ নেই আমি কাউকে এই জীবনের সাথে জরাতে চাই না এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেলো আবার কল আসলো রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–কেমন আছ
–ভালো তুমি
–আমার ফোন রিসিভ কর না কলেজে আস না কি করে ভালো থাকবো
–দেখ শ্রাবণ এসব পাগলামি করে লাভ নেই বন্ধু আছি এটাই ভালো প্লিজ বন্ধুত্ব নষ্ট হউক এমন কিছু আর করো না
–বুঝার চেষ্টা কর তুমি আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারছি না
–প্লিস এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না অন্য কথা থাকলে বলো
–আজ কলেজে আসনি কেন
–এমনি
–আগামীকাল আসবা
–হুম
–একটা বার চেষ্টা করে দেখো না প্লিজ
–ভালো লাগছে না রাখছি বাই
ফোন অফ করে বসে আছি কি করবো আমি শ্রাবণের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিব ছেলেটা যদি কষ্ট পায়, কষ্ট পেলে আমার কি আমি তো ওকে ভালোবাসি না আর বাসতে চাইও না, রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে