গল্পঃঅটুট_বন্ধন(বালিকা বধূ)পর্বঃ৫

0
2841

গল্পঃঅটুট_বন্ধন(বালিকা বধূ)পর্বঃ৫
#লেখকঃShamil_Yasar_Ongkur

আবির ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগে শুধু একটা কথা বলে তোমাদের যদি আমাকে পছন্দ নাই হতো তাহলে বলে দিতা আমি স্বইচ্ছায় রিজাইন দিয়ে ভার্সিটি থেকে চলে যেতাম। কিন্তু তোমরা যেটা করলে এতে খুব কষ্ট পেলাম।

জানিনা এর সাথে কে কে জড়িত আছে। তাদের শুধু একটা কথাই বলবো ওপরে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আছেন তিনি কিন্তু সব দেখছেন। এই পৃথিবীতে সুষ্ঠু বিচার না হলে তার কাছে কিন্তু সুষ্ঠু বিচারি হবে। আল্লাহ কাছে কিন্তু কেউ রেহাই পাবে না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



আর একটা কথা সত্য কিন্তু বেশিদিন চাপা পড়ে থাকে না।

মুসকান আবিরের শার্টে চোখের পানি মুছে বলল ভাইয়া আমাকে একটু ছাড়ো তো।

কেন কই যাবি..?

ছাড়ো না একটু

আবির মুস্কান কে ছেড়ে দিতেই মুসকান দৌড়ে নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

নীলা মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান তার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে কষে একটা থাপ্পর মারে। নীলা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।

মুসকান নীলার চুলের ঝুটি ধরে ওকে দাঁড় করে বলে। কাল তুই কি বলেছিলি আমাকে দেখে নিবি। তোর নামে আমি মানহানি মামলা করব দেখি তোর কোন বাপ তোকে জেলের ভাত খাওয়া থেকে বাঁচায় বলে আরেকটা থাপ্পড় মারে। নীলা কিছু বলে না শুধু গালে হাত দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

আবির মুসকান কে টেনে তার কেবিনে নিয়ে যায়।

মুসকান চেয়ারে বসে বসে কান্না করছে। আবির তাকে থামানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু সে কিছুতেই থামছেই না। শেষমেষ আবির আর কোন উপায় না পেয়ে বলল।

আবির: আমার এই শুটকি বোনের হাতে যে এতো জোর তা তো জানতাম না। এক থাপ্পড়ে তুই নীলার মত মেয়েকে ফ্লোরে ফেলে দিলি। এটা কিভাবে সম্ভব ।

মুসকান মুচকি হেসে বলল তোমার গালে একটা দি তাহলে বুঝবা কিভাবে সম্ভব।

আবির: না বাবা না পাগল নাকি আমি এমন একটা থাপ্পর খেলে এক সপ্তাহ বিছানা থেকে উঠতে পারব না। আমার কি মনে হয় জানিস।

মুসকান: কী….?

আবির: তুই যখন থাপ্পর মারিস তখন তোর মধ্য রাক্ষসী-রাণী কটকটির শক্তি চলে আসে। তাছাড়া এমন ৩০ কেজি ওজনের শরীর নিয়ে ৪৫ কেজি ওজনের একটা মেয়েকে তুই কিভাবে ফ্লোরে ফেলতে পারলি বলে আবির হো হো করে হাসতে লাগলো।

ভাইয়া এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে মুসকান বলল।

আবির: তবে একটা কথা কি জানিস। তুই দুই দিনে নীলাকে যে 6 টা থাপ্পড় মেরেছিস আমি সিওর ওর কয়েকটা দাঁত ডিসপ্লেস হয়ে গেছে। তোর মধ্যে যে এমন ডাইনি রূপ লুকিয়ে আছে এই ঘটনা না ঘটলে তো আমি দেখতেই পারতাম না। কি সাংঘাতিক মেয়ে রে তুই বাপের বাপ।

মুসকান রাগী কন্ঠে বলল ভাইয়া তুমি প্লিজ চুপ করো তা না হলে তোমার দাঁত ও কিন্তু ডিসপ্লেস করে দেবো বলে দিচ্ছি।

আবির দু গালে হাত দিয়ে বলল ওকে বোনু আর একটা কথা বলবো না।

এদিকে আকাশ আর নীলা বসে আছি মাঠের এক কোনায়। আকাশ তো কান্না করতে করতে যমুনা নদী ভাষায় ফেলতেছে।

আকাশ কান্না মাখা কন্ঠে বলল তুই আগে কেন বললি না মুসকান স্যারের বোন…?

নীলা রাগী কন্ঠে জবাব দিল আমি কি জানতাম না কি। ওর সাথে এত দিনের ফ্রেন্ডশিপ আমাকে কখনোই বলেনি এ কথা।

আকাশ: এখন তাহলে কি হবে আমাদের যদি একেবারে মতো বহিস্কার করে দেয়।

নীলা নিশ্চুপ

আকাশ: তোর তো কোন সমস্যা নাই তোর বাবা এসপি এরপর তুই হল মেয়ে মানুষ দুই দিন পর বিয়ে হয়ে যাবে এরপর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার কি হবে। বলে আকাশ আবার কান্না শুরু করে দিল।

নীলা রাগী কন্ঠে বলল দেখ আকাশ মেয়েদের মত কান্না করবি না। আমাকে কিছু একটা ভাবতে দে।

আবির: এতো ভাবাভাবির কিছু নাই চল গিয়ে স্যারের কাছে ক্ষমা চাই।

নীলা: কী ক্ষমা চাবো তাও আবার আমি অসম্ভব। নীলা চৌধুরী কারো কাছে কোনদিন ক্ষমা চায়নি এবং ভবিষ্যতেও চাবেনা।

আকাশ: তোর যা ইচ্ছা তুই কর আমি গেলাম স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে।

আবির মুসকান কে সাথে নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে ভার্সিটির পার্কিং এরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দেখল কয়েকজন মিলে একজনকে গণপিটুনি দিচ্ছে।

আবির কাছে যেতে দেখল আসিফ জাহিদ ফারুক রেহান রাফি আরো কয়েকজন মিলে আকাশকে বেদম পেটাচ্ছেন।

আবির তাদেরকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে তোমরা আকাশ এমন ভাবে মারছ কেন।

আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আসিফ তার নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে বলল স্যার এই কুত্তার বাচ্চা আপনার মুসকানের নামে ওসব বাজে জিনিস ছড়িয়েছে। শালারে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো বলে আরেকটা মারতে যাবে তখন আবির তাকে আটকাই।

আবির: আচ্ছা ও করেছে মানলাম তাই বলে তোমরা ওকে এভাবে মারবে। দেখো ছেলেটা নাক দিয়ে কি পরিমান রক্ত বের হচ্ছে।

মুসকান বলল মেরেছিস ঠিক করেছিস আসিফ আরো কয়েকটা মার থামলি কেন।

আসিফ মারতে যাবে এমন সময় আকাশ আবিরের পা চেপে ধরে।

আকাশ কান্না করতে করতে বলে প্লিজ স্যার আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেন। আমি এমন কিছু করতে চাইনি এসব নীলার পরিকল্পনা ছিল স‍্যার। আমি স‍্যার এমন কিছুই করতে চাইনি। নীলা আমাকে এসব করতে বাধ্য করেছে।
আপনি প্লিজ স্যার আমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিবেন না। তাহলে আমার বাবা-মা স‍্যার মরে যাবে।

আবির আকাশকে উঠিয়ে নিজের কেবিনে নিয়ে আশে।

আকাশের নাকে ডেসিং করে দিতে দিতে বলল বাবা কি করে তোমার।

আকাশ নাহু নাহু করতে করতে বলল কৃষি কাজ করে স‍্যার।

আবির: কৃষি কাজ করে তো ভালো কথা সেটা বলতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তোমার বাবার মত কৃষকরা আছেন বলে আমাদের দেশ আজ এতটা এগিয়ে যাচ্ছে। তোমার বাবা কি চুরি করে নাকি ডাকাতি করে যে তুমি বলতে লজ্জা পাচ্ছো।

আমি বুঝিনা তোমার মত যাদের বাবা মায়েরা গার্মেন্টসে কাজ করে এরপর কৃষি কাজ করে কেউবা ছোটখাটো ব্যবসা করে। তাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মা বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে কেনো। কেন এতো লজ্জা তারা কি মানুষ না ?তারা কি কাজ করে অর্থ উপার্জন করে না? তাড়া তো চুরি করে না ।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে।

তারা তো আর আমাদের এই সমাজের বিত্তশালীদের মত মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করে না। তারা তো আর গরিব-দুঃখীদের হক মেরে বড়লোক হয় না। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হালাল টাকা উপার্জন করে। তো তাদের পরিচয় দিতে তোমাদের কিসের এত লজ্জা আমি বুঝিনা। তোমাদের তো বুক ফুলিয়ে বলার কথা আমার বাবা কৃষক আমার মা গার্মেন্টসে চাকরি করে।

আজ তাদের কারণেই তো বাংলাদেশ পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত।

নিজের বাবার কর্ম কে কখনো ছোট করে দেখবে না। তিনি যদি তোমাকে ডাল ভাত খাওয়ান তাহলে সেটা তিনি হালাল টাকায় কিনে খাওয়াচ্ছে তোমাই। তিনি হয়তো তোমাকে এই সমাজের সুদখোর ঘুষখোর দের মত দশতলা বিশতালা বাড়িতে রাখতে পারছেন না। তিনি কিন্তু তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তোমাকে সুখে রাখার জন্য।সো বাবা কৃষি কাজ করেন বলে তাকে ঘৃণা করোনা।

বাসা কোথায় তোমার….?

স্যার রংপুর

বাবা মাসে কত হাজার টাকা পাঠায় বাসা থেকে।

স‍্যার ৬-৭ হাজার

দেখো তোমার বাবা কৃষি কাজ করে তোমাকে মাসে 6-7 হাজার টাকা পাঠান যাতে তুমি ভালোভাবে খেতে পারো চলতে পারো। গিয়ে দেখ তিনি হয়তো মরিচ ভর্তা আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে দিনের পর দিন পার করে দিচ্ছে। কিসের জন্য যাতে তুমি ভালো খেতে পারো। তুমি কি করছো বাবার থেকে টাকা নিয়ে এখানে এসব ফুর্তি করছো। তোমার বাবা হয়তো তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তুমি পড়াশোনা করে তার মুখ উজ্জ্বল করবে। এসব করলে কি বাবার মুখ উজ্জ্বল করা সম্ভব তুমিই বল।

আকাশ মাথা নিচু করে বসে থাকল।

জব টব কিছু করো…?

স্যার দুইটা টিউশনি করাই।

কম্পিউটার চালাতে পারো…?

আকাশ: জি স্যার পারি।

আবির তার পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে আকাশের হাতে দিয়ে বলল আকাশ কাল সকালে তোমার এই ঝাপড়ি চুল আর দেবদাসের মতো দাড়ি সুন্দর করে কেটে পরিপাটি হয়ে এই ঠিকানায় চলে যাবে। তাহলেই তোমার চাকরি কনফার্ম। পড়াশোনা করবে প্লাস চাকরি করবে । নিজের খরচ নিজেই চালাবে ।যানো এই শহরে তোমার মত কত ছেলে আছে যারা অটো চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়।

আকাশ আবিরকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। স্যার আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন। এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না।

আবির: আরে বোকা কাঁদার কি হলো। আর আমি কোন উপকার করিনি তোমার যা করেছেন আল্লাহু করেছে। আমি শুধু একটা মাধ্যম ছিলাম মাত্র।

সব সময় একটা কথা মাথায় রাখবে। রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ তোমাকে বিপদে ফেলতে পারেন আবার সেই বিপদ থেকে তিনি তোমাকে রক্ষা করতে পারে। তাই সবসময় বিপদে-আপদে ওই মহান স্রষ্টা কে স্মরণ করবে।

এখন চোখের পানি মুছে চুল দাড়ি কেটে মেসে গিয়ে ভাইবার প্রস্তুতি নাও যাও।

আকাশ মুসকান এর সামনে গিয়ে বলল সরি মুসকান পারলে ক্ষমা করে দিস।

মুসকান: যা কুত্তা ভাগ এখান থেকে দশ দিন যেন তোর এই মুখ আমার সামনে না দেখি। আর বাই চান্স যদি কোনভাবে আমার সামনে এসে পড়িস তাহলে নীলাকে তো ছয়টা থাপ্পর মেরেছে তোকে মারবো বারোটা। যা ভাগ এখান থেকে।

আকাশ চোখের পানি মুছে মুচকি একটা হাঁসি দিয় আবিরের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।

আবির আর মুসকান আজ প্রায় ৭ দিন পর ভার্সিটি তে আসলো। আবিরের ডাক পড়েছে শফিক স্যারের ক্যাবিনে। নীলার বাবা কে ডাকা হয়েছে কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য।

আবির শফিক স্যারের কেবিনে ঢুকে যাকে দেখল সে তাকে দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। আজ কত বছর পর দেখছে এই মানুষটাকে। তার ফেস এর কোন কিছুই চেঞ্জ হয়নি শুধু একটু চুল আর দাড়ি পেকে গিয়েছে….

শফিক স্যার আবিরকে তার কেবিনে ঢুকতে দেখে বলল। আবির ইনি সা… আর বলতে পারলেন না তার আগেই আবির বললো সাইফ চৌধুরি।

সাইফ চৌধুরী আবিরের দিকে হাত প্রসারিত করে বললেন। Come on my boy give me a hug fast….

চলবে…..

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে